কর্নাটকের বেলুরের চেন্নাকেশব মন্দিরের প্রধান আকর্ষণ ভগবান বিষ্ণু নন। বরং, ৪২ ফুটের একটি ‘বিস্ময়-স্তম্ভ’ দেখতে সেখানে ভিড় করেন পর্যটকেরা। এই স্তম্ভের বিশেষত্ব মুগ্ধ করে সকলকে।
নিজস্ব প্রতিবেদন
কলকাতাশেষ আপডেট: ০৫ মে ২০২৩ ১০:৩৫
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১১৬
বিস্তৃত মন্দির প্রাঙ্গণে পুণ্যার্থীদের ভিড়। কেউ ঘণ্টার দড়িতে টান দিচ্ছেন, কেউ কপালে টিকা লাগিয়ে ফুল নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন। পুজোও দিচ্ছেন কেউ কেউ। কিন্তু মন্দিরের মূল আকর্ষণ বিগ্রহ নয়।
০২১৬
কর্নাটকের চেন্নাকেশব মন্দিরের আর এক নাম বিজয়নারায়ণ মন্দির। নারায়ণ বা বিষ্ণুই এই মন্দিরের প্রধান আরাধ্য দেবতা। কর্নাটক ভ্রমণে গেলে পর্যটকদের অন্যতম মূল আকর্ষণ এই প্রাচীন হিন্দু মন্দির।
০৩১৬
তবে মন্দিরে শুধু পুজো দিতে নয়, পুণ্যার্থী এবং পর্যটকদের টানে এখানকার ‘মহাস্তম্ভ’ও। ৪২ ফুট লম্বা একটি স্তম্ভ রয়েছে চেন্নাকেশব মন্দির প্রাঙ্গণে। তা দেখতেই ভিড় জমে সেখানে।
০৪১৬
স্তম্ভটি আর পাঁচটি সাধারণ স্তম্ভের মতো নয়। এর বিশেষত্ব রয়েছে। এই স্তম্ভ বছরের পর বছর ধরে বিজ্ঞানীদের বিস্মিত করে এসেছে। স্তম্ভটিকে ঘিরে আছে যে রহস্য, তার সমাধান হয়নি আজও।
০৫১৬
খ্রিস্টীয় দ্বাদশ শতকে চেন্নাকেশব মন্দিরের নির্মাণকাজ শুরু হয়েছিল তৎকালীন সম্রাট বিষ্ণুবর্ধনের তত্ত্বাবধানে। তিনি ছিলেন ভগবান বিষ্ণুর পৃষ্ঠপোষক। বেলুরে যগচী নদীর ধারে এক বিস্তীর্ণ প্রাঙ্গণকে এই মন্দির নির্মাণের জন্য বেছে নেওয়া হয়েছিল।
০৬১৬
ইতিহাস অনুযায়ী, এই বিশাল মন্দিরটি সম্পূর্ণ তৈরি করতে ১০৩ বছর সময় লেগেছিল। স্থাপত্য কীর্তির জন্য দক্ষিণ ভারতের এই হিন্দু মন্দিরটি বিশেষ ভাবে প্রসিদ্ধ। মন্দিরের আনাচে-কানাচে ছড়িয়ে আছে প্রাচীন ভারতীয় স্থাপত্যকলার নিদর্শন।
০৭১৬
সমগ্র মন্দিরটিতেই একাধিক সুক্ষ্ম কারুকার্য খচিত স্তম্ভ রয়েছে। তবে মন্দির প্রাঙ্গণে থাকা ৪২ ফুটের স্তম্ভটি বরাবরই আলোচনার কেন্দ্রে। ইতিহাসবিদ থেকে শুরু করে বিজ্ঞানী, প্রত্নতত্ত্ববিদ— নানা সময়ে নানা ভাবে এই স্তম্ভকে খুঁটিয়ে পরীক্ষা করে দেখেছেন।
০৮১৬
ইতিহাসবিদদের দাবি, স্তম্ভটি কোনও অবলম্বন ছাড়াই ঠায় দাঁড়িয়ে আছে। উঁচু স্তম্ভ তৈরির জন্য মাটির নীচে যে পর্যাপ্ত গাঁথনির প্রয়োজন হয়, তা এ ক্ষেত্রে নেই।
০৯১৬
কোনও রকম ভিত্তি ছাড়াই কী ভাবে ৪২ ফুট উঁচু স্তম্ভটি খাড়া দাঁড়িয়ে আছে, তা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। এই স্তম্ভের নীচে কেবল একটি তারার মতো খাঁজকাটা কয়েক হাত বিস্তৃত প্ল্যাটফর্ম রয়েছে। মাটির নীচে স্তম্ভকে ধরে রাখার মতো কোনও ব্যবস্থা নেই।
১০১৬
ওই ছড়ানো প্ল্যাটফর্মটি শক্ত গ্রানাইট শিলার তৈরি। তবে স্তম্ভটিতে ঠিক কোন পাথর ব্যবহার করা হয়েছে, তেমন পাথর কোথায় পাওয়া যায়, তা নিশ্চিত করতে পারেননি কেউ।
১১১৬
বেলুরের এই মহাস্তম্ভের অপর নাম কার্তিক দীপোৎসব স্তম্ভ। স্তম্ভটি তিন দিক থেকে নিজের ভার একাই বহন করছে, চতুর্থ দিকটিতে রয়েছে কিছুটা ফাঁকা স্থান। অর্থাৎ, চতুর্থ দিকে স্তম্ভটি ফাঁপা।
১২১৬
অনেকে বলেন, মহাস্তম্ভ তৈরি হয়েছে সোপস্টোন বা সাজিমাটি দিয়ে। কারণ, যে সময়ে এটি তৈরি হয়েছিল, সেই সময়কার অন্য স্থাপত্যে ওই শিলা ব্যবহৃত হয়েছে। এ ছাড়া, আরও এক শিলা ব্যবহার করে স্থাপত্য নির্মিত হত সে সময়ে। তার নাম ক্লোরিটিক শিস্টোজ শিলা।
১৩১৬
বেশির ভাগ বিজ্ঞানী মহাস্তম্ভ নির্মাণের ক্ষেত্রে এই দুই শিলার ব্যবহারের তত্ত্ব কার্যত উড়িয়ে দিয়েছেন। তাঁদের দাবি, এই শিলাগুলির কোনওটিই গ্রানাইটের মতো শক্ত নয়। ফলে এই স্তম্ভে সেগুলি ব্যবহার না-ও করা হয়ে থাকতে পারে।
১৪১৬
স্তম্ভে যে পাথর ব্যবহৃত হয়েছে, তা নিয়ে আরও বিস্তারিত পরীক্ষা-নিরীক্ষা প্রয়োজন বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞেরা। কারণ, স্তম্ভটির কাঠিন্য তাঁদের বিস্মিত করে। বর্তমানে এমন কোনও পাথর নেই যা ভিত ছাড়া এত লম্বা স্তম্ভ ধরে রাখতে পারে।
১৫১৬
বছরের পর বছর ধরে বেলুরের এই মহাস্তম্ভ বহু প্রাকৃতিক দুর্যোগ এবং বিপত্তির মধ্যে দিয়ে এগিয়েছে। তবে এর গায়ে কোনও আঁচ লাগেনি। ভূমিকম্পও এই অবলম্বনহীন স্তম্ভকে টলাতে পারেনি।
১৬১৬
পুণ্যার্থীদের অনেকের বিশ্বাস, ভগবান বিষ্ণুই স্তম্ভটিকে ধরে রেখেছেন। তাই এর বাড়তি কোনও অবলম্বনের প্রয়োজন হয় না। তবে বিজ্ঞান তো তাতে সায় দেয় না। কিসের জোরে মহাস্তম্ভ আজও অটল, তা নিয়ে গবেষণা জারি রয়েছে।