বার্কলির বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ট্রান্সপোর্টেশন ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের স্নাতকোত্তর ডিগ্রি হাসিল করেছেন বিল ঝৌ। ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাস করার জন্য প্রতি সপ্তাহে বিমানে যাতায়াত করতেন কেন?
আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
লস অ্যাঞ্জেলসশেষ আপডেট: ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ১৩:০১
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১২২
স্নাতকোত্তর স্তরে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার সুযোগ পেলে কী হবে, অন্য শহরে পড়াশোনা চলাকালীন বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছাকাছি আস্তানা গড়ার খরচই তো সাধ্যে কুলোবে না! উপায় না দেখে হিসাব কষতে বসেছিলেন ২৬ বছরের ছাত্রটি। বাড়িভাড়ার খরচ বাঁচাতে বিমানে চড়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে যাতায়াত করাই যথাযথ মনে হয়েছিল তাঁর।
০২২২
বাস্তবে তেমনই করেছেন আমেরিকার লস অ্যাঞ্জেলসের বাসিন্দা বিল ঝৌ। এক শহর থেকে অন্য শহরের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে গিয়ে পড়াশোনার জন্য অনেকেই তো নিজের বাড়ি ছেড়ে আত্মীয়-পরিজনের বাড়িতে গিয়ে ওঠেন। তবে বিলের মতো এমনধারা কাণ্ডের কথা শুনেছেন কি? ফলে তাঁর কীর্তি নিয়ে সমাজমাধ্যমে হইচই শুরু হয়েছে।
০৩২২
সংবাদমাধ্যমে বিল জানিয়েছেন, বার্কলির ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস করতে যেতে সপ্তাহে তিন দিন বিমানে চড়তেন তিনি। ক্লাসের শেষে আবার সে শহর ছেড়ে অন্য শহরে নিজের বাড়িতে ফেরার জন্য বিমানে উঠতেন। বিমানভাড়ার খরচ কমানোর জন্য কী কী উপায় বার করেছিলেন, সে কথাও খোলসা করেছেন তিনি।
০৪২২
আজকাল লিগাল সাসটেনেবিলিটি অ্যালায়েন্স (এসএসএ) নামে আমেরিকার একটি সংস্থায় কাজ করছেন বিল। পরিবেশরক্ষা বিষয়ক পরামর্শ প্রদানকারী ওই সংস্থায় ট্রান্সপোর্টেশন ইঞ্জিনিয়ার হিসাবে রয়েছেন তিনি।
০৫২২
স্নাতক স্তরে আরভিনের ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং ডিগ্রিলাভ করেছেন বিল। সেই পাঠ্যক্রমে তাঁর মূল বিষয় ছিল ‘গণপরিবহণ’। গত বছর বার্কলির ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতকোত্তরে পড়াশোনার সুযোগ পান তিনি। এক বছর সেই বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেছেন তিনি।
০৬২২
সংবাদমাধ্যেমের কাছে বিল জানিয়েছেন, ছোটবেলা থেকে গণপরিবহণের প্রতি আগ্রহ তাঁর। তিনি বলেন, ‘‘স্কুলে যাওয়ার সময় নানা রুটের বাসে চড়তে দারুণ মজা লাগত। নতুন কোনও জায়গায় গেলে প্রথমেই সেখানকার পরিবহণ ব্যবস্থা সম্পর্কে খোঁজখবর করতাম।’’
০৭২২
লস অ্যাঞ্জেলসের আগে হংকং এবং লন্ডনেও ট্রেনে-বাসে বা মেট্রোতে যাতায়াত করেছেন বিল। তাঁর কথায়, ‘‘হংকংয়ের ট্রেন হোক বা লন্ডনের ডাবলডেকার বাস বা টিউব, শহরের সব যানবাহনে চড়তাম।’’
০৮২২
বছরখানেক ধরে বার্কলিতে গিয়ে পড়াশোনার সময় ট্রেনে-বাসের বদলে বার বার বিমানে ওঠায় আকাশে ওড়ার প্রতিও টান জন্মে গিয়েছে বলে জানিয়েছেন বিল। তিনি বলেন, ‘‘বিভিন্ন বিমান সংস্থার বিমানে চড়তেও খুব ভালবাসি। এখনও পর্যন্ত ১০০টি বিমান সংস্থার উড়ানে উঠেছি।’’
০৯২২
চলতি বছরের শেষে ১৬ লক্ষ ৯,৩৪৪ কিলোমিটার সফর করতে চান বলে জানিয়েছেন বিল। অন্য শহরের গিয়ে পড়াশোনার জন্য বিমানে চড়ার নেশাই যেন পেয়ে বসেছিল তাঁকে।
১০২২
বার্কলিতে গিয়ে ট্রান্সপোর্টেশন ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের স্নাতকোত্তর ডিগ্রি হাসিল করেন বিল। ক্লাস করার জন্য প্রতি সপ্তাহে বিমানে যাতায়াত করতেন কেন?
১১২২
বিল জানিয়েছেন, লস অ্যাঞ্জেলস থেকে বার্কলিতে গিয়ে পড়াশোনার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের আশপাশে বসবাস করতে গেলে তাঁর পকেট ফাঁকা হয়ে যেত। কারণ, বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছেপিঠে এক বেডরুমের ফ্ল্যাটের ভাড়াই আকাশছোঁয়া।
১২২২
বিমানে যাতায়াতের নেপথ্যে আরও একটি কারণ রয়েছে। বিল বলেন, ‘‘বার্কলির বে এরিয়ায় থাকার চড়া খরচ ছাড়া আরও একটা কারণে বিমানে যাতায়াত করতাম। দীর্ঘ দিন ধরেই ভাবতাম যে, লস অ্যাঞ্জেলসে বসবাস করব আর পড়াশোনা করতে বিমানে চড়ে অন্য শহরে যাব।’’
১৩২২
বিমানভাড়ার খরচ কমাতে কম কাঠখড় পোড়াননি বিল। বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি সেমিস্টারে দু’সপ্তাহের বুট ক্যাম্প-সহ প্রতি দিন ইঞ্জিনিয়ারিং লিডারশিপ ক্লাস হত। তবে প্রতি দিনের বদলে সপ্তাহের সোম, বুধ এবং শুক্রবার— এই তিন দিনের সমস্ত গুরুত্বপূর্ণ ক্লাসে যেতেন বিল।
১৪২২
বিল বলেন, ‘‘এক বছর ধরে বিমানে যাতায়াতে ৭৫,৯৫৫ মিনিট খরচ করেছি। দিনের হিসাবে যা প্রায় ৫৩ দিন।’’ প্রতি সোম, বুধ এবং শুক্রবার লস অ্যাঞ্জেলস বিমানবন্দর থেকে সান ফ্রান্সিসকোর বিমানবন্দরের উদ্দেশে রওনা দিতেন তিনি। যাতে বার্কলির বে এরিয়ায় বিশ্ববিদ্যালয়ে পৌঁছতে পারেন।
১৫২২
নিয়মিত বিমানে চড়ায় ‘ফ্রিকুয়েন্ট ফ্লায়ার্স মাইলস’-সহ ক্রেডিট কার্ডে যে পয়েন্টগুলি সংগ্রহ করেছেন, টিকিট কাটতে সেগুলি কাজে লাগাতেন বিল। তাঁর কথায়, ‘‘হিসাব কষে দেখেছিলাম, বাড়ি থেকে ক্যাম্পাসে যেতে সাড়ে ৪-৫ ঘণ্টা সময় লেগে যেত।’’
১৬২২
ক্লাস করার জন্য আগে থেকেই উড়ানের টিকিট কেটে রাখতেন তিনি। বিল বলেন, ‘‘ক্লাস করার দিন ভোর পৌনে ৪টেয় ঘুম থেকে উঠতাম। এক বার অ্যালার্ম শুনেই বিছানা ছেড়ে উঠে পড়তাম। কারণ, ফের ঘুমিয়ে পড়লে ক্লাসে যেতে পারব না।’’
১৭২২
বিল বলে চলেন, ‘‘ক্লাস করার আগের রাতে সমস্ত ব্যাগপত্র গুছিয়ে রাখতাম। ভোর ৪টে ২০ মিনিটে বাড়ি ছেড়ে বেরিয়ে পড়তাম। এর পর আধ ঘণ্টা গাড়ি চালিয়ে লস অ্যাঞ্জেলস বিমানবন্দরের সবচেয়ে কাছের মেট্রো স্টেশনে পৌঁছে যেতাম।’’
১৮২২
বিমানবন্দরের কাছে মেট্রো স্টেশনের পার্কিংয়ে নিজের গাড়ি রেখে দিতেন বিল। এতে বিমানবন্দরের পার্কিংয়ের তুলনায় কম খরচ পড়ত। বিল বলেন, ‘‘ভোর ৪টে ৫০ মিনিট নাগাদ মেট্রো স্টেশন থেকে ভাড়া গাড়ি নিয়ে বিমানবন্দরে পৌঁছে যেতাম।’’
১৯২২
সপ্তাহের তিন দিন ভোর ৫টা ১০ মিনিট নাগাদ লস অ্যাঞ্জেলস বিমানবন্দরে নেমে পড়তেন বিল। ভোরের উড়ান হওয়ার নিরাপত্তার ঘেরাটোপ ছাড়িয়ে বিমানে উঠতেও কম সময় লাগত তাঁর। বিল বলেন, ‘‘ভোর ৬টায় বিমান ছাড়ার পর সাড়ে ৭টার মধ্যে সান ফ্রান্সিসকো বিমানবন্দরে নেমে পড়তাম।’’
২০২২
সেই বিমানবন্দর থেকে আলাস্কা এয়ারলাইন্সের লাউঞ্জে প্রাতরাশ সেরে নিতেন বিল। সেখানে প্রায় এক ঘণ্টা বসে খানিকটা পড়াশোনা করে ট্রেন ধরতেন। সকাল পৌনে ১০টা নাগাদ বার্কলিতে পৌঁছে যেতেন। সেখান থেকে বাসে চড়ে ক্যাম্পাসে রওনা দিতেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম ক্লাস হত সকাল ১০টা ১০ মিনিটে। সে ক্লাসে ঢুকতে কখনও দেরি হত না বিলের।
২১২২
বিল জানিয়েছেন, দুপুর ২টো নাগাদ ক্লাস শেষ হওয়ার পর সহপাঠীদের সঙ্গে নানা প্রজেক্টে কাজ করতেন তিনি। তাঁর কথায়, ‘‘বিকেল ৫টা নাগাদ ক্যাম্পাস ছেড়ে বেরিয়ে সন্ধ্যা সওয়া ৬টা নাগাদ সান ফ্রান্সিসকো বিমানবন্দরে ফিরে যেতাম। সন্ধ্যা ৭টার উড়ান ধরে রাত সাড়ে ৮টা লস অ্যাঞ্জেলস বিমানবন্দরে ফিরে আসতাম। সেখান থেকে গাড়ি ভাড়া করে ফের মেট্রো স্টেশনে পৌঁছতাম। রাত ৯টায় স্টেশনের পার্কিং থেকে নিজের বার করে আধ ঘণ্টায় বাড়ি ফিরতাম।’’
২২২২
বছরখানেক ধরে ভিন্ শহরের বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনার জন্য মোট ২৩৮টি উড়ান ধরেছেন বিল। বিমানভাড়া মেটাতে সব মিলিয়ে ২,৪১৩ ডলার খসে গিয়েছে তাঁর। ভারতীয় মুদ্রায় যা দু’লক্ষ টাকার বেশি।