বর্ণিল: চারুবাসনায় আয়োজিত প্রদর্শনীর চিত্রকর্ম। —ফাইল চিত্র।
চারুবাসনা গ্যালারির সুনয়নী চিত্রশালায় একটি দলীয় প্রদর্শনী হয়ে গেল সম্প্রতি, নাম ‘ভাষা’। ১৪ জন তরুণ শিল্পী, সুদীপ্ত অধিকারীর পরিচালনায় একটি দল গঠন করেছেন, নাম ‘ফ্রি উইংস’। এই দলের তরফ থেকেই প্রদর্শনীটি পরিবেশন করা হল।
আলোচ্য প্রদর্শনীতে অংশগ্রহণ করেছিলেন অর্ঘ্য ভট্টাচার্য, দর্শনা চট্টোপাধ্যায়, জয়িতা ভট্টাচার্য, দীপারতি চক্রবর্তী, পাল চিরঞ্জিৎ, ঋতব্রত মুখোপাধ্যায়, দীপশিখা রাহা, রিমঝিম সিংহ, অভিষেক চক্রবর্তী, পৌলমী সরকার, শতাব্দী রায়, আমি সৃজিতা, কাশ্যপ রায় এবং সুদীপ্ত অধিকারী। দলটির একটি বিশেষত্ব হল, এর শিল্পীদের অনেকেই অন্যত্র প্রতিষ্ঠিত। বেশ কয়েক জন সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার, একজন অভিনেতাও আছেন। আবার চাকরির নিরাপত্তা অগ্রাহ্য করে এখন পরিপূর্ণ ভাবে শিল্পীজীবন আলিঙ্গন করেছেন এই দলের বেশ কয়েক জন সদস্য। এই গোষ্ঠীকে যিনি নেতৃত্ব দিচ্ছেন, সেই সুদীপ্ত অধিকারী নিজেও তা-ই।
কাশ্যপ রায় ধাতুর নানা রকম জিনিস ব্যবহার করে, যেমন তামা এবং অ্যালুমিনিয়ামের সরু তার, তামার প্লেট, রেঞ্জ, স্প্যানার ছাড়াও টাইপ রাইটারের কীবোর্ড এবং অন্যান্য অংশ ব্যবহার করে শিল্প সৃষ্টি করেছেন। শিল্পীর চিন্তাধারায় বেশ অভিনবত্ব আছে। তিনি টাইপ রাইটারের কীবোর্ডের অংশবিশেষ, তামার প্লেট এবং ধাতুর সমন্বয়ে একটি ময়ূর সৃষ্টি করে এখানে রেখেছেন। এ ছাড়া ‘মাদারবার্ড ফিডিং হার চিলড্রেন’ কাজটিতে ধাতুর রেঞ্জ, তার ইত্যাদি ব্যবহার করা হয়েছে। কাজটি বেশ মনোগ্রাহী। এঁদের মধ্যে কনিষ্ঠতম শিল্পী অর্ঘ্য ভট্টাচার্য। আইটিতে কাজ করতেন অর্ঘ্য এবং তাঁর ডিপ্লোমাও আছে শিল্পশিক্ষায়। ক্যানভাসের উপরে অ্যাক্রিলিক রং দিয়ে ফ্ল্যাট করে ধূসর রঙে মনের স্বাভাবিক অবস্থা প্রকাশ করেছেন অর্ঘ্য। তার উপরে তিন রকমের রং ঢেলে মনের তিনটি বিশেষ ভাব প্রকাশ করেছেন— তিনটি কাজে। গোল্ডেন ইয়েলো রং ঢেলে তার নাম রেখেছেন ‘জয়’ (আনন্দ)। ভার্মিলিয়ন এবং স্কারলেট মিশিয়ে লাল রং সৃষ্টি করে ঢেলেছেন ধূসর ক্যানভাসে, নাম লিখেছেন ‘লাভ’ (প্রেম)। শেষের ক্যানভাসে নীল রং ঢেলে নাম দিয়েছেন ‘কাম’ (শান্তি)।
দর্শনা চট্টোপাধ্যায়ও শিল্পশিক্ষায় শিক্ষিত। শিরোনামহীন উডকাটের উপরে খোদাই করে লাল, সাদা, ধূসর এবং কালো রঙে সুন্দর এক ফেরিওয়ালার ছবি এঁকেছেন দর্শনা। ছবিটি সামান্য ব্যঙ্গাত্মক।
দীপশিখা রাহা মিশ্র মাধ্যমে একটি ছবি এঁকেছেন, যার নাম ‘সেপিয়োসেক্সুয়াল’। শিল্পীর বাস্তবধর্মী পোর্ট্রেটের হাত ভাল। একটি মেয়ে এবং একটি ছেলেকে ক্যানভাসের একেবারে উল্টো দিকে দেখা যাচ্ছে। তারা পরস্পরের প্রতি আকৃষ্ট এবং তাদের মাঝখানে ডিএনএ সূত্র আছে। হয়তো শিল্পী দু’জনের সংযোগ দেখিয়েছেন।
অভিষেক চক্রবর্তীর ‘দ্য কার্পেট শপ’ নানা রঙের সমাহারে পেন অ্যান্ড ইঙ্ক এর কাজ। এখানে অতি সূক্ষ্ম ভাবে রাশি রাশি কার্পেটের খুঁটিনাটি এমন ভাবে এঁকেছেন যে, শিল্পীর প্রবল ধৈর্যের পরিচয় পাওয়া যায় এবং তার সঙ্গে দক্ষতা তো বটেই।
অভিনেতা ঋতব্রত মুখোপাধ্যায় ক্যানভাসের উপরে অ্যাক্রিলিকে ছবি এঁকেছেন। ছবির শিরোনাম ‘আ ট্রি ফ্লোয়িং থ্রু এভরিওয়ান’। ছবিটার মজা হচ্ছে, সেটা যে ভাবেই রাখা হোক না কেন, ছবি বুঝতে বা তার রসগ্ৰহণে অসুবিধে হয় না। প্রাণিজগতের প্রতিটি জীবের ভিতরেই প্রাণের স্পন্দন শিল্পী যেন অনুভব করতে পারেন।
পাল চিরঞ্জিতের ক্যানভাসের উপরে তেলরঙে করা ছবি ‘দুর্গা’ ছাড়াও অনেক প্রতিকৃতি দেখা গেল। সেখানে তাঁর পারদর্শিতা অনুধাবন করা যায়। ‘দুর্গা’ ছবিটি বেশি অনুভূতিময়। জয়িতা ভট্টাচার্যের অ্যাক্রিলিকে করা ছবিগুলিতে তাঁর নিজস্ব এক আঙ্গিকের পরিচয় পাওয়া যায়।
রিমঝিম সিংহ ক্যানভাসের উপরে অ্যাক্রিলিকে এঁকেছেন ছবি। নাম ‘সেরেনিটি’। সীমিত প্যালেটে, শুধুমাত্র নীল এবং কমলা ঘেঁষা হলুদ রঙে প্রশান্তির ভাব ভাল ফুটিয়েছেন।
শতাব্দী রায় আইটিতে কাজ করেন কিন্তু ছবির প্রতি আকর্ষণ তাঁর বরাবরের। একটি ছবির নাম রেখেছেন ‘শতাব্দীর ছবি’। হ্যান্ডমেড কাগজে প্যাস্টেল দিয়ে করা একটি ঘোড়ার মুখ।
পৌলমী সরকারের ক্যানভাসের উপরে অ্যাক্রিলিক রঙে করা ছবির নাম ‘সাউন্ড অফ সাইলেন্স’। হলুদ, নীল এবং লালের ছোঁয়ায় আকর্ষক ছবি। সম্ভবত সমুদ্রের আওয়াজের ভিতর দিয়ে মনের গভীরের যে স্তব্ধতা অনুভব করা যায়, সেটার কথাই বলেছেন।
সুদীপ্ত অধিকারীর নিসর্গের উপরে ছবি তিন-চারটি। অ্যাক্রিলিক দিয়ে করা ক্যানভাসের উপরে কাজ। এর মধ্যে ‘ডার্ক মিরর’ ছবিটি অনবদ্য। শিল্পীর অ্যাক্রিলিক রঙের উপর নিয়ন্ত্রণ মুগ্ধ করে। আবার সেই ভাবে খুব সহজেই অনুভূতিও এনে ফেলেন সুদীপ্ত।
এই শিল্পীদের মধ্যে অধিকাংশই প্রাতিষ্ঠানিক শিল্পশিক্ষায় শিক্ষিত নন। স্বাভাবিক প্রতিভায় শিল্পীসত্তার বিকাশ ঘটেছে তাঁদের। সেই প্রতিফলন দেখা গেল এই প্রদর্শনীতেও।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy