পুলিশ সূত্রে জানা যায়, কোমলের সৎদাদা অনুপের সঙ্গে যে মেয়েটির বিয়ে হয় তিনি মানসিক ভাবে অসুস্থ ছিলেন। তাই ছেলের সঙ্গে বৌমার বিবাহবিচ্ছেদ ঘটানোর জন্য উঠে পড়ে লাগেন মুন্নালাল। এমনকি, বৌমার বাপের বাড়িকে বিবাহবিচ্ছেদের জন্য ২৫ লক্ষ টাকা দিতেও রাজি হয়ে যান তিনি।

বাড়ি থেকে এতগুলো টাকা এমন ভাবে বেরিয়ে যাবে, তা সহজে মেনে নিতে পারছিলেন না কোমল। তখন থেকেই ছক কষতে থাকেন যে, কী ভাবে বাবা-মা-দাদাকে খুন করে সব সম্মত্তি নিজের দখলে আনা যায়।

রাহুলের সঙ্গে বাবা-মা-দাদাকে হত্যার পরিকল্পনা করা শুরু করেন কোমল। এমনকি, নিখুঁত ভাবে খুন করার পরিকল্পনা করতে টিভিতে ক্রাইম পেট্রোলের বিভিন্ন এপিসোডও দেখতে শুরু করেন কোমল।

অনেক পরিকল্পনার পর দাদা রোহিতের উপর খুন করার দায়িত্ব দেন রাহুল। সাহায্য করবেন কোমল। তবে তিনি হোয়াটস্‌অ্যাপের মাধ্যমে তাঁদের দু’জনকে এক টানা নির্দেশ দেবেন বলেও ঠিক করা হয়।

ঘটনার দিন রাতে বাবা-মা এবং দাদাকে ঘুমের ওষুধ মেশানো ঠান্ডা পানীয় খাওয়ান কোমল। রাত পৌনে একটা নাগাদ কোমল হোয়াটস্‌অ্যাপে ফোন করে রোহিতকে জানান যে, তাঁর বাবা-মা এবং দাদা ঘুমিয়ে পড়েছেন। সেই মতো রোহিত একটু পরেই তাঁদের বাড়ির সামনে এসে উপস্থিত হন। দরজা খুলে দেন কোমল।

ঘরে প্রবেশ করার পর রোহিতের সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক হয় কোমলের। এই বিষয়ে নাকি আগে থেকেই কথা হয়েছিল তাঁদের দু’জনের মধ্যে। তবে এই বিষয়টি রাহুলের কাছ থেকে লুকিয়ে যান দু’জনেই।

সঙ্গমের পর তাঁরা দু’জনে এক যোগে মুন্নালাল এবং রাজদেবীর গলা কেটে হত্যা করেন। ঘুমন্ত অনুপকে বিষ খাওয়ানোর চেষ্টাও করেন তাঁরা। তবে ভয় পেয়ে যান অনুপের নড়াচড়া দেখে। এর পরই বাড়ি থেকে বেরিয়ে যান রোহিত। তবে এই কাণ্ড ঘটানোর সময় রাহুল হোয়াটস্‌অ্যাপের মাধ্যমে তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ রেখেছিলেন।

এই ঘটনার পর ঘুমন্ত দাদা অনুপকে ঘুম থকে তুলে কোমল জানান, কিছু অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তি ঘরে ঢুকে তাঁকে বেঁধে বাবা-মাকে খুন করেছে। অনুপ বাবা-মার মৃতদেহ দেখে পুলিশকে খবর দিলে পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে তদন্ত শুরু করে।

পুলিশ সিসি টিভি খতিয়ে দেখে কোমলকে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করলে চাপের মুখে অপরাধের কথা স্বীকার করেন তিনি। রাহুল এবং রোহিতের যুক্ত থাকার কথাও পুলিশকে তিনি জানান। ১২ ঘণ্টার মধ্যে গ্রেফতার করা হয় রোহিতকেও।

কোমল পুলিশকে জানান, সৎমেয়ে হওয়ায় বাবা-মা তাঁর প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণ করতেন। হাতখরচের টাকা চাইলে তাঁকে দেওয়া হত না। অথচ তাঁর দাদার সমস্ত চাহিদাই বাবা-মা পূরণ করতেন বলেও তিনি দাবি করেন। বাবা-মা তাঁকে সারাক্ষণ বকাঝকা করতেন বলেও তিনি জানান। আর সেই কারণেই সম্পত্তি দখল করতে তিনি বাবা-মাকে খুন করেছেন বলে কোমল পুলিশের কাছে স্বীকার করেন।

কোমল পুলিশকে এ-ও জানান যে, বাবা-মা-দাদাকে খুন করে খুনের দায় দাদার শ্বশুরবাড়ির উপর চাপানোর পরিকল্পনা করেছিলেন তিনি। দাদার মৃত্যুকে আত্মহত্যার রূপ দিতেই তাঁকে বিষ খাওয়ানোর পরিকল্পনা করেন কোমল।

এর পর এই হত্যাকাণ্ডের তদন্ত চলাকালীন ৯ জুলাই সেনাকর্মী রাহুলকে মুম্বই থেকে গ্রেফতার করে ক্রাইম ব্রাঞ্চ। পুলিশ সেনা কর্তাদের কাছে ষড়যন্ত্রের প্রমাণ পেশ করলে রাহুল তাঁর অপরাধ স্বীকার করেন।

পুলিশ অফিসারদের তিনি জানান, কোমলের কথা ভেবেই তিনি এই ষড়যন্ত্রে জড়িয়েছিলেন। কিন্তু স্বার্থসিদ্ধি করতে খুনের আগে বোহিতের সঙ্গে যৌনসঙ্গম করেন কোমল। এই ঘটনা তিনি মেনে নিতে পারেননি।

রাহুল জানান, প্রেমিকা কোমল এবং দাদা রোহিত তাঁর সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছেন। তিনি আগে জানলে এই হত্যাকাণ্ডে কখনও মদত জোগাতেন না বলেও পুলিশের কাছে হা-হুতাশ করেন রাহুল।