জিষ্ণা গঙ্গোপাধ্যায়ের কুচিপুড়ি নৃত্য দেখার সুযোগ হয় গত ১৪ জানুয়ারি ইন্ডিয়ান সেন্টার ফর কালচারাল রিলেশনস (আইসিসিআর)-এর সত্যজিৎ রায় অডিটোরিয়ামে। কলকাতার মেয়ে জিষ্ণা আমেরিকায় পড়াশোনা করে আপাতত সেখানেই গুরুত্বপূর্ণ কর্মে নিযুক্ত। কিন্তু তাঁর নৃত্য উপস্থাপনায় পেশাদারিত্বের কোনও খামতি ছিল না। শিশুকাল থেকেই জিষ্ণা কলকাতায় প্রতিষ্ঠিত নৃত্যগুরুদের কাছে বিভিন্ন নৃত্যশৈলীর শিক্ষা শেষ করে এখন ভেম্পতি মৃণালিনী সদানন্দের কাছে কুচিপুড়ি নৃত্যের শিক্ষা গ্রহণ করছেন বহু দিন ধরে। সে দিনের অনুষ্ঠানে ওঁর নৃত্যগুরু মৃণালিনীও উপস্থিত ছিলেন। জিষ্ণা শুরুতে রাগ মোহনা ও আদিতালে পুষ্পাঞ্জলি নিবেদন করেন। তার পর গণেশবন্দনা। সুন্দর উপস্থাপনা। এর পর কালীবন্দনা, রক্তবীজ নিধনের পরে মহাকালীর আনন্দতাণ্ডব। চাপুতালে নিবদ্ধ ছিল এই নিবেদনটি। পরবর্তী নিবেদন যশোদানন্দনের বর্ণনা। এক-একটি পর্যায়ের কথা এক-একটি রত্নের মতো। যেন নবরত্ন বর্ণিত হয়েছে। কখনও কৃষ্ণ-রুক্মিণীর বিবাহের কথা, আবার কখনও বা কালীয় কিংবা কলিঙ্গ নাগের কথা। মনোজ্ঞ অনুষ্ঠান। এর পরে জয়দেবের গীতগোবিন্দ থেকে অষ্টপদী— সখীরে কেশীসদন। বিখ্যাত এই অষ্টপদী সারঙ্গ রাগে নিবদ্ধ ছিল। ওড়িশি কবির পদের সঙ্গে দক্ষিণের নৃত্যশৈলীর উপস্থাপনা ভারতীয় সংস্কৃতির সংহতির কথা মনে করিয়ে দেয়। পরে তিল্লানায় দেশ রাগে ও আদিতালে লালগুড়ি জয়রমন
রচিত সুরুপন অর্থাৎ কার্তিকেয়র দুই স্ত্রী কল্লি ও কুঞ্জরের কাহিনি উপস্থাপিত হয়েছে। সবশেষে গণ্ডোয়ানার রানি দুর্গাবতীর বীরগাথা উপস্থাপিত হয়েছে বাংলা গানের (রচনা : কোয়েলী গঙ্গোপাধ্যায়) মাধ্যমে। ‘দুর্গাবতী তরঙ্গম’ তার অভিনব পরিকল্পনা ও উপস্থাপনায় দর্শককে আবিষ্ট করে রেখেছিল। সে দিন সঙ্গীতে শিল্পীকে সহায়তা করেছিলেন নটুয়াঙ্গমে হরি অভিকুল আদিত্য (তিনি নিজেও কুচিপুড়ি নৃত্যশিল্পী), মৃদঙ্গমে আনন্দ শ্রীহরি, বেহালায় নটরাজ রাধাকৃষ্ণন, বাঁশিতে প্রবীর দাস এবং কণ্ঠসঙ্গীতে দূর্বা সিংহরায়। প্রত্যেকেই তাঁদের নিজ নিজ ক্ষেত্রে স্বকীয়তার পরিচয় দিয়েছেন। বাঙালি মেয়ে দূর্বা সিংহরায়ের সুকণ্ঠে দক্ষিণী সঙ্গীত সে দিন দর্শক-শ্রোতাকে আপ্লুত করেছিল। পরিশেষে বলা যাক, ভারতীয় শাস্ত্রীয় নৃত্যে আভূমি পদচারণার (পাশ্চাত্য নৃত্যের পদোত্তোলন ও উড়ন্ত নৃত্যভঙ্গিমার বিপরীতে) যে পরম্পরা ছিল, বিদেশি নৃত্যের প্রভাবে তার বদল ঘটেছে। তবে দর্শকের দিকে পা তুলে ধরার নৃত্যভঙ্গিমা ভারতীয় শাস্ত্রীয় নৃত্যের ক্ষেত্রে কতটা গ্রহণযোগ্য, দর্শক-গবেষকরা তা নিয়ে ভাবতে পারেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy