CID challenges Kamduni Verdict of Calcutta High Court and went Supreme Court dgtl
Kamduni Rape and Murder Case
হাই কোর্টের কামদুনি-রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে গেল তদন্তকারী সংস্থাই! কিন্তু কেন?
কামদুনি নিয়ে হাই কোর্টের রায়ে স্থগিতাদেশ চেয়ে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছে রাজ্যের তদন্তকারী সংস্থা সিআইডি। সোমবার সকালেই এ ব্যাপারে সুপ্রিম কোর্টে একটি বিশেষ আবেদন করা হয়েছে।
আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
কলকাতাশেষ আপডেট: ০৯ অক্টোবর ২০২৩ ১৬:৩০
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১২২
কামদুনি নিয়ে হাই কোর্টের রায়ে স্থগিতাদেশ চেয়ে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছে রাজ্যের তদন্তকারী সংস্থা সিআইডি। সোমবার সকালেই এ ব্যাপারে সুপ্রিম কোর্টে একটি বিশেষ আবেদন করা হয়েছে।
০২২২
সেই মামলা জরুরি ভিত্তিতে শোনা হয় শীর্ষ আদালতের চার বিচারপতির বেঞ্চে। সুপ্রিম কোর্ট এখনই হাই কোর্টের নির্দেশে স্থগিতাদেশ না দিলেও কয়েকটি নির্দেশ দিয়েছে। সেই সঙ্গে বেঁধে দিয়েছে সময়ও।
০৩২২
কামদুনির ধর্ষণ এবং খুনের মামলায় গত শুক্রবার রায় ঘোষণা করে কলকাতা হাই কোর্ট। এই মামলায় যে তিন জনের ফাঁসির নির্দেশ দিয়েছিল নিম্ন আদালত, তাদের মধ্যে এক জনকে বেকসুর খালাস করে হাই কোর্ট। বাকি দু’জনের সাজা কমিয়ে আমৃত্যু কারাদণ্ড দেওয়া হয়।
০৪২২
পাশাপাশি আরও চার দোষী সাব্যস্তের সাজা মকুবও করে কলকাতা হাই কোর্টের বিচারপতি জয়মাল্য বাগচী এবং বিচারপতি অজয়কুমার গুপ্তের ডিভিশন বেঞ্চ। সেই নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করেই সোমবার সুপ্রিম কোর্টে গিয়েছিল তদন্তকারী সংস্থা সিআইডি।
০৫২২
কেন ওই স্থগিতাদেশ চাওয়া হচ্ছে, তার যুক্তি হিসাবে সিআইডি জানায়, এই ধরনের অপরাধের অপরাধী বেকসুর খালাস পেলে রাজ্যে আইনশৃঙ্খলার সমস্যা হবে, তাই হাই কোর্টের রায়ে অবিলম্বে স্থগিতাদেশ দেওয়া হোক। তার পরও অবশ্য সোমবার শীর্ষ আদালত হাই কোর্টের রায়ে স্থগিতাদেশ দেয়নি।
০৬২২
মামলাটি শুনানির জন্য ওঠে বিচারপতি বিআর গাভাইয়ের নেতৃত্বাধীন চার বিচারপতির বেঞ্চে। সুপ্রিম কোর্টের বেঞ্চ রাজ্য সরকারের বক্তব্য শোনার পর সোমবার বলে, আগে এই মামলার সব পক্ষের বক্তব্য শুনতে চায় তারা। তার পর স্থগিতাদেশ নিয়ে সিদ্ধান্ত হবে।
০৭২২
একই সঙ্গে যে ফাঁসির সাজাপ্রাপ্তকে বেকসুর খালাস করেছিল হাই কোর্ট, তাঁর কাছেও জানতে চাওয়া হয়েছে, কেন তাঁর বিরুদ্ধে কোনও পদক্ষেপ করা হবে না? উত্তর দেওয়ার জন্য সাত দিন সময় বেঁধে দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। বেঞ্চ জানিয়েছে, এক সপ্তাহ পর আবার মামলাটি শুনবে সুপ্রিম কোর্ট।
০৮২২
রাজ্যের তরফে সোমবার সুপ্রিম কোর্টে সওয়াল করেন প্রবীণ আইনজীবী কপিল সিব্বল এবং আইনজীবী গোপাল শঙ্করনারায়ণ। তাঁরাই সুপ্রিম কোর্টকে জানান, ধর্ষণের ঘটনায় ফাঁসির সাজা প্রাপ্ত এক আসামীকে বেকসুর খালাস করেছে হাই কোর্ট।
০৯২২
সেই সঙ্গে নিম্ন আদালতে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্তেরও সাজা মকুব করেছে হাই কোর্ট। ঘটনাটির গুরুত্ব এবং ভয়াবহতার কথা মনে করিয়ে দিয়ে রাজ্যের তরফে আইনজীবীরা বলেছিলেন, এমন একটি মামলার দোষীদের যদি ছেড়ে দেওয়া হয় তবে রাজ্যে অশান্তি তৈরি হবে।
১০২২
ঘটনার দশ বছর পরে গত শুক্রবার কামদুনি ধর্ষণ এবং হত্যা মামলার রায় ঘোষণা করে কলকাতা হাই কোর্ট।
১১২২
উত্তর ২৪ পরগনার বারাসত থেকে ১৬ কিলোমিটার দূরে কামদুনি গ্রামে বছর দশেক আগে ঘটে যাওয়া একটি ধর্ষণের ঘটনা ঝড় তুলেছিল রাজ্যে।
১২২২
২০১৩ সালের ৭ জুন। দিনটা ছিল বুধবার। বৃষ্টি হচ্ছিল। ওই দিন বিকেলে পরীক্ষা দিয়ে বাড়ি ফিরছিলেন ডিরোজিও কলেজের বিএ দ্বিতীয় বর্ষের এক ছাত্রী। কামদুনি বাস স্ট্যান্ডে তাঁর ভাইয়ের যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তিনি আসতে দেরি করায় ওই তরুণী একাই রওনা দেন বাড়ির উদ্দেশে। কিন্তু নিজের এলাকাতেও নিরাপদ ছিলেন না তিনি।
১৩২২
হেঁটে বাড়ি ফেরার পথে ওই তরুণীকে টেনেহিঁচড়ে পাঁচিলঘেরা পরিত্যক্ত একটি জায়গায় নিয়ে যান ৯ দুষ্কৃতী। সেখানে দুষ্কৃতীরা ওই তরুণীকে ধর্ষণ করেন। এর পর গভীর রাতে ওই জায়গায় পাওয়া যায় তরুণীর ব্যাগ। পাওয়া যায় ওই তরুণীর ছিন্নভিন্ন দেহও।
১৪২২
ওই ঘটনার নৃশংসতা ছিল শিউরে ওঠার মতো। নিহত তরুণীর পরিবারের দাবি, তাঁর উপর শারীরিক নির্যাতন চালানোর পর দুষ্কৃতীরা তাঁর দেহ চিরে দেয় নাভি পর্যন্ত।
১৫২২
ওই ঘটনায় ক্ষুব্ধ গ্রামবাসীদের একাংশ দোষীদের চরম শাস্তির দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন। সেই আন্দোলনের প্রধান মুখ হয়ে ওঠেন নিহত তরুণীর সহপাঠী টুম্পা কয়াল এবং মৌসুমী কয়াল। ওই আন্দোলনে শামিল হন রাজ্যের বিদ্বজ্জনেদের একাংশও। কামদুনিকাণ্ড নিয়ে তপ্ত হয়ে ওঠে বিধানসভাও।
১৬২২
কামদুনিতে গিয়ে গ্রামবাসীদের ক্ষোভের মুখে পড়েন রাজ্যের মন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক এবং বসিরহাটের তৎকালীন তৃণমূল সাংসদ হাজি নুরুল ইসলাম। ওই বছরের ১০ জুন কামদুনিকাণ্ডের তদন্তভার দেওয়া হয় সিআইডিকে। ওই কাণ্ডে গ্রেফতার করা হয় মোট ৯জনকে।
১৭২২
ওই বছরেরই ১৭ জুন কামদুনিতে যান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেখানে তিনি প্রতিশ্রুতি দেন ১৫ দিনের মধ্যে ধৃতদের বিরুদ্ধে চার্জশিট দেবে পুলিশ। সরকার দোষীদের মৃত্যুদণ্ডের জন্য আবেদন করবে বলেও জানান তিনি। নির্যাতিতা তরুণীর পরিবারের পাশে থাকার আশ্বাস দেন তিনি। মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে বাদানুবাদে জড়িয়ে পড়েন টুম্পা এবং মৌসুমী।
১৮২২
গত শুক্রবার হাই কোর্টে কামদুনি-রায় ঘোষণা হতেই হতাশায় ভেঙে পড়েন কামদুনির সুবিচার চেয়ে আন্দোলনকারী মৌসুমী এবং টুম্পারা। বিচারপতিদের এজলাসে যাওয়ার পথে রাস্তাতেই বসে পড়ে কান্নাকাটি শুরু করেন তাঁরা। কাঁদতে কাঁদতে অজ্ঞানও হয়ে যান মৌসুমী!
১৯২২
উচ্চ আদালতের রায়ে অনাস্থা প্রকাশ করে টুম্পা বলেছিলেন, “আমাদের বন্ধুর জন্য আমরা সেই ২০১৩ সাল থেকে আন্দোলন করছি। আমাদের উপর কম অত্যাচার হয়নি। আমরা সব সহ্য করেছি। কিন্তু এত বছর অপেক্ষার পর এই হল! কিন্তু আমরা থেমে থাকব না।’’
২০২২
২০১৩ সালে কামদুনিকাণ্ডের সময়ে গ্রামবাসীদের যে আন্দোলন হয়েছিল, তাতে নেতৃত্ব দেন শিক্ষক প্রদীপ মুখোপাধ্যায়। শুক্রবার হাইকোর্টের রায় শোনার পর আনন্দবাজার অনলাইনকে নিজের বক্তব্য জানান তিনিও।
২১২২
তিনি বলেন, “এই রায়ে একেবারেই খুশি নই। সুপ্রিম কোর্টে তো যাবই। তার আগে বৃহত্তর আন্দোলনের কথা এখন থেকেই ভাবতে শুরু করেছি। ঠিক কী কী আমরা করব, তা খুব তাড়াতাড়ি ঘোষণা হবে।’’
২২২২
এই আবহেই সোমবার হাই কোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে শীর্ষ আদালতে গেল রাজ্যের তদন্তকারী সংস্থা সিআইডি-ই।