শেয়ার বাজারে টাকা ঢালা আর তার হদিশ রাখা সহজ নয়। কিন্তু ঋণপত্রের তুলনায় শেয়ারের দামের ওঠা পড়ার কারণ বোঝা তুলনামূলক ভাবে অনেক বেশি সোজা। অন্তত একটা ধারণা করতে খুব একটা অসুবিধা হয় না। ঋণপত্রের বাজারটা একটু জটিল। বিশেষ করে যদি বাজার থেকে আগে ছাড়া ঋণপত্র কেনেন। কিন্তু এটা আবার ততটা কঠিনও নয়। ফারাক হল শেয়ারের দাম আর ঋণপত্রের বাজার দরের ওঠা-নামার পিছনের কারণ। ঋণপত্রের ক্ষেত্রে কারণগুলো একটু জটিল। তবে সাধারণ ধারণা করাটা অতটা জটিল নয়। দেখে নেওয়া যাক, সরলীকরণের যাবতীয় সমস্যা মেনে নিয়েই, ব্যাপারটা কী।
- আপনি যখন শেয়ার কেনেন তখন আপনি একটি সংস্থার অংশীদারি কেনেন। আর যখন ঋণপত্র কেনেন তখন আপনি যার ঋণপত্র কিনছেন তাকে আসলে টাকা ধার দেন।
- শেয়ার কিনলে আপনার আয়ের সূত্র হল সংস্থার লাভের অংশ। আর বাজারে যদি শেয়ারের দাম বাড়ে তা বিক্রি করে থোক লাভ। ঋণপত্রের ক্ষেত্রে আপনার আয় নির্দিষ্ট হারে সুদ। বাজারে সুদের হার বাড়লে যে আপনার প্রাপ্য আয় বাড়বে তা কিন্তু নয়। ঋণপত্র কেনার সময় যা সুদ প্রতিশ্রুত ছিল তাই আপনার প্রাপ্য। কিন্তু সুদ বাড়লে বাজারে আসা নতুন ঋণপত্রে সেই সুদের সুবিধা পাওয়া যায়।
- আমরা অন্যত্র আলোচনায় দেখে নিয়েছি ইল্ড আর কুপন বা প্রতিশ্রুত সুদের মধ্যে ফারাক কী। অঙ্কের জটিলতায় না গিয়ে বুঝে নি বাজারে বদলে যাওয়া সুদ আর আপনার হাতে থাকা পুরনো ঋণপত্রের বাজার দামের মধ্যে সম্পর্কটি।
ধরুন আপনি একটা ঋণপত্র আজ কিনলেন ১০০ টাকা দিয়ে।
- প্রতিশ্রুত সুদ ধরা যাক ৫ শতাংশ।
- অর্থাৎ ১০০ টাকার বিনিময়ে আপনি ৫ টাকা আয় করছেন।
- এবার বাজারে সুদের হার বেড়ে গেল ৬ শতাংশ।
- আপনি যদি ঋণপত্রটি বিক্রি করতে চান সেই ১০০ টাকাতেই, লোকে কি কিনবে? না। কারণ, বাজারে তো এখন ১০০ টাকা দিলে ৬ টাকা সুদ বাবদ পাচ্ছে লোকে।
- তাহলে কী করতে হবে? উত্তরটা সোজা। আপনার ঋণপত্রের দাম কমিয়ে বিক্রি করতে হবে, যাতে যিনি কিনছেন তাঁর বিনিয়োগ পিছু আয় ৬ শতাংশই দাঁড়ায়। তায় আপনার ঋণপত্রটিকে বাজারে বিক্রি করতে হলে তার দাম হবে ৮৩ টাকার মতো। আবারও বলছি। উদাহরণটি অতি সরলীকৃত। কিন্তু তা হলেও একটা ধারণা তো করা যাচ্ছে!
সুদ কমলে কী হবে? প্রশ্নটি তো এটাই!
- এবার ধরা যাক বাজারে সুদ কমে ৪ শতাংশ হয়ে গেল।
- আপনার ঋণপত্রটিতে আপনি পাচ্ছেন ৫ শতাংশ। মানে বাজারের সুদের থেকে ১০০ শতাংশ বিন্দু বেশি।
- এবার আপনি ঋণপত্রটি বিক্রি করতে চান। আপনি কি ১০০ টাকায় বিক্রি করবেন?
- যদি ১০০ টাকায় বিক্রি করেন, তাহলে তো আপনার ক্ষতি আর যে কিনবে তার লাভ। তাই না? নতুন ঋণপত্রে পাওয়া যাচ্ছে ৪ শতাংশ। মানে ১০০ টাকা ধার দিলে বছরে ৪ টাকা সুদ। আর আপনার হাতের ঋণপত্রটি দিচ্ছে ৫ শতাংশ বা ১০০ টাকা সুদ।
- আপনি তাই এটি এমন দামে বিক্রি করবেন যাতে যে কিনছে তার বিনিয়োগ থেকে আয় ৪ শতাংশই হয়।
- তার মানে হল, বাজারে ঋণপত্রটি সুদ কমার জন্য বিক্রি হবে কেনা দামের থেকে বেশি দামে। ঋণপত্রটির দাম তাই হওয়া উচিত অন্তত ১২৫ টাকা যার ৪ শতাংশ সুদ হবে ৫ টাকা।
এটা হল গোদা আয়ের হিসাবে ঋণপত্রের বাজার দরের ওঠা পড়ার হিসাব। আমরা দেখলাম কেন বাজারে সুদের হার বাড়লে পুরনো ঋণপত্রের দাম কমে আর সুদের হার কমলে কেন ঋণপত্রের দাম বাড়ে। এছাড়াও কিন্তু একাধিক অর্থনৈতিক কারণ আছে যা ঋণপত্রের দাম বাড়া বা কমার পিছনে থাকে। কিন্তু যে কারণই হোক সুদের উপর তার কিন্তু প্রভাব থাকতে হবে। সমস্যা হল সুদ হচ্ছে অর্থনীতির চালের অন্যতম নির্ধারক। তাই আর্থিক নীতির প্রভাব সুদের উপর পড়বেই। কিন্তু সে পাঠ অন্য।