প্রতীকী ছবি।
সঞ্চয় করছেন। আমরা সবাই করি। কিন্তু কী ভাবে করছেন? কী ভাবেই বা ভাবছেন টাকা জমিয়ে লাভের ঘরের আয় বাড়ানোর কথা? আসুন আজ না হয় এই জায়গাটা একটু দেখে নেওয়া যাক।
আমরা সবাই যখন টাকা জমানোর রাস্তায় হাঁটি তখন ভাবি কী ভাবে জমালে আয় বাড়বে আর টাকাও খোয়া যাবে না। কিন্তু তা তো হয় না। কারণ, টাকা জমানো মানেই হচ্ছে লগ্নি করা। হ্যাঁ। আপনি যদি শুধু মাস গেলে আয়ের থেকে কিছু টাকা সরিয়ে আলমারিতে তুলে রাখেন আর দাবি করেন আপনি সঞ্চয় করছেন, তাহলে অবশ্য অন্য কথা।
কিন্তু এই ভাবে টাকা সরিয়ে রেখে টাকা জমানোর দাবি তো আমরা কেউ আর করি না। আর, তা ছাড়া, এই ভাবে টাকা সরিয়ে রাখলেও কিন্তু টাকা খোয়া যায়! ভাবছেন, সে আবার কী কথা! তাই তো? আজকের ১০০ টাকা দিয়ে যা কিনতে পারেন, কাল কিন্তু সেই ১০০ টাকা দিয়ে একই জিনিস আর কিনতে পারবেন না। কারণ, সোজা। আর তা আপনিও জানেন। পণ্যের দাম কখনই এক জায়গায় দাঁড়িয়ে থাকে না। মুদ্রাস্ফীতির কারণে জিনিসের দাম বাড়ে আর টাকার ক্রয় ক্ষমতা কমতে থাকে। আর সেটাও তো একটা ঝুঁকি, তাই না?
তাই, ঝুঁকিহীন সঞ্চয় বলে কিছু নেই। টাকা বাড়িতে ফেলে রাখারও একটা ঝুঁকি আছে। আর তা হল জিনিসের দাম বাড়ার কারণে আপনার আলমারিতে জমিয়ে রাখা টাকার ক্রয়ক্ষমতা কমার। তা হলে? এর উত্তরও আপনি জানেন। আপনি জানেন বাড়িতে টাকা ফেলে রেখে কোনও লাভ নেই। তাই আপনি ব্যাঙ্কে ফিক্সড ডিপোজিট করেন। কিন্তু সেখানেও টাকা রাখার একটা ঝুঁকি আছে। বাড়িতে টাকা ফেলে রেখে তা না-হারানোর থেকে এখানে ঝুঁকি খাতায় কলমে একটু বেশি। কারণ ব্যাঙ্ক বন্ধ হয়ে গেলে আপনি আপনার পুরো টাকা ফেরত নাও পেতে পারেন। তবে সে সম্ভাবনা খুবই কম। কিন্তু এখানে টাকা রাখলে আপনার সঞ্চয়ের উপর নির্ধারিত হারে সুদ পাবেন।
তবে এখানে ঝুঁকিটা হল সুদের হারের। এই মুহূর্তে যেমন সুদের হারের থেকে মুদ্রাস্ফীতির হার বেশি। প্রকৃত অর্থে কিন্তু আপনি যা সুদ বাবদ আয় করছেন তা আসলে মুদ্রাস্ফীতি রাক্ষসের পেটে যাচ্ছে! তা হলে? আর এখানেই আসে ঝুঁকির অঙ্ক মিলিয়ে সঞ্চয়ের কৌশলে জোর দেওয়া।
দেখুন ঝুঁকি কমাতে গেলে আয় কমবে। আবার কিন্তু সেখানেও ঝুঁকি আছে। সাধারণ ভাবে আমরা বলি যেখানে যত ঝুঁকি সেখানে লাভও ঠিক তত। কিন্তু ঝুঁকি তো হল আপনার লগ্নি হারানোর সম্ভাবনা। এ বার বেশি আয়ের কথা ভেবে আপনি এমন ঝুঁকি নিলেন যে আপনার পুরো লগ্নি খরচের খাতায় লেখা হয়ে গেল। আপনি নিজের টাকাও হারালেন, আর ভবিষ্যতের আয়ের সম্ভাবনাও জলাঞ্জলি দিয়ে বসলেন! এটাও নিশ্চয়ই আপনি চাইবেন না।
তাই ঝুঁকির অঙ্ককে দুই ভাগে ভাগ করা হয়। আপনি কতটা ঝুঁকি নিতে চাল বা ঝুঁকির খিদে আর হল আপনার ঝুঁকি নেওয়ার ক্ষমতা। এটার যুক্তি হল সোজা। আপনি মানুষটা ঝুঁকি নিতে ভালবাসেন। এবং তা নিতে পারেন অগ্রপশ্চাত বিবেচনা না করেই। এটা হল আপনার প্রবণতা। এ বার সেই প্রবণতায় ভেসে আপনি এমন ঝুঁকি নিয়ে ফেললেন যে শেষে গিয়ে ঘটি বাটি বিক্রি করেও সামলাতে পারলেন না। সেটা তো ঠিক নয়। তাই আপনার ঝুঁকি নেওয়ার ক্ষমতা মাপতে দেখে নেওয়া হয় আপনার হারানোর ক্ষমতা। মানে আপনার কত টাকা জলে গেলেও আপনার দৈনন্দিন জীবন যাপনের উপর তার প্রভাব পড়বে না।
এটাকেই ঝুঁকির ঊর্ধসীমা মেনে এবার বাকি অঙ্ক। আপনি আলমারিতে টাকা জমাবেন না ভেবেই এ বার এগোতে হবে। আপনি কেন জমাতে চান, আপনার আগামী দিনের খরচের লক্ষ্য কী এ সবের তালিকা করতে বসতে হবে। আপনি প্রতি বছর বিমার প্রিমিয়াম দেন তার জন্য টাকা দরকার। সন্তান কয়েক বছর বাদে কলেজে যাবে, তার জন্য টাকা দরকার। রয়েছে অবসরের জন্য সঞ্চয়। এর মধ্যে কোনটা আজ থেকে হয়ত ১৫ বছর বাদে। তার জন্য হয়ত শেয়ারে বিনিয়োগ করে লাভের অঙ্ক বাড়িয়ে নেওয়া যাবে। কোনটা হয়ত এক বছর বাদে তার জন্য কম মেয়াদি কম ঝুঁকির কোনও বিনিয়োগই প্রয়োজন। কোনটার জন্য আবার ঋণপত্র এবং শেয়ারের মিশ্রণ। আবার কোনটার জন্য শুধুই বা ব্যাঙ্কের মেয়াদি আমানত।
মানে ঝুঁকি এবং সঞ্চয়ের লক্ষ্য মিলিয়ে কিন্তু লগ্নির সিদ্ধান্ত। আর সেই ঝুঁকি কিন্তু মাপা হচ্ছে আপনার ঝুঁকির খিদে এবং ক্ষমতার উপর। এই অঙ্কটা করা অনেকের কাছেই কিন্তু খুব সহজ নয়। আমরা অনেককেই চিনি যাঁরা নিজেরা এই অঙ্ক বেশ ভাল করে উঠতে পারেন। কিন্তু আমরা বেশির ভাগ মানুষই এটা করতে পারি না। কারণ, এর জন্য যে জ্ঞানের প্রয়োজন তা আমাদের থাকে না। তাই এর জন্য প্রশিক্ষিত উপদেষ্টার কাছে যান। তাঁরা আপনাকে বলে দেবেন কোথায় করবেন লগ্নি। কিন্তু কেন বলছেন তা জানতে মাথায় রাখুন এই যুক্তি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy