CBI officials searching in former and present chairmans of various municipalities in municipal recruitment case dgtld
Municipality Recruitment Case
সিবিআই ঢুকে পড়ছে একের পর এক নেতা-মন্ত্রীর বাড়িতে! তালিকায় কে কে? কেনই বা তল্লাশি?
বেলা গড়ালে জানা যায়, শুধু ফিরহাদ-মদনের বাড়িতেই নয়, একসঙ্গে তল্লাশি চলছে কাঁচড়াপাড়া, ব্যারাকপুর, হালিশহর, দমদম, উত্তর দমদম, কৃষ্ণনগর, টাকি, কামারহাটি পুর এলাকার একাধিক জায়গায়।
আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
কলকাতাশেষ আপডেট: ০৮ অক্টোবর ২০২৩ ১৪:২৬
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১৩০
রবিবার সকাল থেকেই রাজ্যের মন্ত্রী, বিধায়কের বাড়ি-সহ অন্তত এক ডজন জায়গায় তল্লাশি শুরু করেছে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা সিবিআই।
০২৩০
রবিবার প্রথমে কলকাতার মেয়র তথা রাজ্যের পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমের চেতলার বাড়িতে যায় সিবিআইয়ের একটি দল। তার পরই জানা যায় যে, রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী তথা কামারহাটির বিধায়ক মদন মিত্রের ভবানীপুরের বাড়িতেও হানা দিয়েছে সিবিআই।
০৩৩০
কামারহাটি পুরসভার অন্তর্গত দক্ষিণেশ্বরের যে আবাসনে মদন থাকেন, সেখানেও হানা দিয়েছে সিবিআইয়ের তিন সদস্যের একটি দল।
০৪৩০
রবিবার সকালে সিবিআইয়ের একটি দল চেতলায় ফিরহাদের বাড়িতে পৌঁছয়। বাড়ির ভিতর ঢুকে তল্লাশি চালানো শুরু করে তারা। বাইরে দাঁড়িয়ে বাড়ি ঘিরে রাখেন কেন্দ্রীয় বাহিনীর সশস্ত্র জওয়ানেরা। বাড়ির ভিতরে প্রবেশের ক্ষেত্রেও ব্যাপক কড়াকড়ি করা হয়।
০৫৩০
ফিরহাদের বাড়ির সামনে জড়ো হন তাঁর অনুগামীরা। বাড়ির বাইরে দাঁড়িয়ে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন অনেকে। ওঠে কেন্দ্রীয় সরকার এবং বিজেপি-বিরোধী স্লোগান। তাঁদের অভিযোগ, রাজনৈতিক কারণেই এই সিবিআই হানা। বাড়ির বাইরে সিআরপিএফ জওয়ানদের সঙ্গে কথা কাটাকাটিতে জড়িয়ে পড়েন ফিরহাদ-কন্যা প্রিয়দর্শিনী হাকিম।
০৬৩০
বেলা গড়ালে জানা যায়, শুধু ফিরহাদ-মদনের বাড়িতেই নয়, হালিশহর এবং কাঁচরাপাড়া পুরসভার দুই প্রাক্তন পুরপ্রধানের বাড়িতেও হানা দিয়েছে সিবিআইয়ের দল।
০৭৩০
তার পর সময় যত এগোতে থাকে, ততই বাড়তে থাকে সিবিআই-তল্লাশি চলছে, এমন বাড়ির সংখ্যা। দুপুরের দিকে জানা যায়, একসঙ্গে তল্লাশি চলছে কাঁচরাপাড়া, ব্যারাকপুর, হালিশহর, দমদম, উত্তর দমদম, কৃষ্ণনগর, টাকি, কামারহাটি পুর এলাকায়।
০৮৩০
সিবিআই সূত্রে জানা যায়, রবিবার সাতসকালে প্রচুর সংখ্যক সিআরপিএফ জওয়ানকে নিয়ে কলকাতার নিজাম প্যালেসের দফতর থেকে বেরোন কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার আধিকারিকেরা। সোজা ঢোকেন ফিরহাদের বাড়িতে। অন্য দিকে, সিবিআইয়ের একটি দল যায় কামারহাটির বিধায়ক মদন মিত্রের ভবানীপুরের বাড়ির দিকে।
০৯৩০
আরও কয়েকটি দলে বিভক্ত হয়ে রাজ্যের একাধিক পুরসভার প্রাক্তন এবং বর্তমান পুরপ্রতিনিধিদের বাড়িতে পৌঁছে যান সিবিআই আধিকারিকেরা।
১০৩০
সিবিআইয়ের চার সদস্যের একটি দল যায় হালিশহর পুরসভার প্রাক্তন পুরপ্রধান অংশুমান রায়ের বাড়িতে। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ২০১০ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত হালিশহরের পুরপ্রধান ছিলেন ওই তৃণমূল নেতা। তাঁর বাড়ির আলমারি ঘেঁটে কাগজপত্র বার করা হয়।
১১৩০
কাঁচরাপাড়া পুরসভার প্রাক্তন পুরপ্রধান সুদমা রায়ের বাড়িতেও সিবিআই তল্লাশি শুরু হয়েছে। সুদমার এক ঘনিষ্ঠ জানান, প্রাক্তন পুরপ্রধানের কাঁচরাপাড়ার বাড়িতে গিয়ে বিভিন্ন কাগজপত্র খতিয়ে দেখছেন কেন্দ্রীয় তদন্তকারী অফিসাররা।
১২৩০
সিবিআইয়ের আরও একটি দল পৌঁছয় কৃষ্ণনগর পুরসভার প্রাক্তন পুরপ্রধান অসীম সাহার বাড়িতে।
১৩৩০
নিউ ব্যারাকপুর পুরসভার প্রাক্তন পুরপ্রধান তৃপ্তি মজুমদারের বাড়িতে সিবিআই হানার খবর মেলে। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, সকালে তৃপ্তির বাড়িতে গিয়েছেন সিবিআই আধিকারিকেরা।
১৪৩০
দমদম পুরসভার বর্তমান পুরপ্রধান হরেন্দ্র সিংহের বাড়িতেও চলছে সিবিআইয়ের তল্লাশি অভিযান। উত্তর দমদমের প্রাক্তন পুরপ্রধান সুবোধ চক্রবর্তীর বাড়িতেও গিয়েছে সিবিআইয়ের একটি দল।
১৫৩০
কিন্তু কী কারণে এই তল্লাশি অভিযান? সিবিআই সূত্রে জানা গিয়েছে, পুরসভায় নিয়োগকাণ্ডের তদন্তেই তাদের এই তল্লাশি অভিযান।
১৬৩০
পুরসভায় একাধিক পদে নিয়োগের ক্ষেত্রে বিস্তর অনিয়ম এবং চাকরির বিনিময়ে টাকার লেনদেন হয়েছে বলে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার তরফে আদালতে জানানো হয়। এই মামলার তদন্তে আগেও রাজ্যের একাধিক পুরসভার আধিকারিকদের নথি নিয়ে তলব করা হয়েছিল।
১৭৩০
স্কুলে নিয়োগ সংক্রান্ত দুর্নীতির তদন্ত চালাতে গিয়ে পুরসভায় নিয়োগ ‘দুর্নীতি’র বিষয়টি উঠে আসে। তৃণমূলের বহিষ্কৃত যুবনেতা শান্তনু বন্দ্যোপাধ্যায় এবং কুন্তল ঘোষকে গ্রেফতারের পরে তাঁদের ঘনিষ্ঠ প্রোমোটার অয়ন শীলের নাম উঠে আসে।
১৮৩০
অয়নের সল্টলেকের অফিসে তল্লাশি চালিয়ে বিভিন্ন পুরসভায় নিয়োগ সংক্রান্ত নথি উদ্ধার করেছিল এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)। তাঁর ওই অফিস থেকে পুরসভার বিভিন্ন পদে চাকরিপ্রার্থীদের উত্তরপত্র বা ওএমআর শিট (উত্তরপত্র) পাওয়া গিয়েছে বলেও দাবি করেছিলেন তদন্তকারীরা।
১৯৩০
কাঁচরাপাড়া, টাকি, দক্ষিণ দমদম, হালিশহর, বরাহনগর-সহ বহু পুরসভায় নিয়োগ সংক্রান্ত দুর্নীতিতে অয়ন জড়িত ছিলেন বলে দাবি করা হয়।
২০৩০
গত এপ্রিলে কলকাতা হাই কোর্টের বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় নির্দেশ দিয়েছিলেন পুরসভায় নিয়োগ দুর্নীতিতে তদন্ত করতে পারবে সিবিআই। তাঁর নির্দেশ ছিল, প্রয়োজন মনে করলে নতুন এফআইআর দায়ের করে তদন্ত করতে পারবে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাটি।
২১৩০
সেই নির্দেশ পুনর্বিবেচনার আর্জি জানিয়েছিল রাজ্য। তাদের পুনর্বিবেচনার আর্জি খারিজ করে আগের নির্দেশ বহাল রাখেন বিচারপতি অমৃতা সিংহ।
২২৩০
পরে সিঙ্গল বেঞ্চের সেই রায়কে চ্যালেঞ্জ করে ডিভিশন বেঞ্চে যায় রাজ্য। কিন্তু সেই নির্দেশে স্থগিতাদেশ দেয়নি ডিভিশন বেঞ্চ। এর পরই গত ২৪ এপ্রিল এই নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় একটি এফআইআর করে তদন্তে নামে সিবিআই।
২৩৩০
এর পরে উত্তর ২৪ পরগনা-সহ অন্যান্য জেলায় মোট ১৪টি পুরসভায় তল্লাশি চালায় তদন্তকারী সংস্থাটি। ওই সব পুরসভা থেকে নিয়োগ সংক্রান্ত প্রচুর নথি বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে বলে সিবিআই সূত্রে দাবি করা হয়।
২৪৩০
এর আগে রাজ্যের আর এক মন্ত্রীর বাড়িতে তল্লাশি চালিয়েছিল আর এক তদন্তকারী সংস্থা ইডি। পুর নিয়োগ মামলায় ৫ অক্টোবর রথীন ঘোষের বাড়িতে গিয়েছিলেন ওই কেন্দ্রীয় সংস্থার আধিকারিকেরা।
২৫৩০
গভীর রাত পর্যন্ত সেই তল্লাশি চলেছিল। সাড়ে ১৯ ঘণ্টা পর রাত পৌনে ২টো নাগাদ তদন্তকারীরা রথীনের বাড়ি থেকে বেরিয়ে আসেন।
২৬৩০
শুধু রথীন নন, একই দিনে ১০ থেকে ১২টি দলে ভাগ হয়ে বরাহনগর, সল্টলেক-সহ মোট ১২টি জায়গায় হানা দিয়েছিল ইডি।
রবিবার দলের নেতা এবং জনপ্রতিনিধিদের বাড়িতে সিবিআই-হানা নিয়ে তৃণমূলের বক্তব্য, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের রাজভবনের সামনে ধর্নার পাল্টা হিসাবে সিবিআইকে ব্যবহার করছে বিজেপি।
২৯৩০
এ নিয়ে তৃণমূলের মুখপাত্র তথা রাজ্য সম্পাদক কুণাল ঘোষের কটাক্ষ, ‘‘বিজেপির উপর চাপ বাড়ছে... তাই নজর ঘোরাতে রাজনৈতিক পরিকল্পনায় আবার নামানো হল এজেন্সিকে।’’
৩০৩০
পাশাপাশি, কুণাল বলেন, ‘‘এ ভাবে তৃণমূলকে দমানো যাবে না।’’ অন্য দিকে, বিজেপির বক্তব্য, কেন্দ্রীয় সংস্থা তাদের কাজ করছে। এখানে রাজনীতির কোনও ব্যাপার নেই।