পুরাতন: ‘গ্রেট মাস্টার্স’ প্রদর্শনীতে বিনোদবিহারী মুখোপাধ্যায়ের চিত্রকর্ম
পরিপূর্ণ ভাবে গ্যালারি বলতে যা বোঝায়, ‘গ্যালারি সুনয়ন’ তেমন নয়। লেকটাউনের ত্রিতল একটি বাড়ির দেড়তলার একটি অপেক্ষাকৃত নিচু ও অপ্রতুল পরিসরের কক্ষটিকে গ্যালারিতে রূপ দিতে চেয়েছেন শিল্পী অমিতাভ চক্রবর্তী। সহোদর উৎপল চক্রবর্তী গত চার দশক প্যারিসে, কলাভবনের ছাত্র ছিলেন। তখন থেকেই সামান্য কাজ সংগ্রহ করেছিলেন। অন্য ভাই বিজয় চক্রবর্তীও শিল্পী। শিক্ষক হিসেবে বিনোদবিহারীও কিছু কাজ দিয়েছিলেন তাঁদের। শিল্পী রণেনআয়ন দত্তর সঙ্গে পারিবারিক সম্পর্কের খাতিরেও কাজ পেয়েছেন। রামানন্দ বন্দ্যোপাধ্যায়, গোপাল ঘোষ প্রমুখের কাজও সংগ্রহ করেছিল অমিতাভের পরিবার। সেই সব কাজ এবং তরুণতর শিল্পী ও ছাত্রদের কিছু নির্বাচিত কাজ নিয়ে ‘গ্রেট মাস্টার্স’ নামে একটি প্রদর্শনী সম্পন্ন হল সম্প্রতি। কিন্তু সকলে তো ‘গ্রেট মাস্টার’ নন, তাই প্রদর্শনীর নামটি এমন না হলেই ঠিক ছিল। এর সঙ্গে ‘অ্যান্ড আদার্স’ যুক্ত করলে বরং মানানসই হত।
প্রদর্শনীতে পেন্টিং, ভাস্কর্য, টেরাকোটা, ব্রোঞ্জ, সেরামিক, টেক্সটাইল, ড্রয়িং, পেপার পাল্প, কোলাজ, মিশ্র মাধ্যমও ছিল। চল্লিশের কিছু কম কাজ নিয়ে প্রদর্শনী। নানা ভাবে কাজ সংগৃহীত। সোশ্যাল মিডিয়াকেও তাঁরা মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করেছেন সংগ্রহের ক্ষেত্রে। তবে উচিত ছিল ঠিক নির্বাচন, আর একটু ঝাড়াই-বাছাই দরকার ছিল। তা হলেও প্রদর্শনী হিসেবে গুছিয়ে ডিসপ্লে করার চেষ্টাটুকু ছিল।
এখানে উল্লেখ্য, ‘গ্যালারি সুনয়ন’ নামে তাঁরা ২০০৮-এ এখানেই একটি প্রদর্শনী করেছিলেন। সেখানে বসন্তকুমার গঙ্গোপাধ্যায়, গোপাল ঘোষ, সত্যেন ঘোষাল, সুনীলকুমার পাল, ধীরেন্দ্রনাথ ব্রহ্ম, রণেনআয়ন দত্ত, রামানন্দ বন্দ্যোপাধ্যায়, কৃষ্ণা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাজ প্রদর্শিত হলেও তখন তেমন দর্শক বা মিডিয়ার কোনও প্রচার ছিল না। কিন্তু যথেষ্ট দৃষ্টিনন্দন প্রদর্শনী হয়েছিল সেটি।
বর্তমান প্রদর্শনীতে বিনোদবিহারীর চারটি অসাধারণ কাজ ছিল। একটি পাতলা বাদামি জলরঙের টোন দেওয়া কাগজে তিনি নিজের নাম-সহ লিখেছিলেন উপল, নীচে উৎপল, প্রবীর, অসিত, রামানন্দ... এমন কিছু নাম। মকশো করার মতো, এক-একটি অক্ষর দু’বার, তিনবার করে লেখা। জানা নেই, তিনি এগুলি কোন সময়ে লিখেছিলেন। সাল-তারিখের কোনও উল্লেখ নেই। বাঁ-দিকের কোণে সংখ্যায় ‘৭’-এর নীচে ‘৭’লেখা। পরেরটি ইংরেজি নয়ের মতো করে লেখা, ফলে বোঝা মুশকিল। কালচে খয়েরি বর্ণের পেন বা নিব দিয়ে লেখা। ভারী চমৎকার একটি কোলাজ করেছিলেন তিনটি অবয়ব-সহ। এখানে জলরঙের কিছু ব্রাশিং ও সরু রেখার সঙ্গে টুকরো কাগজও আছে। তবে কিছু কাগজে জলরঙের টোন দিয়ে সেই কাগজকে কেটে, সামান্য ছিঁড়ে ব্যবহার করেছেন। এ রকম অন্য কাজটিতে খবরের কাগজ কেটে-ছিঁড়ে একই ভাবে কাজ করেছেন। আর শুধু রেখায় ন’টি প্যানেলের ড্রয়িংটি রামায়ণের।
রণেনআয়ন দত্তর একটি মোনোক্রোম ছিল রাজপথের উপরে বড় ভাস্কর্য, একটু দূরে গির্জা, রাস্তা, মানুষজন। বহু পুরনো কাজ, চমৎকার। গোপাল ঘোষের নীল পায়রা, রামানন্দ বন্দ্যোপাধ্যায়ের জলরঙের লালচে পাহাড়, দূরে গাছ, নীল আকাশ সংক্ষিপ্ত কাজ, স্পেসের ব্যবহার দেখার মতো। বিজয় চক্রবর্তীর একটি মেয়ের মুখ, যার আঙুলে বসে থাকা পাখি। অল্প জলরং ও প্রচুর রেখার ঘূর্ণনে ছবিটি মায়াবী।
তাঁদের ওয়ার্কশপে করা বেশ কিছু সেরামিকের দৃষ্টিনন্দন কাজ ছিল প্রদর্শনীর অন্যতম বৈশিষ্ট্য। ওয়ার্কশপে বিভিন্ন মাধ্যমের কাজই হয়ে থাকে ওখানে। তার কিছু নির্বাচিত নমুনা এখানে রাখা হয়েছিল। কাজগুলিতে রীতিমতো পরিশ্রমের ছাপ স্পষ্ট। এদের মসৃণতা, আলঙ্কারিক বিন্যাস, আধুনিক স্টাইলাইজ়েশনে একটি চ্যাপ্টা নরম আকৃতিকে মুড়ে দুমড়ে, তাকে আশ্চর্য একটি ফর্মেশনে ফেলে এক ধরনের শৈল্পিক আকার দেওয়া, কিছু মুখোশসদৃশ টেরাকোটা ও সেরামিক, নানা রকম ভাস, আলঙ্কারিক পাত্র প্রভৃতি বেশ বৈচিত্রময়।
অয়েলে করা সৌরভ সাহার ‘স্কাই’ নামক কাজটিতে মুনশিয়ানার ছাপ স্পষ্ট। আকাশের ব্রাশিং ও বর্ণ বেশ জোরালো, উচ্চমানের। সৌরভ বেরার ‘আনটাইটেলড’ কোলাজটিও যথেষ্ট চমকপ্রদ। নিসর্গের কবিতা যেন। সুকন্যা হালদারের সাদাকালো ‘বিসাইড দ্য রিভার’ যেন লিনো বা উডকাটের আভাস দেয়। যদিও তা সাদা কালো জলরঙের একটি কাজ। পার্থ শিকদারের সেরামিকের কাজটিও যথেষ্ট প্রশংসার দাবি রাখে। অমিতাভ চক্রবর্তীর টেরাকোটা ‘নট অ্যালোন’ অনবদ্য। এ ছাড়া অতনু চট্টোপাধ্যায়, বিশ্বদীপ দে, জয়িতা ধাড়া, কোয়েল মাইতি, সুপ্রিয় কোলে প্রমুখ বেশ ভাল কাজ করেছেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy