Country that has witnessed 190 military coups dgtl
Military Coups in South American Country
পেশিশক্তির জোরে ১৯০ বার সরকার ফেলে দিয়েছে সেনা, পাকিস্তানের চেয়েও নড়বড়ে আমেরিকার পড়শি দেশ
দেশে যখন দারিদ্র, মূল্যবৃদ্ধি, বেকারত্ব এবং নৈরাজ্য সহনশীলতার মাত্রা ছাড়িয়ে যায়, সরকারের দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে তখন শক্তি বৃদ্ধি করে সেনাবাহিনী। তার পরেই হয় সামরিক অভ্যুত্থান।
আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
কলকাতাশেষ আপডেট: ০৫ অগস্ট ২০২৩ ০৭:৪৮
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১২১
কোনও দেশের সরকারের চেয়ে সেনা যখন বেশি শক্তিশালী হয়ে ওঠে, সেনাবাহিনী গায়ের জোরে নির্বাচিত সরকারকে সরিয়ে দেশের ক্ষমতা দখলের চেষ্টা করে। তাকেই বলে সামরিক অভ্যুত্থান।
০২২১
সামরিক অভ্যুত্থানে দেশের সেনাবাহিনীর সঙ্গে সেই দেশেরই সরকারের সংঘর্ষ হয়। অধিকাংশ ক্ষেত্রে যা হয়ে ওঠে রক্তক্ষয়ী। নির্বাচিত সরকারকে অস্ত্রের জোরে পরাজিত করে ক্ষমতার কুর্সিতে বসেন সেনাপ্রধান।
০৩২১
সেনাবাহিনী এবং সরকারের মধ্যে সংঘর্ষে দেশের জনগণ যদি সরকারের পক্ষ নেয়, তবে তারাও আক্রান্ত হয়। ক্ষমতা দখল করে দেশে সেনাশাসন জারি করেন সেনাবাহিনীর প্রধান।
০৪২১
বিশ্বব্যাঙ্কের তথ্য অনুযায়ী, যে দেশের হিউম্যান ডেভেলপমেন্ট ইনডেস্ক বা মানব উন্নয়ন সূচক (এইচডিআই) খুব কম থাকে, সেই দেশেই সামরিক অভ্যুত্থানের সম্ভাবনা তৈরি হয়। দেশে দারিদ্র বেড়ে গেলে, ক্ষুধা, মূল্যবৃদ্ধি, নৈরাজ্য মাথাচাড়া দিয়ে উঠলে এইচডিআই কমে আসে।
০৫২১
দেশের জনগণ সরকারের প্রতি আস্থা হারিয়ে ফেললে সেনাবাহিনীর সামনে সরকারের দুর্বলতা প্রকট হয়। তারা সরকার পক্ষের অনেক ক্ষমতাশালী ব্যক্তিকে ঘুরপথে নিজেদের দলে টেনে নেয়। এ ভাবেই রক্তক্ষয়ী সামরিক অভ্যুত্থানের ভিত প্রস্তুত হয়।
০৬২১
সামরিক অভ্যুত্থানে সাধারণত সেনাবাহিনীর জয় নিশ্চিত। তবে এই পরিস্থিতি থেকেও সরকারে ঘুরে দাঁড়ানো সম্ভব। যদি অন্য কোনও মিত্র দেশ সামরিক অভ্যুত্থানের সময় আক্রান্ত দেশটির সরকারকে সাহায্য করে, বাইরে থেকে যদি সামরিক সাহায্য আসে, সে ক্ষেত্রে সেনার প্রচেষ্টা ব্যর্থ হতে পারে।
০৭২১
সামরিক অভ্যুত্থানের অনেক নজির ছড়িয়ে আছে আন্তর্জাতিক ইতিহাসের পাতায়। পাকিস্তান থেকে শুরু করে মায়ানমার, ভারতের পড়শি দেশে এই ধরনের সেনা অভ্যুত্থান হয়েছে বার বার।
০৮২১
সম্প্রতি, সেনা অভ্যুত্থানের সাক্ষী থেকেছে পশ্চিম আফ্রিকার একটি দেশ। নাইজেরিয়ার উত্তরে নাইজার নামের ছোট্ট দেশটিতে শাসন ক্ষমতা দখল করে নিয়েছে সেনাবাহিনী।
০৯২১
প্রেসিডেন্ট মহম্মদ বাজ়োউমকে ক্ষমতাচ্যুত করা হয়েছে। নাইজারের চারদিকের সীমান্তও একেবারে বন্ধ করে দিয়েছেন সেনাপ্রধান। অন্য দেশের সাহায্যের পথ বন্ধ করে সামরিক শাসনের স্থায়িত্ব সুনিশ্চিত করেছেন।
১০২১
১৯৪৭ সালে ভারত ভাগের পর যে পাকিস্তানের জন্ম, সেখানেও বার বার সামরিক অভ্যুত্থান ঘটেছে। ১৯৫৮ থেকে ১৯৭১, ১৯৭৭ থেকে ১৯৮৮ এবং ১৯৯৯ থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত তিন দফায় সেনাবাহিনীর শাসন জারি হয়েছিল পাকিস্তানে।
১১২১
১৯৬২ থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত টানা ৪৯ বছর সেনা শাসনের অধীনে ছিল ভারতের আর এক প্রতিবেশী দেশ মায়ানমার। ২০২১ সাল থেকে ফের দেশটি সামরিক বাহিনীর শাসনাধীন।
১২২১
এ ছাড়া, নাইজেরিয়া, তাইল্যান্ড এবং আফ্রিকার বিভিন্ন দেশে মাঝে মাঝেই সামরিক অভ্যুত্থান ঘটেছে। বার বার দেশের জনগণ নির্বাচিত সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করেছে শক্তিশালী সেনাবাহিনী। কখনও সেনার অধীনে দেশে শান্তি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। কখনও নেমে এসেছে অশান্তির অন্ধকার।
১৩২১
সেনা অভ্যুত্থানের নজির সবচেয়ে বেশি আছে দক্ষিণ আমেরিকার একটি দেশে। স্বাধীনতার পর থেকে প্রায় ২০০ বার সেই দেশে সরকারকে সরিয়ে ক্ষমতা দখল করেছে সেনা।
১৪২১
দক্ষিণ আমেরিকার দক্ষিণ পশ্চিমের এক ধারে অবস্থিত বলিভিয়া। ১৮২৫ সাল পর্যন্ত দেশটি স্পেনের অধীনে ছিল। ওই বছরের অগস্ট মাসে বলিভিয়া স্বাধীন হয়।
১৫২১
তার পর থেকে এখনও পর্যন্ত বলিভিয়ার রাজনীতিতে বহু পালাবদল ঘটেছে। ১৯০ বার সেনা অভ্যুত্থান হয়েছে এই দেশে। ২০১৯ সালে শেষ বার সেনা বলিভিয়ার ক্ষমতা দখল করেছে।
১৬২১
২০১৯ সালের সেনা অভ্যুত্থান রক্তক্ষয়ী ছিল না। কারণ, সেনাবাহিনী আক্রমণ করলে বলিভিয়া সরকার নিজে থেকেই হার স্বীকার করে নেয়। পদত্যাগ করেন প্রেসিডেন্ট। তার পর থেকে দেশটিতে সেনাশাসন জারি রয়েছে।
১৭২১
বলিভিয়ায় নড়বড়ে সরকার এবং বার বার সামরিক অভ্যুত্থানের অন্যতম কারণ কিন্তু দারিদ্র নয়। এই দেশে প্রচুর পরিমাণে কফি উৎপন্ন হয়। কফির বীজ নিয়ে এ দেশে অশান্তির সূত্রপাত।
১৮২১
কফি উৎপাদনে সারা বিশ্বে বলিভিয়া তৃতীয়। কলম্বিয়া এবং পেরুর পরেই তার স্থান। এই কফির উপর বাইরের দেশগুলির নজর বহু দিনের। বাইরে থেকে বলিভিয়ার রাজনীতিতে প্রভাব বিস্তার করে দেশে অশান্তির আবহ তৈরি করা হয় বলে অভিযোগ।
১৯২১
অশান্ত বলিভিয়ায় সামরিক অভ্যুত্থান এখন জলভাত হয়ে গিয়েছে। দেশের সাধারণ নাগরিকদেরও সেনা এবং সরকারের এই সংঘর্ষে অংশ নিতে দেখা যায়।
২০২১
সামরিক অভ্যুত্থানের নিরিখে পাকিস্তানের চেয়েও নড়বড়ে বলিভিয়া। পাকিস্তানে কোনও প্রধানমন্ত্রী পাঁচ বছরের মেয়াদ পূর্ণ করে টিকে থাকতে পারেননি বটে, তবে সেখানে ১৯৯৯ সালের পর থেকে সেনা অভ্যুত্থানও হয়নি।