Advertisement
২৬ নভেম্বর ২০২৪
আইসিসিআর-এ নৃত্যানুষ্ঠান ‘মাতৃশক্তি’

বাজলো তোমার আলোর বেণু

সম্প্রতি ভারতনাট্যম শিল্পী ঝিনুক মুখোপাধ্যায় সিংহ’র পরিচালনায় আইসিসিআর-এ অনুষ্ঠিত হল নৃত্যানুষ্ঠান ‘মাতৃশক্তি’। যেখানে শিল্পী তুলে ধরেছেন মাতৃত্বের চিরন্তন রূপ ও বিশেষ এক দিককে।

শেষ আপডেট: ০৩ ডিসেম্বর ২০১৬ ০০:০০
Share: Save:

সম্প্রতি ভারতনাট্যম শিল্পী ঝিনুক মুখোপাধ্যায় সিংহ’র পরিচালনায় আইসিসিআর-এ অনুষ্ঠিত হল নৃত্যানুষ্ঠান ‘মাতৃশক্তি’। যেখানে শিল্পী তুলে ধরেছেন মাতৃত্বের চিরন্তন রূপ ও বিশেষ এক দিককে। নৃত্য পরিবেশনের মাধ্যমে সেই ভাবমূর্তি ফুটিয়ে তুলতে ঝিনুক ব্যবহার করেছেন সাতটি মন ছুঁয়ে যাওয়া সঙ্গীতও। পরিবেশনে ছিলেন অজয় চক্রবর্তী, ইন্দ্রাণী সেন, শ্রীকান্ত আচার্য, জয়তী চক্রবর্তী এবং লোপামুদ্রা মিত্র। এই নৃত্যানুষ্ঠানের সঙ্গীত পরিচালনায় ছিলেন শুভেন চট্টোপাধ্যায় ও দেবাশিস সাহা। ভাষ্যে শুভদীপ চক্রবর্তী এবং সুজাতা খাস্তগীর।

‘জাগো জাগো, জাগো মা জননী, জাগো’ মাতৃবন্দনা দিয়ে নৃত্যানুষ্ঠানের সূচনা হয়। ‘বাংলাদেশের হৃদয়’ ও ‘আনন্দধারা বহিছে ভুবনে’ — এই দুটি গান সহযোগে নৃত্যপরিবেশনে মাতৃ-হৃদয়ের মায়া মমতার মহিমা সুন্দরভাবে ফুটে ওঠে। এ দিনের অনুষ্ঠানে বিশেষ দৃষ্টি আকর্ষণ করে ‘জয়োত্তম দেবী’ এবং ‘বাজলো তোমার আলোর বেণু’ গানের সঙ্গে ঝিনুকের একক নৃত্য পরিবেশনা। যা দেবী চণ্ডিকা রূপের জয়গানে মুখরিত, পাশাপাশি দেবীর মৃন্ময়ী রূপের স্তুতি জপে মগ্ন। ‘আয়ুর্দেহী’-তে প্রকাশিত মাতৃত্বের মূল ভাবনা। এ দিনের অনুষ্ঠানের শেষ নিবেদন ছিল ‘ভবানী দয়ানী’। যে পরিবেশনে মায়ের সংহারকারিণী রুদ্র রূপটি তুলে ধরা হয়। এছাড়াও এ দিন অংশগ্রহণে ছিলেন সাউথ কলকাতা নৃত্যাঙ্গনের ছাত্রবৃন্দ। নৃত্যশিল্পীরা ছিলেন পিঙ্কি গুছাইত, পায়েল নন্দী, অর্পিতা চক্রবর্তী, দেবাঞ্জন কর, রোশনী বন্দ্যোপাধ্যায়, টিয়া দাস ও দেবাঙ্গনা মল্লিক।

আবেগের মাঝদরিয়ায়

রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা বিভাগের প্রাক্তনীদের নিয়ে গঠিত দল মাঝদরিয়া। সম্প্রতি এদেরই অনুষ্ঠানের শুরুতেই ছিল আগমনী গান ‘বাজে ও আগমনী গান’। গানে ছিলেন অনিন্দ্য বন্দ্যোপাধ্যায়, রাজু দাস, জয়দীপ রায়, মহিম চট্টোপাধ্যায়। মৌসুমী ঘোষ, সুমিত্রা চৌধুরী, সুবর্ণা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রমুখ। এদের একক বা সম্মেলক গানে ফিরে এসেছে কখনও লোকায়ত সুরে, কখনও বা উচ্চাঙ্গ সঙ্গীত আধারিত। কখনও এসেছে আধুনিক বা ভজনে মাতৃ আরাধনা। অনিন্দ্য ও মধুবন চক্রবর্তীর সঞ্চালনায় শ্রোতা ও শিল্পীর মধ্যে সুন্দর একটি মেলবন্ধন গড়ে উঠেছিল।

দ্বিতীয়ার্ধে ছিল পানিহাটি প্রচেষ্টা নাট্যদলের নাটক ‘ব্যাকুলতা’। নির্দেশনায় ছিলেন সুদীপ চট্টোপাধ্যায়। প্রত্যেকেরই অভিনয় প্রশংসনীয়।

বিষময় নৃত্যশিল্পীর জীবন

যাদবপুর মন্থন আয়োজিত ‘গুরু শিষ্য পরম্পরা’ অনুষ্ঠানের শুরুতেই ছিল গুরুবন্দনা। শিঞ্জনের উপস্থাপনা ‘রানার ছুটেছে তাই’। পরিচালনায় কোহিনুর সেন বরাট। দ্বিতীয় পর্বে ছিল নাটক ‘অর্ধেক আকাশ’। একজন সমকামী নৃত্যশিল্পীর কাহিনি। তাঁর মধ্যে আছে প্রেম, যৌনতা। তাঁর প্রেমিক একজন নাট্য নির্দেশক। তিনি যখন অপর একটি মেয়ের প্রেমে পড়লেন তখন নৃত্যশিল্পীর জীবন যেন আরও বিষময় হয়ে ওঠে। নাট্য নির্দেশকের সঙ্গে তাঁর দূরত্ব বাড়তেই থাকে। ফলে নৃত্যশিল্পী ও নাট্য নির্দেশকের বিচ্ছেদ চূড়ান্ত হয়। প্রথম দিকে নাটকের গতি ধীর তালে এগিয়েছে, পরবর্ত়ীতে নাটক যত গড়িয়েছে, ততই টানটান উত্তেজনা বেড়েছে। নৃত্যশিল্পীর ভূমিকায় বাপ্পা চট্টোপাধ্যায়ের অভিনয় প্রশংসনীয়। প্রিয়াঙ্কা কর্মকার যথাযথ। তবে নাট্য নির্দেশকের ভূমিকায় অর্ণব বিশ্বাসের অভিনয় ভাল হলেও সংলাপ যথেষ্ট অস্পষ্ট। বিশেষ ভূমিকায় ছিলেন কোহিনুর সেন বরাট। নাটকের ভাবনা ও প্রয়োগে রাজীব বর্ধন।

পিনাকী চৌধুরী

সম্পর্কের টানাপড়েন

‘উদ্ভট পুরাণ’ নাটকে দিশাহীন মধ্যবিত্তের জীবন-যন্ত্রণা। লিখছেন পিয়ালী দাস

সোহাগ সেনের ভাবনা ও নির্দেশনায় এবং ‘অনসম্বল’-এর প্রযোজনায় মঞ্চস্থ হল ‘উদ্ভট পুরাণ’ নাটকটি। ‘ও হেনরি’র ছোট গল্প ‘দ্য কপ অ্যান্ড দ্য অ্যানথেম’ থেকে অনুপ্রাণিত। জুট মিলের চাকরি যাওয়া কর্মহীন, গৃহহীন এক বেকার ভবঘুরের গল্প। এই পরস্থিতিতে বউ তাকে ছেড়ে চলে যায় পরপুরুষের সঙ্গে। পার্কের বেঞ্চেই এক রকম দিন কেটে যায় অভুক্ত অবস্থায়। সঙ্গে জুটে যায় আরও দুই মানুষ। চিটফান্ড কোম্পানিতে কর্মরত, সদ্য চাকরি যাওয়া ভদ্রস্থ মধ্যবিত্ত বেকার (বিস্কুট দাদা) এবং এক পতিতা। ভদ্রলোকটি চাকরিহীন অফিস টাইম কাটাতে এবং পতিতাটি খদ্দেরের খোঁজে অপেক্ষারত।

অনূদিত হলেও, সোহাগ সেন এ নাটকের বঙ্গীকরণ করেছেন যথেষ্ট মুন্সিয়ানায়। যেখানে বর্তমান সময়ের কথা, মধ্যবিত্তের ক্রাইসিস, অসহায়তা, বেকারত্ব, ভঙ্গুর সম্পর্কের কথা এসেছে। রাজনীতিও এসেছে সূক্ষ্মভাবে। তবুও সব ছাপিয়ে এ নাটক মানবিক দিকটি তুলে ধরে। নাটক আবর্তিত হয় শহরের একটি পার্ক, লাগোয়া বাসট্যান্ড এবং একটি গুমটি আড্ডার ঠেককে কেন্দ্র করে। এখানেই তিনটি মানুষ, তাদের জীবন এবং সম্পর্কের টানাপড়েনের ছোট ছোট মন ছুঁয়ে যাওয়া নাট্য মুহূর্ত তৈরি হয়।

নাটকের সময়কাল শীত। উৎসবের রাত। চারিদিকে আলের মালা, ঝলমলে পরিবেশ। পাগলের আগমণে যে পরিবেশের ছন্দ পতন ঘটে। এক চমক দিয়েই নাটকের সূত্রপাত। নিশ্চিত আশ্রয়, এবং খাবারের খোঁজে ছোটখাটো অপরাধ করে জেলে যেতেও রাজি ভবঘুরেটি। তবুও প্রতি বারই ব্যর্থ। প্রসঙ্গত এ ঘটনা মনে করিয়ে দেয় চার্লি চ্যাপলিনের বিখ্যাত ‘মডার্ন টাইমস্’ ছবির ট্রাম্প চরিত্রটির কথা। বেকারত্বের জ্বালায় নিশ্চিত জীবনের স্বাদ পেয়ে পুনরায় জেলে যেতেও রাজি, চার্লি। এই ভবঘুরেটি এক সময় ধরাও পড়ে, বিনা অপরাধে। যখন প্রয়োজন ছিল অপ্রত্যাশিতভাবে ভালবাসার মানুষটিকে (স্ত্রী) ফিরে পেয়ে নতুন ভাবে জীবন শুরু করার। ন্যায্য বিচার পায় ভবঘুরেটি? পরিণতি কী? ‘শেষ হয়েও হইল না শেষ’, ছোটগল্পের মতো একরাশ ধোঁয়াশা রেখেই শেষ হয় নাটক।

নির্দিষ্ট কোনও গল্প বলতে চাওয়া হয়নি নাটকে। বলা চলে টুকরো ঘটনার কোলাজ। তবুও একটা যোগসূত্র অবশ্যই ছিল। তবে নাটকের প্রাণটি ধরে রাখে অভিনয়। ভবঘুরে চরিত্রে অনবদ্য কৌশিক বসু। পতিতার চরিত্রে মন ছুঁয়ে যান সুতপা ঘোষ। কখনও লাউড, কখনও মনের কোণে জমে থাকা কষ্টগুলো কান্না হয়ে ঝরে পড়া-চরিত্রের এই ওঠা নামায়, বৈচিত্র ধরা পড়ে। বিস্কুট দাদার চরিত্রে প্রাণোজ্জ্বল কজ্জল ঘোষ। উল্লেখযোগ্য পুলিশ ইন্দ্র হালদার। অন্যান্য চরিত্রে সুলগ্না চৌধুরী, শান্তনু মজুমদার প্রমুখ।

শতকণ্ঠে

সম্প্রতি স্টার থিয়েটারে কল্যাণ গুহর পরিচালনায় অনুষ্ঠিত হল শতকণ্ঠে রবীন্দ্রগান। ‘বিচিত্র আনন্দ হে কবি’ শীর্ষক এই অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করল ‘বাগেশ্রী’ সংস্থার শিল্পীরা।

এ দিন সাতটি সংস্থার নিবেদনে ছিল সমবেত এবং একক গান। ‘বাগেশ্রী’, ‘পুনশ্চ’, ‘নিক্কন’, ‘সায়ন্তন’, ‘আনন্ত’, ‘আনন্দধারা’ এবং ‘অরিত্র’। সংগীত পরিচালনায় ভাস্বতী দত্ত ও দর্পনারায়ণ চট্টোপাধ্যায়। অতিথি শিল্পী সুছন্দা ঘোষের গানের পরেই শতাধিক শিল্পীর কণ্ঠে শোনা গেল ‘মহাবিশ্বে মহাকাশে’, ‘বাংলার মাটি বাংলার জল’, ‘আনন্দলোকে’ ও ‘নাই নাই ভয়’ গানগুলি। প্রতিটি গানই সুগীত।

কালমৃগয়া

সম্প্রতি অনুষ্ঠিত হল ‘আনন্দ নিকেতন’-এর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। পরিচালনায় ছিলেন নৃত্যশিল্পী প্রতিমা চট্টোপাধ্যায়। অংশগ্রহণে ছিলেন তাঁর প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা। এ দিন অনুষ্ঠিত হয় রবীন্দ্রনাথের ‘কালমৃগয়া’ নৃত্যনাট্যটি। সঙ্গীত পরিচালনায় ছিলেন সবিতা চট্টোপাধ্যায়। এ দিন গণেশ বন্দনা এবং সরস্বতী বন্দনা দিয়ে অনুষ্ঠানের সূচনা। পরে ওড়িশি,ভারতনট্যম ছাড়াও আধুনিক নৃত্যকলাও পরিবেশিত হয়। ছোটদের নৃত্যানুষ্ঠানে সব ঘরানারই মিশ্রণ ছিল।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy