Baithakkhana Bazar has a memory of a tree hidden in its name and its related to Job Charnock dgtl
Baithakkhana Bazar
নাম ‘বৈঠকখানা’! কলকাতায় ইংরেজদের ব্যবসা জমাতে সাহায্য করেছিল চার্নকের এই আড্ডার ঠেক
বাজারের নাম যে বৈঠকখানা! বাজার ঢুকে পড়েছে বসার ঘরের মধ্যে, না কি বসার ঘরই এসে হাজির বাজারে? এই প্রশ্নই ঘুরপাক খায় এই বাজারের নামে।
নিজস্ব প্রতিবেদন
কলকাতাশেষ আপডেট: ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ১১:৪৯
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১১৭
বাজারের নাম যে ‘বৈঠকখানা’! বাজার ঢুকে পড়েছে বসার ঘরের মধ্যে, না কি বসার ঘরই এসে হাজির বাজারে? এই প্রশ্নই ঘুরপাক খায় এই বাজারের নামে। কলকাতার বিখ্যাত সেই বৈঠকখানা বাজারের জন্মবৃত্তান্তের শিকড় কিন্তু কয়েকশো বছরের পুরনো।
০২১৭
কলকাতার ১৭৮৪ খ্রিস্টাব্দের মানচিত্রে লালবাজার মোড় থেকে পূর্ব দিকে শিয়ালদহ পর্যন্ত যে রাস্তা, সেই রাস্তাই ছিল বৈঠকখানা রোড।
০৩১৭
কিন্তু ‘বৈঠকখানা’ নাম কোথা থেকে এল? তার কারণ জানতে কয়েক শতক পিছিয়ে পৌঁছে যেতে হবে সপ্তদশ শতকে।
০৪১৭
১৬৯০ খ্রিস্টাব্দে হুগলি নদীর তীরে জঙ্গলে ঢাকা এলাকায় এসে পৌঁছেছিল ইংরেজ ব্যবসায়ী জব চার্নকের জাহাজ।
০৫১৭
যদিও, কলকাতার গবেষকদের মত, তাঁর প্রথম পছন্দ ‘কলকাতা’ ছিল না।
০৬১৭
সে সময়ে গঙ্গার তীরবর্তী অন্যতম সমৃদ্ধ জনপদ ছিল শ্রীরামপুর। সেখানেই সদলবলে ঘাঁটি গাড়তে চেয়েছিলেন চার্নক। কিন্তু তখন ইউরোপীয় বণিকগোষ্ঠী এবং মুঘল সুবেদারদের দাপট অনেক বেশি।
০৭১৭
শেষমেশ মনোবাঞ্ছা পূরণ হয়নি চার্নকের। বাধ্য হয়ে তিনি চলে আসেন বর্তমানের কলকাতায়। কারণ জলে-জঙ্গলে ভরা এই জায়গা তখনও অন্য দেশের বণিকদের নজর এড়িয়েই ছিল।
০৮১৭
চার্নক বুঝে যান, ব্রিটিশদের দাপট বাড়াতে তাঁকে আপাতত গঙ্গা তীরবর্তী এই বনজঙ্গলে ভরা গ্রামেই থাকতে হবে। তবে চার্নকের মূল উদ্দেশ্য ছিল নদীর তীরে ব্যবসা জমানো। তাই ধীরে ধীরে খেজুরে আলাপ করতে করতে স্থানীয় ব্যাপারীদের সঙ্গে তিনি ভিড়ে যান।
০৯১৭
পরনে ঢিলে পায়জামা আর কামিজ। গড়গড়া বা দেশি হুঁকোয় টান দিতে দিতে চার্নক সাহেব ধীরে ধীরে হয়ে ওঠেন একেবারে ‘এদেশি’। তাঁর আড্ডা দেওয়ার প্রিয় জায়গা হয়ে ওঠে সুতানুটি গ্রামের বিশাল এক বটগাছের তল। সেখানে বিশ্রাম নিতেন বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা অন্য ব্যবসায়ীরাও। জমতে থাকে খোশগল্প।
১০১৭
বর্তমানে যেখানে বউবাজার স্ট্রিট লোয়ার সার্কুলার রোডে এসে মিশেছে, সেখানেই ছিল এই বিশাল বটবৃক্ষ। গ্রীষ্মের দুপুরে তার নীচেই জমত আড্ডা আর মালপত্র কেনাবেচা।
১১১৭
বৈঠক বসার কারণে ক্রমে জায়গাটার নাম মুখে মুখে ‘বৈঠকখানা’ নামে ছড়িয়ে পড়ে। বাজারের নাম হয়ে যায় ‘বৈঠকখানা বাজার’। চার্নকের ব্যবসায়িক সাফল্যের কারণে ওই বটগাছের অবদান ছিল বলেও মনে করতে শুরু করেন অনেকে। ফলে বটবৃক্ষের আশীর্বাদ পেতে আরও ভিড় বাড়তে থাকে ওই জায়গায়।
১২১৭
প্রচলিত ছিল, পণ্যের দরদামের পাশাপাশি বাজারের সার্বিক হাওয়াও নাকি ওই বৈঠকখানায় বসে বুঝে নিতেন চার্নক।
১৩১৭
শুধু আড্ডাই নয়। কয়েক বছরের মধ্যে যখন চার্নকই হয়ে ওঠেন সুতানটি, কলকাতা এবং গোবিন্দপুরের অভিভাবক। ওই বটগাছের তলাতেই বসত তাঁর বিচারসভা।
১৪১৭
বউবাজার স্ট্রিট তৈরির সময় ১৭৯৯ খ্রিস্টাব্দে লর্ড ওয়েলেসলির নির্দেশে ওই বটগাছ কেটে দেওয়া হয়। ওয়েলেসলির সেই সিদ্ধান্ত ঘিরে যথেষ্ট বিতর্কও তৈরি হয়েছিল।
১৫১৭
অভিযোগ ওঠে, ওয়েলেসলি দেশীয় ভাবাবেগে আঘাত করেছেন। আবার কোনও কোনও সূত্র দাবি করেন, ওই গাছ কাটা হয়েছিল ১৮২০ খ্রিস্টাব্দে লর্ড ওয়ারেন হেস্টিংসের নির্দেশে।
১৬১৭
তবে এই গাছের পরিচয় নিয়েও বহু বিতর্ক আছে। অনেক গবেষকের মত, বৈঠকখানার ওই গাছ কোনও ভাবেই বটগাছ ছিল না। বরং, তা ছিল নিমগাছ। এবং সে গাছটি ছিল বেনিয়োটোলা আর শোভাবাজারের মাঝে গঙ্গার ধারে, নিমতলায়। সেই গাছের ছায়ায় জমে ওঠা আড্ডা থেকেই জন্ম ‘বৈঠকখানা’ নামের। চার্নকের মৃত্যুর পরেও বহু দিন সে গাছের অস্তিত্ব ছিল। ১৭৭৯ খ্রিস্টাব্দে সেটি পুড়িয়ে ফেলা হয়। কেন, সেই কারণ জানা যায় না।
১৭১৭
গাছের অবস্থান বা পরিচয় যা-ই হোক না কেন, আড্ডার ঠেক বা মজলিশের দরবার গড়ে উঠেছিল তারই ছায়ায়। পরবর্তী কালে বহু বার আগুনও লেগেছে এই স্থানে। সেই গাছ আর আজ নেই। স্মৃতি নিয়ে রয়ে গিয়েছে ‘বৈঠকখানা বাজার’।