All you need to know about the mysterious lines and geoglyphs of Nazca in Peru dgtl
Mystery of Nazca Lines
মরুভূমির মাঝে শয়ে শয়ে জ্যামিতিক নকশা, বিশাল অজানা প্রাণীর ছবি! কারা বানাল? কেনই বা? উত্তর মেলেনি আজও
নাজ়কা মরুভূমির বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে কাটা রয়েছে নানা রকমের, ভিন্ন ভিন্ন আকৃতির দাগ। পশুপাখির ছবি থেকে সরলরেখা, সব কিছুই আঁকিবুকি করা রয়েছে পেরুর নাজ়কা মরুভূমির গায়ে। এটি আবিষ্ক়ৃত হয় ১৯২৭ সালে।
আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক
শেষ আপডেট: ১৫ এপ্রিল ২০২৫ ১৪:৪২
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১২৫
পৃথিবীর বুকে নানা বিস্ময়কর জিনিস রয়েছে। এমনও নানা জিনিস রয়েছে যেগুলির রহস্যের সমাধান হয়নি আজও। সাত আশ্চর্যের বাইরেও এমন নানা চমকপ্রদ জিনিস রয়েছে যেগুলো আমাদের কল্পনাতীত।
০২২৫
সেই রকমই একটা রহস্য হল পেরুর নাজ়কা মরুভূমির গায়ে আঁচড় কাটা নানা দাগ। নাজ়কা মরুভূমির বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে কাটা রয়েছে নানা রকমের, ভিন্ন ভিন্ন আকৃতির দাগ। পশুপাখির ছবি থেকে সরলরেখা, সব কিছুই আঁকিবুকি করা রয়েছে পেরুর সেই মরুভূমির গায়ে। এটি আবিষ্কৃত হয় ১৯২৭ সালে।
০৩২৫
দক্ষিণ আমোরিকার পেরুর রাজধানী লিমা থেকে প্রায় ৪০০ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থিত নাজ়কা মরুভূমি। প্রায় ৮০ কিলোমিটার লম্বা ও ৪৫০ বর্গকিলোমিটার এলাকা জুড়ে বিস্তৃত এই মরুভূমি। বিশাল মরুভূমির পুরোটা জুড়ে কাটা রয়েছে নানা রকমের দাগ, আঁকা রয়েছে নানা রকমের নকশা ও পশুপাখি।
০৪২৫
মরুভূমির মাটি খোদাই করে আঁকা এই সমস্ত বিচিত্র নকশা আর ছবিগুলিই নাজ়কা লাইন্স নামে পরিচিত। প্রত্নতত্ত্ববিদেরা অনুমান করেছেন, যিশু খ্রিস্টের জন্মের আগের ৫০০ বছর সময় থেকে যিশুর জন্মের পরের ৫০০ বছর সময়কাল জুড়ে এই লাইনগুলি আঁকা হয়েছে। অর্থাৎ, এগুলি অন্তত দু’হাজার বছর আগে আঁকা হয়েছে।
০৫২৫
এত দিন আগে আঁকা হওয়ার পরেও এবং খোলা আকাশের নীচে, বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগ পেরিয়ে এসেও সেই ভূচিত্রগুলি এখনও প্রায় নিখুঁত অবস্থাতেই রয়েছে। এই ক্ষেত্রে নাজ়কা মরুভূমির অতিরিক্ত শুষ্ক জলবায়ু এবং বৃষ্টিপাতের অভাবেরও ভূমিকা রয়েছে।
০৬২৫
নাজ়কা মরুভূমির বিশাল এলাকা জুড়ে মাটির উপর খোদাই করা রয়েছে বিভিন্ন রকম ছবি ও নকশা। পশুপাখির ছবি ছাড়াও রয়েছে সরলরেখা ও জ্যামিতিক নকশা। অঙ্কিত এই ভূচিত্রগুলি এতটাই বিশাল যে, আকাশ থেকে না দেখলে এদের অবয়ব বোঝা যায় না।
০৭২৫
বাণিজ্যিক উড়ান চালু হওয়ার পর এই ভূচিত্র অধিকাংশ মানুষের নজরে এসেছে। কারণ একটা নির্দিষ্ট উচ্চতা ছাড়া এর অবয়ব বোঝা সম্ভব নয়। মরুভূমির মধ্যে দাঁড়িয়ে দেখলে আদতে যে তার গায়ে এত রহস্যময় আঁকিবুকি কাটা রয়েছে, তা বোঝা যায় না।
০৮২৫
অঙ্কিত এই ভূচিত্রগুলিকে দু’ভাগে ভাগ করা যায়— জিয়োগ্লিফ এবং বায়োমর্ফ।
০৯২৫
বায়োমর্ফ বলতে বোঝায় জীবজগৎ, অর্থাৎ পশুপাখি বা গাছপালার ছবি। জিয়োগ্লিফ হল পৃথিবীর বুকে আঁকা জ্যামিতিক নকশা। নাজ়কার উপর প্রায় শতাধিক এমন জ্যামিতিক নকশা চোখে পড়ে।
১০২৫
আবিষ্কার হওয়ার পর গত ৮০ বছর ধরে এই নাজ়কা লাইন্সের রহস্য উন্মোচন করার চেষ্টা করে চলেছেন বিশেষজ্ঞেরা। ১৯৯৪ সালে নাজ়কাকে ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইটের মর্যাদা দিয়েছে ইউনেসকো।
১১২৫
কিন্তু এই বিস্তীর্ণ অঞ্চল জুড়ে কারা এঁকেছিলেন এই সমস্ত ভূচিত্র? এগুলি আঁকার কারণটাই বা কী? প্রাচীন নাজ়কা অঞ্চলের লোকেরা নাজ়কা মরুভূমির উপরের লালচে বাদামি আস্তরণ সরিয়ে এই নকশাগুলি এঁকেছিলেন বলে জানা গিয়েছে। তবে এগুলি আঁকার কী কারণ রয়েছে তা আজও জানা যায়নি।
১২২৫
পেরুর দক্ষিণ উপকূলে যিশুর জন্মের ২০০ বছর আগে থেকে যিশুর জন্মের পরের ৬০০ বছরের মধ্যে গড়ে উঠেছিল নাজ়কা সভ্যতা। মৃৎপাত্র ও পোশাক সেই সভ্যতার অন্যতম আকর্ষণীয় নিদর্শন ছিল। সেখানকার বাসিন্দারাই এই জিয়োগ্লিফগুলি এঁকেছিলেন বলে মনে করছেন গবেষকেরা।
১৩২৫
বিজ্ঞানীদের একাংশের মত, এই জায়গায় আসার আগে নাজ়কারা যে সব প্রাণী দেখেছিলেন সেগুলিকেই এই ভাবে এঁকেছিলেন। কিছু চিত্র কাল্পনিক বলেও মত অনেক বিজ্ঞানীর।
১৪২৫
পেরুর পুরাতত্ত্ববিদ তরিবিও মেজিয়া ঝেপসে ১৯২৬-এ নাজ়কা নিয়ে প্রথম ধারাবাহিক গবেষণা শুরু করেন। তার পর ১৯৪০ সালে মার্কিন অধ্যাপক পল কোসোক নাজ়কা লাইন্সকে ‘পৃথিবীর সবচেয়ে বড় জ্যোতির্বিদ্যার বই’ বলে আখ্যা দেন।
১৫২৫
কোসোকের পর জার্মানির মারিয়া রিচি প্রায় ৪০ বছর ধরে নাজ়কা লাইন্স নিয়ে গবেষণা করেছেন। নাজ়কা লাইন্সের কাছে ছোট্ট বাড়ি বানিয়ে থাকতেন তিনি। নাজ়কা নিয়ে গবেষেণার জন্য তাঁকে ‘লেডি অফ লাইন্স’ বলেও ডাকা হত।
১৬২৫
কিন্তু কোনও গবেষকই এই সকল ভূচিত্র আঁকার সঠিক কারণ খুঁজে বার করতে পারেননি। তারই সঙ্গে নাজ়কার বহু রহস্যেরও কূলকিনারা করা যায়নি।
১৭২৫
নাজ়কার জানতে না পারা বিষয়গুলির মধ্যে প্রথমেই রয়েছে প্রাকৃতিক দুর্যোগের মোকাবিলা করেও কী ভাবে অক্ষত রয়েছে এই সকল নকশা? দ্বিতীয়ত, কী ভাবে এই বিশাল অঞ্চল জুড়ে এত কিছু আঁকা সম্ভব হয়েছিল?
১৮২৫
কী করে জিয়োগ্লিফের এই লাইনগুলি করা হয়েছিল, সেই বিষয়েও যুক্তিগ্রাহ্য উত্তর এখনও মেলেনি। যে ক’টি মতবাদ প্রচলিত রয়েছে, তা নিয়েও বিজ্ঞানীদের মধ্যে মতভেদ রয়েছে।
১৯২৫
নাজ়কা লাইন্সের ওই অঞ্চলে প্রায় ৮০০টি সরলরেখা, ৩০০ জ্যামিতিক নকশা ও ৭০টি প্রাণী ও উদ্ভিদের ছবি এখনও অবধি আবিষ্কৃত হয়েছে। কিছু কিছু সরলরেখা প্রায় ৪৯ কিলোমিটার পর্যন্ত লম্বা।
২০২৫
সরলরেখার পাশাপাশি ত্রিভুজ, চতুর্ভুজ, সামন্তরিক-সহ বিভিন্ন জ্যামিতিক নকশাও নাজ়কার মরুভূমিতে খোদাই করা রয়েছে। রয়েছে বিড়াল, মাকড়সা, হনুমান, হামিংবার্ড, হাঙর, সরীসৃপজাতীয় প্রাণীর ছবি। বিশ্বের নানা প্রান্ত থেকে পর্যটকেরা এই অদ্ভুত নিদর্শন দেখার জন্য পেরুর নাজ়কা মরুভূমিতে আসেন।
২১২৫
নাজ়কায় প্রচুর পাখির নকশারও সন্ধান মিলেছে। বিশালাকার প্রায় ১৬টি নকশায় পাখিগুলির ঠোঁট, ডানা ও লেজ আঁকা হয়েছে যেগুলি শরীরের তুলনায় অনেক বড়। এর নেপথ্যেও কোনও বিশেষ কারণ রয়েছে কি না তা জানতে পারা যায়নি।
২২২৫
বর্তমান যুগে সেই সমস্ত পাখি কোথায় পাওয়া যায়, বা আগে কোথাও পাওয়া যেত কি না, সে সব জানার চেষ্টা করছেন গবেষকেরা। এই সকল নকশার মধ্যে দিয়ে নাজ়কারা কোনও বার্তা দিতে চেয়েছিলেন কি না, তা-ও জানার চেষ্টা করছেন তাঁরা। কিন্তু এখনও অবধি সেই রকম কোনও তথ্য সামনে আসেনি।
২৩২৫
নাজ়কার জিয়োগ্লিফগুলির সঙ্গে জ্যোর্তিবিজ্ঞানের কোনও রীতির যোগসূত্র থাকতে পারে বলেও মনে করেন গবেষকেরা। নাজ়কা লাইন্স এখনও এতটাই রহস্যময় যে ভিন্গ্রহীদেরও মানুষ জড়িয়ে ফেলেছেন এই জিয়োগ্লিফের সঙ্গে।
২৪২৫
কেউ কেউ মনে করেন, ভিন্গ্রহীরাই পৃথিবীর বুকে নেমে এসে এই সকল ভূচিত্র এঁকে গিয়েছেন।
২৫২৫
গবেষকেরা এখনও এর নেপথ্যের রহস্য জানার জন্য গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছেন। এই রহস্য উন্মোচিত হলে বহু গোপন সত্য সামনে আসবে বলে মনে করা হয়।