নিজের প্রতি যত্নশীল হওয়ার অনেকটাই সময় দিয়েছে আমাদের বিগত লকডাউন-পর্ব। অতিমারি-পরবর্তী সময়ে তাই সৌন্দর্য ও রূপরুটিনের সংজ্ঞা একটু হলেও বদলেছে। ‘স্কিনিমালিজ়ম’ এই সময় থেকেই উঠে আসা একটি ট্রেন্ড, এ বছর যা অনুসরণ করছেন দুনিয়ার তাবড় রূপ-বিশেষজ্ঞ থেকে সাধারণ মানুষও। কী এই স্কিনিমালিজ়ম? স্কিন কেয়ার অর্থাৎ ত্বকের যত্নে কিংবা মেকআপে মিনিমালিস্টিক অ্যাপ্রোচই এর শেষ কথা। এখানে ত্বকের খুঁত, অপূর্ণতাগুলিকেই উদ্্যাপন করতে বলা হয়, স্বাভাবিক ত্বকই সেখানে প্রাধান্য পায়। চড়া মেকআপের পরিবর্তে স্বাস্থ্যকর ত্বকের জেল্লা দিয়েই চোখ ধাঁধানোর কথা বলে এই ট্রেন্ড। ২০২১-এর কনের সাজ, পার্টি মেকআপ কিংবা ইনস্টাগ্রাম— সর্বত্রই জনপ্রিয় স্কিনিমালিস্টরা।
গোড়ার কথা
বাহ্যিক চাকচিক্যের দিন ফুরিয়েছে, এখন স্বাস্থ্যের প্রতি বেশি যত্নবান হওয়ার কথা বলছেন বিউটিশিয়ান থেকে ডার্মাটোলজিস্ট, সকলেই। মেকআপে যেমন গ্লসির পরিবর্তে ম্যাট জায়গা করে নিয়েছে, তেমনই সেমি নুড বা নুড লুকেই চোখ টানতে শিখিয়েছেন এ যুগের ফ্যাশনিস্তারা। অর্থাৎ মিনিমালিস্টিক অ্যাপ্রোচ ছিলই, এখন তার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে স্কিন কেয়ার। তবে উদ্দেশ্য যত্ন নেওয়াই হোক বা সাজগোজ— নানা প্রডাক্টের ব্যবহারে ত্বক ভারাক্রান্ত করা চলবে না, এটাই মূল কথা। স্বাভাবিকত্বই হয়ে উঠুক তার পরিচয়।
যত্নে বাড়াবাড়ি নয়
লেস ইজ় মোর— এই কনসেপ্টের উপরেই দাঁড়িয়ে আছে স্কিনিমালিজ়মের পুরো ধারণাটি। ত্বক পরিচর্যার ধাপ কমিয়ে এনে, মুখে মেকআপের পরতের সংখ্যা কমিয়ে ত্বককে নিঃশ্বাস নিতে দেওয়া জরুরি। প্রসাধনের ক্ষেত্রে আলাদা করে নো মেকআপ লুক তৈরি করা নয়, বিনা মেকআপেই যেন ঝকঝকে ত্বক কথা বলে ওঠে। তাই বাড়ছে স্কিন সেরাম, অয়েলের ব্যবহার। প্যাকেজড স্কিন কেয়ার প্রডাক্টের পরিবর্তে বাড়িতে বানানো ডিআইওয়াই প্যাক বা স্ক্রাবের ব্যবহার, প্রত্যেক দিনের সিটিএম (ক্লেনজ়িং, টোনিং, ময়শ্চারাইজ়িং) ছাড়া বাকি স্কিন কেয়ার রুটিনে দিনকয়েকের বিরতি দেওয়া— এগুলিই অনুসরণীয়। তবে রোদে বেরোলে সানস্ক্রিন, মৃত কোষ সরাতে এক্সফোলিয়েশন... বেসিক নিয়মও মানতে হবে।
মেকআপে স্কিনিমালিজ়ম
প্রাইমার, ফাউন্ডেশন, কনসিলারের চড়া পরতও অনেক সময়ে ক্লগড পোরস বা অ্যাকনে ব্রেকআউটের ছাপ ঢাকতে পারে না, বরং তা আরও বাড়িয়ে তোলে। তার চেয়ে শুধু বিবি ক্রিম বা সিসি ক্রিমের একটা হালকা লেয়ারই পারে মুখে স্বাভাবিক ঔজ্জ্বল্যের পাশাপাশি ডিউই লুক এনে দিতে। স্কিনিমালিস্টিক মেকআপের প্রথম শর্ত, ত্বকের খুঁত জোর করে ঢেকে না দেওয়া। ত্বক স্বাভাবিক বর্ম হিসেবে কাজ করে। অতিরিক্ত যত্ন বা মেকআপের পরশে সেই বর্মটি নষ্ট হয়ে যেতে পারে। ইদানীং রুপোলি পর্দার নায়িকাদের অনুসরণ করলেও দেখা যাবে, তাঁরাও সেলিব্রেট করছেন ইমপারফেকশন। স্বাভাবিক রূপেই ধরা দিচ্ছেন ক্যামেরার সামনে। বাংলায় কোয়েল মল্লিকের ‘রক্ত রহস্য’-এর উদাহরণ দেওয়া যায়। জাহ্নবী কপূরের ইনস্টাগ্রাম বা ‘দ্য হোয়াইট টাইগার’-এ প্রিয়ঙ্কা চোপড়ার মেকআপও সে কথাই বলে।
মেকআপ আর্টিস্ট অভিজিৎ চন্দ যেমন বরাবরই মিনিমালিস্টিক মেকআপে বিশ্বাসী। তাঁর লক্ষ্যই থাকে উল্টো দিকের মানুষটির ন্যাচারাল স্কিন টোন এবং স্বাভাবিক জেল্লা বার করে আনার। তাঁর কথায়, ‘‘অনেকেই নিজেদের স্কিন টাইপ না বুঝে ট্রেন্ড অনুসরণ করতে গিয়ে ত্বকে অতিরিক্ত প্রডাক্ট ব্যবহার করেন। এতে হিতে বিপরীত হতে পারে। উদাহরণ হিসেবে ব্রাইডাল মেকআপের কথা বলতে পারি। আমার কাছে অনেক কনে আসেন, যাঁদের ডার্ক রেড লিপসই চাই। তা বাকি সাজের সঙ্গে মানানসই হোক বা না হোক! তবে এ বছর দেখছি, সেই প্রবণতা কমেছে। অনেকেই বিয়ের সাজেও হালকা কালার প্যালেটে আস্থা রাখছেন, যা তাঁদের লুকের সঙ্গে মানানসই।’’
স্কিনিমালিস্ট রোজরুটিন
• সিটিএম রুটিন বন্ধ করবেন না। এ ছাড়া ত্বকচর্চার বাকি স্টেপগুলিতে মাঝে মাঝে বিরতি দিন। হ্যালুরনিক অ্যাসিড বা ভিটামিন সি যুক্ত হালকা ফেস ক্রিম ব্যবহার করুন।
• মিনারেল অয়েলযুক্ত হেভি ক্রিমের বদলে অর্গ্যানিক ফেস অয়েল ব্যবহার করা শুরু করুন। টি-ট্রি বা আর্গন অয়েল সমৃদ্ধ ফেস সেরাম ব্যবহার করতে পারেন। প্রোবায়োটিক স্কিন কেয়ারে আস্থা রাখুন।
• লাইটওয়েট মেকআপ প্রডাক্ট, টিন্টেড ময়শ্চারাইজ়ার ব্যবহার করুন। শ্যাডো, ব্লাশারের ব্যবহার যতটা সম্ভব কম করার চেষ্টা করুন।
• ম্যাট বা নুড লিপকালারের সঙ্গে সামান্য মাসকারা ও স্মাজ়ের সাহায্যে হাইলাইট করুন আই মেকআপ।
মুখে দাগছোপ থাকলে তার উপরে মেকআপের পারদ চড়াবেন না, তবেই তা স্বাভাবিক দেখাবে।
ত্বকের স্বাস্থ্য যাতে আপনার মুখে প্রতিফলিত হয়, সে গ্যারান্টি দেবে স্কিনিমালিজ়ম। তাই যত্ন নিন ত্বকের অন্দরসজ্জায়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy