মুঠোফোনে ১৩, ১৪ ও ১৫ নভেম্বর আয়োজিত হয়েছিল তিন দিনের নৃত্যোৎসব-নৃত্যপ্রবাহ। উদ্যোক্তা বৈশালী কলাকেন্দ্র (নয়ডা) ও জ্যোতি শ্রীবাস্তব। অনুষ্ঠানের শেষ দিন নৃত্য পরিবেশন করেন নৃত্যগুরু বাণী রায় (ওড়িশি), জয়াপ্রভা মেনন (মোহিনীআট্টম), পদ্মজা সুরেশ (ভরতনাট্যম) ও অলকনন্দা (কত্থক)। নৃত্যে নিবেদিতপ্রাণা এই গুরু চতুষ্টয় উৎসবের শেষ দিনে তাঁদের নৃত্য নিবেদন করেন। প্রথম দু’দিন তাঁদের শিষ্য-শিষ্যাদের নৃত্য প্রদর্শিত হয়, যাঁরা কুড়ি বছরেরও অধিককাল ধরে নৃত্যচর্চা করে চলেছেন। গুরু-শিষ্য পরম্পরার যথার্থ নৃত্যপ্রবাহ মুঠোফোনের দর্শকের আগ্রহ জাগিয়ে রাখতে সক্ষম হয়েছিল এই তিন দিন।
নৃত্যপ্রবাহের প্রথম দিন ১৩ নভেম্বর আঙ্কম কৃষ্ণন নিবেদন করেন মোহিনীআট্টম। নৃত্যগুরু জয়াপ্রভা মেননের সুযোগ্য শিষ্যা আঙ্কম কৃষ্ণনের উপস্থাপনা জয়দেবের ‘চন্দনচর্চিত নীলকলেবর পীতবসন বনমালী’ সঙ্গীতের সঙ্গে দক্ষিণী নৃত্য দর্শনীয় হয়েছিল। গানের সঙ্গেই ঘুঙুরের শব্দ রেকর্ডিং করা ছিল। পোশাক যথাযথ। বাড়িতে রেকর্ডিং করা হলেও আলো যথেষ্ট পরিমাণে থাকায় এবং ক্যামেরা জ়োনের মধ্যে নৃত্য পরিবেশন করায় অনুষ্ঠানটি উপভোগ্য হয়েছিল।
পরবর্তী শিল্পী ইশা দাস ওড়িশি নৃত্য পরিবেশন করেন। তিনি জ্যোতি শ্রীবাস্তবের শিষ্যা। অনুষ্ঠানের শুরুতে ইশা-সহ আরও দুই নৃত্যশিল্পীকে নিয়ে গুরু জ্যোতি শ্রীবাস্তব সভাপ্রণাম করেন। ইশার নিবেদন ছিল জয়দেবের অষ্টপদী। সুন্দর উপস্থাপনা। পোশাক, মঞ্চসজ্জা ও আলোকসম্পাতও যথাযথ। এর পর জ্যোতি শ্রীবাস্তবের আর এক শিষ্যা ওড়িশি নৃত্য পরিবেশন করেন। শিল্পী শৈলী চট্টোপাধ্যায়ের নিবেদন ছিল কলাবতী পল্লবী। রাগ কলাবতী। উপভোগ্য অনুষ্ঠান, তবে গানের সঙ্গে রেকর্ড করা ঘুঙুরের শব্দ অনেক সময়েই পায়ের সঙ্গে মেলেনি। পোশাক, মঞ্চসজ্জা ও আলোকসম্পাত যথাযথ।
১৩ তারিখের শেষ অনুষ্ঠান ছিল গুরু পদ্মজা সুরেশের শিষ্যাদ্বয়ের ভরতনাট্যম পরিবেশনা। অপর্ণা দোদ্দামালুর ও বৈশালী রামচন্দ্রন উপস্থাপনা করেন বসন্ত ঋতু— পদ্মজা সুরেশের নৃত্য পরিকল্পনায় হিন্দি কবিতার সঙ্গে দক্ষিণী নৃত্যের নিবেদন ছিল আকর্ষক। পায়ে ঘুঙুর থাকা সত্ত্বেও ঘুঙুরের শব্দ শোনা না যাওয়ায় বিসদৃশ লাগে।
১৪ নভেম্বর নৃত্যপ্রবাহের অনুষ্ঠান শুরু হয় নম্রতা মেহতার ওড়িশি নৃত্য দিয়ে। দক্ষতা মাসরুওয়ালার শিষ্যা নম্রতা। তিনি কবি শ্রীবনমালীর রচনাকে নৃত্যের মাধ্যমে উপস্থাপিত করেন। নৃত্য পরিকল্পনা প্রয়াত নৃত্যগুরু কেলুচরণ মহাপাত্রের। শিরীষ নামিবিয়ার ক্যামেরা ও এডিটিংয়ের কাজ অনুষ্ঠানটিকে আরও আকর্ষক করে তোলে। পরবর্তী নিবেদন ছিল নৃত্যগুরু জ্যোতি শ্রীবাস্তবের শিষ্য রাহুল ভরসেনের ওড়িশি নৃত্য। শ্রীনাথ রাউতের নৃত্য পরিকল্পনায় রাহুল পরিবেশিত অষ্টশম্ভু— শিবের অষ্টরূপ (মদনভস্ম, দক্ষযজ্ঞ, ত্রিপুরবিজয়, সমুদ্রমন্থন, কিরীটরাজ, গৌরীবিরহ, চন্দ্রবিভুক্ষা, অর্ধনারীশ্বর) চমৎকার উপস্থাপনা। এই নৃত্যটি ছিল দেবপ্রসাদ দাস ঘরানার নৃত্যশৈলী আধারিত।
এর পরে ছিলেন নৃত্যগুরু অলকনন্দার শিষ্যাত্রয় অদিতি বহড়, অর্চি সাক্সেনা ও নন্দিনী খট্টর। কত্থক নৃত্যশৈলীতে তাঁদের প্রথম পরিবেশনা আদিম ও দ্বিতীয় পরিবেশনা হোলি। তিন জনেই দক্ষ শিল্পী। সুন্দর নৃত্য পরিকল্পনা। পোশাক, মঞ্চ, আলো সবই সুরুচিকর। ১৫ নভেম্বরের নৃত্যশিল্পীরা প্রথিতযশা নৃত্যগুরু। প্রথম অনুষ্ঠান ছিল আমেরিকা প্রবাসী গুরু বাণী রায়ের ওড়িশি নৃত্য। বাণী নিউ ইয়র্কে ‘ত্রিনয়ন’ নৃত্যশিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতা ও পরিচালক। সে দিন তিনি নিবেদন করেন চক্রবাক পল্লবী। নৃত্য পরিকল্পনা দুর্গাচরণ মহাপাত্র, সঙ্গীত পরিকল্পনা নির্মলকুমার মহাপাত্র। তাল সংযোজনা নিরঞ্জন মহাপাত্র। বাণী ঘরোয়া ভাবেই নৃত্য প্রদর্শন করেন— কোনও মঞ্চসজ্জা বা আলোকসম্পাত ছাড়াই। তবে নৃত্যপটিয়সী এই শিল্পীর উপস্থাপনা উপভোগ্য হয়েছিল।
পরবর্তী শিল্পী গুরু জয়াপ্রভা মেনন। দিল্লিবাসী নৃত্যশিল্পী জয়াপ্রভা মোহিনীআট্টম পরিবেশন করেন। জয়াপ্রভাও ঘরোয়া ভাবেই নৃত্যানুষ্ঠান উপস্থাপিত করেন। তাঁর পায়ে ঘুঙুরও ছিল না। শিল্পী নৃত্য উপস্থাপনায় আর একটু যত্নবান হলে ভাল হত। নৃত্য পরিকল্পনাও তাঁরই।
পরের শিল্পী বেঙ্গালুরু নিবাসী নৃত্যগুরু পদ্মজা সুরেশ। পদ্মজা ভরতনাট্যম পরিবেশন করেন। অভিজ্ঞ এই নৃত্যগুরু প্রথমে কামাক্ষী কৌতুভম এবং পরে শ্রীমধুস্বামী দীক্ষিত কৃত কামাক্ষী পার্বতী-একেশ্বর শিব নিবেদন করেন। ভারী সুন্দর উপস্থাপনা।
শেষ দিনের শেষ অনুষ্ঠান ছিল কত্থক নৃত্যের। দিল্লির শিল্পী নৃত্যগুরু অলকনন্দা কত্থক নৃত্য পরিবেশন করেন। প্রথম নিবেদন ছিল কালিকাবৃন্দাদীন মহারাজ কৃত হোলিনৃত্যের উপস্থাপনা ‘ম্যায় তো খেলুঙ্গি হোলি’। চমৎকার উপস্থাপনা। পরে সুফি সঙ্গীত ‘ছোড় তিলক’-এর সঙ্গে নৃত্য নির্মাণ। সুন্দর উপস্থাপনা। তবে ঘুঙুর না থাকায় কিছুটা রসভঙ্গ হয়েছে। এই প্রসঙ্গে বলি, ভারতীয় শাস্ত্রীয় নৃত্যে নূপুরশিঞ্জিত পদসঞ্চারের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা আছে। ঘুঙুর না থাকলে বেশির ভাগ সময়েই নাচের প্রদর্শন আকর্ষণ হারায়। অনেক সময়ে পায়ে ঘুঙুর থাকা সত্ত্বেও মাইকের অভাবে ঘুঙুরের শব্দ শোনা যায় না। আবার রেকর্ডেড মিউজ়িকের সঙ্গে ঘুঙুরের শব্দও অনেক সময়ে রেকর্ড করা হয়ে থাকে। সে ক্ষেত্রে শিল্পীকে রেকর্ডেড ঘুঙুরের সঙ্গে পা মেলানোর সময়ে যথেষ্ট সচেতন হওয়া দরকার। মঞ্চে ঘুঙুরের শব্দের সঙ্গে পদচারণা না মিললে রসভঙ্গ হয়। নৃত্যশিল্পীরা এ বিষয়ে আশা করি খেয়াল রাখবেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy