Advertisement
২৩ ডিসেম্বর ২০২৪
Art exhibition

ধারাবাহিক ও পরিবর্তনশীল

কুড়ি বছর পরে এই শহরে এসে আকার প্রকার গ্যালারিতে প্রদর্শনী করলেন মণীশ। এটি কলকাতায় তাঁর দ্বিতীয় প্রদর্শনী। জীবনের প্রথম পঁচিশ বছর ভোপালে কাটলেও এখন তিনি দিল্লিনিবাসী।

Art by Manish Pushkal

কাঁথাকারি: প্রদর্শনীতে মণীশ পুষ্কলের শিল্পকর্ম Sourced by the ABP

শমিতা বসু
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৭ মে ২০২৩ ০৬:২৪
Share: Save:

মণীশ পুষ্কলে মধ্যবয়সি এক শিল্পী। জন্ম ভোপালে। সেখানে শিল্পসংস্কৃতির অন্যতম পীঠস্থান ভারত ভবনের সঙ্গে ছোটবেলা থেকে সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল তাঁর। ভারত ভবনে যাতায়াত করতে করতে নাচগান, চারুকলা, নাট্যকলা ও সেখানকার লাইব্রেরির সঙ্গে নিবিড় এক সখ্য তৈরি হয়েছিল মণীশের। শিল্পীর নিজের কথায়, ভারত ভবনেই শিল্পকলার সঙ্গে সার্বিক একটা সংযোগ গড়ে ওঠার কারণে তাঁর জীবনযাত্রা অন্য রাস্তায় চালিত হল। হয়ে গেলেন চিত্রশিল্পী। পরবর্তী কালে সইদ হায়দর রাজার সংস্পর্শে আসেন মণীশ এবং তাঁর কাছেই বিমূর্ত পদ্ধতিতে ছবি আঁকার শিক্ষা গ্ৰহণ করেন।

কুড়ি বছর পরে এই শহরে এসে আকার প্রকার গ্যালারিতে প্রদর্শনী করলেন মণীশ। এটি কলকাতায় তাঁর দ্বিতীয় প্রদর্শনী। জীবনের প্রথম পঁচিশ বছর ভোপালে কাটলেও এখন তিনি দিল্লিনিবাসী। মধ্যপ্রদেশের শিল্পের নির্যাস বুকে নিয়ে চলে গিয়েছিলেন রাজধানীতে। সেখানে আরও পঁচিশ বছর কাটিয়ে ফেলেছেন। দেশে-বিদেশে অসংখ্য একক এবং দলীয় প্রদর্শনীতে যোগ দিয়েছেন।

আকার প্রকার গ্যালারির প্রদর্শনী ‘কনসিস্ট্যান্ট (ইন)কনসিস্টেন্সি’-তে যে ছবিগুলি দেখা গেল, তা দেখে প্রথমেই মনে হয় যে, এই কাঁথা তো পশ্চিমবঙ্গের নিজস্ব জনপ্রিয় এক লোকশিল্প। পাশাপাশি এ-ও মনে পড়ে গেল, অস্ট্রেলিয়ায় গিয়ে সে দেশের আদিবাসীদের ছবিতেও ওই ধরনের কাজ দেখার সুযোগ হয়েছিল। পৃথিবীর যে কোনও জায়গার আদিম অধিবাসীদের শিল্পের ভাষা কিন্তু অনেকটা এক রকম। মণীশ পুষ্কলের সব ছবির পটভূমিতেই কাঁথার কাজ। দূর থেকে দেখে মনে হবে, কাঁথা স্টিচ। কিন্তু কাছে গেলেই দর্শক বুঝবেন যে, ছোট ছোট লাইনে খুব সূক্ষ্মভাবে মিনিয়েচার ডিটেল পেন্ট ব্রাশে আঁকা হয়েছে ওই পটভূমি। অবশ্যই ব্যবহার করেছেন অ্যাক্রিলিক পেন্ট। তার উপর বিভিন্ন ডিজ়াইনের মাধ্যমে কিছু কথা বলেছেন শিল্পী। তেমনই একটি ছবি দশাবতারের। দশটি ক্যানভাস পাশাপাশি জুড়ে ছবিটি তৈরি হয়েছে। রং ব্যবহার করা হয়েছে সবুজ, হলুদ, খয়েরি, সাদা... আরও অনেক রকম। কিন্তু উপর থেকে প্রধানত লালের প্রভাবে ছবিটি খুবই মনোরম। কিছু কিছু জায়গায় কাঁথার কাজের পিছনে হালকা হাতে ফ্ল্যাট করে রং লাগিয়ে নিয়েছেন শিল্পী। তারপর এসেছে কাঁথার কাজ। কিন্তু ওই রঙের আতিশয্যে দশ অবতারকে খুঁজে বার করতে দর্শককে একটু পরিশ্রম করতে হবে।

আরও একটি ছবির কথা বলা দরকার। এই ছবিটিই সম্ভবত প্রদর্শনীর শ্রেষ্ঠ কাজ। পটভূমি মোটামুটি মোনোক্রোমাটিক। একবর্ণে বা লিমিটেড প্যালেটে করা। বিরাট ক্যানভাসের বুক চিরে একটি বিশাল বীণার ছবি। বীণার অবস্থানটি বুঝে নিতে হয়। খুব স্পষ্ট নয়। এ ছবিতে বিমূর্ততা আছে পুরোপুরি। কিন্তু ওই ছবিটির সামনে দাঁড়ালে সঙ্গীত ভেসে আসে। ধ্যানানুভূতির জন্ম হয়। এই ছবির সঙ্গে একাত্ম হয়েছেন শিল্পী। অন্য মাত্রায় নিয়ে গিয়েছেন ছবিটিকে। এই ছবির নাম মণীশ রাখেননি। শিরোনামহীন এই ছবির দর্শন এবং শ্রবণ একই সঙ্গে দর্শককে স্পর্শ করে। এ ছবিতে শিল্পী সফল হয়েছেন উত্তরণে। অপেরাপ্রেমী দর্শক বুঝবেন যে, পাভারোট্টির সঙ্গীত অন্য কোথাও পৌঁছে দিতে পারে নিমেষে।

এ ছাড়া আর একটি ছবির নাম ‘দ্য ডেজ়ার্ট’। একটি পরিচ্ছন্ন, সম্পূর্ণ বিমূর্ত কাজ। এখানে মরুভূমির নানা রং, বাড়ি-ঘর, জলাশয় ইত্যাদি ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে। বুঝে নিতে হবে দর্শককে।

মণীশ পুষ্কলে দেশজ প্রতিমূর্তি থেকে নিজস্ব এক স্বাক্ষর তৈরি করেছেন। তবে শিল্পী এ-ও বলেছেন, তাঁর কাজ পরিবর্তনশীল। এক জায়গায় দাঁড়িয়ে থাকবে না। প্রতি মুহূর্তেই তাঁর কাজ ‘ওয়র্ক ইন প্রোগ্রেস’। এখান থেকে ভবিষ্যতে কোথায় নিয়ে যাবেন তাঁর ছবিকে, সেটা সময়ই বলে দেবে।

অন্য বিষয়গুলি:

Art exhibition artist Paintings
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy