যাঃ।
ভিড়ে ঠাসা বাস থেকে কোনওক্রমে নেমে পকেটে হাত দিতেই মাথায় হাত। খোওয়া গিয়েছে সদ্য কেনা মোবাইল। প্রবল ঠেলাঠেলির মধ্যে টুক করে পকেট থেকে তুলে নিয়েছে কেউ। টেরও পাওয়া যায়নি।
আফশোসে চুল ছিঁড়ছেন আপনি। কেনার সময়ে দোকানে পইপই করে বলেছিল বিমা করানোর কথা। ভাবছেন, এত দাম দিয়ে মোবাইল কিনলামই যখন, তখন আর ক’টা টাকা গুনে বিমা করালাম না কেন? তা হলে এই ক্ষতির মুখে পড়তে হত না।
কিন্তু অফিসে ঢুকতেই আবার সম্পূর্ণ উল্টো কথা বললেন এক সহকর্মী। তাঁর দাবি, বিমা থাকলেও লাভ তেমন হত না। কারণ, ভিড় বাসে মোবাইল যে চুরিই গিয়েছে তা আপনি প্রমাণ করতেন কী ভাবে? আর প্রমাণ করলে, তবে না বিমার (ক্লেম) টাকা পাওয়ার প্রশ্ন!
কোন পথে যে চলি
সুতরাং বিমার সুবিধা-অসুবিধা দুই-ই আছে। আছে ধোঁয়াশা। প্রশ্ন জাগতে পারে বিমা করাব কি না, তা নিয়েও। সেই কারণেই আজ এই বিমার উপর আলো ফেলার চেষ্টা করছি আমরা।
শেষমেশ বিমা করবেন কি না, সেটি একেবারেই আপনার ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত। কিন্তু আমরা চেষ্টা করব এখানে সেই তথ্যগুলি তুলে দিতে, যা থেকে এই বিমার ভাল-মন্দ, ফাঁক-ফোকর অন্তত কিছুটা হলেও বুঝতে পারবেন আপনি। আশা করব, তাতে কিছুটা সুবিধা হবে সিদ্ধান্ত নিতে।
পক্ষে যুক্তি
ঘুম ভাঙা সকাল থেকে রাতে ফের ঘুমোতে যাওয়া পর্যন্ত এখন প্রতিদিন প্রতি মুহূর্তে আমাদের সঙ্গে লেপ্টে থাকে মোবাইল। চোখে অন্ধকার দেখি অফিসের কাজের জন্য ল্যাপটপ হাতের কাছে না-পেলে। তাই এমন গ্যাজেট-নির্ভর জীবনে যদি কোনও কারণে ট্যাব, ল্যাপটপ বা মোবাইল চুরি যায় কিংবা হাত থেকে পড়ে অকেজো হয়ে যায়, তবে মাথায় যেন বাজ পড়ে আমাদের। যেহেতু ওগুলি ছাড়া এক দিনও চলবে না, তাই যে করে হোক জোগাড় করতে হয় টাকা। ফের নতুন করে কেনার জন্য। সেই যুক্তিতেই বিক্রির সময়ে মোবাইল বা ল্যাপটপে বিমার সুরক্ষাকবচ পরাতে কান ঝালাপালা করছে বিপণিগুলি।
তাদের যুক্তি, বিমা করা থাকলে, হঠাৎ মোবাইল চুরি গেলেও আতান্তরে পড়তে হবে না আপনাকে। চলকে পড়া কফিতে ল্যাপটপের সুইচ নষ্ট হলে, মিলবে তা সারিয়ে নেওয়ার খরচও। এক কথায়, সামান্য টাকা বাড়তি খরচ করলে, অনেকটাই নিশ্চিন্ত থাকতে পারবেন গ্যাজেটগুলির সম্পর্কে।
পাল্টা বয়ান
বিক্রেতা বা সাধারণ বিমা (জেনারেল ইনশিওরেন্স) সংস্থাগুলি যেমন সুবিধার সমস্ত দিক তুলে ধরে, তেমনই অভিযোগের সংখ্যাও নেহাত কম নয়। অনেকে বলেন, বিমা করা সত্ত্বেও ল্যাপটপ সারাইয়ের টাকা পাননি তাঁরা। চুরি না হারানো— যুক্তির এই ফাঁক গলে মোবাইল খোওয়ানোর পরেও হাতছাড়া হয়েছে বিমার টাকা।
দু’তরফেই এমন পোক্ত যুক্তি ও পাল্টা যুক্তি থাকায় পুরো বিষয়টি একটু ভাল করে বুঝে নেওয়া জরুরি।
গোড়ার কথা
আমরা যেমন বাড়ি, গাড়ি, স্বাস্থ্য ইত্যাদির জন্য বিমা করি, এই বিমা তেমনই মোবাইল-ট্যাব-ল্যাপটপের মতো গ্যাজেটের জন্য।
এই সমস্ত বৈদ্যুতিন পণ্য যেমন কাজের, তেমনই শখেরও। আজকাল তাই আমরা অনেকেই বেশ দাম দিয়ে ওই সমস্ত গ্যাজেট কিনি। বিপণি এবং বিমা সংস্থাগুলির যুক্তি, তার বিমা করানো থাকলে, উটকো খরচের ঝাপ্টা এড়াতে পারবেন আপনি। কারণ, মোবাইল চুরি গেলে যেমন টাকা পাওয়া যাবে, তেমনই জলে পড়ে, আগুনে পুড়ে কিংবা ধাক্কা খেয়ে খারাপ হলে মিলবে তা সারাইয়ের খরচ (পূর্ণ বা আংশিক)। তবে হ্যাঁ, উভয় ক্ষেত্রেই বেশ কিছু শর্ত পূরণ করতে হবে আপনাকে।
পাব কোথায়?
জীবন বা স্বাস্থ্য বিমা আপনি যেমন সংস্থার অফিসে গিয়ে কিংবা বাড়িতে বসেই এজেন্টের সঙ্গে কথা বলে কিনে ফেলতে পারেন, সাধারণত ল্যাপটপ-মোবাইলের বিমায় তা করা যায় না।
একে এগুলির দাম তুলনায় কম। তার উপর এক বার তা কিনে ফেলার পরে তার হাতফেরতা দাম কমে আরও তাড়াতাড়ি। এই সমস্ত কারণে গ্যাজেট ক্রেতাদের ব্যক্তিগত ভাবে বিমা বিক্রি করতে চায় না সংস্থাগুলি। তারা বরং গাঁটছড়া বাঁধে ওই সব পণ্য বিক্রির বড় বিপণি বা রিটেল চেন-এর সঙ্গে। এক সঙ্গে অনেক ফোন বা ল্যাপটপের জন্য বিমা করায় তারা। পরে ক্রেতাদের সেই পলিসি বিক্রি করে দোকান ও রিটেল চেনগুলি। কিছু ক্ষেত্রে অবশ্য অনলাইনে বিমা কেনার সুবিধা আছে।
কিনব কখন?
সাধারণত মোবাইল, ট্যাব বা ল্যাপটপ কেনার সময়েই পলিসি কেনার কথা বলবে বিপণি। তখনই সেখানে তা কিনতে পারেন।
পরে কিনব মনে করলে, গ্যাজেট বাড়ি নিয়ে যাওয়ার ১৫ দিনের মধ্যে বিমা করতে পারেন। তারপরে পলিসি কেনার সুযোগ সাধারণত মেলে না।
খরচ কেমন?
প্রিমিয়াম কেমন হবে, তা নির্ভর করবে মূলত দু’টি বিষয়ের উপর—
(১) গ্যাজেটের দাম
(২) কত পুরনো
এক-একটি সাধারণ বিমা সংস্থার ক্ষেত্রে প্রিমিয়ামের অঙ্ক এক-এক রকম। তবে মোটামুটি ভাবে মোবাইল বা ল্যাপটপের দামের ০.৫ থেকে ৫ শতাংশ পর্যন্ত প্রিমিয়াম হিসেবে নেওয়া হয়। ফলে দাম বেশি হলে সাধারণত প্রিমিয়ামও বাড়ে। বুঝতেই পারছেন, ১০ হাজার টাকা বা তার কম দামের মোবাইলের জন্য প্রিমিয়াম যা পড়বে, দাম ১০ হাজারের বেশি হলে, গুনতে হবে তার থেকে বেশি।
বিমা হয় এক বছরের জন্য। তারপরেও তা রিনিউ (পুনর্নবীকরণ) করা যায়। তবে এক বছর পুরনো হওয়ার পরে তা করতে গেলে, যে পরিমাণ কভারেজ মেলে এবং তার জন্য যা প্রিমিয়াম গুনতে হয়, তাতে সেই বিমার উৎসাহী গ্রাহক সে ভাবে পাওয়া যায় না।
সংশ্লিষ্ট মহলের হিসেব অনুযায়ী, মোবাইলের প্রিমিয়াম শুরু হতে পারে ৫০০ টাকা থেকে। তবে দাম একটু বেশি হলেই তা চট করে বেশ খানিকটা বেড়ে যেতে পারে। অনেক সংস্থা অ্যান্টি ভাইরাসের খরচও বিমা প্যাকেজের মধ্যেই ধরে নেয়। ল্যাপটপের ক্ষেত্রে প্রিমিয়াম বেশি। অনেক সময়ে সেখানেও অ্যান্টি ভাইরাসের খরচ প্যাকেজের মধ্যেই ধরা থাকতে পারে। কেনার সময়ে এই বিষয়গুলি খুঁটিয়ে দেখে নেবেন।
সুবিধা কোথায়?
গ্যাজেটে কোনও যান্ত্রিক ত্রুটি থাকলে এবং তার জন্য নির্মাতা সংস্থাই দায়ী হলে, ওয়ার্যান্টি বা এক্সটেন্ডেড ওয়ার্যান্টির সুবিধা পেতে পারেন। কিন্তু তা ফেটে যাওয়া, ভেঙে যাওয়া, ডিসপ্লে খারাপ হয়ে যাওয়ার মতো বাহ্যিক ক্ষতি হলে, ক্ষতিপূরণ সেখানে মেলে না (সঙ্গের সারণি দেখুন)।
বিমা সংস্থাগুলির দাবি, অগ্নিকাণ্ড, দুর্ঘটনা, জঙ্গি কার্যকলাপ, ঝড়-বন্যার মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগ ইত্যাদি কারণে ফোন বা ল্যাপটপের ক্ষতি হলে, বিমায় তার জন্য শর্ত অনুযায়ী ক্ষতিপূরণ মিলবে। একই সুবিধা পাওয়া যাবে চুরি, ছিনতাইয়ের কারণে গ্যাজেট খোওয়া গেলেও।
‘ক্ষয়’ বেশি, মেয়াদ কম
আগেই বলেছি যে, কম গ্রাহকই গ্যাজেট বেশি পুরনো হওয়ার পরে তার বিমা রিনিউ করতে চান। কেন, এ বার সেই বিষয়টি একটু খোলসা করে নেওয়া ভাল।
সময়ের সঙ্গে কোনও যন্ত্রে যে ক্ষয় হয়, তাকে আমরা বলি ডেপ্রিশিয়েসন। বিমার বাজারেও এই কথাটি বহুল প্রচলিত। সাধারণত দেখা যায়, এই বাজারে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে গাড়ি, গ্যাজেট ইত্যাদির বাজার দর কমে।
গাড়ির কথাই ধরুন। কেনার পরে প্রথম বছর যে-দামের ভিত্তিতে বিমার অঙ্ক বা প্রিমিয়াম ঠিক করা হয়, পরের বছর তা একই থাকে কি?
না। কারণ, ধরে নেওয়া হয় এই সময়ের মধ্যে গাড়ির বিভিন্ন যন্ত্রাংশের ক্ষমতা কমেছে। ফলে বিমা রিনিউ করলে, পুরো দাম আর মেলে না।
গাড়ির হালই যদি এমন হয়, তবে মোবাইল, ল্যাপটপের কথা ভাবুন। প্রায় রোজই নতুন প্রযুক্তি এসে পড়ছে এই বাজারে। আজ যে-ফোন ও তার বৈশিষ্ট্য দেখে তাক লেগে যাচ্ছে, কালই নতুন মডেল এসে পড়ার পরে মনে হচ্ছে, ও আর কী এমন!
আপনিই ভেবে দেখুন, একই মোবাইল এখন গড়ে কত দিন ব্যবহার করি আমরা? খুব কম, তাই না? সেই কারণে কয়েক মাস গেলেই মোবাইলের প্রায় সব মডেলের দাম কমতে থাকে লাফিয়ে লাফিয়ে। ল্যাপটপের দুনিয়ার ছবিটাও অনেকটা এ রকমই। সেখানে হয়তো কয়েক মাসের মধ্যে দাম এমন পড়তে শুরু করে না। কিন্তু অনেকটাই ফারাক হয়ে যায় বছর ঘুরতে না-ঘুরতে।
গ্যাজেট কত দিনের পুরনো হলে তার দাম (ডেপ্রিশিয়েসন বাদ দিয়ে) কত ধরা হবে, তা জানিয়ে দেয় বিমা সংস্থাগুলি। একই গ্যাজেটের জন্য এক-এক সংস্থায় তা এক-এক রকম হতে পারে। কোনও সংস্থা প্রতি তিন মাসে ১০-১৫ শতাংশ দাম কমার কথা বলতে পারে। আবার কোনও সংস্থা তা কমানোর হিসেব কষতে পারে প্রতি ছ’মাসে বা বছরে। ফলে বিমা কেনার আগে এই বিষয়গুলি খুঁটিয়ে জেনে নেওয়া জরুরি। জানা প্রয়োজন, কেনার তিন মাস পরে মোবাইল উধাও হলে, তার জন্য কত টাকা পাবেন আর আট মাস পরে ফোনের ক্ষতি হলেই বা বরাতে জুটবে কতটুকু। একই ভাবে, পরের বছর রিনিউ করার সময়ে বিমার কভারেজ কত দাঁড়াবে, সেই খোঁজ নিতেও ভুলবেন না।
হাতফেরতা হলে?
মোবাইল বা ল্যাপটপ হাতফেরতা (সেকেন্ড হ্যান্ড) হলে, সাধারণত তার বিমা করতে রাজি হয় না সংস্থাগুলি। এখানেও কারণ সেই ডেপ্রিশিয়েসন। সংস্থাগুলির যুক্তি, হাতবদল হতে হতে তত দিনে গ্যাজেটের দাম এতই কমে যায় যে, নতুন করে তাতে বিমার কভারেজ দেওয়ার যৌক্তিকতা আর সে ভাবে থাকে না।
ক্লেম কী ভাবে?
ধরুন, মোবাইল হারিয়ে গেল। সে ক্ষেত্রে বিমার টাকা পেতে সংস্থার টোল-ফ্রি নম্বরে সঙ্গে সঙ্গে তা জানান। অন্তত ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে তা জানাতেই হবে।
যদি মনে করেন যে, গ্যাজেট চুরি গিয়েছে, তাহলে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে পুলিশকে জানাতে এবং এফআইআর করতে ভুলবেন না।
মোবাইল খোওয়া গেলে, সংশ্লিষ্ট টেলিকম সংস্থাকে জানিয়ে যত দ্রুত সম্ভব (৪৮ ঘণ্টার মধ্যে) সিম বন্ধ (ব্লক) করা জরুরি। তা করার পরে পুলিস এবং বিমা সংস্থাকেও জানাতে ভুলবেন না। নইলে কিন্তু পরে ঘটনার সত্যতা প্রমাণে অসুবিধা হবে। সমস্যা হবে বিমার টাকা পেতেও।
মোবাইল, ট্যাব বা ল্যাপটপ কোনও কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হলে, যে কোনও স্থানীয় দোকান থেকে তা মেরামত করাবেন না। মনে রাখবেন, বিমার সুযোগ পেতে হলে, নির্মাতা সংস্থার স্বীকৃত ‘সার্ভিস সেন্টার’ থেকেই তা সারাই করাতে হবে।
সার্ভিস সেন্টার বা বিমা সংস্থার নির্দেশিত কেন্দ্র থেকে প্রথমেই মেরামতির খরচের একটি আনুমানিক হিসেব নিন। তাতে বিমা সংস্থার অনুমোদন নিন। এর পর সারাইয়ের কাজ শেষ হলে, যাবতীয় নথিপত্র (ক্লেম বিল, গ্যাজেট কেনার রসিদ ইত্যাদি) সমেত বিমার টাকার দাবি জানান। হয় বিমা সংস্থাকে কিংবা যেখান থেকে গ্যাজেটটি কিনেছেন, সেখানে ওই সমস্ত কিছু জমা দিন।
ঘটনা যা-ই ঘটুক, যদি তার জন্য বিমার টাকা দাবি করব মনে করেন, তবে শুরুতেই তা বিমা সংস্থাকে জানিয়ে রাখতে ভুলবেন না।
ফারাক চিনুন
ওয়্যার্যান্টি
এটি কিন্তু বিমা নয়। মোবাইল, ল্যাপটপ বা প্রায় যে-কোনও গ্যাজেট কিনলেই সাধারণত তার একটি নির্দিষ্ট ওয়ার্যান্টির মেয়াদ থাকে। ওই সময়ের মধ্যে তাতে কোনও যান্ত্রিক (সফটওয়্যার বা হার্ডওয়্যারে) ত্রুটি দেখা দিলে এবং তার দায় সংস্থার হলে, নিখরচায় তা সারিয়ে দেওয়ার দায়িত্ব নির্মাতার। কিন্তু তা বলে হাত থেকে পড়ে ফোনের ক্ষতি হলে বা ল্যাপটপ চুরি গেলে তা ওয়ার্যান্টির আওতায় আসবে না।
এক্সটেন্ডেড ওয়ার্যান্টি
ওয়ার্যান্টির মেয়াদ পেরোনোর পরেও তার সুযোগ-সুবিধা বহাল রাখতে হলে, এক্সটেন্ডেড ওয়ার্যান্টির দ্বারস্থ হতে হবে। এ ক্ষেত্রে অবশ্য তা আর নিখরচায় মিলবে না। আপনাকে কিছু টাকা খরচ করতে হবে।
বিমা
ফোন চুরি গেলে কিংবা হাত থেকে পড়ে কাচ (গ্লাস) ভাঙলে, তার ক্ষতিপূরণ ওয়ার্যান্টি বা এক্সটেন্ডেড ওয়ার্যান্টিতে মিলবে না। ওই ধরনের ক্ষতির সুরক্ষাকবচ হিসেবেই বিমার কথা বলে সংস্থা।
জরুরি নথিপত্র
মনে রাখবেন, বিমার টাকা পাওয়ার প্রথম শর্তই হল, প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ঠিক মতো সামলে রাখা। তা না-থাকলে, দাবি যত জোরালোই হোক, ক্লেমের টাকা পাবেন না।
যেমন, গ্যাজেট কেনার রসিদ (ইনভয়েস) অবশ্যই দিতে হবে। ফোন বা ল্যাপটপ হারালে বা চুরি গেলে, দিতে হবে পুলিশের কাছে অভিযোগ দায়েরের ‘কপি’। চুরি-ছিনতাইয়ের ক্ষেত্রে এফআইআর দাখিলের প্রমাণ সঙ্গে থাকলে ভাল। দিতে হতে পারে ছবিও।
সাবধানের মার নেই
বিমা করার আগে গোড়া থেকেই কিছু বিষয়ে সতর্ক থাকা ভাল। যেমন—
যাবতীয় শর্ত খুঁটিয়ে পড়ুন। দেখুন, বিমার সুবিধা কীসে মিলবে, আর কীসে নয়।
গ্যাজেট চুরি বা ছিনতাই হলে, তা প্রমাণ করার দায় কিন্তু আপনারই। অনেক সময়েই দেখা যায়, থানা এ সব ক্ষেত্রে এফআইআর নিতে চায় না। প্রয়োজনে সংস্থার সঙ্গে কথা বলুন যে, সে ক্ষেত্রে আপনি কী করবেন।
অবশ্যই জেনে রাখুন, কোন কোন ক্ষেত্রে বিমার সুবিধা থেকে আপনি বঞ্চিত হতে পারেন। যেমন, রহস্যজনক ভাবে গ্যাজেট উধাও হয়ে গেলে, আপনার অযত্ন আর বেখেয়ালে মোবাইল খোওয়া গেলে, আপনি ছাড়া অন্য কেউ ব্যবহার করাকালীন গ্যাজেটের ক্ষতি হলে, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে স্বাভাবিক নিয়মে তা খারাপ হলে, বিমার কভারেজ পাবেন না। সুতরাং শুরুতেই এ বিষয়ে স্পষ্ট ধারণা তৈরি করে নেওয়া ভাল।
বিমা নেই
সাধারণত ব্যাটারি এবং অ্যাকসেসরিজ (হ্যান্ডস-ফ্রি, ডেটা কেব্ল, সিম কার্ড ইত্যাদি) বিমার আওতার বাইরে থাকে। সুতরাং শুরুতেই এই তালিকা জেনে নিন।
অতি চালাকের...
ক্রেতাদের তরফ থেকে বিমার টাকা না-পাওয়ার অভিযোগ যেমন আছে, তেমনই সংস্থাগুলির আবার দাবি, ইচ্ছে করে গ্যাজেটের ক্ষতি করে বিমার টাকা ক্লেম করেন অনেকে।
কিন্তু কোনও ভাবেই এ পথে না-হাঁটা ভাল। প্রথমত ওই ক্ষতি যে ইচ্ছাকৃত নয়, তা প্রমাণ করা কঠিন হবে আপনার পক্ষে। সংস্থাগুলির দাবি, তারা তা ধরেও ফেলবে। ফলে বিমার টাকা তো পাবেনই না। উপরন্তু খারাপ হয়ে গেল গ্যাজেটও। একই ভাবে, ইচ্ছে করে মোবাইল হারানোর গল্প ফেঁদে বিমার সুযোগ নেওয়ার চেষ্টা না-করাই ভাল। কারণ, তখন তদন্তে সত্যিটা উঠে এলে, সমস্যায় পড়বেন আপনি। ইচ্ছাকৃত ভাবে এমন কাজ করে ধরা পড়লে, রেকর্ড খারাপ হবে। অসুবিধা হবে ভবিষ্যতে বিমা কিনতেও।
অভিযোগ কোথায়?
আপনি হয়তো মনে করেন যে, নিয়ম মেনে বিমার টাকা আপনার প্রাপ্য। কিন্তু প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সব জমা দেওয়া সত্ত্বেও সংস্থা তা দিচ্ছে না। কিংবা দিলেও তাতে আপনি সন্তুষ্ট নন। সে ক্ষেত্রে—
প্রথমে সংস্থার আপিল কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ জানান।
৩০ দিনের মধ্যে সমস্যার সমাধান না-হলে, ওম্বাডসম্যানের দ্বারস্থ হতে পারেন। সেখানেও মনমতো সমাধান না-মিললে, ক্রেতা সুরক্ষা আদালতে যাওয়া যায়। ক্লেমের অঙ্ক একটি নির্দিষ্ট টাকার বেশি হলে, সরাসরি দ্বারস্থ হওয়া যায় আদালতেরও।
দেশের বিভিন্ন শহরে ওম্বাডসম্যানের অফিস রয়েছে। কলকাতা অফিসে যোগাযোগ করতে পারেন এই ঠিকানায়—
অফিস অব দ্য ইনশিওরেন্স ওম্বাডসম্যান
হিন্দুস্তান বিল্ডিং অ্যানেক্স
ফোর্থ ফ্লোর
৪, সি আর অ্যাভিনিউ
কলকাতা-৭০০০৭২
ফোন: ০৩৩-২২১২ ৪৩৩৯
০৩৩-২২১২ ৪৩৪০
তথ্য সহায়তা: ন্যাশনাল ইনশিওরেন্স, আইসিআইসিআই লম্বার্ড, বজাজ অ্যালায়েন্স জেনারেল ইনশিওরেন্স
জমিই হোক বা সঞ্চয়। আপনার যে কোনও বিষয়-সমস্যা নিয়ে বিশেষজ্ঞের পরামর্শের জন্য লিখুন। ঠিকানা ও ফোন নম্বর জানাতে ভুলবেন না।
‘বিষয়’, ব্যবসা বিভাগ, আনন্দবাজার পত্রিকা,
৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট, কলকাতা, পিন-৭০০০০১।
ই-মেল: bishoy@abp.in
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy