প্রায় ২০০০ বছর আগে ফ্রান্সের সেই শহরের নাম ছিল তোলোসা। সেই শহর থেকেই লুট হয়েছিল কেজি কেজি সোনা। কোথায় গিয়েছিল?
আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
নয়াদিল্লিশেষ আপডেট: ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ১৫:৪২
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১১৮
ফ্রান্সের শহর তুলুস। প্রায় ২০০০ বছর আগে সেই শহরের নাম ছিল তোলোসা। সেই শহর থেকেই লুট হয়েছিল কেজি কেজি সোনা। কোথায় গিয়েছিল? সেই নিয়ে রয়েছে অনেক ধন্দ। তবে যাঁরা নিয়েছিলেন, তাঁদের ধাওয়া করেছিল অভিশাপ। বছরের পর বছর দুর্ভাগ্য পিছু ছাড়েনি তাঁদের।
০২১৮
প্রায় ২০০০ বছর আগে তোলোসায় ছিল গল জনজাতির একটি অংশ ভোলকাদের বাস। দুর্দান্ত যোদ্ধা ছিলেন তাঁরা।
০৩১৮
খ্রিস্ট জন্মের ২৭৯ বছর আগে মধ্য গ্রিস এবং ম্যাসিডনে অভিযান চালিয়েছিলেন ভোলকারা। থার্মোপাইলেতে গিয়ে গ্রিকদের হারিয়েছিলেন তাঁরা। গ্রিকদের হারিয়ে সে দেশ থেকে বহু সোনা, মূল্যবান রত্ন নিয়ে এসেছিলেন এই জনজাতির যোদ্ধারা। সেই সম্পদ নিয়েই যত গোল।
০৪১৮
ভোলকারা সেই সোনা, ধনরত্ন নিয়ে দেশে ফেরেন। তখনও জানতেন না, দেশে কারা অপেক্ষা করে রয়েছেন। দেশে তখন অপেক্ষা করেছিলেন রোমানরা। গলেরা যে প্রচুর সম্পদ দিয়ে দেশে ফিরছেন, খবর পেয়েছিলেন রোমানরা। সেগুলি ছিনিয়ে নেওয়ার জন্য ঘাপটি মেরে বসেছিলেন তাঁরা।
০৫১৮
রণক্লান্ত, বিধ্বস্ত অবস্থায় গল যোদ্ধারা যখন দেশে ফিরেছিলেন, তখন পথে অপেক্ষারত ছিল রোমান সৈন্যদল। গলদের থেকে সব সম্পদ ছিনিয়ে নেন রোমানরা। বাধা দেওয়ার খুব বেশি ক্ষমতা ছিল না ভোলকা যোদ্ধাদের। তাঁরা নাকি সব সম্পদ বিনা বাধায় ছেড়ে দেন।
০৬১৮
ইতিহাসবিদদের একাংশ মনে করেন, ভোলকা যোদ্ধারা নাকি আগেই বুঝতে পেরেছিলেন যুদ্ধে জেতা ওই সম্পদ অভিশপ্ত। সে কারণে দেশে ফেরার পথে সে সব সম্পদ তাঁরা জলে ফেলে দেন। তবে এই দাবির তেমন প্রমাণ মেলে না।
০৭১৮
রোমানদের যে দলটি ভোলকা যোদ্ধাদের থেকে সম্পদ ছিনিয়ে নিয়েছিল, তাদের মাথায় ছিলেন কুইনটাস সারভিলিয়াস কেপিও। সেই সম্পদের ‘অভিশাপ’ নাকি তাড়া করে বেড়িয়েছিল তাঁকে।
০৮১৮
মনে করা হয় গলদের থেকে প্রায় ৫০ হাজার সোনার বাট ছিনিয়ে নিয়েছিলেন কেপিও। সেগুলির এক-একটির ওজন নাকি ছিল ৬ কেজিরও বেশি। ১০ হাজার রুপোর বাটও চুরি করেছিলেন তিনি এবং তাঁর দলবল।
০৯১৮
মনে করা হয়, সেই সোনা এবং রুপো রোমান সেনাদের হাতে দিয়ে দেশে ফেরত পাঠিয়েছিলেন কেপিও। নিজে বেরিয়ে পড়েছিলেন নতুন যুদ্ধ জয়ে। যদিও শেষ পর্যন্ত এক দানাও সোনা-রুপো দেশে পৌঁছয়নি।
১০১৮
কথিত, যে রোমান সেনাদের হাতে সেই সম্পদ ছিল, তাঁরা নাকি মাঝপথে বেমালুম গায়েব হয়ে যান। কোনও কোনও ইতিহাসবিদ বলেন, পথেই তাঁদের মৃত্যু হয়। কেউ মনে করেন, ডাকাতদল তাঁদের খুন করে সব লুট করে নিয়ে যায়। অনেকে আবার বলেন, ওই ধনসম্পদের অভিশাপেই নিশ্চিহ্ন হয়ে যান তাঁরা।
১১১৮
ইতিহাসবিদদের একটি অংশ মনে করেন, রুপোর বাটগুলি রোমান সেনাদের হাতে পাঠালেও সোনার বাটগুলি নিজের কাছেই রেখেছিলেন কেপিও। কেউ আবার বলেন, রোমান সেনাদের থেকে লোক নিয়োগ করে সেই সোনার বাট চুরি করেছিলেন কেপিও।
১২১৮
এর পর নতুন অভিযানে বেরিয়ে পড়েন তিনি। সেখানে সহযোদ্ধা জেনারেল নায়িউস মালিউস ম্যাক্সিমাসের সঙ্গে বিরোধ বাধে তাঁর। কেপিওর জন্ম হয়েছিল অভিজাত রোমান পরিবারে। তিনি সাধারণ পরিবারে জন্মানো ম্যাক্সিমাসকে সহযোদ্ধা হিসাবে মানতে পারেননি।
১৩১৮
ম্যাক্সিমাসের সঙ্গে এক শিবিরে থাকতে অস্বীকার করেন কেপিও। আর এই বিরোধের সুযোগ নেয় শত্রু জার্মানিক শিবির। হামলা করে কেপিওর সেনাদের উপর।
১৪১৮
এর পর ম্যাক্সিমাসের শিবিরেও হামলা করে জার্মানিক শিবির। অপ্রস্তুত ছিলেন সেনাপ্রধান এবং তাঁর সৈন্যেরা। মারা যান বহু সেনা। কথিত, এই দুই শিবিরে প্রায় ৮০ হাজার মানুষ মারা গিয়েছিলেন।
১৫১৮
যুদ্ধক্ষেত্র থেকে কোনও মতে পালিয়ে দেশে ফেরেন কেপিও। এত প্রাণহানির জন্য রোমে তাঁর বিচার শুরু হয়। দোষী প্রমাণিত হওয়ার পর তাঁকে শাস্তি দেন রোমান সম্রাট। তাঁর নাগরিকত্ব কেড়ে নেওয়া হয়।
১৬১৮
কেপিওকে নির্বাসনের নির্দেশ দেওয়া হয়। নির্দেশে বলা হয়, রোম থেকে প্রায় ১৩০০ কিমি পর্যন্ত পথে তাঁকে কেউ আগুন বা জল দিতে পারবেন না। পরিবার বা বন্ধুদের সঙ্গে কথা বলতে পারবেন না কেপিও।
১৭১৮
এই শাস্তির মাঝেই পরিবারের হাতে নাকি সেই সোনার বাটের বড় অংশ তুলে দিয়ে গিয়েছিলেন কেপিও। শোনা যায়, বাকি জীবন এশিয়ার স্মিরনা নামে এক জায়গায় বাস করেছিলেন। সোনা নিয়ে ফূর্তিতেই ছিলেন তিনি।
১৮১৮
তবে কেপিওর সম্পত্তি নাকি অভিশাপ বয়ে এনেছিল তাঁর বংশধরদের জীবনেও। অল্পবয়সে যুদ্ধক্ষেত্রে মারা গিয়েছিলেন তাঁর নাতি। রোমান সম্রাট জুলিয়াস সিজ়ারের মৃত্যুর জন্য দায়ী ছিলেন তাঁর নাতির ছেলে মার্কাস জুনিয়াস ব্রুটাস। ইতিহাস তাঁকে চেনে ‘বিশ্বাসঘাতক’ হিসেবে। সিজ়ারের মৃত্যুর সঙ্গেই পতন হয় রোমান প্রজাতান্ত্রিক সাম্রাজ্যের।