পশ্চিম এশিয়ায় ছ’টি অত্যাধুনিক যুদ্ধজাহাজ পাঠিয়েছে চিন। ইজ়রায়েল-হামাস যুদ্ধ নিয়ে তাদের অবস্থান দোলাচলে। তাই পশ্চিম এশিয়ায় চিনা রণতরী আলোচনার কেন্দ্রে উঠে এসেছে।
আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
কলকাতাশেষ আপডেট: ২৯ অক্টোবর ২০২৩ ০৮:১৫
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১২০
পশ্চিম এশিয়ার যুদ্ধে চিনের ভূমিকা নিয়ে চর্চা চলছেই। প্রথমে প্যালেস্টাইনের স্বার্থরক্ষার কথা বললেও সম্প্রতি অবস্থান কিছুটা বদলাতে দেখা গিয়েছে বেজিংকে।
০২২০
চিনের বিদেশমন্ত্রী ওয়াং ই গাজ়ায় ইজ়রায়েল সেনার হামলাকে কার্যত সমর্থন করে বলেছেন, ‘‘প্রত্যেক দেশেরই আত্মরক্ষার অধিকার রয়েছে।’’ অর্থাৎ, আত্মরক্ষার খাতিরেই যে গাজ়ায় আক্রমণ চালিয়েছে ইজ়রায়েল, তা বেজিং মেনে নিয়েছে।
০৩২০
যদিও সেই সঙ্গে তেল আভিভের প্রতি ওয়াংয়ের বার্তা ছিল, ‘‘এমন পরিস্থিতিতে আন্তর্জাতিক মানবিক আইন মেনে চলা উচিত। অসামরিক নাগরিকদের যাতে ক্ষতি না হয়, সে দিকে নজর দেওয়া উচিত।’’
০৪২০
এ বার পশ্চিম এশিয়ায় যুদ্ধজাহাজ পাঠাল চিন। একটি বা দু’টি নয়, একসঙ্গে ছ’টি চিনা রণতরী পশ্চিম এশিয়া সংলগ্ন সমুদ্রে পৌঁছেছে।
০৫২০
যুদ্ধ নিয়ে চিনের অবস্থান দোলাচলে। তার মাঝে কেন হঠাৎ ছ’টি অত্যাধুনিক রণতরী সেই যুদ্ধক্ষেত্রে পাঠাল জিনপিং সরকার? কার সমর্থনে চিনা রণতরী ভাসছে ভূমধ্যসাগরের জলে?
০৬২০
সাউথ চায়না মর্নিং পোস্টের প্রতিবেদন অনুযায়ী, চিনের ছ’টি রণতরী গত ১৪ অক্টোবর ওমানের রাজধানী মাস্কাট থেকে পশ্চিম এশিয়ার উদ্দেশে রওনা দিয়েছে।
০৭২০
এই ছ’টি যুদ্ধজাহাজের মধ্যে একটির নাম জ়িবো। এটি টাইপ ০৫২ডি রণতরী, যা কোনও লক্ষ্যবস্তুর দিকে ধেয়ে আসা ক্ষেপণাস্ত্র সহজেই ধ্বংস করে দিতে পারে।
০৮২০
এ ছাড়া আছে জিংঝৌ এবং কিয়ানডাহু। এই দু’টিই চিনা নৌ বাহিনীর অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অস্ত্র। ওমানে সামরিক অভিযানে এই রণতরীগুলি নিযুক্ত ছিল।
০৯২০
ওমানে চিনের ৪৪তম নৌ টাস্কফোর্সের অন্তর্গত ছিল ছ’টি যুদ্ধজাহাজ। গাজ়ায় ইজ়রায়েলি হামলা শুরু হওয়ার পর সেগুলিই ওমান থেকে সরিয়ে পশ্চিম এশিয়ার পাঠানো হয়েছে।
১০২০
কেন একসঙ্গে এতগুলি যুদ্ধজাহাজ পশ্চিম এশিয়ায় পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিলেন জিনপিং, তা স্পষ্ট নয়। কারণ, বেজিং রণতরী পাঠানোর বিষয়ে মুখ খোলেনি।
১১২০
তবে অনেকে মনে করছেন, পশ্চিম এশিয়ার যুদ্ধ পরিস্থিতি নিয়ে চিন বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করছে। আপাতত সেখানে তারা ধীরেসুস্থেই খেলতে চাইছে। তাই পরিস্থিতি নজরে রাখতে পাঠানো হয়েছে এই যুদ্ধজাহাজ।
১২২০
অনেকে আবার এই নজরদারির তত্ত্ব উড়িয়ে দিয়েছেন। তাঁদের মতে, ইজ়রায়েল এবং প্যালেস্টাইনে যুদ্ধের কারণে আটকে পড়া চিনা নাগরিকদের উদ্ধার করতে রণতরী পাঠিয়েছে বেজিং।
১৩২০
পশ্চিম এশিয়ায় যুদ্ধ শুরুর পর আমেরিকা সেখানে পাঠিয়েছে তাদের অত্যাধুনিক ‘ইউএসএস জেরাল্ড’ আর ‘ফোর্ড’। এটি একটি অত্যাধুনিক বিমান পরিবহণকারী যান। এ ছাড়া আমেরিকান যোদ্ধাদের একটি গোষ্ঠীও ইজ়রায়েলে গিয়েছে।
১৪২০
আমেরিকা, ব্রিটেন, জার্মানি, ফ্রান্স প্রভৃতি দেশ পশ্চিম এশিয়ায় সাধারণ অথবা যুদ্ধবিমান পাঠিয়েছে সেখানে আটকে পড়া নিজ নিজ নাগরিকদের উদ্ধার করার জন্য।
১৫২০
গত ৭ অক্টোবর ইজ়রায়েলের ভূখণ্ডে ঢুকে হামলা চালায় প্যালেস্টাইনের সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাস। তার পরেই ইজ়রায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু হামাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেন।
১৬২০
তার পর থেকে যুদ্ধে পশ্চিম এশিয়ায় মৃত্যুমিছিল জারি। প্যালেস্টাইনের স্বাস্থ্যমন্ত্রক জানিয়েছে, যুদ্ধে সাত হাজারের বেশি মৃত্যু হয়েছে গাজ়ায়। তাতে রয়েছে প্রচুর সংখ্যক শিশুও।
১৭২০
ভারত, আমেরিকা, ব্রিটেন, ইউরোপীয় ইউনিয়ন-সহ নানা দেশ এবং রাষ্ট্রগোষ্ঠী হামাসের হামলার নিন্দা করে ইজ়রায়েলকে সমর্থন জানালেও জিনপিং সরকার প্রথমে কোনও বিবৃতি দেয়নি।
১৮২০
যুদ্ধ নিয়ে প্রথম দিকে চিনের উদাসীনতা ছিল চোখে পড়ার মতো। বেজিংয়ে প্রকাশ্য রাস্তায় এক ইজ়রায়েলি কূটনীতিকের উপর প্রাণঘাতী হামলা হলেও প্রকাশ্যে দুঃখপ্রকাশ করেনি চিন সরকার বা ক্ষমতাসীন কমিউনিস্ট পার্টি!
১৯২০
এর পর এক সময় মুখ খোলেন জিনপিং। তিনি প্যালেস্তেনীয় যোদ্ধাদের সমর্থন করে মিশর এবং অন্যান্য আরব দেশের সঙ্গে সমন্বয়ের মাধ্যমে অবিলম্বে সংঘর্ষ বিরতির আহ্বান জানান। পরে ইজ়রায়েলের আত্মরক্ষার তত্ত্বও উঠে আসে তাঁরই বিদেশমন্ত্রীর মুখে।
২০২০
পশ্চিম এশিয়ায় যুদ্ধ পরিস্থিতি সম্পর্কে চিন কোন নীতি গ্রহণ করবে, সে দিকে তাকিয়ে আছে গোটা বিশ্ব। কারণ, এর আগে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে তারা রাশিয়ার পক্ষ নিয়েছিল এবং চিনের অর্থনীতিতে সেই যুদ্ধের নেতিবাচক প্রভাব পড়েছিল। সে কথা এ বারের যুদ্ধের সময় চিন মনে রেখেছে কি না, তা অবশ্য সময়ই বলবে।