Controversy erupted over the new version of Kazi Nazrul Islam’s song Karar Oi Louho Kapat as recreated by Music Composer A R Rahaman for the Film Pippa dgtl
১০০ বছরের বেশি আগে এই গান রচনা করেছিলেন বাঙালি কবি নজরুল। ১৯২১ সালের ডিসেম্বর মাসে এই গান রচনা করেছিলেন তিনি।
আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
কলকাতাশেষ আপডেট: ১০ নভেম্বর ২০২৩ ১৬:৪৮
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১২১
বলিউডে সাম্প্রতিক অতীতে নজরুলগীতির ব্যবহার হয়েছে বলে মনে পড়ে না। তবে হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই শুরু হল বিতর্ক।
০২২১
বিতর্কের মূলে কবি কাজী নজরুল ইসলামের লেখা ‘ভাঙার গান’। তবে আপাতত তাঁর সেই গানকেই ভেঙেচুরে শেষ করার দায় চেপেছে দেশের ‘শ্রেষ্ঠ’ সঙ্গীত পরিচালক এ আর রহমানের উপর।
০৩২১
‘কারার ওই লৌহ কপাট গানটি’র খোলনলচে বদলে দিয়েছেন অস্কারজয়ী ভারতীয় সঙ্গীত পরিচালক রহমান। তা নিয়েই বিরক্ত বাঙালি। বিরক্ত সঙ্গীতপ্রেমী এবং শিল্পীমহলও।
০৪২১
সমাজমাধ্যমে ইতিমধ্যেই এ নিয়ে ঝড় উঠেছে প্রতিবাদের। অধিকাংশেরই বক্তব্য, নজরুলগীতির সুর বদলে যে নবরূপ দিয়েছেন রহমান, তা কর্ণকুহরে বিষের মতো ঢুকছে। যদিও উদারবাদীদের একাংশ তা মনে করছেন না।
০৫২১
উদারবাদীদের একাংশের বক্তব্য, রবীন্দ্র সঙ্গীতের সুর-কথা বদল করা নিয়ে একটা সময়ে নিষেধাজ্ঞা ছিল। এখন তা নেই। কিন্তু নজরুলগীতিতে তো কখনওই তেমন বিধি নিষেধ ছিল না। তা হলে আপত্তি কিসের! এই দলে রয়েছেন খোদ বাংলার এক সঙ্গীতশিল্পীও।
০৬২১
এই শিল্পী নিজেই বছর খানেক আগে নজরুলের এই ভাঙার গান গেয়ে একটি অ্যালবাম বানিয়েছিলেন। নাম শোভন গঙ্গোপাধ্যায়। তাঁর সেই অ্যালবামে তাঁর সঙ্গে গান গেয়েছিলেন আরও কয়েকজন শিল্পী। এঁদেরই একজনের নাম আবার দেখা যাচ্ছে রহমানের ‘কারার ওই লৌহ কপাট’ গানেও। তিনি কী বলছেন?
০৭২১
এক সংবাদ সংস্থাকে শোভন জানিয়েছেন, তিনি এতে কিছু দোষের দেখছেন না। কারণ, নজরুল গীতির সুর নিয়ে কোনও বাঁধাধরা নিয়মকানুন নেই। নজরুলের লেখা কবিতাকে কোনও সুরকার বা শিল্পী তাঁর নিজের মতো নজরে দেখতেই পারেন। সেটা শিল্পীর স্বাধীনতা হিসাবে দেখা যেতে পারে।
০৮২১
শোভনের মতোই উদারপন্থীদের একাংশের আরও একটি যুক্তি হল, এ আর রহমানের সুরের দৌলতে নজরুলের লেখা এই গান বিশ্বের দরবারে পৌঁছচ্ছে। সেটাও তো দেখতে হবে। যাঁরা কখনও এ গান শোনেননি, তাঁরা এই গান শুনছেন। এটাও তো প্রাপ্তি হিসাবে ধরতে হবে।
০৯২১
যদিও এই উদারপন্থীদেরই একাংশ আবার বলছেন, মন খোলা রেখে গানটি শুনেও শেষ পর্যন্ত ভাল লাগাতে পারেননি তাঁরা। এক্স হ্যান্ডলে এক বাঙালি লিখেছেন, ‘‘আমি চেষ্টা করেছিলাম কোনও রকম পক্ষপাতিত্ব না রেখে গানটি শোনার। উদার ভাবে বিষয়টি দেখার। কিন্তু শেষ পর্যন্ত পারলাম না। ওই সুর, তার চারপাশের সঙ্গীত মূর্ছনা সব কেমন গুলিয়ে দিল।’’
১০২১
আর সমালোচনা তো থামতেই চাইছে না। শিল্পী রাঘব চট্টোপাধ্যায় লিখেছেন, ‘‘শিল্পী হিসাবে এবং বাঙালি হিসাবে আমি এই গান একেবারেই মেনে নিতে পারছি না। রহমান গানটিকে যথেচ্ছ বদলে দিয়েছেন। তার উপর আবার দাবি করেছেন এই গানটির সুর দিয়েছেন তিনি নিজে। যেখানে ছোট থেকে জানি, এই গান লিখেছিলেন এবং সুর দিয়েছিলেন কাজী নজরুল ইসলাম স্বয়ং। আরও বিস্ময়কর ব্যাপার হল, এই গানটি যাঁরা গেয়েছেন তাঁরা প্রত্যেকেই বাঙালি। অথচ তাঁরা একবারও এই গান গাওয়ার জন্য প্রতিবাদ করলেন না!’’
১১২১
শিল্পী লোপামুদ্রাও লিখেছেন প্রতিবাদের কথা। লিখেছেন, বাঙালি কোনও রকম অন্যায় সহ্য করে না। তবে একই সঙ্গে তিনি মনে করিয়ে দিয়েছেন, এই যত প্রতিবাদ তার সবটাই সমাজমাধ্যম ভিত্তিক। শিল্পী লিখেছেন, ‘‘বাঙালি জেগে উঠেছে ফেসবুকে। আবার ভুলেও যাবে।’’
১২২১
অপছন্দের কথা জানিয়েছেন পণ্ডিত অজয় চক্রবর্তীও। তিনি বলেছেন, ‘‘রহমানকে আমি ব্যক্তিগত পর্যায়ে চিনি। তাই বলছি, ওঁর কাছ থেকে এটা আশা করা যায়নি।’’
১৩২১
সমালোচনা করেছেন শিল্পী হৈমন্তী শুক্লা, সঙ্গীত পরিচালক দেবজ্যোতি মিশ্র, প্রবুদ্ধ বন্দ্যোপাধ্যায়ও।
১৪২১
কিন্তু কী এমন আছে ওই গানে? কেন রহমানের গান নিয়ে বিতর্ক? তিনি কি সত্যিই কারার ওই লৌহ কপাট গানটিকে বদলে দিয়েছেন? তার আগে জেনে নেওয়া যাক বিতর্কের শুরু কোথা থেকে।
১৫২১
মুক্তি পেতে চলা সিনেমা ‘পিপ্পা’র কয়েকটি গান সম্প্রতি মুক্তি পেয়েছিল সমাজমাধ্যমে। এই সিনেমার সঙ্গীত পরিচালনা করেছেন এ আর রহমান। মোট পাঁচটি গান রয়েছে সিনেমাটিতে। তার মধ্যেই একটি ‘কারার ওই লৌহ কপাট’।
১৬২১
অভিনেত্রী বিদ্যা বালনের স্বামী সিদ্ধার্থ রয় কাপুর এবং ইউটিভি মোশন পিকচার্সের প্রধান রনি স্ক্রুওয়ালার প্রযোজনায় এই সিনেমা নিয়ে এর আগে যত না আলোচনা হয়েছে, ওই গান মুক্তি পাওয়ার পর তা শতগুণ বেড়ে যায়।
১৭২১
১০০ বছরের বেশি আগে এই গান রচনা করেছিলেন বাঙালি কবি নজরুল। ১৯২১ সালের ডিসেম্বর মাসে এই গান রচনা করেছিলেন তিনি। ওই বছরই দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশের সম্পাদনায় প্রকাশিত হয় ‘বাংলার কথা’ পত্রিকা। গান্ধীজির সত্যাগ্রহ আন্দোলনের জন্য বহু স্বাধীনতা সংগ্রামী তখন ইংরেজদের হাতে বন্দি।
১৮২১
ওই বছরই জেলে যেতে হয় চিত্তরঞ্জনকেও। নজরুল ‘ভাঙার গান’ লিখেছিলেন চিত্তরঞ্জনের স্ত্রী বাসন্তী দেবীর অনুরোধে। শোনা যায়, ১৯২২ সালের ২০ জুন কবিতা হিসাবে প্রকাশিত হয় এটি। পরে নাকি হুগলির জেলে দেশবন্ধু ও অন্য বন্দিরা একসঙ্গে এই গান গাইতেনও। গানের কথায় বন্দিশালায় আগুন জ্বালানো, তালা ভাঙার মতো শব্দ এবং তার প্রভাব জনমানসে পড়তে দেখে তড়িঘড়ি ব্রিটিশ সরকার নিষিদ্ধ করে এই গান।
১৯২১
পরবর্তী কালে ১৯৪৯ সালে ‘চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার লুণ্ঠন’ সিনেমায় ব্যবহার করা হয় ‘কারার ঐ লৌহ কপাট’। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধেও অনুপ্রেরণা জুগিয়েছিল ‘ভাঙার গান’। এমন যার ইতিহাস সেই গানের সুর বদলে দিয়েছেন রহমান। যা নিয়ে এখন বিতর্ক।
২০২১
স্বাভাবিক ভাবেই বিতর্ক তুঙ্গে উঠেছে। ভারত এবং বাংলাদেশ দু’দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের সঙ্গে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে এই গান। বাংলার এক সঙ্গীত পরিচালক জানিয়েছেন, এ গান শুনে গায়ে কাঁটা দিত। আর এখন রহমানের কম্পোজিশন শুনে চিৎকার ছাড়া কিছু মনে হচ্ছে না।
২১২১
সমাজমাধ্যমে কেউ কেউ আবার বলেছেন, ‘‘এই গানকেও যে প্রেমের গান হিসাবে ব্যবহার করা যায়, তা রহমানই দেখালেন। তবে এ গান শুনে কান চাপা দেব না কি মাথা ঠুকব, বুঝে উঠতে পারছি না।’’