পণ্ডিত এ কাননের সঙ্গে বাংলার যোগ অনেকটা সিনেমার স্ক্রিপ্টের মতো। আকাশবাণীর সূত্রে চেন্নাইয়ের এই শিল্পীর কলকাতায় আসা এবং গিরিজাশঙ্কর চক্রবর্তীর সান্নিধ্য পাওয়া, বেঙ্গল মিউজ়িক কনফারেন্সে ঝলসে ওঠা। এবং সঙ্গীতের আশ্রয় নিয়ে কলকাতাতেই থেকে যাওয়া। ‘মেঘে ঢাকা তারা’র মতো বেশ কিছু বাংলা চলচ্চিত্র তাঁর সারস্বত স্পর্শকে ধরে রেখেছে। বাংলা সাক্ষী থেকেছে ভারতীয় মার্গসঙ্গীত নিয়ে তাঁর ধারাবাহিক নিরীক্ষার আর সফল উত্তরসূরি নির্মাণের। এ বছর তাঁর জন্মশতবর্ষ। ভারতীয় উচ্চাঙ্গ সঙ্গীত ও নৃত্যের প্রসারমঞ্চ ‘সুরমূর্ছনা’ তা উদ্যাপন করে চলেছে বছরভর। এই উদ্যাপনের শুরু কলকাতার উত্তম মঞ্চের এক সান্ধ্য আয়োজনে, যেখানে গীতবাদ্যের পাশাপাশি উঠে এসেছিল শিল্পী ও সঙ্গীতবেত্তা পণ্ডিত কানন বিষয়ে নানা স্মৃতিচারণাও।
অনুষ্ঠানের শুরু কণ্ঠসঙ্গীতে। শিল্পী নমামি কর্মকার, যিনি শিক্ষক হিসেবে বেশ কিছু সময় পেয়েছিলেন এ কাননকে। কিরানা ঘরানার এই শিল্পী বিলম্বিত একতালে ধরলেন শ্যামকল্যাণ। ‘শাওন কি সাঁঝ মে’। যার ক্রমসঞ্চার দ্রুত তিনতালে ‘নিদ না আয়ত’। কল্যাণ ঠাটের এই সান্ধ্য রাগে শিল্পীর কণ্ঠলাবণ্য সপ্তস্বরের পেলব ধ্বনিমাধুর্য তৈরি করছিল। নমামির সঙ্গে যোগ্য সঙ্গতে ছিলেন তবলায় রূপক মিত্র এবং হারমোনিয়ামে অনির্বাণ চক্রবর্তী। তিন নবীনের বোঝাপড়া চমৎকার ছিল। নমামি তাঁর পরিবেশনা শেষ করেন কবীরের ভজন ‘বিত গয়ে দিন ভজন বিনা’ দিয়ে।
দেবাশিস ভট্টাচার্য মঞ্চে এলেন তাঁর উদ্ভাবিত নবতম বাদ্য পুষ্পবীণা নিয়ে। চতুরঙ্গী, গান্ধর্বী, আনন্দীর পরে পুষ্পবীণা। চামড়া-সংযোগে তৈরি ২৫ তারের পুষ্পবীণাও স্লাইড গিটার। তাতে ধরা দেয় বিশ্বের নানা প্রান্তের নানা তারযন্ত্রের সুরাভাস। কলকাতায় এই বাদ্যযন্ত্রটির প্রথম মঞ্চারোহণ কানন-স্মরণানুষ্ঠানে। শিল্পী শুরু করলেন শ্রী দিয়ে। আলাপ-জোড়-ঝালা। শ্রবণনম্র উপভোগ্য পরিবেশনা। সঙ্গে মুনশিয়ানা। পরে জিলা কাফি নিবদ্ধ ধুনে স্পষ্ট নিবেদনের আর্তি। সঙ্গতে সমীর চট্টোপাধ্যায় পরিচিত চারিত্রেই সুষম-সুন্দর।
কণ্ঠশিল্পী রুচিরা পন্ডা কোটালি ঘরানার প্রতিনিধি এবং তৃতীয় শিল্পী সে সন্ধ্যার আয়োজনে। তাঁর পরিবেশনা মারু বেহাগ। প্রথমে তাঁর গুরু পণ্ডিত মানস চক্রবর্তীর কম্পোজ়িশন বিলম্বিত একতালে ‘ক্যায়সে হো সো না জানু’, পরে শিল্পীর নিজের কম্পোজ়িশন রূপক তালে ‘শুভ্ শুভ্ বোল’ এবং দ্রুত তিনতালে ‘বৃজ মে ধুম’। এটিও মানস চক্রবর্তীর কম্পোজ়িশন। শিল্পীর কণ্ঠমাধুর্য এবং গায়কি মুগ্ধ করে। শেষের ঠুংরিটির পেশকারিও চমৎকার। তাঁর সঙ্গে সুঠাম সঙ্গতে ছিলেন তবলায় অরূপ চট্টোপাধ্যায় এবং হারমোনিয়ামে অনির্বাণ চক্রবর্তী।
এ সন্ধ্যার সমাপ্তি সেতারবাদনে। শিল্পী রফিক খান। ধারওয়াদ ঘরানার শিল্পী ধরলেন বাগেশ্রী। মাধুর্যে, ওজস্বিতায় ভিন্ন পরিবেশ তৈরি করলেন। তাঁকে তবলায় সঙ্গ দেন হিন্দোল মজুমদার। সে সঙ্গত মাপা এবং স্পষ্ট। সব মিলিয়ে মনে রাখার মতো উপভোগ্য পরিবেশনা।
‘সুরমূর্ছনা’ বছরভর উদ্যাপন করে চলেছে পণ্ডিত এ কাননের জন্মশতবর্ষ। এই প্রয়াসের জন্য সাধুবাদ প্রাপ্য ‘সুরমূর্ছনা’র।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy