All comments by Justice Abhijit Gangopadhyay during court hearing that attract attention dgtl
Justice Abhijit Gangopadhyay
‘জ্যাঠামশাই’ থেকে শুরু করে ‘শয়তান’! নানা মন্তব্যে ঝড় তুলেছেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়
নিয়োগ দুর্নীতির বিভিন্ন মামলার শুনানি চলাকালীন বিভিন্ন সাহসী রায় দিয়ে নজর কেড়েছেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়। করেছেন অনেক মন্তব্যও।
নিজস্ব প্রতিবেদন
কলকাতাশেষ আপডেট: ১২ ডিসেম্বর ২০২২ ১৭:১৩
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১১৭
শুক্রবার প্রাথমিকের নিয়োগে দুর্নীতি সংক্রান্ত এক মামলার শুনানি চলাকালীন কলকাতা হাই কোর্টের বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় মন্তব্য করেন, ‘আমি ভগবান নই, শয়তান’। আদালতে আসা এক মহিলা তাঁকে ‘ভগবান’ বলে সম্বোধন করার পর বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় এই কথা বলেন। তার পর থেকেই প্রশ্ন উঠছে, কেন হঠাৎ করে এই মন্তব্য করলেন ‘দুঁদে’ বিচারপতি। এই প্রথম নয়, আগেও রাজ্য জুড়ে হইচই তৈরি করা অনেক মন্তব্য করেছেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়।
এ ছাড়াও তিনিই সেই বিচারপতি, যিনি নিয়োগ দুর্নীতির বিভিন্ন মামলায় সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন। তাঁর নির্দেশেই বিপাকে পড়েছেন রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়, তৃণমূল বিধায়ক মানিক ভট্টাচার্য-সহ শিক্ষা দফতরের অনেক আধিকারিক। এখন তাঁরা জেলবন্দি।
০৪১৭
কলকাতা হাই কোর্টের বিচারপতি নিয়ে ‘বিরূপ’ মন্তব্য করার অভিযোগ উঠেছিল এক বর্ষীয়ান আইনজীবীর বিরুদ্ধে। নাম না করে ওই আইনজীবীকে 'জ্যাঠামশাই' বলে সম্বোধন করেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়।
০৫১৭
গত ২৩ জুন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, ‘‘এক জ্যাঠামশাই আইনজীবী যেখানে-সেখানে বলে বেড়াচ্ছেন, 'অভিজিৎবাবু এটা করেননি, অভিজিৎবাবু ওটা করেননি।' আমি নাকি আইনের এবিসিডি বুঝি না!’’
০৬১৭
বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় আরও বলেন, ‘‘আদালতের ওই জ্যাঠামশাই কি আইনের এবিসিডি জানেন? এত দিনে 'জ্যাঠামশাই'-এর পারফরম্যান্স সবাই জানে। আমি আইনের এ টু জেড না-ই জানতে পারি, কিন্তু এবিসিডি ভাল করেই জানি।’’
০৭১৭
অগস্ট মাসে হাই কোর্টের আইনজীবীদের একাংশ হাই কোর্টের প্রধান বিচারপতি প্রকাশ শ্রীবাস্তবকে চিঠি (সেই চিঠির সত্যতা যাচাই করেনি আনন্দবাজার অনলাইন) লেখেন। সেখানে বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ তোলা হয়।
০৮১৭
তাঁর বিরুদ্ধে আইনজীবীদের একাংশের চিঠি নিয়ে বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় মন্তব্য করেন, ‘‘দুর্নীতি প্রকাশ্যে আনার জন্যই কি আমার বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করা হচ্ছে? প্রধান বিচারপতিকে দেওয়া চিঠিতে সব কিছুর উল্লেখ নেই! শুধু কিছু বিষয়কে প্রকাশ্যে আনা হয়েছে।’’
০৯১৭
স্বয়ং রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁকে তাঁর কাজ চালিয়ে যেতে বলেছেন বলেও জানান বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়। একটি মামলার শুনানির ফাঁকে তিনি জানান, নব মহাকরণ হস্তান্তরের সময় দলনেত্রী মমতার সঙ্গে দেখা হয়েছিল তাঁর।
১০১৭
তিনি বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রীকে দেখে আমি গিয়ে বলি, 'ম্যাডাম আমি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়।' আমি নমস্কার করি, উনিও পাল্টা নমস্কার করেন। আমি বলি, আমি কিছু কথা বলতে যদি পারতাম...। উনি বললেন, এখন তো সুযোগ নেই, আপনি ভাল কাজ করছেন। উনি জানান, আপনার নাম শুনেছি, আপনি অনেক কাজ করছেন। আপনি আপনার কাজ চালিয়ে যান।’’
১১১৭
সেপ্টেম্বর মাসে প্রাথমিকের শিক্ষক নিয়োগে ‘অকল্পনীয় দুর্নীতি’ হয়েছে বলে আদালতে জানায় সিবিআই। কলকাতা হাই কোর্টে টেট সংক্রান্ত তদন্ত রিপোর্ট জমা দেন সিবিআইয়ের তদন্তকারী আধিকারিকরা। কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার তরফে আদালতে জানানো হয়, ‘‘টেটের শিক্ষক নিয়োগে যে দুর্নীতি হয়েছে, তা জানলে মানুষ শিউরে উঠবেন।’’ আদালতকক্ষে সিবিআইয়ের বর্ণনা শুনতে শুনতেই বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় মন্তব্য করেন, ‘বিস্ময়কর!’
১২১৭
টাকার বিনিময়ে বেআইনি ভাবে যাঁরা স্কুলের চাকরি পেয়েছেন, বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় তাঁদের নিজে থেকেই ইস্তফা দিতে বলেন। বিচারপতির হুঁশিয়ারি ছিল, ‘‘নিজে থেকে ইস্তফা না দিলে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হবে। পাশাপাশি, আদালত নির্দেশ দেবে, যাতে ভবিষ্যতে কোনও সরকারি চাকরিতে তাঁরা অংশ নিতে না পারেন।’’
১৩১৭
রবিবার রাজ্য জুড়ে টেট হয়েছে। প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদকে সেই টেট পরীক্ষা বন্ধ করে দেওয়ার হুঁশিয়ারিও দিয়েছিলেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়। তিনি বলেন, ‘‘প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ বন্ধুর মতো আচরণ করছে না। আমি বলেছিলাম নিয়োগে বাধা দেব না। কিন্তু এখন যদি দেখি পর্ষদ আইন না মেনে কাজ করছে তবে পরীক্ষা বন্ধ করে দেব।’’
১৪১৭
গত ২৩ নভেম্বর নিয়োগ-দুর্নীতি মামলায় অযোগ্য চাকরিপ্রার্থীদের পুনর্বহালের আবেদন নিয়ে চলা মামলার শুনানি চলাকালীন বিচারপতি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, “কিছু দালাল, যারা মুখপাত্র বলে পরিচিত এবং কিছু মন্ত্রীর নাম বলতে পারি আমি, যাঁরা প্রকাশ্যে বলেছেন কারও চাকরি যাবে না।” স্কুল সার্ভিস কমিশনকে সামনে রেখে নেপথ্যে কেউ কেউ অযোগ্যদের চাকরি বাঁচাতে চাইছেন বলে এই মন্তব্য তিনি করেন।
১৫১৭
গত ৬ ডিসেম্বর ২০১৬ সালের প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়ার পুরো প্যানেল বাতিলের হুঁশিয়ারি দেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়। ওই হুঁশিয়ারি দিয়ে মঙ্গলবার বিচারপতির মন্তব্য, ‘‘আমি ঢাকি সমেত বিসর্জন দিয়ে দেব।’’ পরে অবশ্য তিনি বলেন, পর্ষদের আইনজীবীরা তাঁকে এই কথা বলতে বাধ্য করেছেন।
১৬১৭
নিয়োগ দুর্নীতি মামলার শুনানির সময় বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের করা বিভিন্ন মন্তব্য নিয়ে পাল্টা সমালোচনা শোনা গিয়েছে শাসকদলের কয়েক জনের মুখে।
১৭১৭
তবে এত মন্তব্যের মধ্যেও বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় স্পষ্ট করেছেন, তিনি তাঁর কোনও মন্তব্য কখনও মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উদ্দেশে করেননি। তিনি বলেছিলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী ভাল কাজ করছেন। আমি কেন খারাপ কথা বলব?’’ তিনি জানান, তাঁর কথার ‘ভুল ব্যাখা’ করা হচ্ছে। রাজ্য সরকারের আইনজীবীকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, ‘‘চন্দ্রিমাদিকে (রাজ্যের মন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য) বলবেন, আমি আর অতিরিক্ত মন্তব্য করব না।’’