Billionaire Gautam Adani's History and story behind his success and controversy dgtl
Gautam Adani
স্কুল পাশ আদানি সন্ত্রাসবাদী হামলার শিকার! এখন লড়ছেন শেয়ারে কারচুপির অভিযোগের বিরুদ্ধে
গৌতমের পড়াশোনা ছিল সীমিত। কখনও কলেজের গণ্ডি তিনি পার করেননি। স্কুলও পাশ করেছিলেন কোনও মতে। কিন্তু আদানি গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা গৌতমকে এখন সকলে এক ডাকে চেনে।
নিজস্ব প্রতিবেদন
কলকাতাশেষ আপডেট: ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ১৭:২২
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১২১
প্রথমে ‘ক্রেডিট সাইটে’র সমীক্ষা। তার কয়েক মাসের মধ্যেই ‘হিন্ডেনবার্গ রিসার্চ’-এর রিপোর্ট। আর সেই রিপোর্ট প্রকাশ্যে আসতেই বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে গৌতম আদানির বিভিন্ন সংস্থা। আর সেই রিপোর্টের ভারে এক ধাক্কায় বিশ্বের প্রথম পাঁচের মধ্যে থাকা ধনকুবেরের অবস্থান এই মুহূর্তে ২২ নম্বরে।
০২২১
আমেরিকার এক পত্রিকা অনুযায়ী, শুক্রবার বিশ্বের সব থেকে ধনীদের তালিকায় ২২ নম্বরে রয়েছেন। গতকাল পর্যন্ত আদানি এই তালিকায় ছিলেন ১৬তম স্থানে।
০৩২১
ওই পত্রিকার প্রতিবেদন অনুযায়ী, এক দিনেই আদানির সম্পদের মূল্য ২২ শতাংশ কমে গিয়েছে। আর সেই কারণেই তাঁর এই অবনমন।
০৪২১
কোটি কোটি টাকার সম্পত্তির মালিক এবং বর্তমানে আর্থিক কেলেঙ্কারির জন্য বিতর্কে থাকা গৌতমের জীবনের শুরু কিন্তু কোটি কোটি টাকার মুখ দেখে হয়নি।
০৫২১
গৌতমের পড়াশোনাও ছিল সীমিত। কখনও কলেজের গণ্ডি তিনি পার করেননি। স্কুলও পাশ করেছিলেন কোনও মতে। কিন্তু আদানি গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা গৌতমকে এখন সকলে এক ডাকে চেনে। বিতর্কের জন্য তিনি এখন খবরের শিরোনামে। কিন্তু কী ভাবে শূন্য থেকে শুরু করে কোটি কোটি টাকার মালিক হয়েছেন গৌতম? তাঁর সাফল্যই বা এসেছে কোন পথে?
০৬২১
গৌতমের বাবা শান্তিলাল আদানি আমদাবাদের কাপড় ব্যবসায়ী ছিলেন। তবে সেই ব্যবসার প্রতি গৌতমের কোনও ঝোঁক ছিল না। পড়াশোনাতেও বিশেষ মন ছিল না তাঁর। গুজরাত বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতক স্তরে ভর্তি হলেও পাশ করতে পারেননি। মাঝপথেই কলেজ ছেড়ে মুম্বইয়ে চলে আসেন গৌতম।
০৭২১
মুম্বই পৌঁছে প্রথম দু’তিন বছর একটা হিরের দোকানে কাজ করতেন গৌতম। তার পর ১৯৮১ সালে দাদার তৈরি প্লাস্টিক কারখানার দায়িত্ব পান। সেখান থেকেই আদানি গোষ্ঠীর ধনকুবের মালিক হয়ে ওঠার পথচলা শুরু তাঁর।
০৮২১
১৯৮৫ সালে ক্ষুদ্র শিল্পের জন্য ‘প্রাইমারি পলিমার’-এর আমদানি শুরু করেন গৌতম। তার উপর ভিত্তি করেই ১৯৮৮ সালে গড়ে ওঠে ‘আদানি এক্সপোর্ট লিমিটেড’। যা বর্তমানে পরিচিত ‘আদানি এন্টারপ্রাইজ’ নামে। সংস্থার নামকরণ করে ব্যবসার মাটি শক্ত করার পর আরও ফুলেফেঁপে উঠতে শুরু করে গৌতমের ব্যবসা।
০৯২১
ভারত ছাড়িয়ে গৌতমের ব্যবসা ছড়িয়ে পড়েছে অস্ট্রেলিয়ায়। সেখানে ‘অস্ট্রেলিয়া কোল মাইন’ শুরু করেন তিনি।
১০২১
কিন্তু গৌতমের সফল ব্যবসার মন্ত্র কী? তাঁর উত্তর কী? এক বিদেশি সংবাদমাধ্যমে সাক্ষাৎকার দেওয়ার সময় আদানি এক বার জানিয়েছিলেন, “একটা ব্যবসা থেকে কম পরিমাণ আয় করুন, তার পর তার বিনিময়ে মোটা টাকা ঋণ নিন, সেই টাকা অন্য একটি ব্যবসায় লগ্নি করুন।” এই মন্ত্রে ভর করেই আদানি হয়ে ওঠেন ধনকুবের। তবে তাঁর যে লক্ষ কোটি টাকার ঋণ রয়েছে, সেই দাবিই করেছিল ক্রেডিট সাইটের সমীক্ষা।
১১২১
একাধিক বার মৃত্যুর মুখোমুখিও হয়েছেন গৌতম। ২০০৮ সালের ২৬ নভেম্বর মুম্বইয়ের তাজ হোটেলে সন্ত্রাসী হামলার সময় তিনি ওই হোটেলেই ছিলেন। তখন তিনি নৈশভোজে ব্যস্ত। সন্ত্রাসবাদীদের গুলি থেকে প্রাণ বাঁচাতে হোটেলের বেসমেন্টে লুকিয়ে ছিলেন গৌতম। চোখের সামনে খুন হতেও দেখেন একাধিক মানুষকে।
১২২১
ভারতীয় কম্যান্ডো হোটেলের বেসমেন্ট থেকে গৌতমকে উদ্ধার করেছিলেন। উদ্ধারের পর এক সাংবাদমাধ্যমকে আদানি জানিয়েছিলেন, মাত্র ১৫ ফুট দূর থেকে তিনি মৃত্যুকে দেখেছিলেন।
১৩২১
১৯৯৭ সালে গৌতমকে অপহরণ করা হয়েছিল। মুক্তিপণ হিসাবে প্রায় ১৫ কোটি টাকা দাবি করেন অপহরণকারীরা। এই ঘটনায় পরে ৮ অভিযুক্তকে গ্রেফতার করেছিল পুলিশ।
১৪২১
খুব বেশি শিক্ষা না পেলেও, তা কোনও দিন গৌতমের ব্যবসায়িক সাফল্যের পরিপন্থী হয়নি। তবে বাধা হয়েছিল বিয়েতে। উচ্চশিক্ষিত দন্ত্য চিকিৎসক মেয়েকে কোনও রকমে স্কুলের গণ্ডি টপকানো ছেলের সঙ্গে বিয়ে দিতে রাজি হননি প্রীতি আদানির বাবা। শোনা যায়, পরে নাকি এক জ্যোতিষীর কথায় মেয়ে প্রীতির সঙ্গে গৌতমের বিয়েতে রাজি হয় প্রীতির পরিবার।
১৫২১
আদানিদের প্রচুর ঋণ থাকার গুজব থাকা সত্ত্বেও আদানি গোষ্ঠীর বিনিয়োগের প্রতি আস্থা রেখেছে কেন্দ্রীয় সরকার। আদানি গোষ্ঠী নতুন ভারতের রূপ গড়তেও বিশেষ ভূমিকা রাখবে, এই আস্থার কথা জানিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী মোদীও।
১৬২১
সম্প্রতি আমেরিকার শেয়ার সংক্রান্ত গবেষণা সংস্থা ‘হিন্ডেনবার্গ রিসার্চ’-এর রিপোর্টের দাবি করা হয়েছে, এক দশক ধরে শেয়ারের দরে কারচুপি করছে আদানি গোষ্ঠী। সংস্থার ২৪ জানুয়ারির রিপোর্ট প্রকাশ্যে আসার পর থেকেই বিপর্যয়ের মুখে আদানিরা।
১৭২১
‘হিন্ডেনবার্গ রিসার্চ’-এর রিপোর্ট প্রকাশ্যে আসতেই আদানিদের ১০টি সংস্থার শেয়ারে ধস নামে। আদানিরা বিবৃতিতে অভিযোগ করে, হিন্ডেনবার্গ স্বল্পমেয়াদি মুনাফার জন্য রিপোর্ট তৈরি করেছে।
১৮২১
এই রিপোর্ট ভারতের অগ্রগতিকে রোখার চক্রান্ত বলেও দাবি করে আদানি গোষ্ঠী। এই আক্রমণাত্মক বিবৃতি সত্ত্বেও হাল ফেরেনি আদানিদের। উপরন্তু, হিন্ডেনবার্গ পাল্টা বলে, জাতীয়তাবাদের আড়ালে প্রতারণা ঢাকা দেওয়া যায় না।
১৯২১
চলতি অর্থবর্ষের বাজেট পেশের পর আদানিদের বিভিন্ন সংস্থার শেয়ার উল্লেখযোগ্য হারে নেমেছে। কোনও শেয়ারে ১৭ শতাংশ পতন হয়েছে, তো কোনও শেয়ার এক ধাক্কায় ৫১ শতাংশ পর্যন্ত কমেছে।
২০২১
গত বছরের অগস্ট মাস নাগাদ ব্যবসায় পাল্লা দিয়ে মুকেশ অম্বানীকে টপকে দেশের সব থেকে ধনী ব্যক্তি হিসাবে জায়গা পান গৌতম আদানি। শুধু দেশেরই নয়, বেশ কয়েকটি রিপোর্ট অনুযায়ী আদানি তখন এশিয়ারও ধনীতম ব্যক্তি। কিন্তু তখনই ‘ক্রেডিট সাইট’-এর এক সমীক্ষায় উঠে আসে চমকে দেওয়া তথ্য।
২১২১
‘ক্রেডিট সাইট’-এর ওই সমীক্ষার দাবি ছিল, আদানি গোষ্ঠীর সাফল্যের চাকচিক্যের পিছনে রয়েছে পাহাড়প্রমাণ ঋণের বোঝা। আদানির ঋণের পরিমাণ সেই সময়ই প্রায় ২.২২ লক্ষ কোটি টাকা হয়ে গিয়েছিল বলেও ওই সমীক্ষায় দাবি করা হয়। এর পরই প্রকাশ্যে আসে হিন্ডেনবার্গের রিপোর্ট। যার পর থেকে আদানির সম্পদের পরিমাণ ক্রমশ কমছে।