বর্ণধারা: ‘ইমপ্রেশন’ প্রদর্শনীর কয়েকটি কাজ। সম্প্রতি অ্যাকাডেমি অব ফাইন আর্টসে
জীবনবোধের সঙ্গে প্রকৃতির সুন্দরতা এবং সমাজ সংস্কারে অন্যায়ের যে বীভৎসতা— এগুলিকে তাঁরা নাকি তাঁদের কৃষ্টির মধ্যে প্রকাশ করার উদ্দেশ্য নিয়েছিলেন। কোথায়? কোন কৃষ্টির মধ্যে? দলীয় সৃষ্টির মধ্যেই বা এই অঙ্গীকার প্রতিফলিত হল কোথায়? ছ’জন শিল্পীর যৌথ প্রদর্শনীর পেন্টিং, ভাস্কর্য মিলিয়ে ৬০টি কাজের (একজনেরই ২৭টি ছোট কাজ) মধ্যে বিচ্ছিন্ন ভাবে কমবেশি প্রকৃতির সৌন্দর্য লক্ষ করা গেলেও সমাজ-সংসারের অন্যায়ের বীভৎসতা! কোনও কাজেই তো দেখা গেল না তার সেই বীভৎস রূপকে! রূপক হিসেবে যন্ত্রণা ও দৈন্যের অন্তঃস্তলের দরজা খুলে দেখা অনুভূতিকে নিজস্ব নির্মাণের মধ্যে এক ভাবে প্রকাশ করা— সে তো দ্বিমাত্রিক কিংবা ত্রিমাত্রিক মাধ্যমে উপস্থাপনার গুণে আসতেই পারে। এখানেও তার অন্যথা ঘটেনি। আক্ষরিক অর্থে সৃষ্টির মধ্যে তা অনুভূতই হয় না। অ্যাকাডেমি অব ফাইন আর্টসে ইমপ্রেশন, সমকালীন শিল্পী গোষ্ঠীর প্রদর্শনীটি সম্প্রতি শেষ হল।
পরেশ সাহা বড় ক্যানভাসে প্রস্ফুটিত পদ্মসম শালুক বা ওই রকম বেশ কিছু ফুল এঁকেছেন। সিরিজ়টির নাম ‘ওয়ান্টেড’। শৈশবের স্মৃতিতে সেই সব পুষ্পগুচ্ছের কথাই বারবার মনে পড়ছে, হারানো নস্ট্যালজিয়াকেই দেখিয়েছেন তিনি এই ওয়াটারলিলি হিসেবে। জল নেই, জলাশয় চুরি করে মাল্টিস্টোরিড— কুসুমাস্তীর্ণ আবহে তাই কোথাও যেন একটি যন্ত্রণার রক্তক্ষরণের চিহ্ন হিসেবে ফুলের উপরে নেমে আসা বা গড়িয়ে পড়া টকটকে লাল।
অন্য কাজে দু’টি বাদামি হাত প্রসারিত দশটি আঙুল-সহ, যেন ক্রিমসন লোটাসকে আগলে রাখতে চাইছে। স্পাইরালের প্রতীক বিচ্ছিন্ন ভাবে ব্যবহৃত। তবে চাবি ঝোলানো একটি হাত হঠাৎ উত্তোলিত উপরের দিকে— কিছুটা বিসদৃশ! রচনার অ্যারেঞ্জমেন্ট ও অন্য অনুষঙ্গের কথা ভেবে মোনোটোনিকে এ বার ভাঙার সময় এসেছে। এখানে পাপড়ির তুলতুলে কমনীয় রূপের বদলে কাঠিন্যই প্রধান।
রূপকথার আশ্চর্য পৃথিবীর রঙিন নকশিকাঁথা পল্টু ঘোষের অন্য প্রদর্শনীর কাজে পূর্বেই উল্লিখিত। তাঁর একই রকম ২৭টি অ্যাক্রিলিক এই প্রদর্শনীর শ্রেষ্ঠ।
বেশ বড় কালো চাটুর উপরে ফোলানো কাঠের রুটির মাঝখানের গর্তে প্রায় ঝাঁপ দিচ্ছে এক ব্রোঞ্জের ছোট্ট মানুষ। উলঙ্গ। কী বোঝাতে চেয়েছেন পার্থ দে তাঁর ভাস্কর্যে? খিদের জ্বালা? হয়তো তাই। কাঠের বারকোশে অন্য কাজটিতে লোভনীয় একগুচ্ছ রুটির উপরে একটি চেয়ার, নাম ‘কর্পোরেট’। কাঠ ও ধাতুনির্মিত প্রতীকী ভাস্কর্য, বক্তব্য স্পষ্ট নয়। তুলনায় তাঁর কালো পাথর চাপা অবিকল চামড়ার ব্যাগের বিভ্রম বা খোলা ব্যাগের মধ্যে গুচ্ছ মানুষ কাজগুলি বেশ ভাল। ব্যাগের টেক্সচার, ফোল্ড, অবস্থান চমৎকার। শোষণ ও শ্রেণিবৈষম্যের বিরুদ্ধে তাঁর নিজস্ব প্রয়াস কিন্তু উপস্থাপনার দিক থেকে আর একটু প্রত্যক্ষ বা জোরালো হওয়ার দরকার ছিল। কাজ হিসেবে যদিও সার্থক।
কাঠের ঘোড়াকে প্রাধান্য দিতে গিয়ে প্রায় একটি সিরিজ় করেছেন গৌর চৌধুরী। ক্যানভাসের উপরে অ্যাক্রিলিক। তাঁর কাজে পেন্টিং কোয়ালিটি প্রত্যক্ষ করা গেলেও সব ক্ষেত্রে পটভূমি সামলাতে পারেননি। রূপবন্ধের নির্বাচন বা প্রয়োজনীয় শর্ত পূরণের ভাবনা ঠিক ভাবে কাজ করেনি। আলোকে যেখানে প্রাধান্য দেওয়ার, হঠাৎ সমতলীয় অন্ধকারে রেখে জায়গাটিকে বিচ্ছিন্ন করেছেন। আপাত অনুজ্জ্বলতার মধ্যে আবার আলোকে কোথাও বেশ ধরেছেন। পাঁচিলে শোয়া মেয়েটির ড্রয়িংয়ে সমুন্নত গুণের অভাব। অনেক জায়গায় তাঁর কাজে যথেষ্ট সুযোগ ছিল আলো-অন্ধকারের একটি নাটকীয় আবহ তৈরি করার। তা কিন্তু একেবারেই বোঝেননি। গল্পকে বৈচিত্র দিতে গিয়ে কোথাও কোথাও বড্ড কাঠিন্য এসে গিয়েছে। অল্প হলেও স্টাইল এবং টেকনিকে রোম্যান্টিকতা অনুভূত হয়। ট্রিটমেন্ট ভাল।
অসীম পালের ভাস্কর্যে গভীরতা নেই। কিছু জায়গা বেশ দুর্বল। যেমন কাঠের মোচার উপরে হঠাৎ একটি পাখি। লম্বা কাঠের বোতলকে ঘিরে কিছু মানুষ, আবার মাথার উপরে কিছু মানুষ। ব্রোঞ্জের। কিসের আনন্দ, কিসের বিষাদ? বৃহৎ এক কাঠের শিঙাড়াকে ঘিরে তিনটি চেয়ার! একটি কালো লেডিজ় ব্যাগের উপরে কয়েকটি অর্থহীন ইংরেজি-বাংলা ধাতুর অক্ষর। চাইল্ড এডুকেশনের সঙ্গে এই কাজের কী সম্পর্ক? সবই লালচে মেহগনি কাঠ। কী বলতে বা করতে চেয়েছেন, স্পষ্ট নয়।
দুর্বল, অতি সাধারণ, শিশুসুলভ কাজ করেছেন শতভিষা হাজরা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy