Advertisement
২৩ নভেম্বর ২০২৪
Art Exhibition

শিল্প ও সহমর্মিতার যুগলবন্দি

রামানন্দ বন্দ্যোপাধ্যায়ের একটি ইঙ্ক এবং ড্রাই প্যাস্টেলে করা ড্রয়িং প্রদর্শনীতে দেখতে পাওয়া গেল। তাঁর লাইন ড্রয়িং শিল্পপ্রেমীদের অজানা নয়।

শমিতা বসু
শেষ আপডেট: ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ০৫:৪২
Share: Save:

সম্প্রতি গ্যালারি গোল্ডে ইনস্টিটিউট অব চাইল্ড হেলথ আয়োজন করেছিল একটি অভূতপূর্ব প্রদর্শনীর। নাম, ‘চিত্রাবলী’। প্রদর্শনীটি কিউরেট করেছিলেন শিল্পী শুভঙ্কর সিংহ। বিশেষত্ব হল, বেশ কিছু নামীদামি শিল্পীর সঙ্গে চিকিৎসকরাও অংশ নিয়েছিলেন প্রদর্শনীতে। দ্বিতীয়ত, প্রদর্শনীর উদ্দেশ্যটিও ছিল মহৎ। একটি নতুন হাসপাতালের পরিকল্পনায় এই শিল্পকর্মের উপস্থাপনের আয়োজন করা হয়েছিল সংস্থার তরফে।

প্রদর্শনীতে যে শিল্পীদের কাজ দেখা গেল, তাঁরা হলেন রামানন্দ বন্দ্যোপাধ্যায়, শুভাপ্রসন্ন, অরুণিমা চৌধুরী, প্রবাল চাঁদ বড়াল, মনোজ মিত্র, চন্দ্র ভট্টাচার্য, অতীন বসাক, ব্রতীন খান, শেখর কর, শেখর রায়, সুব্রত দাস, সুকান্ত দাস, জগন্নাথ পাল, বাগেশ্রী দত্ত, সন্দীপ রায়, তৌসিফ হক, কৌশিক রাহা, বিবেক রায়, অমর দাস এবং শুভঙ্কর সিংহ। প্রদর্শনীতে অংশগ্রহণকারী চিকিৎসকরা হলেন অমিত বড়ুয়া, ভাস্বতী আচার্য, বি কে মানোচা, দেবযানী গুপ্ত, জয়তী সেনগুপ্ত, পার্থপ্রতিম গুপ্ত, সুমিতা সাহা এবং সুস্মিতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

রামানন্দ বন্দ্যোপাধ্যায়ের একটি ইঙ্ক এবং ড্রাই প্যাস্টেলে করা ড্রয়িং প্রদর্শনীতে দেখতে পাওয়া গেল। তাঁর লাইন ড্রয়িং শিল্পপ্রেমীদের অজানা নয়। তবে এখানে বিশেষ রঙের ব্যবহার দেখা গেল না। শুধু দু’টি নারীমূর্তি। শায়িত মূর্তিটি খুব সম্ভবত মায়ের এবং মাথার কাছে বসে রয়েছে তার কন্যা। কন্যার চোখে বিষাদ, কপালে সিঁদুরের টিপ। বোঝা যায় যে মা অসুস্থ। কত অল্প লাইনে কত কথা বলে দিয়েছেন শিল্পী এই ছবিতে।

শিল্পী শুভাপ্রসন্নর একটি পেঁচার ছবি দেখা গেল। অ্যাক্রিলিক এবং চারকোলে নিজস্ব ধরনে ড্রয়িং করেছেন শিল্পী। এ পেঁচা যেন বিজ্ঞতার প্রতিমূর্তি। সে যেন মানুষের অন্তরটা দেখতে পায়। শুধু দু’টি হলুদ চোখের চাহনি সব কথা শুনছে এবং জানছে।

শিল্পী অতীন বসাকের হ্যান্ডমেড বোর্ডের উপরে টেম্পেরায় করা দেবী মূর্তি ছিল প্রদর্শনীতে। দেবীর পার্শ্বমুখ। ভারী সুন্দর নিখুঁত কাজ।

ব্রতীন খানের ক্যানভাসের উপর অ্যাক্রিলিকে করা শিরোনামহীন একটি কাজ দেখা গেল। এটি বুদ্ধের প্রতিমূর্তি বলেই মনে হয়। এখানে শান্তির বাণী ধ্যানরত বুদ্ধের চোখে মুখে ফুটে উঠেছে।

শিল্পী চন্দ্র ভট্টাচার্যের ক্যানভাসের উপরে অ্যাক্রিলিকে করা একটি কাজ ছিল প্রদর্শনীতে, যার কোনও শিরোনাম নেই। মেয়েটির মুখমণ্ডলে যেন আত্মনিরীক্ষা। ব্রাউন টোনে করা, ভাল কাজ।

জগন্নাথ পালের ক্যানভাসের উপরে অ্যাক্রিলিক রঙে করা ছবির শিরোনাম ‘বন্ড অব লাভ সিরিজ়’। নিজস্ব এক স্টাইলে ছবি আঁকেন এই শিল্পী। ছবিতে যথেষ্ট উজ্জ্বল রঙের ব্যবহার আছে এবং দু’টি মানুষের প্রেমঘন ভাবটিও প্রস্ফুটিত হয়েছে। আকর্ষণীয় ছবি।

সুকান্ত দাসের শিরোনামহীন ছবিটি বেশ মনোরম। অ্যাক্রিলিক রং দিয়ে ক্যানভাসের উপরে এঁকেছেন এক বৌদ্ধ ভিক্ষুর ছবি। নিরাভরণ, সরল, সুন্দর একটি মুখ, দুই হাতে ধরে আছেন একটি প্রস্ফুটিত পদ্ম।

বিবেক রায়ের ‘দা শু’-এ শিরোনামযুক্ত একটি এচিং দেখলেন দর্শক। একবর্ণী কাজ। সবুজ রঙের বৈচিত্র এনেছেন নানা ভাবে।

তৌসিফ হকের কাগজের উপরে জলরঙে করা প্যানেলে দু’টি ছবি দেখা গেল। পূর্ব প্রাচ্যের শিল্পীদের আদলে এঁকেছেন বাঁশ গাছ, তার উপরে পাখি বসে আছে। জলরঙের উপর তাঁর দখল দর্শকের অজানা নয়। ডা. জয়তী সেনগুপ্তর আঁকা একটি ময়ূরের ছবি দেখা গেল। সুন্দর একটি কাজ। এ ছাড়া ডা. বি কে মানোচার ‘ফেস’ শিরোনামের একটি পেন অ্যান্ড ইঙ্কের প্রতিকৃতি দেখা গেল। নিষ্পাপ একটি মুখ। ভাল ড্রয়িং। সবশেষে বলতে হয়, কিউরেটর শুভঙ্কর সিংহর অ্যাক্রিলিকে ক্যানভাসের উপরে করা ছবির কথা। এক নারীমূর্তির বাইরের কঠিন পাথুরে আবরণ কেটে কেটে শিল্পী যেন মেয়েটির অন্তরের সত্তাকে নতুন জন্ম দিচ্ছেন।

শিল্পী এবং চিকিৎসকদের তরফ থেকে এই প্রদর্শনী একটি অত্যন্ত সহৃদয়, সুপরিকল্পিত প্রয়াস, যার চিত্রকর্মও মন জয় করে নেয়।

অন্য বিষয়গুলি:

Fine Arts Contemporary art
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy