Advertisement
২৩ ডিসেম্বর ২০২৪
Dehradun murder case

Dehradun murder case: স্ত্রীকে খুন করে ৭০ টুকরো! হত্যার নেপথ্যে কি বিবাহ-বহির্ভূত সম্পর্ক

পারিবারিক অশান্তি, হাতাহাতি প্রভৃতি কারণে অতিষ্ঠ হয়ে স্ত্রীকে প্রাণে মারার সিদ্ধান্ত নেন রাজেশ গুলাটী। দেহরাদূন শহরে আজও বিভীষিকার কারণ ‘অনুপমা হত্যাকাণ্ড’।

নিজস্ব প্রতিবেদন
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৪ জুন ২০২২ ১৫:১২
Share: Save:
০১ ২৩
দু’জনেই দিল্লির বাসিন্দা। সাত বছরের ভালবাসার সম্পর্ক। অবশেষে ১৯৯৯ সালে বিয়ে করে আমেরিকায় পাড়ি দেন রাজেশ ও তাঁর স্ত্রী অনুপমা গুলাটী।

দু’জনেই দিল্লির বাসিন্দা। সাত বছরের ভালবাসার সম্পর্ক। অবশেষে ১৯৯৯ সালে বিয়ে করে আমেরিকায় পাড়ি দেন রাজেশ ও তাঁর স্ত্রী অনুপমা গুলাটী।

০২ ২৩
সাত বছর পর ফুটফুটে দুই যমজ সন্তানের জন্ম দেন অনুপমা। কিন্তু দেশে ফিরতেই গুলাটী দম্পতির জীবনে কী এমন ঘটল, যার জন্য এখনও দেহরাদূন শহর ভয়ে কাঁপে?

সাত বছর পর ফুটফুটে দুই যমজ সন্তানের জন্ম দেন অনুপমা। কিন্তু দেশে ফিরতেই গুলাটী দম্পতির জীবনে কী এমন ঘটল, যার জন্য এখনও দেহরাদূন শহর ভয়ে কাঁপে?

০৩ ২৩
পেশায় সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার ছিলেন রাজেশ। দু’সন্তান ও স্ত্রীকে নিয়ে আমেরিকায় বহু বছর থাকার পর দেশে ফিরে আসেন তিনি।

পেশায় সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার ছিলেন রাজেশ। দু’সন্তান ও স্ত্রীকে নিয়ে আমেরিকায় বহু বছর থাকার পর দেশে ফিরে আসেন তিনি।

০৪ ২৩
দেহরাদূন ক্যান্টনমেন্টের প্রকাশনগরে একটি ভাড়াবাড়িতে ওঠেন রাজেশ। কিন্তু দেশে ফিরে এসেই গুলাটী দম্পতির মধ্যে দূরত্ব বাড়তে থাকে।

দেহরাদূন ক্যান্টনমেন্টের প্রকাশনগরে একটি ভাড়াবাড়িতে ওঠেন রাজেশ। কিন্তু দেশে ফিরে এসেই গুলাটী দম্পতির মধ্যে দূরত্ব বাড়তে থাকে।

০৫ ২৩
পারস্পরিক কলহ, মারপিট ছিল তাঁদের নিত্য দিনের ঘটনা। ঝগড়ার মূল কারণ, বিবাহ-বহির্ভূত সম্পর্ক এবং পরকীয়া।

পারস্পরিক কলহ, মারপিট ছিল তাঁদের নিত্য দিনের ঘটনা। ঝগড়ার মূল কারণ, বিবাহ-বহির্ভূত সম্পর্ক এবং পরকীয়া।

০৬ ২৩
অনুপমার অভিযোগ, তাঁর স্বামী নাকি দেশে ফেরার পর কলকাতায় অন্য সংসার বেঁধেছেন। অন্য দিকে, আমেরিকার এক বাসিন্দার সঙ্গে পরকীয়া সম্পর্কে জড়িত রয়েছেন অনুপমা, এমন সন্দেহ ছিল তাঁর স্বামীর। এই নিয়ে প্রায় রোজই পারিবারিক অশান্তি লেগে থাকে।

অনুপমার অভিযোগ, তাঁর স্বামী নাকি দেশে ফেরার পর কলকাতায় অন্য সংসার বেঁধেছেন। অন্য দিকে, আমেরিকার এক বাসিন্দার সঙ্গে পরকীয়া সম্পর্কে জড়িত রয়েছেন অনুপমা, এমন সন্দেহ ছিল তাঁর স্বামীর। এই নিয়ে প্রায় রোজই পারিবারিক অশান্তি লেগে থাকে।

০৭ ২৩
২০১০ সালের ১৭ অক্টোবরের রাতে ঘটে যায় এক ভয়ানক ঘটনা যা, আজও ভারতের ঘৃণ্যতম অপরাধের মধ্যে একটি। এই নৃশংস হত্যাকাণ্ডের তদন্ত করতে গিয়ে স্থানীয় পুলিশ আধিকারিকদেরও গা শিউরে ওঠে।

২০১০ সালের ১৭ অক্টোবরের রাতে ঘটে যায় এক ভয়ানক ঘটনা যা, আজও ভারতের ঘৃণ্যতম অপরাধের মধ্যে একটি। এই নৃশংস হত্যাকাণ্ডের তদন্ত করতে গিয়ে স্থানীয় পুলিশ আধিকারিকদেরও গা শিউরে ওঠে।

০৮ ২৩
সেই রাতে দু’জনের অশান্তি মাত্রা ছাড়ালে রাজেশ রাগের মাথায় তাঁর স্ত্রীর গায়ে হাত তোলেন। ধাক্কা সামলাতে না পেরে অনুপমা ঘরের ভিতর পড়ে যান এবং খাটের কোনায় তাঁর মাথায় আঘাত লাগে। মুহূর্তের মধ্যে জ্ঞান হারান তিনি।

সেই রাতে দু’জনের অশান্তি মাত্রা ছাড়ালে রাজেশ রাগের মাথায় তাঁর স্ত্রীর গায়ে হাত তোলেন। ধাক্কা সামলাতে না পেরে অনুপমা ঘরের ভিতর পড়ে যান এবং খাটের কোনায় তাঁর মাথায় আঘাত লাগে। মুহূর্তের মধ্যে জ্ঞান হারান তিনি।

০৯ ২৩
রাজেশ ভাবেন, তাঁর স্ত্রী বোধ হয় মারা গিয়েছেন। কিন্তু পরীক্ষা করে দেখেন, অনুপমা অজ্ঞান হয়েছেন মাত্র। অনুপমাকে এই অবস্থায় দেখে এক ভয়ানক চিন্তা মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে রাজেশের।

রাজেশ ভাবেন, তাঁর স্ত্রী বোধ হয় মারা গিয়েছেন। কিন্তু পরীক্ষা করে দেখেন, অনুপমা অজ্ঞান হয়েছেন মাত্র। অনুপমাকে এই অবস্থায় দেখে এক ভয়ানক চিন্তা মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে রাজেশের।

১০ ২৩
রোজকার এই অশান্তি থেকে মুক্তি পেতে রাজেশ সিদ্ধান্ত নেন, তাঁর স্ত্রীকে প্রাণেই মেরে ফেলবেন তিনি। সঙ্গে সঙ্গে ঘরের ভিতর থেকে তুলো জোগাড় করে আনেন তিনি।

রোজকার এই অশান্তি থেকে মুক্তি পেতে রাজেশ সিদ্ধান্ত নেন, তাঁর স্ত্রীকে প্রাণেই মেরে ফেলবেন তিনি। সঙ্গে সঙ্গে ঘরের ভিতর থেকে তুলো জোগাড় করে আনেন তিনি।

১১ ২৩
অনুপমার মুখ ও নাকের ভিতর তুলো গুঁজে দেন যাতে শ্বাস নিতে অসুবিধা হয় তাঁর। এই অবস্থায় বেশ কিছু ক্ষণ থাকার পর দম আটকে মারা যান অনুপমা। কিন্তু এ রকম শুনশান জায়গায় তাঁর স্ত্রীর মৃতদেহ লুকোবেনই বা কোথায়?

অনুপমার মুখ ও নাকের ভিতর তুলো গুঁজে দেন যাতে শ্বাস নিতে অসুবিধা হয় তাঁর। এই অবস্থায় বেশ কিছু ক্ষণ থাকার পর দম আটকে মারা যান অনুপমা। কিন্তু এ রকম শুনশান জায়গায় তাঁর স্ত্রীর মৃতদেহ লুকোবেনই বা কোথায়?

১২ ২৩
পাহাড়ের ধারে কোনও খাদে ফেলে দিলেও পুলিশের হাতে তিনি ধরা পড়বেনই। তাই দু’দিন ধরে নিজের ঘরের বাথরুমেই ফেলে রাখলেন অনুপমার মৃতদেহ।

পাহাড়ের ধারে কোনও খাদে ফেলে দিলেও পুলিশের হাতে তিনি ধরা পড়বেনই। তাই দু’দিন ধরে নিজের ঘরের বাথরুমেই ফেলে রাখলেন অনুপমার মৃতদেহ।

১৩ ২৩
এর পর আরও ৫৭ দিন কেটে যায়। অনুপমার বাচ্চারা মায়ের খোঁজ করলে রাজেশ জানান, অনুপমা দিল্লিতে দাদু-দিদার বাড়ি বেড়াতে গিয়েছেন। এমনকি, অনুপমার বাড়ি থেকে যত বার মেয়ের খোঁজ নিতেন, প্রতি বার রাজেশ কোনও না কোনও অজুহাত দেখিয়ে এড়িয়ে যেতেন।

এর পর আরও ৫৭ দিন কেটে যায়। অনুপমার বাচ্চারা মায়ের খোঁজ করলে রাজেশ জানান, অনুপমা দিল্লিতে দাদু-দিদার বাড়ি বেড়াতে গিয়েছেন। এমনকি, অনুপমার বাড়ি থেকে যত বার মেয়ের খোঁজ নিতেন, প্রতি বার রাজেশ কোনও না কোনও অজুহাত দেখিয়ে এড়িয়ে যেতেন।

১৪ ২৩
পরে অবশ্য জানান, দু’জনের মধ্যে সামান্য কারণে কথা কাটাকাটি হওয়ায় অনুপমা বাড়ি ছেড়ে চলে গিয়েছেন। ‘‘চিন্তার কোনও কারণ নেই। আপনাদের মেয়ে খুব তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরে আসবে’’, এমনও বলেছিলেন রাজেশ।

পরে অবশ্য জানান, দু’জনের মধ্যে সামান্য কারণে কথা কাটাকাটি হওয়ায় অনুপমা বাড়ি ছেড়ে চলে গিয়েছেন। ‘‘চিন্তার কোনও কারণ নেই। আপনাদের মেয়ে খুব তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরে আসবে’’, এমনও বলেছিলেন রাজেশ।

১৫ ২৩
এই বিষয়ে সন্দেহ জাগায় অনুপমার ভাই সুজনকুমার প্রধান দিল্লি থেকে দেহরাদূনে আসেন। দিদির খোঁজ করতে ঘরের ভিতরে ঢোকার চেষ্টা করলে ঘরে ঢুকতে বাধা দেন রাজেশ।

এই বিষয়ে সন্দেহ জাগায় অনুপমার ভাই সুজনকুমার প্রধান দিল্লি থেকে দেহরাদূনে আসেন। দিদির খোঁজ করতে ঘরের ভিতরে ঢোকার চেষ্টা করলে ঘরে ঢুকতে বাধা দেন রাজেশ।

১৬ ২৩
সুজন তখনই স্থানীয় থানায় রাজেশের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেন। তদন্ত করতে এসে পুলিশ ঘরের ভিতরে দেখে, একটি মস্ত বড় ডিপ ফ্রিজার রাখা। সাধারণত, এই ফ্রিজারগুলি দোকানে দেখা যায়। বাড়িতে এটি রাখার কারণ কী?

সুজন তখনই স্থানীয় থানায় রাজেশের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেন। তদন্ত করতে এসে পুলিশ ঘরের ভিতরে দেখে, একটি মস্ত বড় ডিপ ফ্রিজার রাখা। সাধারণত, এই ফ্রিজারগুলি দোকানে দেখা যায়। বাড়িতে এটি রাখার কারণ কী?

১৭ ২৩
সন্দেহ হওয়ায় ফ্রিজারটি খুলে দেখে পুলিশ। খোলার পরেই তার ভিতর থেকে বেরোতে থাকে একের পর এক কালো রঙের পলিব্যাগে মোড়ানো মাংসের টুকরো। তবে এ কোনও পশুর মাংস নয়, ব্যাগের ভিতর থেকে বেরিয়ে আসছে মানুষের কাটা হাত-পা এবং দেহের অংশবিশেষ।

সন্দেহ হওয়ায় ফ্রিজারটি খুলে দেখে পুলিশ। খোলার পরেই তার ভিতর থেকে বেরোতে থাকে একের পর এক কালো রঙের পলিব্যাগে মোড়ানো মাংসের টুকরো। তবে এ কোনও পশুর মাংস নয়, ব্যাগের ভিতর থেকে বেরিয়ে আসছে মানুষের কাটা হাত-পা এবং দেহের অংশবিশেষ।

১৮ ২৩
পুলিশের বুঝতে অসুবিধা হয় না, এই মৃতদেহটি কার! রাজেশকে জিজ্ঞাসাবাদ করায় তিনি নিজেই দোষ স্বীকার করেন। রাজেশ জানান, তিনি স্থানীয় দোকান থেকে কিনে এনেছিলেন পাথর কাটার গ্রাইন্ডার মেশিন, ডিপ ফ্রিজার এবং এক গাদা কালো পলিব্যাগ।

পুলিশের বুঝতে অসুবিধা হয় না, এই মৃতদেহটি কার! রাজেশকে জিজ্ঞাসাবাদ করায় তিনি নিজেই দোষ স্বীকার করেন। রাজেশ জানান, তিনি স্থানীয় দোকান থেকে কিনে এনেছিলেন পাথর কাটার গ্রাইন্ডার মেশিন, ডিপ ফ্রিজার এবং এক গাদা কালো পলিব্যাগ।

১৯ ২৩
নিজের হাতেই স্ত্রীর মৃতদেহ টুকরো টুকরো করে কেটে ফেলেন। মোট ৭০টি টুকরো করার পর পলিব্যাগের ভিতর মুড়িয়ে ফেলেন তিনি। দু’মাস ধরে এক একটি পলিব্যাগ শহরের বিভিন্ন প্রান্তে ফেলে চলেছেন রাজেশ।

নিজের হাতেই স্ত্রীর মৃতদেহ টুকরো টুকরো করে কেটে ফেলেন। মোট ৭০টি টুকরো করার পর পলিব্যাগের ভিতর মুড়িয়ে ফেলেন তিনি। দু’মাস ধরে এক একটি পলিব্যাগ শহরের বিভিন্ন প্রান্তে ফেলে চলেছেন রাজেশ।

২০ ২৩
মৃতদেহের টুকরোগুলি এ ভাবে সারা শহর জুড়ে ছড়ানোর ফলে তাঁর ধরা পড়ার সম্ভাবনা খুবই কম, তাই নিজেকে বাঁচাতে এই পরিকল্পনা করেন রাজেশ।

মৃতদেহের টুকরোগুলি এ ভাবে সারা শহর জুড়ে ছড়ানোর ফলে তাঁর ধরা পড়ার সম্ভাবনা খুবই কম, তাই নিজেকে বাঁচাতে এই পরিকল্পনা করেন রাজেশ।

২১ ২৩
তিনি আরও জানান, তাঁকে ঠকিয়ে আরও একটি বিয়ে করেছিলেন বলে রাজেশের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেছিলেন অনুপমা। মাস প্রতি ২০ হাজার টাকা দিতে হবে বলে দাবিও করেছিলেন তিনি।

তিনি আরও জানান, তাঁকে ঠকিয়ে আরও একটি বিয়ে করেছিলেন বলে রাজেশের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেছিলেন অনুপমা। মাস প্রতি ২০ হাজার টাকা দিতে হবে বলে দাবিও করেছিলেন তিনি।

২২ ২৩
২০ হাজার টাকায় আর দিন চলছে না বলে রাজেশের কাছে আরও টাকা চাইতে শুরু করেন তিনি। দিনের পর দিন এই অশান্তি মেনে নিতে পারছিলেন না বলে অনুপমাকে খুন করার সিদ্ধান্ত নেন রাজেশ।

২০ হাজার টাকায় আর দিন চলছে না বলে রাজেশের কাছে আরও টাকা চাইতে শুরু করেন তিনি। দিনের পর দিন এই অশান্তি মেনে নিতে পারছিলেন না বলে অনুপমাকে খুন করার সিদ্ধান্ত নেন রাজেশ।

২৩ ২৩
পরে অবশ্য ভারতীয় আইনবিধির ৩০২ নং ধারা এবং ২০১ নং ধারার আওতায় রাজেশকে দেহরাদূন কোর্ট থেকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের নির্দেশ দেওয়া হয়। এমনকি, ১৫ লক্ষ টাকা জরিমানাও করা হয়।

পরে অবশ্য ভারতীয় আইনবিধির ৩০২ নং ধারা এবং ২০১ নং ধারার আওতায় রাজেশকে দেহরাদূন কোর্ট থেকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের নির্দেশ দেওয়া হয়। এমনকি, ১৫ লক্ষ টাকা জরিমানাও করা হয়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
Follow us on: Save:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy