ঠিক কতটা ঝুঁকি নিলে, বা কী ভাবে ঝুঁকি এড়ালে, মূলধনে হাত পড়বে না তা বিনিয়োগকারীকে ঠিক করতে হবে একেবারে গোড়ায়। প্রতীকী ছবি।
অবসরের পরে সঞ্চয়ের টাকা মূল্যবৃদ্ধির চাপে সঙ্কুচিত না হোক, আমরা সেটাই চাই। আর তাই লগ্নি করার সময়ও এটা মাথায় রাখতে হবে। বিনিয়োগ করতে হবে এমন ভাবে যাতে রিটার্ন যাই আসুক না কেন, তা যেন মূল্যবৃদ্ধির হারের থেকে বেশি হয়। পেশাদার উপদেষ্টারা একে ইংরাজিতে ক্যাপিটাল প্রিজারভেশন বলেন।
আর এই প্রসঙ্গেই তাই আলোচনা করা যাক কী ভাবে সঞ্চয়কে মূল্যবৃদ্ধির কামড় থেকে আগলে রাখা যায়। আর এখানেই আসে ঝুঁকির কথা। আমরা জানি যে কোনও সঞ্চয়ই ঝুঁকিমুক্ত নয়। রিটার্ন আর ঝুঁকি তাল মিলিয়ে হাঁটে। ঝুঁকি বেশি মানেই রিটার্ন বেশি। কিন্তু ঠিক কতটা ঝুঁকি নিলে, বা কী ভাবে ঝুঁকি এড়ালে, মূলধনে হাত পড়বে না তা বিনিয়োগকারীকে ঠিক করতে হবে একেবারে গোড়ায়। রিস্কি আ্যসেট বা ঝুঁকিপূর্ণ বিনিয়োগ ঠিক কেমন ভাবে নিজের পোর্টফোলিওর অন্তর্ভুক্ত করবেন সে ব্যাপারে একটি পরিকল্পনা প্রথমেই দরকার হবে।
আমরা বলে থাকি ‘ইকুইটি ঝুঁকিপূর্ণ তাই ডেট অনেক নিশ্চিন্তের’। কিন্তু তাই বলে ইকুইটিতে একবারেই টাকা ঢালব না এই চিন্তাও ঠিক নয়। তবে এই সন্ধিক্ষণে শুধুমাত্র ডেট-ভিত্তিক পোর্টফোলিও অন্য কোন বিশেষ সুবিধা যেতে সক্ষম নয় বলে ধরে নিতে হবে। ইকুইটি বা কমোডিটি অথবা এই প্রজন্মের প্রিয় কয়েকটি নতুন শ্রেণির অ্যাসেট ক্লাস (যেগুলি যথেষ্ট ঝুঁকিপূর্ণ) পুরোপুরি বর্জন করা ঠিক হবে না বলেই মনে হয়।
ক্যাপিটাল প্রিজারভেশন যদি সত্যিই চান তাহলে অবশ্য ফিক্সড-ইনকাম সিকিউরিটিজ থেকে বেশি দূরে থাকতে পারবেন না। এখানে মূলত সুদের ঝুঁকি থেকে মুক্তির কথাই বলা হচ্ছে। ব্যাঙ্ক বা কর্পোরেট সংস্থার ডিপোজিট সে ক্ষেত্রে কিছুটা রক্ষাকর্তার ভুমিকায় থাকতে পারে, নির্দিষ্ট হারে রিটার্ন দিতে এগুলির জুড়ি নেই।
তবে মনে রাখতে হবে সার্বিক উচ্চ হারের মুদ্রাস্ফীতির পরিপ্রেক্ষিতে আজকাল এমন নির্দিষ্ট রিটার্ন অনেকটাই অপ্রাসঙ্গিক। ভাল তথা নির্ভরযোগ্য ব্যাঙ্ক বা কর্পোরেট সংস্থার ডিপোজিট সর্বোচ্চ ৬-৮% বার্ষিক হারে (৮ শতাংশ পাওয়া দুষ্কর) হয়তো সুদ দিতে পারবে। তবে মুদ্রাস্ফীতি যদি গড়ে ৫% ধরে নেন তা হলে ইনকাম ট্যাক্স দেওয়ার পর আপনার হাতে কী পড়ে থাকবে তা সহজেই অনুমেয়।
ডিপোজিট বা স্মল সেভিংস স্কিম (সাধারণত পোস্ট অফিসে পাওয়া যায়) যদি বাদ দেন, তা হলে মার্কেট-নির্ভর প্রকল্পে অবশ্যই কোনও নিশ্চয়তা নেই। বাজার নিয়ন্ত্রক সেবি মাঝে ‘ক্যাপিটাল প্রোটেকশন ওরিয়েন্টেড’ মিউচুয়াল ফান্ড প্রকল্পে অনুমতি দিয়েছিল বটে, তবে কিছুকাল যাবৎ ঐ জাতীয় ফান্ড আর বিনিয়োগকারীকে তেমন ভাবে আকর্ষণ করছে না। অবশ্য সেখানেও কোনও গ্যারান্টি-যুক্ত রিটার্ন দেওয়ার প্রতিশ্রুতি ছিল না।
হালকা ঝুঁকি নিয়েও যদি ক্যাপিটাল প্রটেকশনের কথা ভাবেন তা হলে মনে রাখুন আপনার পোর্টফোলিওর অনেকাংশেই যেন ঋণপত্র বা ডেট নির্ভর হয়। আনুমানিক ৭০-৮০ শতাংশ হলেই হয়তো ভাল হয়, অবশ্য কোনও নির্দিষ্ট নিয়ম নেই এ ব্যাপারে। বাকিটুকু আপনি রিয়েল এস্টেট, কমোডিটি, শেয়ার ইত্যাদিতে বন্টন করে দিতে পারেন নিজস্ব পদ্ধতিতে।
সাবেক মূলধনের উপর ঝুঁকির ছায়া যেন একদিনের জন্যেও না পড়ে, অনেক প্রাক-অবসর বিনিয়োগকারী এ কথা ভেবেই নিজেদের পোর্টফোলিও গঠন করেন। তবে ন্যূনতম ১০-১২% যদি রোজগার না হয় প্রতি বছর তা হলে অশেষ অসুবিধা হবে, এ কথা তাঁরা বেশ বোঝেন। ডেট দিয়ে তা পাওয়া সম্ভব নয়। অতএব তাঁদের জন্য বিশেষ ভাবে, অন্তত মধ্য মেয়াদের জন্য, ডেট এবং ইকুইটির একটি সুষ্ঠু সংমিশ্রণ দরকার।
নিজের মিশ্রিত পোর্টফোলিও যদি যথাযথ ভাবে গঠন না করতে পারেন, তা হলে আপনার জন্য আছে নানা ধরনের হাইব্রিড ফান্ড। ইদানীং ব্যালান্সড এবং ব্যালান্সড অ্যাডভান্টেজ ফান্ড, দুই'ই বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। দ্বিতীয়টির ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট ফান্ড ম্যানেজার মার্কেটের গতিপ্রকৃতি বুঝে ইকুইটি-ডেটের মিশ্রণের পরিবর্তন আনতে পারেন।
আগামী দিনে এই ধরনের ফান্ড আরও অনেকটাই গ্রহণযোগ্য হয়ে উঠবে বলে লগ্নিকারীদের বিশ্বাস। ভালো ওপেন-এন্ড ব্যালান্সড অ্যাডভান্টেজ ফান্ড বেছে নিয়ে এককালীন অথবা সিস্টেমেটিক ইনভেসমেন্ট প্ল্যানের মাধ্যমে বিনিয়োগ করা উচিত। অন্তত মধ্য মেয়াদের জন্য লগ্নি করলে, ৬-৮ বছর তো বটেই, সাধারণ বিনিয়োগকারী নিতান্ত হতাশ হবেন না বলে অনেকে মনে করেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy