Bournvita is not health drink, why centre says so dgtl
Bournvita
তৈরি হয় শতাধিক বছর আগে, প্রাথমিক লক্ষ্য ছিলেন ধনীরা! কেন স্বাস্থ্যকর পানীয়ের তকমা হারাল ‘বোর্নভিটা’?
বছরের পর বছর ‘স্বাস্থ্যকর পানীয়’ হিসাবেই পান করা হত বোর্নভিটা। কিন্তু কেন্দ্রের তরফে জানানো হয়েছে, কোনও অনলাইন বিপণন সংস্থার ‘স্বাস্থ্যকর পানীয়’ বিভাগে একে রাখা যাবে না।
আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
কলকাতাশেষ আপডেট: ১৬ এপ্রিল ২০২৪ ১১:২৯
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১২০
অনেকেরই ছোটবেলার সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে ‘বোর্নভিটা’। সেই বোর্নভিটার উপরেই নিষেধাজ্ঞা এনেছে কেন্দ্র। জানিয়েছে, একে আর ‘স্বাস্থ্যকর পানীয়’ বলা যাবে না। কেন? কী এমন হল?
০২২০
বছরের পর বছর ‘স্বাস্থ্যকর পানীয়’ হিসাবেই পান করা হত বোর্নভিটা। কিন্তু কেন্দ্রের তরফে জানানো হয়েছে, কোনও অনলাইন বিপণন সংস্থার ‘স্বাস্থ্যকর পানীয়’ বিভাগে একে রাখা যাবে না। তার কারণ, এতে রয়েছে অতিরিক্ত মাত্রায় চিনি।
০৩২০
গত এপ্রিলে এক ভ্লগার এক মিনিটের ভিডিয়ো পোস্ট করে প্রথম বার এই পানীয় নিয়ে অভিযোগ করেন। তার পরেই বিষয়টি নজরে আসে কেন্দ্রের।
০৪২০
‘বোর্নভিটা’ তৈরি করেছে ব্রিটিশ সংস্থা ক্যাডবেরি। এটি দুনিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম কনফেকশনারি সংস্থা। ২০১০ সালে ক্যাডবেরি কিনে নেয় আমেরিকার মন্ডলেজ সংস্থা। মন্ডলেজের আগে নাম ছিল ‘ক্রাফট’। ২০১২ সালে নামের পরিবর্তন করা হয়।
০৫২০
ক্রাফট সংস্থা ১৯২৩ সালে তৈরি হয়। ক্যাডবেরি যদিও আরও পুরনো সংস্থা। মার্চে ক্যাডবেরির ২০০ বছর পূর্ণ হয়েছে। ১৬০টি দেশে ব্যবসা করে ক্যাডবেরি। ভারতে ৬০ শতাংশ চকোলেটের বাজার ক্যাডবেরির দখলে।
০৬২০
সংস্থার প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন জন ক্যাডবেরি। তাঁর নামেই সংস্থার নামকরণ। তিনি বার্মিংহামে থাকতেন। জন কফি বিক্রি করার কাজ শুরু করেন। সঙ্গে কোকো পানীয় তৈরি করে বিক্রি করতেন। দক্ষিণ আমেরিকা, আফ্রিকায় মিলত কোকো। সেই বীজ এনে পিষে তিনি তৈরি করতেন পানীয়।
০৭২০
১৮২৪ সালে বুলস্ট্রিটে দু’কামরার দোকানে ব্যবসা শুরু করেন জন। সেখানে কোকো পাউডার মিশিয়ে পানীয় তৈরি করতেন। ধীরে ধীরে চা, কফি না খেয়ে অনেকে তাঁর দোকানে কোকো পানীয় খেতে শুরু করেন। দোকানে ভিড় বাড়তে থাকে।
০৮২০
জনের লক্ষ্য ছিলেন ধনীরা। একটি ঘরে কোকো বীজ পিষে দুধে মিশিয়ে ধনীদের দিতেন তিনি। পণ্য কী ভাবে বিক্রি করবেন, জনের সেই বুদ্ধি ছিল প্রখর। সেই আমলেও নিজের পণ্যের গুণগান কাগজে ছাপিয়ে প্রচার করতেন তিনি।
০৯২০
দূর দূর থেকেও অনেকে সেই পানীয়ের জন্য আসতেন। ১৫ বছরের মধ্যে, ১৮৪০ সালে কোকো পাউডার তৈরির কারখানা খোলেন জন। কাজে সাহায্য করার জন্য ভাই বেঞ্জামিনকে ডেকে পাঠান। দু’জনে মিলে ব্রিটেনে শুরু করেন কারখানা।
১০২০
এর পর ব্রিটিশেরা কারখানা থেকে কোকো পাউডার কিনে বাড়ি নিয়ে যেতেন। সেখানে দুধে মিশিয়ে খেতেন। ১৮৫০ সালে কোকো বীজের আমদানিতে ব্রিটেন সরকার কর তুলে নেয়।
১১২০
দুই ছেলে রিচার্ড, জর্জকেও কোকো তৈরির উপায় শিখিয়েছিলেন জন। এর পর নতুন নতুন কারখানা খোলেন তাঁরা। বোর্নভিলে নতুন কারখানা খোলেন ১৮৭৯ সালে।
১২২০
সেখানে কাজ করতেন প্রায় ২০০০ জন। কর্মচারীদের জন্য ঘরও তৈরি করেন তিনি। কর্মচারীরা যাতে কাজের জায়গায় থেকে যেতে পারেন, তাই তাঁদের সন্তানদের জন্য স্কুলও খোলেন। বোর্নভিলে নিজের শহর তৈরি করে ফেলেন জন। তা থেকেই নামকরণ ‘বোর্নভিটা’-র।
১৩২০
এই সময়েই জনকে ডেকে রানি ভিক্টোরিয়া বলেন, ‘‘বাকি দুনিয়ায় গিয়ে নিজের পণ্য বিক্রি করো।’’ এর পর নতুন পদ্ধতি আবিষ্কার করেন জন। ডার্ক চকোলেটের সঙ্গে দুধের গুঁড়ো, চিনি মেশান। সেগুলিকে শুকনো করে চকোলেটের আকার দেন। নাম দেন ‘হাইল্যান্ড মিল্ক’। একটা বাচ্চা এক দিন এটি খেতে খেতে বলে ওঠে, ‘‘মনে হচ্ছে ডেয়ারি মিল্ক খাচ্ছি।’’ তার পরই নাম বদলায়। ১৯০৫ সালে চকোলেটের নাম হয় ‘ডেয়ারি মিল্ক’।
১৪২০
এই ডেয়ারি মিল্ক সংরক্ষণে সুবিধা ছিল। যে হেতু চিনি মেশানো, তাই সহজে নষ্ট হত না। বিক্রি বৃদ্ধির জন্য নতুন পন্থা নেন জন। বিজ্ঞাপনে বলতে থাকেন, রোজ ডেয়ারি মিল্ক বা বোর্নভিটা খেলে শক্তি বাড়বে। তাঁর পাখির চোখ ছিল বাচ্চার মায়েরা।
১৫২০
বাচ্চাদের মায়েদের নজর কাড়তে বলতে থাকেন, ক্যাডবেরিতে রয়েছে পুষ্টি। খেলে শক্তি হবে। বুদ্ধিমান হবে শিশুরা। এমনিতে বাচ্চারা দুধ খায় না। বোর্নভিটা মিশিয়ে সহজেই দুধ খেতে শুরু করে তারা। মায়েরা আশ্বস্ত হন।
১৬২০
ভারত প্রথমে ক্যাডবেরিকে জায়গা দিতে চায়নি। একেই তো ব্রিটিশ পণ্য। তার পর তাদের লক্ষ্য ছিল ধনী শ্রেণি। ক্যাডবেরিও নাছোড়। টিভি, রেডিয়োতে পড়ুয়াদের কুইজ় শুরু করে। জয়ীদের ছবি প্রকাশ করে। বিজ্ঞাপনে দাবি করে, যারা জয়ী, তারা বোর্নভিটা খায়। ২০০০ সাল পর্যন্ত চলে জোরদার প্রচার।
১৭২০
ভারতে ১১ হাজার কোটির বাজার রয়েছে ‘হেল্থ ড্রিঙ্ক’-এর। সবার উপরে রয়েছে বোর্নভিটা। তার পর হরলিক্স। কোভিডের পর নতুন করে প্রচার শুরু করে বোর্নভিটা। দাবি করে, এটা খেলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে।
১৮২০
অথচ দেখা যায়, ১০০ গ্রাম বোর্নভিটায় রয়েছে ৪০ শতাংশ চিনি। একে আসলে বার্লি, চিনি, কোকোর শরবতও বলা চলে। চিকিৎসকেরা বলেন, একটি ৪-৬ বছরের বাচ্চার দিনে ২০ গ্রামের বেশি চিনি খাওয়া উচিত নয়। অথচ বোর্নভিটায় চিনির পরিমাণ অনেক বেশি।
১৯২০
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু) সাবধান করে। উঠতে থাকে অভিযোগ। আগে বোর্নভিটায় ছিল ৩৭ গ্রাম চিনি। অভিযোগের পর তার পরিমাণ কমিয়ে ৩২ গ্রাম করা হয়। সক্রিয় হয় শিশু অধিকার রক্ষাকারী জাতীয় কমিশন (এনসিপিসিআর)। তারা তদন্ত করে জানায়, খাদ্য সুরক্ষা এবং নিয়ামক (এফএসএস) আইন (২০০৬) অনুযায়ী স্বাস্থ্যকর পানীয়ের কোনও সংজ্ঞা নেই। এনসিপিসিআর তদন্তে এও দেখে যে, বোর্নভিটায় রয়েছে নির্ধারিত মাত্রার অতিরিক্ত চিনি।
২০২০
বেশি চিনি খেলে স্মৃতিশক্তি কমে যেতে পারে। মিষ্টি ডোপামাইনের কাজ করে। তা খেলে মন খুশি হয়। কিন্তু রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে। লিভারে ফ্যাট জমে। এর পরেই ব্যহবস্থা নেয় কেন্দ্র। জানিয়ে দেয়, দুধজাত বা শস্যজাত পানীয়কে ‘হেলথ ড্রিঙ্ক’ বলে চালানো যাবে না। ছবি: সংগৃহীত