প্রতীকী ছবি।
চাকরি জীবনে দু’হাত ভরে উপার্জন করছেন। নিজের মতো করে সাজিয়েছেন জীবনের ঘুঁটি। কিন্তু অবসরের পরে? মনে রাখবেন, বর্তমানের সঞ্চয়ই হতে পারে ভবিষ্যতের সুরক্ষিত জীবনের চাবিকাঠি। তাই সঞ্চয় এমন জায়গায় হওয়া উচিত, যা ভবিষ্যতে আপনার অবসরকালীন অবস্থায় স্থায়ী মাসিক আয় উপার্জনে আপনাকে সাহায্য করবে। এমনই একটি প্রকল্প হল জাতীয় পেনশন প্রকল্প (এনপিএস)।
১) জাতীয় পেনশন প্রকল্পে কী?
সময়ের ভারে ন্যুব্জ হয়ে আমাদের সকলেরই একটি নির্দিষ্ট বয়সের ঊর্ধ্বে অবসর নেওয়া প্রয়োজনীয় হয়ে পড়ে এবং সেই সঙ্গে অবসরের পর একটি স্থায়ী, নিয়মিত এবং নিশ্চিত আয়েরও প্রয়োজন সৃষ্টি হয়। যা বাকি জীবনকে স্বচ্ছল ভাবে পরিচালিত করতে পারে। অবসরকালীন রোজগারের ক্ষেত্রে জাতীয় পেনশন প্রকল্পে বিনিয়োগ হতে পারে অন্যতম সেরা বিকল্প।
• জাতীয় পেনশন প্রকল্প হল একটি স্বেচ্ছাসেবী অবদানমূলক প্রকল্প যা ভারত সরকারের অধীনস্থ পেনশন তহবিল নিয়ন্ত্রণ ও উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (পিএফআরডিএ) দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়।
• এনপিএস-এর আওতায় কোনও ব্যক্তি অ্যাকাউন্ট খুলে কর্মজীবনের সময় অবসরের জন্য পেনশন মূলধন (কর্পাস) সংরক্ষণ করতে পারেন।
• এই প্রকল্পে সরকারি, বেসরকারি এবং অসংগঠিত ক্ষেত্রের যে কোনও কর্মী স্বেচ্ছায় বিনিয়োগ করতে পারেন। অর্থাৎ এই প্রকল্পে বিনিয়োগ সকলের জন্যেই উন্মুক্ত ও স্বেচ্ছাধীন। তবে সরকারি কর্মচারীদের জন্য বাধ্যতামূলক।
• এনপিএস-এ নির্দিষ্ট সময় অন্তর নিয়মিত টাকা দেওয়ার সুযোগ আছে। যা পরবর্তীকালে পেনশন হিসেবে পাবেন গ্রাহক।
২) এনপিএস-এ বিনিয়োগ সংক্রান্ত কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য:
১৮ থেকে ৬০ বছর বয়সি যে কোনও ভারতীয় নাগরিক এবং অনাবাসী ভারতীয় নাগরিক এনপিএস-এ বিনিয়োগ করতে পারেন।
পোস্ট অফিস, সরকারি ও বেসরকারি ব্যাঙ্ক-সহ মোট ৫৮টি সংস্থার কাছে এনপিএস প্রকল্প খোলার অনুমতি রয়েছে। এর মধ্যে যে কোনও সংস্থায় আপনি এনপিএস অ্যাকাউন্ট চালু করতে পারেন। তবে এক জন ব্যাক্তি কেবলমাত্র একটি অ্যাকাউন্টই চালু করতে পারেন।
৩) জাতীয় পেনশন প্রকল্পের অ্যাকাউন্ট সম্পর্কিত তথ্য:
এনপিএস প্রকল্পে আপনি মূলত দুই ধরনের হিসেবে বা অ্যাকাউন্টে বিনিয়োগ করতে পারেন
• প্রথমটি হল এনপিএস প্রথম স্তর– এটি হল অবসরের পরে তহবিল গঠনের লক্ষ্যে খোলা স্থায়ী হিসেব (অ্যাকাউন্ট)। অবসরের আগে অর্থাৎ ৬০ বছরের আগে কয়েকটি জরুরি অবস্থা ছাড়া কোনও ভাবেই এই অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা তোলা যাবে না।
এই জরুরি অবস্থাগুলির মধ্যে রয়েছে গুরুতর শারীরিক অসুস্থতা বা সন্তানের বিয়ে ইত্যাদির মতো বিশেষ কারণ।
এই অ্যাকাউন্টে জমা দেওয়ার নূন্যতম অর্থের পরিমাণ ১০০০ টাকা।
• দ্বিতীয়টি হল এনপিএস দ্বিতীয় স্তর– এই অ্যাকাউন্টটি অনেকটা প্রথাগত সেভিংস অ্যাকাউন্টের মতো। যে কোনও আর্থিক সঙ্কটাবস্থায় লগ্নিকারীরা এই অ্যাকাউন্ট থেকে প্রয়োজন অনুযায়ী ইচ্ছা মতো টাকা তুলতে পারেন।
এই অ্যাকাউন্টে জমা দেওয়ার নূন্যতম অর্থের পরিমাণ ২৫০ টাকা।
৪) এনপিএস প্রকল্পে সঞ্চয়ের সুরক্ষা ও সুদের হার:
প্রথমেই বলা হয়েছে, জাতীয় পেনশন প্রকল্প ভারত সরকারের অধীনস্থ পেনশন তহবিল নিয়ন্ত্রণ ও উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়। অর্থাৎ নিঃসন্দেহে এনপিএস-কে একটি সুরক্ষিত বিনিয়োগ হিসেবে গণ্য করা যেতে পারে।
এনপিএস-এ সুদের হারও অন্যান্য সরকারি প্রকল্পের তুলনায় অনেকটাই বেশি। এই প্রকল্পে বিনিয়োগকারী কোনও ব্যক্তি গড়ে প্রায় ১০ শতাংশ সুদের হার আশা করতে পারেন।
আরও বিস্তারিত ভাবে সুদের হার এবং মাসিক পেনশনের পরিমাণ জানার জন্য অনলাইনে এনএসডিএল ওয়েবসাইট প্রদত্ত এনপিএস ক্যালকুলেটরের সাহায্য নিতে পারেন।
৫) কর ছাড়ের সুবিধা:
আয়কর আইন ১৯৬১-এর ধারা ৮০ সিসিডি (১) অনুযায়ী এনপিএস-এ বিনিয়োগকৃত অর্থের উপর কর ছাড়ের দাবি করা সম্ভব। ধারা ৮০ সিসিই অনুযায়ী যার সর্বোচ্চ সীমা দেড় লক্ষ টাকা।
এ ছাড়াও ধারা ৮০ সিসিডি (১বি) অনুযায়ী, শুধুমাত্র এনপিএস (প্রথম স্তরের অ্যাকাউন্ট)-এ বিনিয়োগ করে অতিরিক্ত ৫০ হাজার টাকার কর ছাড় দাবি করা সম্ভব।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy