প্রতীকী ছবি।
অর্থ উপার্জন এবং নিত্য জীবনযাপনে ব্যয়ের সঙ্গে যে বিষয়টি ওতপ্রোত ভাবে জড়িত তা হল সঞ্চয়। ভবিষ্যৎ সঞ্চয়ের কথা ভেবে বহু বিনিয়োগকারী বহু পন্থা অবলম্বন করে থাকেন। কিছু ক্ষেত্রে বিনিয়োগকারীরা সরকারি বা বেসরকারি বিভিন্ন প্রকল্পে বিনিয়োগ করে থাকেন। কিছু ক্ষেত্রে আবার সরাসরি বাজারে। আজকের দিনে বহু বিনিয়োগকারী ইকুইটিতে বিনিয়োগ করেন। ঝুঁকি থাকলেও ইকুইটিতে বিনিয়োগ করার নেপথ্যে বেশ কিছু কারণ রয়েছে। এর মধ্যে একটি হল, ব্যাঙ্ক বা পোস্ট অফিসে ফিক্সড ডিপোজিট বা রেকারিং ডিপোজিট। এতং সুদের হার অত্যন্ত কম। উল্টো দিকে ইকুইটিতে রিটার্নের পরিমাণ ও সুদের হার দুই-ই বেশি।
তবে ইকুইটিতে বিনিয়োগের আগে বাজারের অর্থনৈতিক ওঠাপড়া নিয়ে একটু অঙ্ক কষে রাখা বিশেষ প্রয়োজন। মনে রাখবেন যত ভাল ফান্ডই হোক না কেন, বিনিয়োগ সংক্রান্ত সমস্ত বিষয় কিন্তু বেশ ঝুঁকিপূর্ণ। বাজার খারাপ থাকলে প্রবল লোকসানের আশঙ্কা থাকে। যদি বাজার ভাল থাকলে, মোটা অঙ্কের টাকার লাভ পেয়ে থাকেন বিনিয়োগকারীরা। তবে যাঁরা এই ঝুঁকি নিতে প্রস্তুত নন এবং যাঁদের এর ফলে মানসিক চাপের সৃষ্টি হতে পারে, তাঁদের ক্ষেত্রে মিউচুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগ করাই উচিত। বিগত এক-দুই দশকের বাজার বিশ্লেষণ করলে বোঝা যাবে মিউচুয়াল ফান্ডে এই ধরনের ঝুঁকি ততটা নেই। উপরন্তু বিনিয়োগ করা অর্থের বিনিময়ে যে রিটার্ন পাওয়া যায়, তা বেশ ভাল অঙ্কেরই। এবং করের ক্ষেত্রেও ভাল ছাড় রয়েছে।
অনেকেই মনে করেন যে মিউচুয়াল ফান্ড থেকে যে অঙ্কের রিটার্ন পাওয়া যায় তা সম্পূর্ণ কর মুক্ত। এই ভাবনা আসলে ভুল। সব মিউচুয়াল ফান্ড করমুক্ত নয়। সেই কারণে কোনও একটি মিউচুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগ করার আগে জেনে নেওয়া প্রয়োজন যে মিউচুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগ করলে কোন কোন উপায়ে করমুক্তি পাওয়া সম্ভব। ব্যাঙ্ক বা পোস্ট অফিসের বিভিন্ন প্রকল্পে বিনিয়োগ করলে তার রিটার্নের একটি বড় পরিমাণ অর্থ করের জন্যই বরাদ্দ হয়ে থাকে। ফলে, সুদ বাবদ পাওয়া টাকার একটি অংশ বাদ চলে যায়।
বিনিয়োগকারীরা বর্তমানে মিউচুয়াল ফান্ডে অর্থ বিনিয়োগের প্রতি বেশি মনোযোগী থাকেন, কারণ সেখানে তাঁরা রিটার্ন হিসাবে অনেক বেশি পরিমাণ অর্থ পেয়ে থাকেন। তবে অনেকের কাছেই রিটার্নের উপর কর কেটে নেওয়া বিষয়টি পরিষ্কার থাকে না। এই বিষয়েই নীচে বিশদে আলোচনা করা হল।
ধরে নেওয়া যাক, এক জন বিনিয়োগকারী নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ নির্দিষ্ট সময়ের জন্য বিনিয়োগ করেছেন। কিন্তু কোনও প্রয়োজনে যদি বিনিয়োগকারী ব্যক্তিবিশেষ তার মিউচুয়াল ফান্ডে জমা করা অর্থ তুলে নিতে চান, তবেই তাকে কর দিতে হবে। কারণ সে ক্ষেত্রে যে কর পাওয়া যাবে তা শর্ট টার্ম হিসেবে বিবেচিত হবে। এবং সেই ক্ষেত্রে, রিটার্নের ওপর করের হার থাকবে শতকরা ১০ শতাংশ। তবে সেটা শুধুই হবে তাঁদের ক্ষেত্রে যাঁদের বিনিয়োগের অর্থের পরিমাণ এক লাখ টাকা বা তার বেশি। যাঁদের সেই অর্থের পরিমাণ এক লাখ টাকার কম, তাঁদের ক্ষেত্রে এই কর প্রযোজ্য হবে না।
ইকুইটি শেয়ার বা ইকুইটি মিউচুয়াল ফান্ডের ডিভিডেন্ড অপশন:
ডিভিডেন্ড প্ল্যানের মাধ্যমে যদি কোনও বিনিয়োগকারী বিনিয়োগ করা শুরু করেন তবে সেই বিনিয়োগ থেকে প্রাপ্ত অর্থ বছরের মোট আয়ের সঙ্গেই যুক্ত হবে। এবং প্রাপ্ত অর্থ থেকে কর কেটে নেওয়া হবে। প্রতি অর্থ বছরে ডিভিডেন্ড যদি পাঁচ হাজার টাকা বা তার বেশি হয়, তবে টিডিএস বাবদ ১০ শতাংশ অর্থ কেটে নেওয়া হয়।
সিস্টেমেটিক ইনভেস্টমেন্ট প্ল্যান:
সিস্টেমেটিক ইনভেস্টমেন্ট প্ল্যান একটি সম্পূর্ণ আলাদা বিষয়। এখানে নির্দিষ্ট সময় অন্তর বিনিয়োগ করতে হয়। এ ক্ষেত্রে হোল্ডিং পিরিয়ড ভিন্ন ভিন্ন হয়ে থাকে। যে দিন টাকা বিনিয়োগ করা হয়। তার পর থেকে তিন বছর পর্যন্ত হোল্ডিং পিরিয়ড থাকে।
ইউলিপ:
এর মাধ্যমে বিনিয়োগকারীরা ইকুইটি মিউচুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগ করতে পারেন। এ ক্ষেত্রে লক ইন পিরিয়ড থাকে পাঁচ বছর। অর্থাৎ বিনিয়োগ করার পাঁচ বছর পর সেই অর্থ তুলে নিতে পারেন বিনিয়োগকারী। যদি কেউ পর পর পাঁচ বছর বিনিয়োগ করে থাকেন তবে তাকে কোনও রকম কর দিতে হবে না। ইউলিপ হল ইইই বিভাগীয়। যার পুরো কথাটি হল, এক্সটেম্পট-এক্সটেম্পট-এক্সটেম্পট। অর্থাৎ এই প্রকল্পে বিনিয়োগ করার সময়ে কোনও কর দিতে হয় না। তা ছাড়া রিটার্ন পাওয়ার সময় পুরো টাকা এক সঙ্গে তুলে নিলেও কোনও কর দিতে হয় না। এ ছাড়াও দেড় লাখ টাকা পর্যন্ত ৮০সি ধারায় কর ছাড় পাওয়া সম্ভব।
ইএলএসএস:
এটিও একটি মিউচুয়াল ফান্ড প্রকল্প। এটিতে প্রায় ৬৫ শতাংশ বিনিয়োগ ইকুইটিতে হয়। অন্য মিউচুয়াল ফান্ডের মতো এখানেও বিনিয়োগকারীদের দু’টি বিকল্প দেওয়া হয়— গ্রোথ ফান্ড এবং ডিভিডেন্ড ফান্ড। গ্রোথ ফান্ডের ক্ষেত্রে রিটার্ন প্ল্যান বিনিয়োগের সময় জানানো হয় না। রিটার্ন পাওয়ার পরেই কত শতাংশ হারে রিটার্ন পাওয়া গেল তা একমাত্র বোঝা সম্ভব। যদি রিটার্ন এক লক্ষ টাকার ওপরে হয় তবেই তা কর যোগ্য। সে ক্ষেত্রে ১০ শতাংশ হারে কর দিতে হবে এবং ডিভিডেন্ডের ক্ষেত্রে বিনিয়োগের সময় থেকেই বিনিয়োগকারী অল্প অল্প করে রিটার্ন পেতে শুরু করেন। এটি বার্ষিক আয় হিসেবে গণ্য করা হয়। কর ধার্য করা হয় সেটির ওপরেই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy