Egyptian ruler Al-Aziz Uthman and why he wanted to demolish pyramids dgtl
Egyptian ruler Al-Aziz Uthman
পিরামিড ধ্বংস করতে বিপুল অর্থব্যয়, ‘ভুল’ বুঝতে পেরে কয়েক মাস পর রণে ভঙ্গ দেন মিশরের শাসক
মেনকাউর পিরামিড ধ্বংস করার জন্য সব রকম প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছিলেন উথমানের শ্রমিকরা। প্রায় আট মাস ধরে প্রতি দিন একটু একটু করে পিরামিডের পাথর ধ্বংস করার কাজ চলতে থাকে।
আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
কলকাতাশেষ আপডেট: ০১ অগস্ট ২০২৩ ১২:৫৫
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১২০
মিশরের পিরামিড নিয়ে নানা গল্প, নানা রহস্যের কথা পৃথিবীর আনাচকানাচে ঘুরে বেড়াচ্ছে যুগ যুগ ধরে। এই নিয়ে বিশেষজ্ঞদের মধ্যেও তরজার অন্ত নেই। কেউ পিরামিডকে শুধুমাত্র সমাধিস্থল বলে মনে করলেও কারও কারও মতে পিরামিড তৈরির নেপথ্যে রয়েছে ‘রহস্যজনক’ কারণ। অনেকে আবার পিরামিডকে ‘ভিন্গ্রহীদের কাণ্ড’ বলেও মনে করেন।
০২২০
তবে জানা আছে কি, পৃথিবীর বুক থেকে পিরামিডের চিহ্ন মুছে দিতে উদ্যত হয়েছিলেন মিশরেরই এক শাসক? তাঁর পরিকল্পনা সফল হলে পৃথিবীর বুক থেকে পিরামিডের অস্তিত্ব চিরতরে মুছে যেত।
০৩২০
মিশরের সেই শাসকের নাম আল-আজিজ উথমান। ১১৯৩ সালের ৪ মার্চ থেকে ১১৯৮ সালের ২৯ নভেম্বর পর্যন্ত তিনি মিশরের শাসক ছিলেন। উথমান ছিলেন আইয়ুবি রাজবংশের দ্বিতীয় শাসক।
০৪২০
উথমানের বাবা সালাদিন ছিলেন আইয়ুবি রাজবংশের প্রতিষ্ঠাতা। ক্রুসেডারদের পশ্চিম এশিয়া দখলে বাধা দিতে এবং তাদের পরাজিত করতে সালাদিন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন।
০৫২০
সেই সালাদিনের পুত্র উথমানই এক বার মিশরের সব পিরামিড ধ্বংস করার জন্য উঠেপড়ে লেগেছিলেন।
০৬২০
কিন্তু কেন এমন সিদ্ধান্ত নেন উথমান? বিভিন্ন প্রাচীন নথি অনুযায়ী, উথমান ছিলেন এক জন অত্যন্ত ধার্মিক মানুষ। ছোটবেলা থেকেই ধর্মচর্চার প্রতি তাঁর আগ্রহ জন্মেছিল।
০৭২০
মাত্র ২২ বছর বয়সে উথমান মিশরের শাসক হন। তাঁর রাজত্বকালে তিনি মিশরের পিরামিডগুলি ধ্বংস করার সিদ্ধান্ত নেন। উথমান বিশ্বাস করতেন, পিরামিডের অস্তিত্ব থাকা মানে ধর্মের বিরুদ্ধাচারণ করা। আর সেই কারণেই তিনি পিরামিড ধ্বংসের আদেশ দেন।
০৮২০
ধ্বংস করার জন্য প্রথমেই বেছে নেওয়া হয় গিজার পিরামিডগুলিকে। এখনকার মতো গিজার পিরামিডগুলিকে সেই সময়েও বিশ্বের অন্যতম সেরা বিস্ময় হিসাবে বিবেচিত হত।
০৯২০
গিজার তিনটি প্রধান পিরামিডের মধ্যে সব থেকে ছোট ‘মেনকাউরের পিরামিড’। ফারাও মেনকাউরের স্মৃতিতে নির্মিত এই পিরামিড মিশরের গিজায় নীলনদের পশ্চিম তীরে রয়েছে।
১০২০
ফারাও মেনকাউর ২৪৯০ থেকে ২৪৭২ খ্রিস্টপূর্বাব্দ পর্যন্ত মিশরে শাসন করেছিলেন। তাঁর মৃত্যুর পর এই পিরামিডটি ২৫৩০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে তৈরি করা হয়। মনে করা হয়, এই পিরামিড নির্মাণে প্রায় ১০ বছর সময় লেগেছিল।
১১২০
মেনকাউর ছিলেন ফারাও খাফরের ছেলে এবং ফারাও খুফুর নাতি। ফারাও খুফু গিজার পিরামিড তৈরি করিয়েছিলেন। মেনকাউর মিশরের শাসক হিসাবে প্রায় ২০ বছর শাসন করেন।
১২২০
গিজার পিরামিডের মধ্যে সেই মেনকাউর পিরামিডকেই প্রথম ধ্বংস করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সেই মতো পদক্ষেপ করাও শুরু হয়।
১৩২০
পিরামিড ধ্বংসের জন্য বহু অর্থ ব্যয়ে প্রচুর সংখ্যক শ্রমিক নিয়োগ করা হয়েছিল। আলাদা করে নিয়োগ করা হয়েছিল পাথর বইতে পারেন এমন শ্রমিকদের।
১৪২০
মেনকাউর পিরামিড ধ্বংস করার জন্য সব রকম প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছিলেন উথমানের শ্রমিকরা। প্রায় আট মাস ধরে প্রতি দিন একটু একটু করে পিরামিডের পাথর ধ্বংস করার কাজ চলতে থাকে।
১৫২০
শ্রমিকরা পিরামিডের পাথর নীচে নামানোর জন্য বিভিন্ন পদ্ধতি অবলম্বন করেছিলেন। কেউ কেউ পাথর সরানোর জন্য যন্ত্রের ব্যবহার করতেন তো কেউ আবার পাথরগুলিকে দড়ি দিয়ে টেনে নামানোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছিলেন। তবে এই কাজে কোনও দিন সাফল্য আসেনি।
১৬২০
পিরামিডের পাথরগুলি ছিল বিশালাকার। সেই কারণে, পিরামিডের প্রতিটি পাথর আলাদা আলাদা করে ভাঙার প্রক্রিয়া ছিল ক্লান্তিকর। পাশাপাশি এই কাজে প্রচুর খরচও হয়ে যাচ্ছিল।
১৭২০
তার উপরে আবার পিরামিডের কোনও ভারী পাথর মাটিতে পড়লেই তা বালিতে ডুবে যেত। সেই পাথর আবার বালির নীচে থেকে উপরে তোলা ছিল যথেষ্ট কষ্টসাধ্য।
১৮২০
দীর্ঘ আট মাস প্রচুর অর্থ ব্যয় করার পরে, উথমান উপলব্ধি করেন, পিরামিডগুলি তৈরি করতে যা খরচ হতে পারে, তার থেকেও বেশি টাকা খরচ হচ্ছে সেগুলি ধ্বংস করতে গিয়ে।
১৯২০
উথমান এ-ও বুঝতে পারেন, প্রাচীন মিশরীয়দের ব্যবহৃত নির্মাণ কৌশল এতটাই উন্নত মানের ছিল যে, পিরামিড ভাঙা অত্যন্ত কঠিন। আট মাস পরে নিজের ভুল বুঝতে পেরে উথমান পিরামিড ধ্বংস করার পরিকল্পনা পরিত্যাগ করেন।
২০২০
পিরামিড ধ্বংস করার চেষ্টার প্রমাণস্বরূপ মেনকাউর পিরামিডে এখনও একটি বড় উল্লম্ব কাটা জায়গা দেখতে পাওয়া যায়।