—প্রতীকী চিত্র।
‘ঝাঁপ দিব প্রাণ আজি সমর তরঙ্গে...’
বলিউড বা দক্ষিণী অ্যাকশন ছবিগুলি আমাদের অনেকেরই ভাল লাগে। ‘বাগী’ ছবিতে টাইগার শ্রফ বা ‘কম্যান্ডো’য় বিদ্যুৎ জামওয়ালকে মনে আছে? কিংবা ‘বিম্বিসার’ ছবিটি? এই ছবিগুলির অ্যাকশন দৃশ্য অন্যান্য ছবির চেয়ে খানিক আলাদা। সেখানে ব্যবহার করা হয়েছে প্রাচীন ভারতীয় মার্শাল আর্ট কালারিপায়াতুর নানা ফর্ম। প্রায় তিন হাজার বছরের পুরনো কালারিপায়াতুর জন্ম মূলত দক্ষিণ ভারতের কেরালায়। এ এক ধরনের যুদ্ধ বিষয়ক খেলা। কেরালা ছাড়াও তামিলনাড়ু, কর্নাটক, উত্তর পূর্ব শ্রীলঙ্কা এবং মালয়েশিয়ার মালয় সম্প্রদায়ের মানুষরাও অনুশীলন করেন কালারিপায়াতু।
তবে এ তো গেল অতীতের কথা। আজকের যুগে জিম, সাঁতার, ক্যারাটে, বক্সিং, তরোয়াল চালানো শারীরচর্চার জন্য তৈরি হওয়া হরেক রকম পদ্ধতির সব কিন্তু নিহিত রয়েছে কালারিপায়াতুর মধ্যেই। কথায় আছে, ‘বলং বলং বাহু বলং’। শাস্ত্রে, শিক্ষায়, মহাপুরুষের বাণীতে বাহুর জোর বাড়ানোর কথা উঠে এসেছে বারবার। রোগা না মোটা, লম্বা নাকি বেঁটে, এমনকি নারী, পুরুষ লিঙ্গভেদ জরুরি নয়, গুরুত্বপূর্ণ হল সুস্থ ও কার্যক্ষম শরীর। আর তা ধরে রাখতে সাহায্য করে এই দক্ষিণ ভারতীয় যুদ্ধরীতি।
ধাপে ধাপে শিখুন কালারি
‘কালারি’ কথার অর্থ ‘এলাকা’। ‘পায়াতু’ শব্দের অর্থ ‘যুদ্ধ’। অর্থাৎ এলাকার মধ্যে যুদ্ধ। বহু যুগ আগে গুহা তৈরি করে তার ভিতরে ছোট্ট জায়গায় মশাল জ্বালিয়ে গোপনে কালারিপায়াতু অনুশীলন করা হত। পরে প্রায় ৪২ ফুট লম্বা ও ২১ ফুট চওড়া গর্ত খুঁড়ে তৈরি হত কালারিপায়াতুর রিং। এখনও ছোট জায়গা নিয়ে তৈরি হয় কালারিপায়াতুর এরিনাগুলি। কালারিপায়াতু প্রশিক্ষক সোমা গিরি বললেন, “এর দু’টি ভাগ- সাদার্ন কালারি এবং নর্দার্ন কালারি। সাদার্নে ঢাল-তরোয়াল, ছুরি, বর্শা, ত্রিশূল, চাবুক ইত্যাদি ধারালো অস্ত্রের শিক্ষা বেশি হয়। নর্দার্নে অস্ত্রের পাশাপাশি গতিবিধির উপরে জোর দেওয়া হয়।”
প্রাথমিক এই শিক্ষা সম্পন্ন হওয়ার পর শুরু হয় বিশেষ শিক্ষা
নির্দেশাবলি
অভ্যাসের খুঁটিনাটি
সোমা বলছেন, “কালারিপায়াতু শুরুর জন্যে রয়েছে কিছু নিয়ম। প্রথমেই কালারির জন্য শরীরকে তৈরি করতে হয়। এবং একবার শুরু করলে স্থির চিত্তে মনোনিবেশ করে একাগ্রতার সঙ্গে তা শেখা উচিত। যোগ দিয়ে শুরু হয় শিক্ষা। সূর্যোদয়ের আগে থেকে আরম্ভ করে সকালে তিন-চার ঘণ্টা অভ্যাস করা হয়। অন্তত দু’ থেকে তিন মাস শিখলে শারীরিক উন্নতি চোখে পড়ে। তিন বছর পর থেকে অস্ত্র শিক্ষা করার অনুমতি পাওয়া যায়, তাও নির্ভর করে দক্ষতার উপর। সম্পূর্ণ কালারিপায়াতু শিখতে কম করেও অন্তত পাঁচ বছর সময় লাগে।”
কারা করবেন?
বয়স এ ক্ষেত্রে বাধা না। তিন-চার বছর বয়সেই আপনার খুদেটিকে কালারিপায়াতুতে ভর্তি করতে পারেন। একইসঙ্গে শিখতে পারেন আপনি নিজেও। সোমা গিরির কথায়, “পঞ্চাশ-ষাট বছর বয়সেও অনায়াসে শেখা যায় কালারিপায়াতু। শারীরিক কোনও সমস্যা, ব্যথা কিংবা কোনও চোটের কারণে অনেকসময়ে জিম করা যায় না। কিন্তু এ ক্ষেত্রে কোনও সমস্যা হয় না। অতীতে মেয়েরা কালারিপায়াতু করত না, এখন সে প্রথা বদলেছে। পৃথিবীতে নারী কালারিপায়াতু প্রথম শুরু হয় কেরালায়। একে ‘পেন ফাইট’ বলা হয়।”
মার্মাথেরাপি
কালারিপায়াতুর অন্যতম একটি অংশ মার্মাথেরাপি। ঈশ্বরের আপন দেশেই এর জন্ম। সোমা গিরি জানালেন, কালারিপায়াতু করলে তো বটেই, তা ছাড়াও কিন্তু মার্মাথেরাপি উপকারী। কারণে-অকারণে ঘাড়ে, কোমরে ব্যথা, পেশিতে খিঁচ ধরার সমস্যায় ভুগতে হয় অনেককেই। এর থেকেই মুক্তি দিতে পারে মার্মাথেরাপি। এর মাধ্যমে নানা ভেষজ তেল দিয়ে শরীরের ১০৮টি বিশেষ পয়েন্টে মাসাজ করা হয়, যা শরীরকে সচল করে তোলে, যাবতীয় ব্যথা যন্ত্রণা সারিয়ে দেয়।
খাদ্যাভ্যাস
এ ক্ষেত্রে খাবারদাবার নিয়ে কোনও নির্দিষ্ট নিয়ম নেই। তবে কেরালার আবহাওয়ার সঙ্গে অন্যান্য জায়গার তফাত আছে, যার প্রভাব শরীরের উপর পড়ে। তাই শিক্ষার্থীরা কিছু নিয়ম মেনে চলেন।
কেন করবেন?
কালারিপায়াতুর উপকার যেমন বহুমুখী, তেমনই তা ব্যয়সাপেক্ষও। দক্ষিণ ভারতের নানা জায়গা থেকে কালারিপায়াতু শিক্ষার্থীরা এখন দেশে-বিদেশে ছড়িয়ে পড়েছেন। বিভিন্ন জায়গায় কালারিপায়াতু প্রশিক্ষণ কেন্দ্রও শুরু হয়েছে। তবে মনে রাখবেন, দিনে কেবল দু’-চার ঘণ্টা অভ্যাস করলেই হয় না, কালারিপায়াতু এক ধরনের যাপন। প্রাচীন এই পদ্ধতি কিন্তু বিজ্ঞানসম্মত।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy