Calcutta high court clashes between lawyers: the time line of the visit by bar council of India’s three member committee to probe justice Rajasekhar mantha case dgtl
হাই কোর্টের বিচারপতি রাজাশেখর মান্থার এজলাস বয়কট এবং তাঁর বিরুদ্ধে আইনজীবীদের বিক্ষোভের ঘটনার তদন্তে সোমবার সকালেই হাই কোর্টে এসেছিলেন ভারতীয় বার কাউন্সিলের প্রতিনিধিরা। কলকাতা হাই কোর্টের ঘটনাকে অভব্য বলে মন্তব্য করেছিল এই ভারতীয় বার কাউন্সিল।
নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতাশেষ আপডেট: ১৬ জানুয়ারি ২০২৩ ২০:৩০
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১২০
ইংরেজিতে একটি চালু প্রবাদ আছে— ‘মর্নিং শোজ দ্য ডে’ অর্থাৎ সকাল দেখেই আন্দাজ করে নেওয়া যায়, বাকি দিনটা কেমন হতে চলেছে। সোমবার কলকাতা হাই কোর্ট চত্বরের সকালটা দেখে যা আন্দাজ করা গিয়েছিল, দেখা গেল শেষটা তার সঙ্গে মিলল না।
০২২০
হাই কোর্টের বিচারপতি রাজাশেখর মান্থার এজলাস বয়কট এবং তাঁর বিরুদ্ধে আইনজীবীদের বিক্ষোভের ঘটনার তদন্তে সোমবার সকালেই হাই কোর্টে এসেছিলেন ভারতীয় বার কাউন্সিলের প্রতিনিধিরা। গত সোমবার থেকে হাই কোর্টের আইনজীবীদের একাংশ বিচারপতি মান্থার বিরুদ্ধে যে প্রতিবাদ বিক্ষোভ শুরু করেছেন, তার ছবি এবং ভিডিয়ো ফুটেজ জমা পড়েছিল ভারতীয় বার কাউন্সিলের কাছে। সেই সূত্রেই দিল্লি থেকে কলকাতায় প্রতিনিধি দল পাঠানোর ঘোষণা করেছিল বার কাউন্সিলের দিল্লির সদর দফতর। সেই মতো সোমবার সকালেই তারা হাই কোর্টে এসে পৌঁছয়। শুরু হয় অনুসন্ধান পর্ব।
০৩২০
প্রতিনিধি দলে ছিলেন সুপ্রিম কোর্টের বর্ষীয়ান আইনজীবী রবীন্দ্রকুমার রাইজদা, ইলাহাবাদ হাই কোর্টের বর্ষীয়ান আইনজীবী অশোক মেহতা এবং দিল্লি হাই কোর্টের বার অ্যাসোসিয়েশনের কর্মসমিতির সদস্য বন্দনা কৌর গ্রোভার।
০৪২০
সকাল ১০টা ৩৮ মিনিটে একটি হোটেল থেকে পায়ে হেঁটে কলকাতা হাই কোর্টে এসে ঢোকেন বার কাউন্সিল অফ ইন্ডিয়ার ৩ সদস্য।
০৫২০
সকাল ১০ টা ৪০ মিনিট— দু’মিনিটের মধ্যেই হাই কোর্টের ফটকে তাঁদের স্বাগত জানাতে হাজির হন তৃণমূলপন্থী হিসাবে পরিচিত এক মহিলা আইনজীবী। সাক্ষাৎ পর্ব হয় হাই কোর্টের বি-গেটে। মহিলা আইনজীবী প্রতিনিধিদলকে সঙ্গে নিয়ে এগিয়ে যান ভিতরে।
০৬২০
সকাল ১০টা ৫২ মিনিট— মহিলা আইনজীবীর সঙ্গে রাজ্য বার কাউন্সিলের দফতরে এলেন ভারতীয় বার কাউন্সিলের প্রতিনিধি দল। উল্লেখ্য, রাজ্য বার কাউন্সিলের আইনজীবীদের একাংশের বিরুদ্ধেই রয়েছে আদালতের বিচারপ্রক্রিয়ায় বাধা দেওয়ার অভিযোগ। যা দেখে গত বৃহস্পতিবার ভারতীয় বার কাউন্সিলের প্রতিনিধিরা বলেছিলেন, ‘‘এই আচরণ এবং এই বিশৃঙ্খলা আইনজীবীদের শোভা পায় না। যা হয়েছে, তা অভব্যতা।’’ সোমবার বার কাউন্সিল অব ইন্ডিয়ার ৩ সদস্য রাজ্য বার কাউন্সিলের অফিসে বেশ কিছু ক্ষণ ছিলেন। তাঁদের মধ্যে মিনিট দশেক আলোচনাও হয়।
০৭২০
সকাল ১১টা ৪ মিনিট— রাজ্য বার কাউন্সিলের অফিস থেকে বেরিয়ে এলেন দিল্লির প্রতিনিধি দলের সদস্যরা। এ বার তাঁদের গন্তব্য হাই কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেলের অফিস। সে দিকেই হাঁটতে শুরু করলেন ভারতীয় বার কাউন্সিলের ৩ সদস্য।
০৮২০
সকাল ১১টা ৯ মিনিট— কলকাতা হাই কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল চৈতালি চট্টোপাধ্যায় দাসের ঘরে পৌঁছল প্রতিনিধিদল। শুরু হল বৈঠক। কিন্তু গোড়াতেই গণ্ডগোল।
০৯২০
বৈঠক শুরুর কিছু ক্ষণের মধ্যেই চৈতালিরা যে ঘরে বৈঠক করছিলেন সেখানে ঢুকে পড়েন রাজ্য বার কাউন্সিলের চেয়ারম্যান অশোক দেব। কিন্তু শুরুতেই তাঁকে থামিয়ে দেওয়া হয়। স্পষ্ট জানিয়ে দেওয়া হয়, এই বৈঠতে তাঁর ঢোকার অনুমতি নেই। তিনি যেন চলে যান। বর্ষীয়ান আইনজীবী অশোক অবশ্য এর পর কথা না বাড়িয়ে সেখান থেকে চলে আসেন। চৈতালির ঘরে এর পর বার কাউন্সিল অব ইন্ডিয়ার প্রতিনিধিদের বৈঠক চলে প্রায় ৩০ মিনিট।
১০২০
সকাল ১১টা ৪৭ মিনিট— রেজিস্ট্রার জেনারেলের অফিস থেকে বেরিয়ে রাজ্যের অ্যাডভোকেট জেনারেল (এজি) এবং কেন্দ্রের সলিসিটর জেনারেলের (এএসজি) অফিসের দিকে এগোলেন বার কাউন্সিল অফ ইন্ডিয়ার সদস্যরা।
১১২০
সকাল ১১টা ৫৩ মিনিট— দেখা গেল রাজ্যের এজি তাঁর ঘরে নেই। উল্লেখ্য, এজি সৌমেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়, এর আগে প্রধান বিচারপতিকে বলেছিলেন, ‘‘যা ঘটেছে তাতে আমি লজ্জিত। এটা দুঃখজনক।’’ এমনকি, এজলাসে রাজ্যের আইনজীবীদের অনুপস্থিতি প্রসঙ্গে বিচারপতি মান্থাকেও বলেন, এই ঘটনায় আমি দুঃখিত। খুব দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা। এখনও কেন এটা হচ্ছে খোঁজ নিয়ে দেখছি। কথা বলছি ওই আইনজীবীদের সঙ্গে।’’
১২২০
এর পর প্রতিনিধিদল আসেন কেন্দ্রের সলিসিটর জেনারেল বিল্বদল ভট্টাচার্যের দফতরে। হাই কোর্টে বিচারপতি মান্থার বিরুদ্ধে আইনজীবীদের বিক্ষোভ থামাতে কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েনের প্রস্তাব দিয়েছিলেন বিল্বদল। আদালত চাইলে তিনি নিজেও সেই ব্যবস্থা করে দিতে পারবেন বলে জানিয়েছিলেন কেন্দ্রের সলিসিটার জেনারেল। সোমবার তাঁর সঙ্গেও বৈঠক করেন ভারতীয় বার কাউন্সিলের ৩ প্রতিনিধি।
১৩২০
দুপুর ১২টা ১৩ মিনিট— এএসজি-র অফিস থেকে বেরিয়ে ১৩ নম্বর কোর্টের সামনে এলেন ভারতীয় বার কাউন্সিলের ৩ সদস্য। এই ১৩ নম্বর কোর্টই গত সোমবার থেকে যাবতীয় বিতর্কের কেন্দ্রে। কারণ এই ১৩ নম্বর কোর্টেই বসে বিচারপতি মান্থার এজলাস। সোমবার সেই এজলাসের সামনে এসে ভারতীয় বার কাউন্সিলের এক প্রতিনিধির মন্তব্য— ‘‘এই কোর্টের মধ্যে তো বেশ ভিড় দেখছি। ঢোকাই যাচ্ছে না! মনে হচ্ছে খুবই ব্যস্ত কোর্ট।’’
১৪২০
দুপুর ১২টা ২০ মিনিট— প্রতিনিধি দলকে নালিশও শুনতে হল। বিচারপতি মান্থার এজলাসে যাওয়ার জন্য রাজ্য সরকারের প্যানেল থেকে আইনজীবীদের নাম বাদ দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ জানালেন আইনজীবী সৌগত মিত্র।
১৫২০
দুপুর ১২টা ২৭ মিনিট— আবার রাজ্য বার কাউন্সিলের দফতরে ফিরলেন প্রতিনিধি দল। এ বার বৈঠক চলল দীর্ঘ ক্ষণ।
১৬২০
দুপুর ২টো ৫ মিনিট— এজির অফিসে ফিরে এলেন ভারতীয় বার কাউন্সিলের সদস্যরা। আগে দেখা হয়নি। এ বারও কথা হল অফিসের বাইরেই।
১৭২০
দুপুর ২টো ২৫ মিনিট— এ বার হাই কোর্টের বার অ্যাসোসিয়েশনে হাজির প্রতিনিধি দল। বারের সভাপতি অরুণাভ ঘোষ, সম্পাদক বিশ্বব্রত বসুমল্লিক-সহ আরও বেশ কয়েক জন সদস্যকে নিয়ে বৈঠক বসেন তাঁরা। প্রসঙ্গত, গত মঙ্গলবার যখন হাই কোর্টের বিক্ষোভকারী আইনজীবীরা এবং বারের আইনজীবীদের একাংশ বিচারপতি মান্থার এজলাস বয়কটের ডাক দিয়েছিলেন, তখন অরুণাভ দাবি করেছিলেন এই বয়কট প্রস্তাব মিথ্যা। তিনি অন্তত এ বিষয়ে কিছু জানেন না। সোমবার ভারতীয় বার কাউন্সিলের প্রতিনিধিদের সঙ্গে হাই কোর্টের বর্ষীয়ান আইনজীবী অরুণাভ এবং অন্যান্যদের বৈঠক চলে প্রায় ২৫ মিনিট।
১৮২০
দুপুর ২টো ৫১ মিনিট— রেজিস্ট্রার জেনারেল চৈতালির সঙ্গে আরও একবার বৈঠক করলেন প্রতিনিধি দলের সদস্যরা।
১৯২০
বিকেল ৩টে ৩৮ মিনিট— সাংবাদিক বৈঠক করলেন প্রতিনিধি দল। বৃহস্পতিবারই বার কাউন্সিল অব ইন্ডিয়া জানিয়েছিল, প্রতিনিধিরা কলকাতায় গিয়ে হাই কোর্টের পরিস্থিতি খতিয়ে দেখে ঠিক করবেন বার কাউন্সিলের সদস্য আইনজীবীদের এই আচরণের প্রেক্ষিতে কী পদক্ষেপ করা হবে? বস্তুত, বৃহস্পতিবারের সাংবাদিক বৈঠকে ভারতীয় বার কাউন্সিলের প্রতিনিধিরা এমনও বলেছিলেন, ‘‘যে আইনজীবীরা বিশৃঙ্খলা তৈরি করেছেন তাঁদের প্র্যাকটিস করার অনুমতি দেওয়াই উচিত নয়।’’ সোমবার অবশ্য এমন কোনও মন্তব্য করেনি প্রতিনিধি দল। বরং তাঁরা বিচারপতি মান্থার এজলাসের বাইরের সিসিটিভি ফুটেজ নিয়ে কোনও মন্তব্যই করলেন না। বার কাউন্সিল অফ ইন্ডিয়ার প্রতিনিধিদের এ ব্যাপারে প্রশ্ন করা হলে এক সদস্য বলেন, ‘‘বিষয়টি যে হেতু বিচারাধীন তাই এ নিয়ে কোনও মন্তব্য করব না।’’
২০২০
বিকেল ৩টে ৫৫ মিনিট— হাই কোর্ট ছাড়ল প্রতিনিধি দল। কিন্তু সকালে দুই বারের প্রতিনিধির সংঘাতে যে তদন্ত শুরু হয়েছিল দিনের শেষে তা কিছুটা ঝিমিয়ে গেল বার কাউন্সিলের প্রতিনিধিরা বিচারপতি মান্থার এজলাসের সামনের সিসিক্যামেরার ফুটেজ না নিয়েই হাই কোর্ট ছেড়ে রওনা হওয়ায়।