All need to know about Pregnancy job fraud, Bihar’s gang that luring men with fake pregnancy offers dgtl
Pregnancy Scam
নিঃসন্তানকে অন্তঃসত্ত্বা করতে পারলেই মিলবে ১৫ লক্ষ! অভিনব প্রতারণার ফাঁদ পড়শি রাজ্যে
ডিজিটাল অ্যারেস্ট এবং ক্রেডিট কার্ড জালিয়াতির যুগে প্রতারণার জন্য কল্পনাতীত এক ফন্দি এঁটেছে নওয়াদার একটি দুষ্কৃতী দল। নিঃসন্তানদের অন্তঃসত্ত্বা করে দেওয়ার পরিবর্তে যুবকদের ১০-১৫ লক্ষ টাকার টোপ দিচ্ছে তারা।
আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
শেষ আপডেট: ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ১২:১০
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১১৯
ডিজিটাল অ্যারেস্ট, ফিশিং (তথ্য হাতিয়ে প্রতারণা), ওটিপি জালিয়াতি, ভুয়ো বিনিয়োগের টোপ, সেক্সটরশন, গ্যাসের ভর্তুকির নামে প্রতারণা, শেয়ার বাজারে বিনিয়োগের টোপ... আরও বিভিন্ন ধরনের সাইবার জালিয়াতির নাম শুনলে প্রথমই যে জায়গার নাম মাথায় আসে, সেটি ঝাড়খণ্ডের জামতাড়া জেলা, সাইবার প্রতারকদের আঁতুড়ঘর।
০২১৯
সেই আঁতুড়ঘর থেকে শিক্ষা নিয়ে এই সাইবার অপরাধীরা এখন ছড়িয়ে দেশ জুড়ে। প্রায় প্রতিনিয়তই খবর উঠে আসছে সাইবার প্রতারণার নিত্যনতুন গল্প এবং ফন্দিফিকির। গ্রেফতারও হচ্ছেন অনেকে। তবে জামিন পেয়ে আবার তারা একই কাজ করছেন।
০৩১৯
এ বার জালিয়াতির এক নতুন উপায় খুঁজে বার করেছেন সাইবার প্রতারকেরা। সেই জালিয়াতির আঁতুড়ঘর জামতাড়া নয়, প্রতিবেশী রাজ্য বিহারের নওয়াদা।
০৪১৯
নতুন সেই জালিয়াতির গালভরা এক নামও রয়েছে, ‘প্রেগন্যান্সি জব স্ক্যাম’। কিন্তু ‘প্রেগন্যান্সি’ মানে তো অন্তঃসত্ত্বা হওয়া। জৈবিক সেই প্রক্রিয়ার সঙ্গে সাইবার জালিয়াতির দূরদূরান্ত পর্যন্ত কোনও সম্পর্ক নেই! তা হলে কেন এ রকম নাম?
০৫১৯
আসলে ডিজিটাল অ্যারেস্ট এবং ক্রেডিট কার্ড জালিয়াতির যুগে প্রতারণার জন্য কল্পনাতীত এক ফন্দি এঁটেছে নওয়াদার একটি দুষ্কৃতীদল। নিঃসন্তানদের অন্তঃসত্ত্বা করে দেওয়ার পরিবর্তে ১০-১৫ লক্ষ টাকার টোপ দিচ্ছে তারা।
০৬১৯
যাঁরা সেই টোপ গিলছেন, তাঁদের অনেকেই নিজেদের সঞ্চয়টুকু খোয়াচ্ছেন। আর এ সব কিছুর সূত্রপাত একটি ভুয়ো বিজ্ঞাপন দিয়ে। সেই বিজ্ঞাপনে বড় বড় করে লেখা, ‘অল ইন্ডিয়া প্রেগন্যান্ট জব সার্ভিস’। গোদা বাংলায় যার অর্থ— অন্তঃসত্ত্বা করার চাকরি।
০৭১৯
বিজ্ঞাপনের এক পাশে এক মহিলার ছবিও থাকে। নীচে থাকে ফোন নম্বর। টাকা রোজগারের লোভ দেখিয়ে সেই নম্বরে ফোন করতে বলা হয়।
০৮১৯
বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই ফোন যায় অর্থাভাবে ভুগছেন বা চাকরি খুঁজছেন এমন যুবকদের কাছ থেকে। ফোন করার পরে টোপ দেওয়া হয় ফোনের ও পার থেকে।
০৯১৯
জানানো হয়, ওই যুবক যদি কোনও নিঃসন্তানকে অন্তঃসত্ত্বা করতে পারেন, তা হলেই টাকা মিলবে। পাওয়া যেতে পারে ১৫ লক্ষ পর্যন্ত। তবে তার আগে কয়েক হাজার টাকা দিয়ে নাম নথিভুক্ত করিয়ে নিতে হবে।
১০১৯
বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই প্রতারকদের পাতা সেই ফাঁদে পা দিচ্ছেন যুবকেরা। যদি কেউ সন্দেহ প্রকাশ করে প্রশ্ন তোলেনও, তখন তাঁকে জন্মহার এবং নিঃসন্তান মহিলাদের দুঃখ নিয়ে বানিয়ে বানিয়ে এমন গল্প বলা হচ্ছে যে, তাঁরা সহজেই বিশ্বাস করে নিচ্ছেন সব কিছু।
১১১৯
যুবকদের এ বলেও লোভ দেখানো হচ্ছে যে, যদি কেউ কোনও মহিলাকে অন্তঃসত্ত্বা করতে না-ও পারেন, তা হলেও একটি নির্দিষ্ট সময়ের পর তাঁকে ৫০ হাজার টাকা দেওয়া হবে। এ সব শুনেই টপাটপ টোপ গিলছেন একাংশ।
১২১৯
উল্লেখ্য, জালিয়াতির পথ প্রশস্ত করতে ‘অল ইন্ডিয়া প্রেগন্যান্ট জব সার্ভিস’ নামে ভুয়ো ওয়েবসাইটও খুলে ফেলেছে প্রতারকেরা। ‘টার্গেট’-এর সঙ্গে কথা বলার পর বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জন করার জন্য ওই ওয়েবসাইটের লিঙ্ক পাঠিয়ে দিচ্ছে তারা। ব্যক্তিগত তথ্য, যেমন প্যান এবং আধার কার্ডের তথ্যও সংগ্রহ করা হচ্ছে।
১৩১৯
এর পর পাঠিয়ে দেওয়া হয় একটি ভুয়ো হোটেলের ঠিকানা। সেখানে কামরা ভাড়া করে নিঃসন্তান কোনও মহিলার জন্য অপেক্ষা করতে বলা হয়।
১৪১৯
এঁদের মধ্যে অনেকেই নিঃসন্তান মহিলার জন্য হোটেলে অপেক্ষা করতে গিয়ে বুঝতে পেরেছেন যে তাঁরা প্রতারিত। আবার কেউ নিজের স্ত্রীকে অন্তঃসত্ত্বা করে যখন সেই নম্বরে কয়েক মাস ফোন করছেন, তখন দেখছেন সেই নম্বর বন্ধ। অনেক চেষ্টা করেও কারও সঙ্গে যোগাযোগ করা যাচ্ছে না।
১৫১৯
কিন্তু এই চক্রের মাথায় কারা বসে? পুলিশ জানিয়েছে, ওই চক্র যাঁরা চালাচ্ছেন তাঁদের বেশির ভাগেরই বয়স ১৬-২০ বছরের মধ্যে। নওয়াদার বিভিন্ন জায়গায় চালা বেঁধে বা মাঠে-ঘাটে বসে তাঁরা মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করে চলেছেন। তাই এখন নওয়াদাকে ‘জামতাড়া ২.০’ নাম দিয়েছেন অনেকে।
১৬১৯
অনেকেরই বাবা-মা জানেন না যে, তাঁদের সন্তান এ ভাবে অপরাধজগতের সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন। আবার অনেকে জেনেও কিছু বলেন না। কারণ, তাঁদের চোখে সাইবার জালিয়াতি নাকি কোনও অপরাধ নয়।
১৭১৯
ইতিমধ্যেই অদ্ভুত এই প্রতারণা চক্রের সঙ্গে জড়িত সন্দেহে বেশ কয়েক জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। চলতি বছরের জানুয়ারিতে নওয়াদায় প্রিন্স রাজ, ভোলা কুমার এবং রাহুল কুমার নামে তিন জনকে গ্রেফতার করা হয়। তাঁদের কাছ থেকে ছ’টি মোবাইল ফোন উদ্ধার করেছিল পুলিশ।
১৮১৯
নওয়াদার ডিএসপি (হেডকোয়ার্টার) ইমরান পারভেজ় তখন জানিয়েছিলেন, সাইবার থানায় দায়ের করা অভিযোগের ভিত্তিতে গ্রেফতার করা হয়েছিল তাঁদের। তাঁরা নাদরিগঞ্জ থানার আওতাধীন কাউয়ারা গ্রাম থেকে প্রতারণাচক্র চালাচ্ছিলেন। তাঁরা নিঃসন্তানদের গর্ভবতী করার জন্য ৫ থেকে ১০ লক্ষ টাকার প্রস্তাব দিচ্ছিলেন।
১৯১৯
এর আগে ২০২৩ সালে নওয়াদা জেলায় একই রকম একটি প্রতারণাচক্রের পর্দা উন্মোচন করেছিল পুলিশ। তবে সূত্রের খবর, এই জালিয়াতি নিয়ে অভিযোগের সংখ্যা এতই কম যে, অনেক ক্ষেত্রেই অপরাধ অধরা থেকে যাচ্ছে।