Advertisement
৩০ নভেম্বর ২০২৪
Review

এ নাটকের শিরায় হেমন্তকাল আছে

মূল কথোপকথন কাব্যগ্রন্থে আমরা দেখতে পাই যে শুভঙ্কর আর নন্দিনীর বয়স ধীরে ধীরে বেড়েছে। এই নাটকেও আমরা তাই তরুণ শুভঙ্কর-নন্দিনী ও পরিণতবয়স্ক শুভঙ্কর-নন্দিনীর দেখা পাই।

নাটকের একটি দৃশ্য

নাটকের একটি দৃশ্য

সৌভিক গুহসরকার
শেষ আপডেট: ৩০ নভেম্বর ২০২৪ ০৯:৩৬
Share: Save:

গত ১৩ নভেম্বর তপন থিয়েটারে মঞ্চস্থ হল থিয়েটার ইন জি মাইনর নাট্যদলের নবতম প্রযোজনা— ‘কথোপকথন’। পূর্ণেন্দু পত্রীর ‘কথোপকথন’-এর অন্তর্গত প্রথম কাব্যগ্রন্থ প্রকাশিত হয় ১৯৮১ সালের সেপ্টেম্বর মাসে। এর পর দ্বিতীয়, তৃতীয়, চতুর্থ ও পঞ্চম গ্ৰন্থগুলিও প্রকাশিত হয় ১৯৮৭ থেকে ১৯৯৫-এর মধ্যে। এই পাঁচটি গ্ৰন্থে বিধৃত রয়েছে শুভঙ্কর ও নন্দিনীর প্রেমের কবিতা। শুধু দ্বিতীয় কাব্যগ্ৰন্থে রয়েছে অমিতাভর কথা। একটি নাটকের বিষয়ে কথা বলতে গিয়ে এতগুলো কথা বলার মূল কারণ হল— কথোপকথন, যা মূলত কাব্য— তাকে নাটকের ছাঁচে ফেলে পুনর্নির্মাণ করা সহজ নয়। কাব্যে যা স্বাভাবিক, নাটকে তা নয়। কাব্যে যা সঙ্গত, নাটকে তা অতিশয় বলে মনে হতে পারে। সুতরাং কাব্যভূমি থেকে নাট্যভূমিতে যাত্রার পথ সুগম নয়। ‘কথোপকথন’ কাব্যগ্রন্থের বিভিন্ন পর্যায়ের কবিতা থেকে কিছু কবিতা বেছে নিয়ে, জুড়ে একটি ঋজু ও মেদহীন নাট্যরূপ সৃষ্টি করে বিশেষ মুনশিয়ানার পরিচয় দিয়েছেন নিবেদিতা ভট্টাচার্য।

‘কথোপকথন’ নাটকটি কবিতা দিয়ে নির্মিত হলেও এটিকে কাব্যনাট্য বলা চলে না। এটি হল কাব্যিক নাট্য। স্বাভাবিক ভাবেই এ নাটকে কোনও আখ্যানভাগ নেই। রয়েছে কথা। শুভঙ্কর আর নন্দিনীর কথা। এই নাটকটির মধ্য দিয়ে একটি তিরতিরে বাতাস বয়ে যায়, প্রেমের। ঘটনা নেই, আছে কল্পনা। আছে ঘোর। সম্মোহন। আছে কথার স্রোতে বয়ে চলা।

মূল কথোপকথন কাব্যগ্রন্থে আমরা দেখতে পাই যে শুভঙ্কর আর নন্দিনীর বয়স ধীরে ধীরে বেড়েছে। এই নাটকেও আমরা তাই তরুণ শুভঙ্কর-নন্দিনী ও পরিণতবয়স্ক শুভঙ্কর-নন্দিনীর দেখা পাই। পার্থপ্রতিম রায় ও নিবেদিতা ভট্টাচার্য পরিণতবয়স্ক শুভঙ্কর-নন্দিনীর ভূমিকায় সুন্দর কাজ করেছেন। প্রেমের বাহ্যিক অভিব্যক্তির তলা দিয়ে বয়ে চলা প্রবল গভীর স্রোতকে তাঁরা ব্যক্ত করেছেন অনাড়ষ্ট ভঙ্গিমায়। পার্থপ্রতিমের শুভঙ্করের মধ্যে একটা বিষাদ রয়েছে, একটা হতাশা রয়েছে। নিবেদিতার নন্দিনীর মধ্যে একটা প্রাণবন্ত অথচ কোমল সংবেদনশীলতা রয়েছে। অপর দিকে তরুণ শুভঙ্করের ভূমিকায় রাজু বেরা চঞ্চল, টগবগে এবং যৌবনময়। পাশাপাশি তরুণী নন্দিনীর ভূমিকায় মেরি আচার্য অভিমানী ও আদুরে। এঁরা প্রত্যেকেই পরস্পরের পরিপূরক। এই নাটকের এটিও একটি বিশেষ গুণ। এ ছাড়া কবি পূর্ণেন্দু পত্রীর ভূমিকায় সায়ন্তন মৈত্র সাবলীল। তাঁর চরিত্রে স্বাভাবিক ভাবেই কোনও উচ্চাবচতা নেই, অথচ একটি প্রশান্ত কাব্যময়তা রয়েছে। সেটি সায়ন্তন সুষ্ঠু ভাবেই ফুটিয়ে তুলেছেন।

কথোপকথন নাটকে পার্থপ্রতিম রায়ের মঞ্চ পরিকল্পনা এবং অয়ন ঘোষ ও দেবব্রত মাইতির মঞ্চনির্মাণ রুচিশীল ও ছিমছাম। এই নাটকে গঙ্গার ধারে রাঙা সূর্যাস্তের দৃশ্যটি ভারী সুন্দর। দীপঙ্কর সেনের আলোর কাজ ভাল লেগেছে। এ ছাড়া গোটা নাটকটিকে ধারণ করেছিল পার্থপ্রতিম রায়ের আবহসঙ্গীত। তা নাটকের বহমান স্রোতের মধ্যে মিলেমিশে গিয়েছে। দেবজিৎ পালের রূপসজ্জা যথাযথ।

কথোপকথন নাটকটি হয়তো অনেক রকম ভাবেই দৃশ্যায়িত হতে পারত। কিন্তু নাট্যনির্দেশক পার্থপ্রতিম রায় এই নাটকটিকে পরিকল্পিত ভাবে একটি বিশেষ স্টাইলাইজ়ড রূপ দিতে সক্ষম হয়েছেন, যা এই নাট্য-উপস্থাপনাটিকে কাব্যময় করে তুলেছে।

নাটকটি দীর্ঘ নয়। স্বল্প দৈর্ঘ্যের বলেই তার সৌন্দর্য থেকে গিয়েছে। দীর্ঘ হলে এ নাটক হয়তো ততটাও উপভোগ্য হত না। নাট্যরূপকার নিবেদিতা ভট্টাচার্য ও পরিচালক পার্থপ্রতিম রায়কে এই পরিমিতির জন্যে সাধুবাদ জানাই।

কথোপকথন নাটকটি আশির দশকের কলকাতা থেকে ভেসে আসা ঝিমঝিমে বাতাসের মতো, যা পুরনো সময়ের সৌরভ ছড়িয়ে দেয়। এ নাটকের মধ্যে একটা নির্জনতা আছে। একটা শান্ত সন্ধ্যার ছায়া আছে। একটা হেমন্তকাল আছে।

অনুষ্ঠান

অনুষ্ঠানে দুই শিল্পী।

অনুষ্ঠানে দুই শিল্পী।

  • অ্যাঞ্জেলিনো নামক এক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা কলকাতার প্রবীণ নাগরিকদের সহায়তা প্রদানের জন্য কাজ করে। সম্প্রতি তাদের উদ্যোগে উত্তম মঞ্চে অনুষ্ঠিত হল এক শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের অনুষ্ঠান ‘সঙ্গীত ফর সহযোগ’। শীর্ষস্থানীয় তবলাবাদক পণ্ডিত কুমার বসুর সঙ্গতে মাইহার ঘরানার সুপরিচিত সেতারবাদক পার্থ বসুর বাদন ছিল সেই সন্ধ্যার প্রধান আকর্ষণ। শিল্পীর হেমবেহাগ রাগে শান্ত, সমাহিত আলাপ-জোড় পর্বে ধ্রুপদাঙ্গের বাজ, অতি মন্দ্রসপ্তকে স্বরপ্রয়োগের গাম্ভীর্য এবং ধ্বনিমাধুর্য সৃষ্টি করে গভীরতা। অনুষ্ঠান থেকে সংগৃহীত অর্থের মাধ্যমে শিশুশিক্ষার কাজে ব্রতী উমা গুহ ফাউন্ডেশনের তহবিলে অনুদান দেওয়া হয়।
  • ২০ সেপ্টেম্বর সায়েন্স সিটি অডিটোরিয়ামে অনুষ্ঠিত হল ‘সুচিত্রা মিত্র উৎসব- ২০২৪’। নিবেদনে শ্যামসুন্দর কোং জুয়েলার্স। এ বছর মন্দিরা মুখোপাধ্যায়ের তত্ত্বাবধানে গঠিত হয়েছে সুচিত্রা মিত্র মেমোরিয়াল ট্রাস্ট। এই অনুষ্ঠান তার প্রথম নিবেদন। অনুষ্ঠানে প্রথমে সুচিত্রা মিত্রের স্নেহধন্য ছাত্রছাত্রীরা ও তাঁদের অনুসারী প্রায় শতাধিক কণ্ঠ শ্রদ্ধা জানালেন। উপস্থিত ছিলেন সাবিত্রী দত্ত, সুমিত্রা চট্টোপাধ্যায়, রবীন মুখোপাধ্যায়, সৌমিত্র কর প্রমুখ। এর পর পূরবীর নিবেদন ছিল রবীন্দ্রনাথের গল্পগুচ্ছের ‘একটি আষাঢ়ে গল্প’ ও ‘তাসের দেশ’ অবলম্বনে একটি রূপকনাট্য। পরিচালনা ও পরিকল্পনায় মন্দিরা মুখোপাধ্যায়, গ্রন্থনায় অশোক মুখোপাধ্যায়। আবহসঙ্গীত পরিচালনায় সুব্রত মুখোপাধ্যায়। তালবাদ্যে পণ্ডিত বিপ্লব মণ্ডল। পাঠ ও সংলাপে সতীনাথ মুখোপাধ্যায়, শান্তনু গঙ্গোপাধ্যায়, সুব্রত মুখোপাধ্যায় ও পূরবীর শিল্পীরা। সঙ্গীতে মন্দিরা, ড. সুরজিৎ রায়, প্রিয়ম মুখোপাধ্যায়, অর্ণবনীল মুখোপাধ্যায় ও পূরবীর শিল্পীরা। নৃত্যে ড. শুভাশিস ভট্টাচার্য, সুস্মিতা ভট্টাচার্য, ড. সুমিত বসু, রুদ্রাভ নিয়োগী, দ্রাবিন চট্টোপাধ্যায়, সুলগ্না ভট্টাচার্য প্রমুখ। এ দিনের সর্বশেষ নিবেদন ছিল রবীন্দ্রনাথের স্বদেশের গান। সমগ্র অনুষ্ঠান পরিচালনা ও পরিকল্পনায় ছিলেন মন্দিরা।

অন্য বিষয়গুলি:

Tapan Theatre
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy