Crude oil price concern know its impact on India due to Iran Israel conflict dgtl
Crude oil price
বেড়েই চলেছে দাম, ইরান-ইজ়রায়েল সংঘাতে খনিজ তেল নিয়ে বাড়ছে উদ্বেগ, ভারতের উপর পড়বে কতটা প্রভাব?
ইরান-ইজ়রায়েল সঙ্কটে বিশ্ববাজারে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে খনিজ তেলের দাম। ভারতের অর্থনীতিতে এর কতটা প্রভাব পড়বে?
আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
কলকাতাশেষ আপডেট: ০৮ অক্টোবর ২০২৪ ১২:০২
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১১৮
ইরান-ইজ়রায়েল সংঘাতের আঁচে পুড়ছে পশ্চিম এশিয়া। ইহুদি দেশে প্রায় ২০০টি ব্যালেস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে হামলা চালিয়েছে তেহরান। বদলা নিতে শিয়া মুলুকের তেলের ভান্ডারকে নিশানা করবে তেল আভিভ, আশঙ্কা এমনই। যা নিয়ে ভারত-সহ বিশ্বের তাবড় দেশগুলির কপালে পড়েছে চিন্তার ভাঁজ।
০২১৮
বিশ্বের খনিজ তেলের ভান্ডারের ১০ শতাংশ রয়েছে ইরানের হাতে। এ ছাড়া পারস্য উপসাগরের তীরের দেশটিতে মেলে বিপুল প্রাকৃতিক গ্যাস। দুনিয়ার ১৫ শতাংশ গ্যাস উৎপাদনকারী দেশ হল ইরান।
০৩১৮
শুধু তা-ই নয়, পেট্রোলিয়াম রফতানিকারী দেশগুলির সংস্থা (অর্গানাইজ়েশন অফ পেট্রোলিয়াম এক্সপোর্টিং কান্ট্রিজ়) বা ওপেকের মধ্যে দ্বিতীয় বৃহত্তম তেল উৎপাদনকারী রাষ্ট্রের নাম ইরান। এটি দুনিয়ার চতুর্থ তেল রফতানিকারী দেশ।
০৪১৮
চলতি বছরের অগস্টে ইরানের তেল উত্তোলনের পরিমাণ গত ছ’বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ সীমায় পৌঁছয়। ওই সময়ে দিনে প্রায় ৩৭ লক্ষ ব্যারেল ‘তরল সোনা’ উৎপাদন করছিল পারস্য উপসাগরের তীরের এই দেশ। পরে যা কিছুটা কমিয়ে দেয় তেহরান।
০৫১৮
এ হেন ইরানের তেলের খনি ও ভান্ডার ইজ়রায়েলি ডিফেন্স ফোর্স বা আইডিএফ ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়ে ধ্বংস করলে পরিস্থিতি যে ভয়াবহ আকার নেবে তা বলাই বাহুল্য। বিশেষজ্ঞদের একাংশের দাবি, ওই ঘটনা খনিজ তেলের সঙ্কট ডেকে আনতে পারে। ফলে বিশ্ব বাজারে অগ্নিমূল্য হবে অপরিশোধিত তেলের দর।
০৬১৮
ইহুদি ও শিয়া মুলুকের মধ্যে যুদ্ধ পরিস্থিতি তৈরি হওয়ায় ইতিমধ্যেই বিশ্ব বাজারে চড়েছে অশোধিত তেলের দাম। ওয়েস্ট টেক্সাস ইন্টারমিডিয়েট বা ডব্লিউটিআই ক্রুডের দর ব্যারেল প্রতি ৭৫ ডলারে পৌঁছেছে। ব্রেন্ট ক্রুড ও ওপেক বাস্কেটে দাম যথাক্রমে ব্যারেল প্রতি ৭৯ ও ৭৪ ডলারের মধ্যে ঘোরাফেরা করছে। যা ৮০ থেকে ৮৫ ডলারে যেতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।
০৭১৮
ডব্লিউটিআই ক্রুডের দাম গত এক সপ্তাহে ব্যারেল প্রতি প্রায় দেড় শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। পশ্চিম এশিয়ায় সংঘাত চরম পর্যায়ে গেলে এর সরবরাহ পুরোপুরি বন্ধ হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। তিন দিনে ব্রেন্ট ক্রুড ও ওপেক বাস্কেটে খনিজ তেলের দর যথাক্রমে ০.৫৫ শতাংশ ও ০.৩৮ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।
০৮১৮
আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশেষজ্ঞ স্টিফেন ইনেস এ প্রসঙ্গে উদ্বেগের স্বরে বলেছেন, ‘‘ইজ়রায়েলের উপর ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলা একমুখী প্রতিক্রিয়া, না কি আরও বড় কিছুর সূচনা? এটাই এখন সবচেয়ে বড় প্রশ্ন। বিশেষ করে আমেরিকা যে হেতু ইহুদিদের সমর্থনে রয়েছে।’’
০৯১৮
সম্প্রতি ইনেসের লেখা ‘দ্য ডার্ক সাইট অফ দ্য বুম’ নামের একটি প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে। সেখানে তিনি ইরান-ইজ়রায়েল সংঘাত কী ভাবে তেলের অর্থনীতিকে প্রভাবিত করতে পারে, তার ব্যাখ্যা দিয়েছেন। ‘‘ইহুদিরা পারস্য উপসাগরের তীরে তেলের ভান্ডার নষ্ট করলে তার সুদূরপ্রসারী অর্থনৈতিক পরিণাম দেখা যাবে। বিশ্বের অনেক দেশকেই যার ক্ষতিকর আঘাত সইতে হবে।’’ ওই প্রবন্ধে লিখেছেন স্টিফেন ইনেস।
১০১৮
বাজার বিশ্লেষকদের দাবি, অপরিশোধিত তেলের ক্রমবর্ধমান চাহিদা এমনিতেই বিশ্বের বহু দেশের অর্থনীতিকে দুর্বল করছে। এই পরিস্থিতিতে তরল সোনা আরও দামি হলে সেখানকার আর্থিক ব্যবস্থার কোমর ভাঙতে পারে। যা গরিব দেশ তো বটেই, উন্নয়নশীল রাষ্ট্রগুলির কপালেও চিন্তার ভাঁজ ফেলবে।
১১১৮
গবেষণা সংস্থা ‘ক্যাপিটাল ইকোনমিক্স’-এর দাবি, ইরান ফের ইজ়রায়েলের উপর হামলা চালালে ইহুদিদের হয়ে যুদ্ধে নামতে পারে আমেরিকা। বিশ্বব্যাপী তেল উৎপাদনের প্রায় ৪ শতাংশ আসে ইরান থেকে। শিয়া মুলুকের তেলের ভান্ডারে আঘাত হলে সৌদি আরব উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি করতে পারে। যা কিছুটা হলেও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সাহায্য করবে বলে দাবি করেছে সংস্থা।
১২১৮
এই পরিস্থিতিতে ওপেকের ভূমিকার ভূয়সী প্রশংসা করেছেন সংযুক্ত আরব আমিরশাহির জ্বালানিমন্ত্রী সুহেল আল-মাজরুই। তাঁর কথায়, ‘‘বিশ্বের তেলের চাহিদায় ভারসাম্য রাখতে ওপেক অন্যদের চেয়ে অনেক বেশি ত্যাগ স্বীকার করেছে। তা সত্ত্বেও এই সংস্থার সদস্য দেশগুলি কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে চলছে।’’
১৩১৮
ইরান-ইজ়রায়েল সংঘাত ভারতীয় অর্থনীতির উপরেও প্রভাব ফেলেছে। এই ইস্যুতে মুখ খুলে বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর বলেছেন, ‘‘পশ্চিম এশিয়ার সঙ্কট আমাদেরও স্পর্শ করেছে। বিশ্ব বাজারে তেলের দাম হু-হু করে বাড়ছে। এক জায়গার সংঘাত আর্থিক ভাবে সবাইকেই ক্ষতবিক্ষত করছে।’’
১৪১৮
বর্তমানে প্রায় ৮৫ শতাংশ অপরিশোধিত তেল বিদেশ থেকে আমদানি করে নয়াদিল্লি। যার ৩০ শতাংশ রাশিয়া থেকে কিনছে ভারত। ২০২২ সালে ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু করে মস্কোর উপর আর্থিক নিষেধাজ্ঞা চাপায় আমেরিকা থেকে শুরু করে একাধিক পশ্চিমি বিশ্ব। এর পরেই যুদ্ধের খরচ জোগাতে ও দেশের অর্থনীতি বাঁচাতে নয়াদিল্লিকে সস্তা দরে খনিজ তেল বিক্রির প্রস্তাব দেয় মস্কো। যা গ্রহণ করে নরেন্দ্র মোদী সরকার।
১৫১৮
আমদানি করা তেলের প্রায় ২৩ শতাংশ ওপেকভুক্ত দেশগুলির থেকে নিয়ে থাকে নয়াদিল্লি। রাশিয়া থেকে তেল কেনার আগে এই পরিমাণ ছিল প্রায় ৩৪ শতাংশ। ইরান-ইজ়রায়েল সংঘাত বড় আকার নিলে সৌদি বা আমিরশাহির থেকে তেল কেনার পরিমাণ বাড়ানোর সুযোগ থাকবে নরেন্দ্র মোদী সরকারের সামনে।
১৬১৮
এ ছাড়া দুনিয়ার সর্বাধিক খনিজ তেল উৎপাদনকারী দেশ সৌদি আরব-সহ পশ্চিম এশিয়ার একাধিক রাষ্ট্রের সঙ্গে সুসম্পর্ক রয়েছে নয়াদিল্লির। সেই তালিকায় আছে সংযুক্ত আরব আমিরশাহির নামও। সংঘাত বাড়লে ওপেকের অন্তর্গত এই দেশগুলিকে তেলের উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য অনুরোধ করতে পারে ভারত।
১৭১৮
রাশিয়া থেকে সস্তায় খনিজ তেল আমদানি করায় আপাতত ঘরোয়া বাজারে বাড়েনি পেট্রল-ডিজ়েল ও গ্যাসের দাম। তবে অনেকটা নেমে গিয়েছে এ দেশের তেল সংস্থাগুলির শেয়ারের দর। ইরান-ইজ়রায়েলের মধ্যে যুদ্ধ পরিস্থিতির উন্নতি না হলে যা অব্যাহত থাকবে বলেই মনে করা হচ্ছে।
১৮১৮
বিশেষজ্ঞদের অনুমান, ইহুদি ফৌজ শেষ পর্যন্ত ইরানের তেলের ভান্ডারে আঘাত হানলে বাধ্য হয়ে রাশিয়ার উপর থেকে বেশ কিছু নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করবে আমেরিকা। পাশাপাশি, ভেনেজুয়েলার উপরেও খনিজ তেল বিক্রি নিয়ে রয়েছে নিষাধাজ্ঞা। যা ওঠার প্রবল সম্ভাবনা রয়েছে।