Advertisement
২৬ নভেম্বর ২০২৪

পরিণত গানের ‘একুশে পা’

মনোময় ভট্টাচার্য একক আসরে আইসিসিআর-এ।লিখছেন বিপ্লবকুমার ঘোষ ও বারীন মজুমদার।২০০৫ এ যে গানটা বোধ দিয়ে গেয়েছিলাম এগারো বছর পরে সেই বোধটাই আরও পরিণত হয়েছে বলে গানটা আরও ভাল লাগল’—এ কথাটা মনোময় ভট্টাচার্যের। অপর আর এক শিল্পী জয়তী চক্রবর্তীর কথার উত্তরে। পরিণত শিল্পীর আত্মদীপ্ত জবাব।

শেষ আপডেট: ০৮ অক্টোবর ২০১৬ ০০:০০
Share: Save:

২০০৫ এ যে গানটা বোধ দিয়ে গেয়েছিলাম এগারো বছর পরে সেই বোধটাই আরও পরিণত হয়েছে বলে গানটা আরও ভাল লাগল’—এ কথাটা মনোময় ভট্টাচার্যের। অপর আর এক শিল্পী জয়তী চক্রবর্তীর কথার উত্তরে। পরিণত শিল্পীর আত্মদীপ্ত জবাব। আইসিসিআর-এ মনোময়ের ‘একুশে পা’ সঙ্গীতানুষ্ঠানে এ রকমই নানা কথা গল্পের সঙ্গে জমে উঠল তাঁর দ্বিতীয় একক গানের আসর। আশা অডিয়োর তরফে আয়োজিত হয়েছিল এই সন্ধ্যাটি। এ দিন একটি বিরল ঘটনা ঘটেছে। আজকাল এক শিল্পীর অনুষ্ঠান শুনতে সচারাচর অন্য শিল্পীরা উপস্থিত থাকেন না। কিন্তু এ দিন তাঁর সমসাময়িক ও তার কিছু আগের অনেক শিল্পী সুরকারেরা গান শুনতে উপস্থিত হয়েছিলেন ও তাঁদের পছন্দ মতো গানের অনুরোধও করতে থাকেন। যেমন হাজির ছিলেন রূপঙ্কর, জয়তী, রাঘব চট্টোপাধ্যায়, গৌতম ঘোষাল, শম্পা কুণ্ডু, শুভঙ্কর, সৌম্য বসু প্রমুখ। ইন্দ্রনীল সেন শুধু হাজির ছিলেন না, তাঁর স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গিমায় হাসি, গল্পে ঠাট্টায় যতটুকু মঞ্চে থাকলেন কথা বলে মাতিয়ে দিলেন। উপস্থিত ছিলেন চিত্রতারকা রচনা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর মুখে মনোময়ের গানের ও রূপের প্রশস্তি শুনে মনে হল মনোময়ের মুখে একটু লজ্জার আভা ছড়িয়ে গেল। প্রথম পর্বটি চমৎকার সঞ্চালনা করলেন রাজা, যিনি নিজে ‘আর জে’ হয়েও থামতে জানেন। কিন্তু দ্বিতীয় পর্বে মনোময় যেখানে নতুন বাংল গান বা তাঁর নিজস্ব গান গাইলেন সেখানে সঙ্গে ছিলেন শর্মিষ্ঠা গোস্বামী। যিনি অতিরিক্ত কথার ভারে গানকে বাধাপ্রাপ্ত করেছেন। প্রসঙ্গত জানিয়ে রাখি গান কিন্তু জনপ্রিয় হয় শ্রোতাদের বিচারে—তাঁর কথাবার্তা ভীষণ ‘আমি’তে ভরা।

সন্ধ্যাটি শুরু হয়েছিল ‘জগতে আনন্দযজ্ঞে আমার নিয়ন্ত্রণ’ ও ‘আজি দক্ষিণ পবনে’ রবীন্দ্রসঙ্গীত জুটি দিয়ে। তার পরেই হল অতিথি বরণ, ভাষণ ও শিল্পীর নতুন রবীন্দ্রসঙ্গীতের সিডি ‘তৃষ্ণা’র আনুষ্ঠানিক প্রকাশ। মনোময়ের গলাটি বড় স্বচ্ছ ও আবেদনময়। তদুপরি মাত্রাভাগ, আবেগ, ছন্দ ইত্যাদি টেকনিকে কুশলী। এ দিনের পরিবেশিত গানগুলি যেন এ সবকেও ছাপিয়ে গেল। গানের বিস্তারিত আলোচনার আগে একটা কথা অবশ্যই বলতে হবে এই সন্ধ্যায় পরিপূর্ণ প্রেক্ষাগৃহের শ্রোতাদের সমস্ত প্রত্যাশা একেবারে কানায় কানায় পূর্ণ করে দিলেন। আরও একটি বিশেষত্ব ছিল এ দিন- বাবার একক গানের আসরে তাঁর কিশোর পুত্র আকাশের মঞ্চাভিষেক হল এবং গানের মাধ্যমে জানিয়ে দিল ভবিষ্যতের শ্রোতাদেরকে তার দিকে চেয়ে থাকতে হবে। মনোময় একটা কথা বললেন যে ভালগানের প্রচার সংবাদমাধ্যম বা মিডিয়া কম করে। এখন গানের জগতে যে ভাঁটা সে তো শিল্পীরাও জানেন তাইতো শিল্পীদেরকে বারেবারেই ‘ফিজিকাল সেল’-এর কথা বলতে হয়। তাই সংবাদমাধ্যমকে দোষারোপ করা যায় না। সে যাই হোক তাঁর এ দিনের গান নির্বাচন কিন্তু অসাধারণ। বিভিন্ন সুরকারদের যে গানগুলি তিনি শোনালেন সেগুলি সুরে তালে ভিন্ন শুধুই নয়, আবেগের দিক দিয়েও মন কাড়ে।

প্রথমেই তাঁর গুরু আচার্য জয়ন্ত বসুর গানটি ‘আলোছায়ার খেলা নাকি অন্ধকার’। সুর, তাল, লয়, স্বর বিন্যাসে গানটিকে সোজা দাঁড় করিয়ে দিলেন। গায়ন ভঙ্গিটিও ছিল চমৎকার। আবার অপর একটি গান ‘চোখের কোণে ওই তো জমে’তে সুরের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে ইন্টারলিউতে বেহালার যে অপূর্ব ব্যবহার তা মনকে গভীর ভাবে টানে। ইন্দ্রদীপ দাশগুপ্তের সুরে ‘এসো এসো দেখো’, ‘আমার গান’ (সুর রূপঙ্কর) ‘কোন ছায়ার পথে’ (সুর গৌতম ঘোষাল) ‘আয় রে যায় রে শ্রাবণ, ‘এক ঝড়ো হাওয়া এল’ প্রত্যেকটি গানই মেজাজে আলাদা ও গায়নে বৈশিষ্ট্যময়। ইমনকল্যাণ রাগাশ্রিত নজরুলগীতি ‘মনে পড়ে আজ সে কোন জনমে’ ও ভজন রাধা তুলসী প্রেমপিয়াসী তাঁর আরও দুটি উল্লেখযোগ্য নিবেদন। শুরুর দিন থেকেই মনোময়ের ইচ্ছে ছিল নতুন গান করার এবং সে কাজে যে তিনি কতটা আন্তরিক এই সন্ধ্যায় তা জানিয়ে গেলেন।

ছবি: উৎপল সরকার

এক সন্ধ্যায় একা

উত্তম মঞ্চে শম্পা কুণ্ডু। লিখছেন বারীন মজুমদার

উত্তম মঞ্চে শম্পা কুণ্ডুর সঙ্গীত জীবনের দুই দশক পূর্ণ করা এবং মেঘমল্লারের রজতজয়ন্তী বর্ষ উপলক্ষে শম্পা কুণ্ডুর একক অনুষ্ঠান ‘এক সন্ধ্যায় একা শম্পা’। শিল্পীর এটিই প্রথম একক। সঙ্গীতানুষ্ঠানের আগে সাবেরি ডান্স অ্যাকাডেমির ‘মেঘবর্ষণ’ শীর্ষক দীর্ঘ নৃত্যগীতি আলেখ্যটির কী প্রয়োজন ছিল? বোঝা গেল না। ও রকম অর্থহীন নাচগানের অনুষ্ঠান সংযুক্ত করা কোনও ভাবেই গ্রহণ করা যায় না।

শম্পা শুরু করলেন রবীন্দ্রসঙ্গীত ‘দয়া দিয়ে হবে গো মোর’ গান শুনিয়ে। এর পরেই শ্রীকান্ত আচার্য প্রাককথনে শম্পার গানের বিশেষত্ব নিয়ে দু-চার কথা বললেন। শিল্পীর সঙ্গে কথায় ছিলেন ও তাঁর গানের তথ্যগুলি দিচ্ছিলেন শর্মিষ্ঠা গোস্বামী। শম্পার শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের শিক্ষা তাঁর বাবা ও মায়ের কাছে। সুতরাং শৈশব থেকেই গান তাঁর নেশা। আধুনিক ছাড়াও নজরুলগীতি শিল্পীর কণ্ঠে বিশেষ মর্যাদা পায়। সেই নজরুলগীতিই তিনি পরবর্তী গান হিসেবে নির্বাচন করেছিলেন উদাসী ভৈরবী রাগে ‘সতীহারা উদাসী ভৈরবী কাঁদে’। অপূর্ব নিবেদন। তিনি গেয়ে চললেন বর্তমান সময়ের বিভিন্ন সুরকারের গান। জটিলেশ্বর মুখোপাধ্যায়ের কথায় ও সুরে ‘আমি যে অনুরাগের কারণে বৈরাগী’ বা ‘আবীর আরো আবীর মাখাও শ্যাম’ দুটি গানই কথায় ও সুরের চলনে অসাধারণ। প্রথম গানটির কথায় এক জায়গায় আছে ‘ঘর পাওয়া হল না তাই বৈরাগী’ আর দ্বিতীয় গানটির সঞ্চারীতে পাচ্ছি— ‘লাঞ্ছনা সে যে ফুলসাজ মোর – গঞ্জনায় সে যে অলংকার’ — এমনতর কথা শম্পা যে অনুভূতিতে উচ্চারণ করেন, তারই কারণে গান দুটি এ দিনের শ্রেষ্ঠ নিবেদন হয়ে ওঠে। তাঁর কণ্ঠের আর একটি আবেদনময় নিবেদন অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়ের সুরে ‘জানি তুমি রবিঠাকুর না – তা বলে কৃষ্ণকলি বলে আমায় ডাকবে না’। শ্রীকান্ত আচার্যর কথায় ও সুরে ‘এই মন ভিজে যাওয়া স্বপ্নে’ তিনি বিভোর হয়ে গেয়েছেন। তবে দেবাশিস গঙ্গোপাধ্যায়, সঞ্জয় বণিক, দীপংকর ভাস্করদের সুরারোপিত গানগুলিতে তেমন বিশেষত্ব খুঁজে পাওয়া যায় না। শম্পা খুব সুরে গান করেন তাই তাঁর গায়কির কারণে গানগুলি উতরে যায়।

রবি ও কবির গানে

কসবা সঞ্চারীর আয়োজনে রবীন্দ্র-নজরুল অনুষ্ঠানে শ্রীকান্ত আচার্য শোনালেন ‘রাত্রি এসে যেথায় মেশে’ ও ‘বড় আশা করে এসেছি গো’। রাঘব চট্টোপাধ্যায় সুন্দর গাইলেন ‘রাখো রাখো হে জীবন’। অনুষ্ঠানে রূপঙ্কর অপুর্ব গাইলেন ‘তুমি রবে নীরবে’।

এ দিন দুটি করে নজরুলগীতি শোনালেন রামানুজ দাশগুপ্ত, পরিমল ভট্টাচার্য, সুস্মিতা গোস্বামী, শম্পা কুন্ডু। অনুশীলা বসু গাইলেন ‘প্রজাপতি কোথায় পেলি’, সুচরিতা বন্দ্যোপাধ্যায় শোনালেন ‘দাঁড়িয়ে আছো তুমি’। অনুষ্ঠানের শুরুতেই ছিল সম্মেলক গানে সংস্থার শিশু-শিল্পীরা। ‘তুমি যে চেয়ে আছো’, ‘খেলিছে জলদেবী’ দুটি গান। যন্ত্রানুষঙ্গে ছিলেন বিপ্লব মণ্ডল, প্রদ্যুৎ গঙ্গোপাধ্যায়, অমিতাভ চক্রবর্তী, অয়ন বন্দ্যোপাধ্যায়।

ভক্তিগানে

সম্প্রতি গোলপার্ক রামকৃষ্ণ মিশন ইন্সটিটিউট অব কালচার আয়োজিত ভক্তিগীতির সন্ধ্যায় গাইলেন সুদেব চট্টোপাধ্যায়। স্তোত্রপাঠ দিয়ে শুরু। রামকুমার চট্টোপাধ্যায়ের এই শিষ্য ১৭টি গান পরিবেশন করলেন। পরিশীলিত সুরেলা চর্চিত কণ্ঠে শিল্পীর গাওয়া প্রতিটি গানই এক অন্য মাত্রা আনে।

চিরদিনের গান

দমদম ছন্দকের আয়োজনে শিশিরমঞ্চে অনুষ্ঠিত হল ‘চিরদিনের গান’ শীর্ষক অনুষ্ঠান। গাইলেন নবীন ও প্রবীণ শিল্পীরা। দ্বিজেন মুখোপাধ্যায়ের গান অনুষ্ঠানে অন্য মাত্রা এনে দেয়। সুধীন সরকার গাইলেন বিভিন্ন দশকের গান।

তাঁর গাওয়া ‘পাইনের ছায়ামাখা’ বা ‘কত না সোহাগে’ মনে করিয়ে দিল স্বর্ণযুগের কথা। বনশ্রী সেনগুপ্ত গাইলেন ‘হীরে ফেলে কাঁচ’। যথারীতি ভাল। এ দিনের সন্ধ্যায় নজর কেড়েছেন রাজা রায়। গাইলেন পাঁচটি গান। তাঁর নিজের বেসিক গান ‘যা ফিরে যা’ অনবদ্য। এ ছাড়াও ‘ধরো কোন এক শ্বেতপাথরের প্রাসাদে’ বা ‘রঙ্গিনী কত মন’ ও ‘এ যেন অজানা এক পথ’ মন্ত্রমুগ্ধ করে শ্রোতাদের।

আবৃত্তিতে কাকলি ঘোষালের কণ্ঠে সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় ও তসলিমা নাসরিনের কবিতাও মন্দ নয়। সুছন্দা ঘোষ গাইলেন ‘সখী ভাবনা কাহারে বলে’। পাওয়া গেল প্রাণের স্পর্শ। দীপশ্রী সিংহর ‘সবুজ পাহাড় ডাকে’ গানটিতেও প্রকৃতির হাতছানি। অন্যান্য শিল্পীদের মধ্যে ছিলেন উপাসক ঘোষাল, অনিন্দিতা গঙ্গোপাধ্যায়, শুক্লা বিশ্বাস, সাহাবুদ্দিন, প্রলয় সেনগুপ্ত প্রমুখ।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy