Diego Garcia a Coral Island May Become Strategic Flashpoint in Indian Ocean Region dgtl
Diego Garcia
ওড়ে ব্রিটিশ পতাকা, রয়েছে আমেরিকার ঘাঁটি! ভারত মহাসাগরের প্রবাল দ্বীপ পেতে মরিয়া দ্বীপরাষ্ট্র
ভারত মহাসাগরীয় এলাকার প্রবাল দ্বীপ দিয়েগো গার্সিয়ার উপর দীর্ঘ দিন ধরে দাবি জানিয়ে আসছে মরিশাস। সেখানে ওড়ে ইউনিয়ন জ্যাক, রয়েছে আমেরিকার নৌঘাঁটি।
আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
কলকাতাশেষ আপডেট: ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ০৮:০৭
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১১৭
দক্ষিণ ভারত মহাসাগরের বুকে ছোট্ট এক প্রবাল দ্বীপ। ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের সূর্য আজও সেখানে অস্ত যায়নি। শুধু তা-ই নয়, ওই দ্বীপে রয়েছে আমেরিকার সামরিক ঘাঁটি। এ হেন প্রবাল প্রাচীরে হঠাৎই নজর পড়েছে চিনের। চুপিসারে তাই দ্বীপটি কব্জা করার মরিয়া চেষ্টা চালাচ্ছে বেজিং। শেষ পর্যন্ত সেই উদ্দেশ্য সফল হলে কতটা বিপদ ভারতের?
০২১৭
ভারত মহাসাগরীয় ওই প্রবাল দ্বীপের নাম দিয়েগো গার্সিয়া। অনন্ত জলরাশির মধ্যে ৩০ বর্গ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে যা গড়ে উঠেছে। তবে জায়গাটায় দিয়েগো গার্সিয়াই একমাত্র প্রবাল দ্বীপ, এ কথা ভাবলে ভুল হবে। মোট ৬০টি ছোট ছোট প্রবাল দ্বীপের মালা রয়েছে ভারত মহাসাগরের দক্ষিণের ওই এলাকায়। গোটা দুনিয়া যাকে চেনে ‘চাগোস দ্বীপপুঞ্জ’ হিসাবে।
০৩১৭
এই দ্বীপগুলির মধ্যে আকারের দিক থেকে দিয়েগো গার্সিয়াই সবচেয়ে বড়। ১৫১২ সালে যার সন্ধান পান পর্তুগিজ নাবিক পেড্রো মাসকারেনহাস। প্রবাল দ্বীপগুলি জনমানবশূন্য হওয়ায়, তা নিয়ে খুব একটা মাথা ঘামাননি তিনি। পরবর্তী কালে স্পেনীয় অভিযাত্রী দিয়েগো গার্সিয়া দে মোগুয়ের ফের পৌঁছন ওই দ্বীপে। নিজের নামেই করেন প্রবাল প্রাচীরের নামকরণ। সালটা ছিল ১৫৪৪।
০৪১৭
১৮ শতক পর্যন্ত দিয়েগো গার্সিয়া ছিল জনমানবহীন। ১৭৭৮ সালে মরিশাসের ফরাসি গভর্নরের নজরে পড়ে ওই প্রবাল দ্বীপ। লোক-লস্কর পাঠিয়ে সেখানে নারকেল চাষ শুরু করলেন তিনি। পাশাপাশি, চলে দেদার মাছ শিকার। বলা বাহুল্য, নারকেল চাষে কাজে লাগানো হয়েছিল দাসদের।
০৫১৭
১৭৮৬ সালে কুষ্ঠরোগীদের উপনিবেশ হিসেবে দিয়েগো গার্সিকাকে ব্যবহার করতে শুরু করেন মরিশাসের ফরাসি শাসকেরা। তত দিনে ব্রিটিশরা অবশ্য দ্বীপটি দখলের দু’-একবার চেষ্টা চালিয়েছে। তবে কোনও বারই মেলেনি সাফল্য। ১৭৯৩ থেকে প্রবাল দ্বীপটিতে নারকেল চাষ ব্যাপক হারে বেড়ে যায়। উৎপাদন বাড়াতে জাহাজ ভর্তি করে দাসদের সেখানে আনতে শুরু করে ফরাসিরা।
০৬১৭
১৮১৪ সালে ইউরোপে শেষ হয় দীর্ঘ দিন ধরে চলে আসা ইংল্যান্ড ও ফ্রান্সের যুদ্ধ। এলবা দ্বীপে নির্বাসিত হন ফরাসি সম্রাট নেপোলিয়ান বোনাপার্ট। লড়াই হেরে যাওয়ায় দিয়েগো গার্সিয়া ব্রিটিশদের হাতে তুলে দেয় ফরাসি সরকার। চাগোস দ্বীপপুঞ্জ থেকে যাকে বিচ্ছিন্ন করে দেখতে শুরু করেন ইংরেজ প্রশাসকেরা। যা নিয়ে পরবর্তী কালে দেখা দেয় নতুন রাজনৈতিক জটিলতা।
০৭১৭
গত শতাব্দীর ছয়ের দশকে আমেরিকাকে নৌঘাঁটি তৈরির জন্য দিয়েগো গার্সিয়ার জমি লিজ় দেয় ব্রিটিশ সরকার। এই নিয়ে দুই দেশের মধ্যে ৫০ বছরের চুক্তি হয়েছিল। যা সম্প্রতি আরও ২০ বছর বৃদ্ধি করা হয়ছে। ফলে, ২০৩৬ পর্যন্ত সেখানে নৌবহর রেখে দিব্যি ভারত মহাসাগরীয় এলাকায় নজরদারি চালাতে পারবে আমেরিকা।
০৮১৭
কিন্তু, এই আবহে দিয়েগো গার্সিয়া তাদের দেশের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ বলে দাবি তুলেছে মরিশাস। যা নিয়ে ২০১৭ সালে ২২ জুন রাষ্ট্রপুঞ্জের সাধারণ সভায় পাশ হয় একটি সম্মতিপত্র। যাতে এই নিয়ে মীমাংসার জন্য আন্তর্জাতিক বিচার আদালতকে (আইসিজে) অনুরোধ করা হয়েছিল। চাগোস দ্বীপপুঞ্জ থেকে দিয়েগো গার্সিকাকে আলাদা ভাবে দেখার বিষয়টিকে অবৈধ বলে জানিয়েছে আন্তর্জাতিক আদালত।
০৯১৭
২০১৯ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি ভারত মহাসাগরীয় প্রবাল দ্বীপ নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ রায় দিয়েছে আন্তর্জাতিক বিচার আদালত। সেখানে বলা হয়েছে, মরিশাস স্বাধীনতা লাভ করলেও সেখানকার ঔপনিবেশিকরণের সমাপ্তি আইনসম্মত ভাবে হয়নি। ফলে ব্রিটেনকে যত দ্রুত সম্ভব সেখানকার প্রশাসন চালানো থেকে সরে আসতে হবে।
১০১৭
আন্তর্জাতিক বিচার আদালতের এই রায় অবশ্য ব্রিটিশ সরকার মানতে নারাজ। ২০২২ সালের নভেম্বরে ব্রিটেনের তৎকালীন বিদেশমন্ত্রী ডেভিড ল্যামি বলেন, ‘‘আমরা মরিশাসের সঙ্গে এই নিয়ে আলোচনা চালাচ্ছি। আমেরিকার নৌঘাঁটি আপাতত দিয়েগো গার্সিয়ায় থাকছে। এতে মরিশাসের সার্বভৌমত্বে কোনও সমস্যা হবে না। আমাদের উদ্দেশ্য কোনও দেশের অখণ্ডতাকে নষ্ট করা নয়।’’
১১১৭
প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞদের দাবি, দিয়েগো গার্সিয়ার অবস্থানের মধ্যেই লুকিয়ে রয়েছে এর কৌশলগত গুরুত্ব। ভারতের মূল ভূখণ্ড থেকে এর দূরত্ব মাত্র ১ হাজার ৮০০ কিলোমিটার। ভারত মহাসাগরীয় এলাকায় নজরদারি চালানোর জন্য এই দ্বীপকে ব্যবহার করে আমেরিকা।
১২১৭
এ ছাড়া ওই দ্বীপে বছরের পর বছর ধরে থাকার ফলে উন্নত সামরিক পরিকাঠামো তৈরি করেছে আমেরিকা। বিগত কয়েক বছর ধরেই যাদের রীতিমতো চ্যালেঞ্জ জানাচ্ছে চিন। দিয়েগো গার্সিয়া হাতে থাকলে খুব সহজেই সেখান থেকে নৌবহর পাঠিয়ে দক্ষিণ চিন সাগর বা জাপান সাগর পর্যন্ত বেজিংয়ের আগ্রাসন রুখতে পারবে ওয়াশিংটন। শুধু তা-ই নয়, সে ক্ষেত্রে তাইওয়ান আক্রমণের আগেও দু’বার ভাবতে হবে চিনকে।
১৩১৭
চলতি বছরের নির্বাচনে ব্রিটেনে দীর্ঘ দিন পর ক্ষমতায় এসেছে লেবার পার্টি। প্রধানমন্ত্রীর কুর্সিতে বসেছেন কেয়ার স্টারমার। বিশেষজ্ঞদের দাবি, চাগোস সমস্যা নিয়ে রীতিমতো চাপের মুখে রয়েছেন তিনি। ব্রিটিশ লেবার পার্টির আন্তর্জাতিক আইন মেনে চলার দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে। যা দিয়েগো গার্সিয়ার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে কি না, তা দেবা না জানন্তি।
১৪১৭
প্রধানমন্ত্রী স্টারমার অবশ্য প্রকাশ্যে এখনও পর্যন্ত এই নিয়ে কোনও প্রতিক্রিয়া দেননি। বিরোধী দলনেতা ল্যামি যা নিয়ে তাঁর প্রবল সমালোচনা করেছেন। ব্রিটিশ রাজনীতিকদের একাংশের মত, চাগোস সমস্যাকে জিইয়ে রাখা হচ্ছে। যার ফল ভবিষ্যতে ব্রিটেনকেই ভুগতে হবে।
১৫১৭
সূত্রের খবর, গত বছরের (২০২৩) জুলাইয়ে ভারত সফরে এসে এই বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে তৎকালীন ব্রিটিশ বিদেশমন্ত্রী ডেভিড ল্যামি আলোচনা করেন। তবে এই বিষয়ে প্রকাশ্যে কোনও পক্ষই কোনও প্রতিক্রিয়া দেয়নি।
১৬১৭
কিছু দিন আগে মরিশাস সফরে গিয়ে অবশ্য চাগোস দ্বীপপুঞ্জ নিয়ে ভারতের অবস্থান স্পষ্ট করেন বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর। দিয়েগো গার্সিয়ার সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ মরিশাসের হাতে থাকা উচিত বলে মন্তব্য করেন তিনি।
১৭১৭
২০৩৬ সালে আমেরিকার সঙ্গে শেষ হবে ব্রিটেনের লিজ় চুক্তি। তার পর এই প্রবাল দ্বীপ কি মরিশাসের হাতে তুলে দেবে ব্রিটেন? না কি ধরে রাখবে সেখানকার ক্ষমতা? চিনের আগ্রাসী মনোভাব কতটা প্রভাব ফেলবে? এ সব প্রশ্নের উত্তর এখনও অজানাই।