হাত পাকাবার আসর: ‘কাটুম কুটুম’ আয়োজিত প্রদর্শনী।
অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্মের আসন্ন সার্ধশতবর্ষকে স্মরণ করে ‘কাটুম কুটুম’ তাদের প্রথম চিত্রপ্রদর্শনী সম্পন্ন করল অ্যাকাডেমি অব ফাইন আর্টসে। চার মাসের মধ্যে তাদের দু’টি প্রদর্শনীর একটি ছিল অনলাইন। পাঁচ বছরের খুদে আঁকিয়ে থেকে চুয়াত্তর বছরের বৃদ্ধ পর্যন্ত কাজ করেছেন। অ্যাকাডেমিতে বারো জনের একশো আটটি, অনলাইনে পঁয়ত্রিশ জনের ষাটটি কাজ দেখানো হয়েছে। অ্যাকাডেমির প্রদর্শনীতে তার মাত্র কয়েকটি কাজ প্রদর্শিত হয়েছে। সবাই স্বশিক্ষিত, কাটুমকুটুম-এর কর্ণধার অমর দাসের ছাত্রছাত্রী। অ্যাকাডেমির প্রদর্শনীতে বাইশটি আলোকচিত্রও প্রদর্শিত হয়েছে।
দু’টিই প্রথম প্রদর্শনী। অনলাইন প্রদর্শনীতে পাঁচ বছরের অর্ণব বৈরাগী ব্রাউন সরু স্কেচ পেনে শুধু ‘ফিশিং টু’ নামে একটি অসাধারণ ড্রয়িং করেছে, নৌকো থেকে জলে মাছ ধরার দৃশ্য। এ ছাড়া, কৌস্তুভ ভাদুড়ীর নীলের আধিক্যে ও অন্যান্য কিছু বর্ণের সমাহারে করা ‘নেচার’ অয়েল প্যাস্টেলের চমৎকার নিসর্গ। অনুরত্ন বন্দ্যোপাধ্যায়ের অ্যাক্রিলিকের ‘দ্য স্টর্ম’, অভিনব বড়ালের ‘লাইফ হোপ’, পাঁচ বছরের আয়ুষী জানার অয়েল প্যাস্টেল ‘আন্ডার দ্য সি’ বেশ ভাল। নভস্বান বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘দি ইনভিজিবল কুইন অফ ইনভিজ়িবল ল্যান্ড’ প্যাস্টেলে করা কাজটি ঘনকবাদের অতিরঞ্জিত রূপ। চটকদার বর্ণের মিশ্রণ ও স্টাইল যেন তারই উপমা।
অ্যাকাডেমির প্রদর্শনীতে এত কাজ রাখার প্রয়োজনই ছিল না। নির্বাচনে বেশ ফাঁক থেকে গিয়েছে। ডিসপ্লে ও কাজের মানের প্রতি নির্বাচক সচেতন হতে পারেননি। ডিসপ্লেও কিছুটা ব্যাহত হয়েছে। উপর-নীচ করে ছবি না রাখতে পারলেই ভাল হত। প্রথম প্রদর্শনী, কিছু ত্রুটি হতেই পারে। তবু অতি দুর্বল কাজ তো বাদ দেওয়াই যেত। প্রদর্শনী, সে প্রথমই হোক বা দশ-বিশতম, কাজ বাছার ক্ষেত্রে নিরপেক্ষ, নির্মম ও নির্দ্বিধায় নির্বাচন করতে হবে। সব ছাত্রছাত্রীকে খুশি করার জন্য প্রদর্শনী নয়।
সুশোভন সেনগুপ্তর দু’টি প্রতিকৃতিতে কাগজের টেক্সচার যতটা গুরুত্ব পেয়েছে, কাজ হিসেবে ততটা নয়। অসম্পূর্ণতা লক্ষণীয়। অয়েল প্যাস্টেলেই আরও কাজ করার ছিল, তাড়াতাড়ি ছেড়ে দিয়েছেন। কোন আশঙ্কায়? মধুরিমা ঘোষ দস্তিদারের অ্যাকাডেমির কাজগুলির ব্রাশের লাইন কাব্যিক। কিন্তু ক্যানভাসে অ্যাক্রিলিকের ব্যবহার, বর্ণলেপন, ব্রাশিং, টোন, বর্ণমিশ্রণের টেকনিক এ সবই তাঁকে বিশেষ ভাবে রপ্ত করতে হবে। কম্পোজ়িশন সম্পর্কেও ভাবনাচিন্তা দরকার। শুধু একটা স্টাইলকে আঁকড়ে থাকলে কাজের উত্তরণ ঘটবে না। অতিরিক্ত সাবধানতা অনেক সময়ে কিছু অভাববোধকে প্রকট করে। তাঁর আগের করা নিসর্গগুলি বড্ড বেশি দুর্বল। খুব সাবধানে ব্রাশিং করেছেন নন্দিনী জানা। বড্ড স্বল্প ও সংক্ষিপ্ত। রঙের নির্বাচনে অনভিজ্ঞতা। রেফারেন্স থেকে করে থাকলে বা কোনও ছবির সাহায্য নিলে ‘কিশোরী’ আহামরি নয় মোটেই। ‘চাঁদের হাসি’ তবু চলে যায়, ছাত্রসুলভ হলেও। দীপায়ন শী-র ‘দ্য কিড’ আলোকচিত্র-নির্ভর, অয়েলে ক্যানভাসের কাজ, কপি না হলেই ভাল হত। বরং ‘বিহাইন্ড দ্য মাস্ক’-এর হাতে মাস্ক (মুখোশ) ধরাটা প্রকৃতই স্টাডি। নিজস্বতার দাবি কতটুকুতেই বা? ট্রিটমেন্ট মন্দ নয়। রিয়্যালিজ়মকেও বুঝতে হবে। প্রচুর স্টাডি দরকার আর নামী শিল্পীদের কাজ দেখাও।
অনেকেই আলোকচিত্রের নকল করেছেন। সামান্য রেফারেন্স, বাকিটা নিজের মতো কাজ, এ সব ক্ষেত্রে মেনে নেওয়া যায়। ছবির নকল, তাও আবার প্রদর্শনীতে? ভাবনাটাই অন্যায়। অন্যদের কাছে এর বিরূপ প্রতিক্রিয়া হওয়া স্বাভাবিক। এ যেন আমি সম্পূর্ণ নিজের মতো লিখে পরীক্ষা দিলাম, আর ওরা পুরোটাই নকল করে নম্বর বেশি পেয়ে গেল— এর মতো, যা বাঞ্ছনীয় নয়।
অ্যাকাডেমিতে সবচেয়ে বেশি কাজ ছিল অমর দাসের। পেন্টিং, ড্রয়িং, ব্রাশওয়ার্ক, পেন অ্যান্ড ইঙ্ক, কোলাজ মিশ্রিত ড্রয়িং ইত্যাদি। পেন্টিংয়ে তিনি মদিগিলিয়ানী ও মাতিসকে একসঙ্গে মিশিয়েছেন। তাঁদের স্টাইল, টেকনিক ও কম্পোজ়িশনের তীব্র নির্যাসকেই কাজে লাগিয়েছেন এমন নয়, প্রত্যক্ষ ভাবে এসেও গিয়েছে তা। ওই রচনাভাস ও স্টাইলকে উপেক্ষা করলেই ভাল হত। কারণ অমরের ড্রয়িং যথেষ্ট ইঙ্গিতপূর্ণ। কাব্যিক টানটোন, রেখার নম্র গতি ও ছন্দে একটা চমৎকার সমতা আছে। প্যাস্টেলে কাগজে কাজ করেছেন। ইঙ্কে করা ব্রাশের কাজগুলি বেশ রিয়্যালিস্টিক ও লাবণ্যময়। টুকরো কাগজ ছিঁড়ে একটা রূপকে সরু রেখার লাইনে পূর্ণতা দিয়ে, বা সামান্য হালকা বর্ণে চমৎকার কাজ করেছেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy