শ্রাবণী সেন
গত ১৩ নভেম্বর পি সি চন্দ্র গার্ডেনস ও শ্রাবণী সেন মিউজ়িক অ্যাকাডেমির যৌথ নিবেদনে পঞ্চম বর্ষের অনুষ্ঠান ‘গানের সুরে আমার মুক্তি’ অনুষ্ঠিত হল পি সি চন্দ্র গার্ডেনসে। অনুষ্ঠানটির পরিবেশনায় ছিলেন শ্রাবণী সেন মিউজ়িক অ্যাকাডেমির ছাত্রছাত্রীরা অংশগ্রহণ করেন এবং পরিচালনায় ছিলেন শ্রাবণী সেন।
শঙ্খধ্বনির মাধ্যমে অনুষ্ঠানের শুরু। উদ্বোধন করলেন বর্ষীয়ান সঙ্গীতশিল্পী সুমিত্রা সেন। ৬০০ জন ছাত্রছাত্রীর কণ্ঠে ধ্বনিত হল ‘তুমি যে সুরের আগুন’। অদ্ভুত এক অনুভূতি। এত জন মিলে কোনও অনুষ্ঠানের সূচনায় অংশগ্রহণ করছেন, দেখতেও ভাল লাগে। বিশাল প্রাঙ্গণে দর্শকাসন পরিপূর্ণ। চমৎকার পরিবেশ। উন্মুক্ত আকাশের নীচে হিমেল বাতাসের আঘ্রাণে রবীন্দ্রনাথের গানের সুর চারিদিক ভরিয়ে তুলল।
মূল অনুষ্ঠান শুরু হল ‘আমার বেলা যে যায়’ গানটি দিয়ে। এর পর উত্তরপাড়া ও হাওড়া শাখার কমবয়সী শিক্ষার্থীরা পরিবেশন করল ‘গানগুলি মোর শৈবালের দল’। বেশ প্রাণবন্ত পরিবেশনা। উত্তরপাড়া শাখা থেকে সুরঞ্জিতা দত্ত শোনাল ‘গান আমার যায় ভেসে যায়’ ও অহনা ঘোষ শোনাল ‘কেন তোমরা আমায় ডাকো’। বর্ধমান, বারাসত ও বেহালা শাখার ছাত্রছাত্রীরা শোনাল ‘গানের ভেলায় বেলা অবেলায়’, ‘তুমি কেমন করে গান করো হে গুণী’। কচিকাঁচাদের সতেজ কণ্ঠে গানগুলি শুনতে বেশ লাগল। বর্ধমান শাখার শরণ্যা হাজরা শোনাল ‘তুমি খুশি থাকো আমার পানে চেয়ে চেয়ে’। বেশ প্রাণবন্ত পরিবেশনা। এর পর বেহালা শাখার উষসী চট্টোপাধ্যায় শোনাল ‘দাঁড়িয়ে আছো তুমি আমার গানের ওপারে’। স্বেহিন হালদারের কণ্ঠে শোনা গেল ‘কী গাব আমি কী শোনাব’। সল্টলেক ও কবীর রোডের ছোট ছোট ছাত্রীরা শোনাল ‘সুরের গুরু দাও গো সুরের দীক্ষা’ এবং ‘গানের সুরের আসনখানি’। ভাল লাগল অম্বরীশ ভৌমিকের কণ্ঠে ‘অরূপ তোমার বাণী’। প্রতিশ্রুতিময় পরিবেশনা। শিশু বিভাগের শেষ গান ‘কবে আমি বাহির হলেম’ পরিবেশিত হল অমৃতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কণ্ঠে।
পুরস্কার বিতরণীর পর শুরু হল সিনিয়র বিভাগের গান। প্রথমে পরিবেশিত হল সমবেত কণ্ঠে ‘প্রথম যুগের উদয় দিগঙ্গনে’। এই গানে পুরুষ অংশগ্রহণকারীদের কণ্ঠ প্রায় শোনাই যায়নি। দ্বিতীয় গান ছিল ‘গানে গানে তব বন্ধন যাক টুটে’। সাধারণ পরিবেশনা। এর পর সুস্মিতা দে ভীতকণ্ঠে শোনালেন ‘তোমায় গান শোনাব’। শ্রাবণী দত্ত ভৌমিক শোনালেন ‘আমার শেষ পারানির কড়ি’। স্বচ্ছন্দ পরিবেশনা।
বর্ধমান ও সল্টলেক শাখার ছাত্রছাত্রীরা শোনালেন ‘আকাশভরা সূর্যতারা’ ও ‘তোমার সুরের ধারা’। ‘আকাশভরা’ শুনতে ভাল লাগলেও, মাত্র তিন জন পুরুষকণ্ঠ হওয়ায় তাঁদের কণ্ঠ প্রায় শোনাই গেল না। এর পর একক পরিবেশনায় শ্রেষ্ঠা পালের কণ্ঠে ‘আমি তোমায় যত শুনিয়েছিলেম গান’ বেশ ভাল লাগল। পরের শিল্পী ঝুমা বন্দ্যোপাধ্যায় শোনালেন ‘আসা যাওয়ার পথের ধারে’। গড়িয়া ও ডানলপ শাখার ছাত্রছাত্রীরা শোনালেন ‘কোলাহল তো বারণ হল’ ও ‘এমনি করে যায় যদি দিন’। সাধারণ পরিবেশনা। ডানলপ কেন্দ্রের ছাত্রী সঙ্গীতা সাহা রায় শোনালেন ‘তোমার কাছে এ বর মাগি’। প্রতিশ্রুতিময় পরিবেশনা।
এর পর নৈহাটি ও বারাসতের ছাত্রীরা সমবেত কণ্ঠে শোনালেন ‘আমার মুক্তি আলোয় আলোয়’ ও ‘উতল হাওয়া লাগল’। সুন্দর পরিবেশনা। উল্লেখযোগ্য পরিবেশনার মধ্যে ছিল নন্দনা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কণ্ঠে ‘আমি হেথায় থাকি শুধু গাইতে তোমার গান’ ও দেবস্মিতা চৌধুরীর কণ্ঠে ‘গানের ভিতর দিয়ে যখন দেখি ভুবনখানি’। ‘জাগো জাগো রে’ ও ‘কান্না হাসির দোল দোলানো’ পরিবেশিত হল সমবেত কণ্ঠে। মধুশ্রী বন্দ্যোপাধ্যায় শোনালেন ‘মনে রবে কিনা রবে’ এবং সুতমা বন্দ্যোপাধ্যায় শোনালেন ‘এই কথাটি মনে রেখো’। দুটি গানই সুগীত।
এই অনুষ্ঠানের উল্লেখযোগ্য বিষয় ছিল, যাঁরা বিভিন্ন শাখা থেকে প্রথম স্থান অধিকার করেছেন তাঁরাই একক সঙ্গীত পরিবেশনের সুযোগ পেয়েছিলেন। এই অনুষ্ঠান শুনে এ কথা মনে হল, বিভিন্ন স্থানে শ্রাবণী সেন অ্যাকাডেমি রবীন্দ্রসঙ্গীত প্রসারের জন্য যে কাজ করে চলেছে, তা সত্যিই প্রশংসনীয়। এই প্রতিষ্ঠানের
কর্ণধার শ্রাবণী সেন মঞ্চে এলেন এবং ‘তোমার এই ঝর্ণাতলায়’ গানটি নিবেদন করলেন আন্তরিকতার সঙ্গে, যার ছোঁয়া মনকে আবিষ্ট করে।
শেষ গান ছিল শিক্ষক-শিক্ষিকাদের সমবেত কণ্ঠে গীত ‘বজ্রে তোমার বাজে বাঁশি’। সুন্দর পরিবেশনা। কিন্তু তাঁরা কাগজ বা খাতা দেখে গাইলেন, যা এই অনুষ্ঠানকে কিছুটা বিপন্ন করল। কারণ, এতক্ষণ যে-সব ছাত্রছাত্রী অংশগ্রহণ করেছিলেন, তাঁরা কিন্তু কাগজ বা খাতা না দেখেই গেয়েছিলেন। অনুষ্ঠানে যন্ত্রসঙ্গীতে যাঁরা সহযোগিতা করেছিলেন, তাঁরা হলেন সুদীপ্ত সাহা (কি-বোর্ড), সুমন দাস (তবলা ও খোল), গোপালকৃষ্ণ মণ্ডল, স্বপন অধিকারী, তপন অধিকারী ও জগন দাস (বেস গিটার) এবং সৌম্যজ্যোতি ঘোষ (বাঁশি)। এঁদের যন্ত্রসঙ্গীত বাদন অনুষ্ঠানটিকে একটি বিশেষ মাত্রায় পৌঁছে দিয়েছিল।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy