Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
আলোচনা
Paintings

Paintings: হাওড়ার শিল্পীদের ‘মাস্টার স্ট্রোকস’

গোপাল সান্যালের ড্রয়িং একসময়ে যথেষ্ট সাড়া জাগিয়েছিল। জীবিকা নির্বাহকারীদের নিয়ে বহু কাজ করেছিলেন।

শ্রদ্ধাজ্ঞাপন: আনন্দী আর্ট গ্যালারিতে প্রয়াত শিল্পীদের চিত্রকর্মের প্রদর্শনী

শ্রদ্ধাজ্ঞাপন: আনন্দী আর্ট গ্যালারিতে প্রয়াত শিল্পীদের চিত্রকর্মের প্রদর্শনী

অতনু বসু
শেষ আপডেট: ০২ জুলাই ২০২২ ০৭:৩৩
Share: Save:

একটা সময় পর্যন্ত সকলেই হাওড়ার বাসিন্দা ছিলেন। তখনও জীবিত ৮৫ বছরের নিখিলেশ দাস হাওড়া ছেড়ে যাননি। তাঁকে কেন্দ্র করেই ‘আওয়ার হোমেজ টু দ্য মাস্টার স্ট্রোকস’ নামের প্রদর্শনীতে আরও ছ’জন চিত্রকর ছিলেন, যাঁরা সকলেই প্রয়াত। শুধু তপন মিত্র কাজ করে চলেছেন, বর্তমানে সল্টলেকের বাসিন্দা। তৎকালীন হাওড়ার আট শিল্পীর বিশেষ প্রদর্শনীটি উদ্বোধনের মাসখানেক পরেই নিখিলেশ দাস প্রয়াত হন। আনন্দী আর্ট গ্যালারির প্রদর্শনীটিই তাঁর জীবিত কালের শেষ প্রদর্শনী।

সকলেরই নানা মাধ্যমের কাজ ছিল। বিভিন্ন ব্যক্তিগত সূত্রে ও শিল্পীদের পরিবারের কাছ থেকে কাজগুলি সংগ্রহ করে এই প্রদর্শনী।

এঁদের মধ্যে সবচেয়ে বরিষ্ঠ বিজন চৌধুরীর দু’টি ছোট ড্রয়িং ছিল। তিনি সাধারণত বড় ক্যানভাস করতেন, অবয়বী-প্রতিবাদী কাজ। মার্কসবাদী বিজনের কাজে বরাবর একটা রাজনৈতিক-সামাজিক বার্তা থাকত। তা সব সময়ে যে একই রকম, তা নয়। ঘোড়া তার ছবিতে অন্যতম এক প্রতীক হিসেবে বহু বার দেখা গিয়েছে। দৈনন্দিনতার মধ্যবিত্ত-নিম্ন মধ্যবিত্ত জীবনকে তিনি তাঁর দেখার মতো করেই ব্যক্ত করেছেন ক্যানভাসে বারবার। সমাজের প্রতি এক তীব্র দায়বদ্ধতার তাগিদ থেকেই বিজন নিজেই নিজেকে চিনিয়েছেন তাঁর ছবিগুলির মধ্যে। প্রদর্শনীতে দু’টি গ্রাম্য-শহরকেন্দ্রিক যাপনচিত্রের টুকরো মুহূর্ত। নারীপ্রধান অবয়বী ড্রয়িং। গৃহাভ্যন্তরের ছবি। লাল-সবুজ-কালো পেনের দ্রুত স্কেচি মেজাজের অঙ্কনের পাশাপাশি সামান্য হালকা প্যাস্টেল শেডের কাজ। তাঁর মিশ্র মাধ্যমের একাকী একটি মুখ অনবদ্য।

রবীন মণ্ডলের অয়েল-অ্যাক্রিলিকে করা রেডিশ-ব্রাউন ড্রয়িংসদৃশ তুলির অপেক্ষাকৃত স্থূল রেখার নীরব মুখটি প্রত্নসুলভ আদিমতার আভাস দেয়। এর পটভূমির রুক্ষ উচ্চাবচ টেক্সচারাল কোয়ালিটি অসামান্য।

গোপাল সান্যালের ড্রয়িং একসময়ে যথেষ্ট সাড়া জাগিয়েছিল। জীবিকা নির্বাহকারীদের নিয়ে বহু কাজ করেছিলেন। কালো কালি-তুলি, বিশেষত পেন-ইঙ্কেও কাজ করেছেন। তাঁর কাজ কদাচিৎ প্রকাশের ড্রয়িংকেও মনে পড়ায়। এখানে উপরের দিকে মুখ করা এক সাপুড়ে ও বেহালাবাদকের ড্রয়িংটি কিছুটা হলেও স্টাইলাইজ় করেছেন তাঁর চেনা ছন্দের রৈখিক চরিত্রে।

প্রকাশ কর্মকারের নিজস্ব স্টাইলে করা দু’টি নিসর্গচিত্রে গাছ, দুই ডালের মাঝে আটকে থাকা ফলের মতো কমলা চাঁদ বা সূর্য, নিস্তরঙ্গ নদ-নদী-জমি, হলদে-নীলাভ নভের ছবি। আহামরি না হলেও, এ তাঁর বহু চেনা ল্যান্ডস্কেপগুলির অন্যতম। নিঃসন্দেহে যথেষ্ট কাঠিন্যময়। কিছুটা অবশ্যই শিশুসুলভ।

বোর্ডে তেলরং ও কাগজে জলরঙের তিনটি পেন্টিংয়ে অনিতা রায়চৌধুরী দ্রুত তুলির টানটোন, রহস্যময় আবহ, ঠিকরে ওঠা আলোর মধ্যে এক পাশে অবয়ব, মোটা ও সরু ব্রাশিংয়ে যেন কৌতূহলকে অনেকটা প্রশ্রয় দিয়েছেন। অসম্পূর্ণ, কিন্তু অনেক কিছু বলা আছে তার অভ্যন্তরে। মানুষ, কুকুর, বেড়াল নিয়ে করা ছবিটি অন্তরঙ্গ। স্বল্প বর্ণের মধ্যে কালো রৈখিক চরিত্রগুলি একরকম কথোপকথনে মগ্ন। অন্য একটি কাজে যেমন ইচ্ছে অসংযত রূপারোপে বিক্ষুব্ধ টানটোন। বাস্তব-অবাস্তবের ধার না ধারা এক ধরনের আত্মোপলব্ধির সংক্ষুব্ধ প্রকাশ কি? শিল্পীই জানতেন এমন নিরীক্ষামূলক চরিত্রের কথা।

একটা কথা বলতেই হয়। প্রয়াত শিল্পীদের কিন্তু বেশ কিছু আকর্ষণীয় কাজ, ছোট ড্রয়িং এখনও বহু জনের সংগ্রহে আছে। কেন কর্তৃপক্ষ সে সব জোগাড় করতে পারেননি, জানা নেই। কারণ, এ প্রদর্শনীর কাজগুলি তেমন আহামরি নয়। দু’-চারটে যদিও বা ভাল মানের, বাকিগুলি একেবারেই তা নয়। মনে রাখতে হবে, প্রদর্শনী করা, বিশেষ করে এমন সব স্মরণীয় শিল্পীদের কাজ নিয়ে দেখানো মানে এই নয় যে, যা সংগ্রহ করা গিয়েছে দর্শককে দেখাতেই হবে। দীর্ঘকালের চেষ্টা, কাজ সংগ্রহের পদ্ধতি, কাজের মান, নির্বাচন, বিভিন্ন যোগাযোগ... এমন অনেক কিছুই থাকে এ ধরনের প্রদর্শনীকে একটি নির্দিষ্ট চেহারা দেওয়ার ক্ষেত্রে। এখানে সে সব বিষয় মাথায় রাখা হয়নি।

ধর্মনারায়ণ দাশগুপ্তের বেতের ডালার উপরে করা একটি অতি সাধারণ মানের কাজ ছিল।

তপন মিত্রের অ্যাক্রিলিকের কাজে সবুজ গোল চেয়ারে লাগানো হলদে-লাল পর্দার উড়ে যাওয়া, পিছনে সাইকেলের সামান্য অংশ। লাল পটভূমি, ছবির ডানদিকে উপর থেকে নীচে গোটা ছয়েক গরাদের মতো উল্লম্ব হালকা নীল-সবুজ মেশানো আপাতকৃশ ও কিছুটা স্থূল ব্রাশিংয়ের ড্রয়িং।

নিখিলেশ দাসের দু’টি ড্রয়িংভিত্তিক কাজ ছিল। নর-নারীর শরীরী বিন্যাসের টুকরো মুহূর্তের সঙ্গে মিলেমিশে থাকা পিছনের অসম্পূর্ণ স্থাপত্যের স্কেচি একটি ড্রয়িং। হালকা, অপেক্ষাকৃত প্রয়োজনীয় গাঢ় ব্রাউন পেনের কাজ। অন্যটি একটি টেক্সচারাল কোয়ালিটির প্রিন্টেড পেপারের মতো পটভূমিতে নগ্ন নারীর আধা নৃত্য-আধা শারীরচর্চাসদৃশ মুহূর্ত। পিছনের দিকে দু’পাশে দু’টি শরীর নিচু হয়ে ভূমি স্পর্শ করার মুহূর্ত। সরু সরু রেখা সম্বলিত টেক্সচারকে সুন্দর ভাবে কাজে লাগিয়েছেন তিনি। খসড়াগোছের ড্রয়িং।

অন্য বিষয়গুলি:

Paintings review
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy