মাণ্ডবী সমুদ্র সৈকতে সূর্যাস্ত ও ফ্লেমিংগো
ইতিহাস ও প্রকৃতির মেলবন্ধনে গুজরাতের কছ। ১৫৪৯-এ কছ রাজ্যের রাজা রাও খেনগারজি, ভুজ-এ তাঁর রাজধানী প্রতিষ্ঠা করেন। রাজধানী হওয়ায় কখনও মুঘল, কখনও ব্রিটিশ আক্রমণে বহুবার ভুজ রণক্ষেত্র হয়ে উঠেছে।
২০০১-এর ২৬ জানুয়ারি, এক বিধ্বংসী ভূমিকম্পে লন্ডভন্ড হয়ে গিয়েছিল গুজরাতের ভুজ অঞ্চল। কিন্তু সব প্রতিবন্ধকতা, কাটিয়ে কয়েক বছরের মধ্যেই ভুজ আবার সেজে উঠেছে।
ভুজের ‘কছ মিউজিয়াম’ গুজরাতের সবচেয়ে পুরনো মিউজিয়াম। ১৮৭৭-এ এটি তৈরি হয়েছিল। কছের শিল্প, সংস্কৃতি, টেক্সটাইলের পাশাপাশি সিন্ধু সভ্যতারও বেশ কিছু নিদর্শন এখানে দেখতে পাবেন। সংগ্রহের দিক থেকে এই মিউজিয়ামটি বেশ সমৃদ্ধ। তাই হাতে সময় নিয়ে না গেলে অনেক কিছুই অদেখা রয়ে যাবে। মিউজিয়ামের পর চলে যান আয়না মহল ও প্রাগ মহল দেখতে। অষ্টাদশ শতকে কছের তৎকালীন রাজা লখপতজির উৎসাহে আয়না মহল তৈরি হয়েছিল।
স্বামী নারায়ণ মন্দির
রাজা সঙ্গীত ও শিল্পকলার বিশেষ অনুরাগী ছিলেন। তাঁর অনুরাগের প্রতিফলন এই মহল। মহলের ভিতরে মার্বেলের দেওয়াল জুড়ে বড়-বড় নকশা করা আয়না, কোথাও আবার হাতির দাঁতের সূক্ষ্ম কাজ মুগ্ধ করে। মন ভরিয়ে দেবে লখপতজির সংগ্রহের বাদ্যযন্ত্রগুলি এবং দামি পেন্টিংগুলিও। আয়না মহলের কাছেই প্রাগ মহল। ১৮৭৯ সালে দ্বিতীয় রাও প্রাগমলজি তৈরি করেছিলেন মহলটি। তাঁর নামানুসারেই এই মহলের নাম। বালি পাথর ও ইতালিয়ান মার্বেল ব্যবহার করা হয়েছিল এটি তৈরির জন্য। প্রাগ মহলের ক্লক টাওয়াটি ৪৫ থেফুট উঁচু। যেখান থেকে গোটা ভুজ শহরটা দেখা যায়। প্রাগ মহলের ইউরোপীয় সৌন্দর্যকে পুরোদস্তুর কাজে লাগিয়েছেন ভারতীয় সিনেমার পরিচালকরা। ‘হম দিল দে চুকে সনম’, ‘লগান’ ইত্যাদি অনেক ছবির শুটিং হয়েছে এই মহলে। মহল দর্শনের আগে বা পরে যেতে পারেন স্বামী নারায়ণ মন্দিরে। মন্দিরে গায়ে কাজ দেখার মতো।
প্রাগ মহল।
হামিরসার লেক, ভুজের প্রধান জলের উৎস। ৪৫০ বছরের পুরনো এই লেক শীতের মরসুমে পেলিক্যান, স্পট বিল হাঁস, পেন্টেট স্টক ইত্যাদি পরিযায়ী পাখিদের কলতানে সরব হয়ে ওঠে। জলের প্রধান উৎস হওয়ায় এই হ্রদকে ঘিরে চলে আসছে এক বহু পুরনো রীতি। বর্ষার পর যখনই হামিরসারের জল উপচে পড়েছে, তখন ঈশ্বরকে ধন্যবাদ দিয়ে রাজারা পুজো করতেন এবং লাড্ডু বিতরণ করতেন। যাকে মেঘা লাড্ডু বলা হয়। রাজার পদ অতীত হয়ে গেলেও অতীত হয়নি সেই রীতি। শেষ ছ’বছরের মধ্যে ২০১০-এ জল ছাপিয়ে যায় হামিরসারের। প্রথা মেনে পুজো ও মেঘা লাড্ডু বিতরণ হয়েছিল।
দু’-তিনদিন ভুজে থাকার পর সেখান থেকে চলে যান ৬৪ কিমি দূরে ছোট্ট একটি গ্রাম হোডকায়। এই গ্রামের বেশ কাছেই ভারত-পাকিস্তানের বর্ডার। নিরিবিলি এই ক্রাফ্ট ভিলেজের প্রধান আকর্ষণ এখানকার ‘শম-ই-সরহদ’ রিসর্টটি। মাটির তৈরি এক একটি কুটিরের ভিতরে আছে সব রকম আধুনিক ব্যবস্থা।
আয়না মহলের ভিতর
হোডকা থেকেই গাড়ি ভাড়া করে ঘুরে নিন চারপাশ। হোডকার অল্প দূরেই কছের হায়েস্ট পয়েন্ট কালা দুংয়ার বা কালো পাহাড়। যেখান থেকে দেখা যায় গোটা ‘গ্রেটার রান অফ কছ’। এখান থেকে সূর্যাস্ত বড়ই মনোরম। এই পাহাড়ের মাথায় ব্রহ্মা-বিষ্ণু-মহেশ্বরের দত্তাত্রেয় মন্দির। সন্ধেবেলা এই মন্দিরের ভোগের প্রসাদ খাওয়ানো হয় শেয়ালদের! স্থানীয় মানুষদের কাছে এটা পবিত্র দর্শন। চাঁদনি রাতে এখান থেকে দেখতে পাবেন দুটি চাঁদ! একটি আকাশে এবং আর একটি সল্ট ডেজার্ট বা সাদা মরুভূমির উপর পড়া চাঁদের প্রতিফলন।
বর্ষায় লুনি, রূপেন ও সিন্ধু নদীতে জল বাড়ায় এই বিখ্যাত সল্ট ডেজার্ট জলের তলায় চলে যায়। ফেব্রুয়ারিতে এই মরুভূমি মেতে উঠে রান উৎসবে। দেশ-বিদেশ থেকে পর্যটকের ভিড়ে নীরব মরুভূমি তখন মুখর।
শীতে বা বসন্তে কছে এসে মাণ্ডবী সৈকতে ফ্লেমিংগো না দেখে ফিরে যাওয়া বোকামি। এখানে আরব সাগরের জল ফ্লেমিংগোর পালকের আভায় গোলাপি হয়ে থাকে। সূর্যাস্তের সময় তাদের বাড়ি ফেরার উড়ান স্বর্গীয়। ফ্লেমিংগো নয়, আরও অনেক পরিযায়ী পাখি দেখা যায় নভেম্বর থেকে মার্চ পর্যন্ত।
এখানে দেখতে পাবেন এশিয়ার প্রথম উইন্ডমিল প্রজেক্ট, ৪০০ বছরের পুরনো শিপ বিল্ডিং ইয়াড। এরপর ওয়াইল্ড লাইফপ্রেমীরা চলে যান বানি গ্রাস ল্যান্ড। এই অভয়ারণ্যে রয়েছে নীলগাই, সোনালি শেয়াল, বিভিন্ন ধরনের শিকারি পাখি, কমন ক্রেন, ইত্যাদি। সিন্ধু সভ্যতার কিছু নিদর্শন দেখার ইচ্ছে থাকলে অবশ্যই যাবেন ধোলাবীরায়।
হোডকায় থাকার প্ল্যান না থাকলে, ভুজ থেকেও সরাসরি এই সব জায়গায় যাওয়া যায়। কছের দুটো ভাগ গ্রেটার রান অফ কছ ও লিটিল কছ। এখানে গ্রেটার রান অফ কছের কথা বলা হল।
লেখা: ঊর্মি নাথ
তথ্য সহায়তা
ও ছবি: সৌম্য সেনগুপ্ত
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy