Advertisement
২৩ ডিসেম্বর ২০২৪
Science News

মুঠো মুঠো সোনা, প্ল্যাটিনাম ছড়িয়ে পড়ছে মহাকাশে! ঘটকালি করছে ব্ল্যাক হোল

তাল বললে কম বলা হয়, মহা মহাতাল! আমাদের সূর্য যতটা ভারী, তার ২০ গুণ ওজনের সোনা ও প্ল্যাটিনামের মহাতাল বছরে অন্তত একটা করে তৈরি হচ্ছে।

সেই মহাতাল সোনার মুলুক। ছবি সৌজন্যে: নাসা।

সেই মহাতাল সোনার মুলুক। ছবি সৌজন্যে: নাসা।

সুজয় চক্রবর্তী
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৬ জুন ২০১৯ ১৯:৪৮
Share: Save:

হুট বলতেই মেলে না পৃথিবীতে। সোনা, প্ল্যাটিনাম তাই এত দামি। এক ভরি হাতে পেলেই লোভে চকচক করে ওঠে আমাদের চোখ-মুখ। অথচ, ব্রহ্মাণ্ড জুড়ে ছড়িয়ে রয়েছে তাল তাল সোনা, প্ল্যাটিনাম! ছড়িয়ে পড়ছে দ্রুত। প্রতি বছরই তা নতুন নতুন করে তৈরি হচ্ছে। অফুরন্ত। তাল বললে কম বলা হয়, মহা মহাতাল! আমাদের সূর্য যতটা ভারী, তার ২০ গুণ ওজনের সোনা ও প্ল্যাটিনামের মহাতাল বছরে অন্তত একটা করে তৈরি হচ্ছে।

কোথা থেকে আসছে সেই তাল তাল সোনা, প্ল্যাটিনাম? কী ভাবে তা তৈরি হচ্ছে ফি-বছর? ব্রহ্মাণ্ডের সেই বিপুল সোনার জন্মদাত্রী কে? সেই সোনা, প্ল্যাটিনাম থরে থরে জমছে কোথায়? তা কি নষ্ট হয়ে যাচ্ছে নাকি সেই সব মহামূল্যবান মৌলগুলি কয়েকশো কোটি বছর ধরে অবিকৃত, অটুটই থেকে গিয়েছে এই ব্রহ্মাণ্ডে?

জবাব মিলল অর্ধশতাব্দী পর...

প্রায় অর্ধশতাব্দী ধরে খোঁজ-তল্লাশের পর এই প্রথম উত্তর মিলল ওই সব প্রশ্নের। সেই মুলুকের হদিশ মিলল, যেখানে তৈরি হচ্ছে সোনা ও প্ল্যাটিনামের মহা মহাতাল। কী ভাবে তা তৈরি হচ্ছে, তা-ও জানা গেল, এই প্রথম। গবেষণাগারে কম্পিউটার সিম্যুলেশনের মাধ্যমে। সাড়াজাগানো গবেষণাপত্রটি বেরিয়েছে আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান-জার্নাল ‘নেচার’-এ। গত মাসে। গবেষকদলে রয়েছেন দুই খ্যাতনামা জ্যোতির্বিজ্ঞানী কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান ও কলম্বিয়া অ্যাস্ট্রোফিজিক্স ল্যাবরেটরির অধ্যাপক ব্রায়ান মেৎঝার ও ড্যানিয়েল এম সিগেল। রয়েছেন আরও এক জন বিশিষ্ট জ্যোতির্বিজ্ঞানী জেনিফার বার্নস।

বছরে কতটা সোনার তাল তৈরি হচ্ছে ব্রহ্মাণ্ডে?

আমাদের সূর্যের ভর কতটা জানেন? দুই-কে (আদতে ১.৯৮৯১) এক-এর পিছনে ৩০টি শূন্য দিয়ে গুণ করলে যে প্রকাণ্ড সংখ্যাটা হয়, তত কিলোগ্রাম। সেই সুবিশাল সংখ্যাটাকে ২০ দিয়ে গুণ করলে যা হয়, বছরে তত কিলোগ্রাম ওজনের অন্তত একটা করে সোনা ও প্ল্যাটিনামের মহাতাল তৈরি হচ্ছে ব্রহ্মাণ্ডে! তা হলে ভাবুন, সেই পরিমাণ কতটা হতে পারে!

কী ভাবে সোনা, প্ল্যাটিনামের মহাতাল তৈরি হচ্ছে ব্রহ্মাণ্ডে? দেখুন ভিডিয়ো

কতটা সোনা, প্ল্যাটিনাম রয়েছে পৃথিবীতে?

পৃথিবীর সোনা, প্ল্যাটিনাম নিয়ে এত গর্ব আমাদের। কিন্তু ওয়ার্ল্ড গোল্ড কাউন্সিলের দেওয়া তথ্য জানাচ্ছে, উত্তোলন শুরুর পর থেকে ২০১৯ সালের প্রথম ৬ মাস পর্যন্ত গোটা বিশ্বে ১ লক্ষ ৯০ হাজার ৪০ মেট্রিক টন ওজনের সোনা খনি থেকে তোলা হয়েছে।

আর কতটা সোনা মজুত রয়েছে ধরিত্রীর ভাঁড়ারে? ওয়ার্ল্ড গোল্ড কাউন্সিলই জানাচ্ছে, ভূপৃষ্ঠের এতটা নীচে নামতে হবে যে ২০৫০ সালের পর খনি থেকে সোনা তুলে আনার কাজটা পৃথিবীতে হয়ে পড়বে খুবই খরচসাপেক্ষ। আর ২০৭৫ সালের পর অবস্থাটা এমন হবে যে খনি থেকে সোনা উত্তোলনের চালু প্রযুক্তি আর কাজেই লাগবে না আমাদের গ্রহে। ওই প্রযুক্তি দিয়ে আর সোনা তোলা যাবে না।

প্ল্যাটিনামের গল্পটা কী? আমেরিকার জিওলজিক্যাল সার্ভের তথ্য বলছে, ২০১১ সাল পর্যন্ত ১৯২ টন ওজনের প্ল্যাটিনাম উত্তোলন করা সম্ভব হয়েছে। এখন যে হারে তোলা হচ্ছে, তাতে আর একশো বছরেই পৃথিবীর সব প্ল্যাটিনামের ভাঁড়ার শেষ হয়ে যাবে। পৃথিবীর সোনা ও প্ল্যাটিনামের ভাঁড়ার বলতে তো এইটুকুই। যা নিয়ে আমাদের এত গর্ব!

১৩ লক্ষ পৃথিবী অনায়াসে ঢুকে যেতে পারে সূর্যের পেটে!

ওজনে পৃথিবীর চেয়ে ৩ লক্ষ ৩৩ হাজার গুণ ভারী সূর্য। ১৩ লক্ষ পৃথিবী অনায়াসে ঢুকে যেতে পারে সূর্যের পেটে। সেই সূর্যের ২০ গুণ ওজনের সোনা, প্ল্যাটিনামের মহাতাল ফি-বছরে অন্তত একটা করে তৈরি হচ্ছে এই ব্রহ্মাণ্ডে। এ বার হিসেব কষে দেখুন, ফি-বছর কী পরিমাণে সোনা ও প্ল্যাটিনামের মহা মহাতাল তৈরি হচ্ছে ব্রহ্মাণ্ডে!

নক্ষত্র যখন এগিয়ে যায় মৃত্যুর দিকে...

কলকাতার ইন্ডিয়ান সেন্টার ফর স্পেস ফিজিক্সের (আইসিএসপি) অধিকর্তা বিশিষ্ট জ্যোতির্বিজ্ঞানী সন্দীপ চক্রবর্তী বলছেন, ‘‘সূর্যের ওজনের চেয়ে ৩০ থেকে ৬০ গুণ ভারী কোনও তারা বা নক্ষত্র যখন মরে যেতে শুরু করে তখন প্রচণ্ড একটা বিস্ফোরণ হয়। তাকে বলা হয়, ‘সুপারনোভা’। আবার কখনও মৃত্যুর সময়ে পৌঁছে গোটা একটি তারার ওই বিস্ফোরণ হয় না। কোনও কোনও বিশাল তারা তার নিজেরই চার দিকে লাট্টুর মতো বনবন করে খুব জোরে ঘুরতে ঘুরতে এগিয়ে যায় মৃত্যুর দিকে। সেগুলিকে বলা হয়, ‘কোল্যাপসার্স’। সেই তারাটির মাথা আর পায়ের দিক তার শরীরের একটি বড় অংশ আলাদা দু’টি ‘জেট’ বা স্রোত হয়ে আগে ছড়িয়ে পড়ে মহাকাশে। এগুলিকে বলা হয়, ‘লং গামা রে বার্স্ট’। তারাটির পেটের দিকে তৈরি হয় একটি ব্ল্যাক হোল। পেটের দিকে অংশের বাইরের দিকটায় থাকে লোহা, কোবাল্ট ও নিকেলের মতো মৌলগুলি। আর ভিতরটা ভরা থাকে নিউট্রনে। সেই ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র কণাদের বিকিরণের বল এতটাই হয় যে নিউট্রন কণাগুলি আর তখন ভিতরে তৈরি হওয়া ব্ল্যাক হোলের দিকে এগিয়ে না গিয়ে দূরে চলে গিয়ে বাইরে থাকা লোহা, কোবাল্ট ও নিকেলের মতো মৌলগুলির সঙ্গে জুড়ে গিয়ে সোনা ও প্ল্যাটিনামের মতো ভারী মৌলগুলি তৈরি করতে শুরু করে।’’

যে ভাবে সোনার জন্ম হচ্ছে ব্রহ্মাণ্ডে। ‘কোল্যাপসার্সে’র মাথা, পা থেকে বেরিয়ে আসছে ‘লং গামা রে বার্স্ট’। শিল্পীর কল্পনায়।

রাক্ষুসে ব্ল্যাক হোলও সব গিলে নিতে পারে না...

সন্দীপ জানাচ্ছেন, অসম্ভব জোরালো নিশ্বাসে (অভিকর্য বল) নাগালে এসে পড়া সব কিছুকেই এক গ্রাসে খেয়ে ফেলতে পারে না ব্ল্যাক হোল বা কৃষ্ণগহ্বর। ‘যা পাই তাই খাই’ স্বভাবের সর্বভূক ব্ল্যাক হোলেরও ‘পেট’ সব কিছু এক বারে টেনে নিতে পারে না। ব্ল্যাক হোলের চেটেপুটে খাওয়ারও একটা সীমা রয়েছে। যা প্রথম জানিয়েছিলেন প্রয়াত কিংবদন্তি বিজ্ঞানী আর্থার এডিংটন। তার কাছে এসে পড়া বস্তুদের জোরালো বিকিরণের বলই ব্ল্যাক হোলকে সব কিছু চেটেপুটে খেতে দেয় না। বিকিরণের বলই বস্তুগুলিকে ব্ল্যাক হোল থেকে দূরে নিয়ে যায়। না নিয়ে গেলে ওই বস্তুগুলি থেকে সোনা ও প্ল্যাটিনামের মতো ভারী মৌলগুলি তৈরি হতে পারত না। পেতাম না আমাদের অলঙ্কারের প্রধান উপকরণ। জন্মলগ্ন থেকেই পৃথিবীর অন্দরে ছিল সোনা ও প্ল্যাটিনামের মতো বহু মূল্যবান মৌলগুলি। সেগুলিও তৈরি হয়েছিল এই ভাবেই।

সোনা, প্ল্যাটিনামের জন্মের কারণ কী?

ছোটবেলায় পড়া মেন্দেলিয়েভের পর্যায় সারণী (পিরিয়ডিক টেবিল)-টা মনে করুন। সেখানে হাইড্রোজেন থেকে লোহা (ফেরাম বা আয়রন) পর্যন্ত মৌলগুলি রয়েছে উপরের দিকে। তার পর যত নীচের দিকে নামবেন, ততই দেখতে পাবেন উত্তরোত্তর ভারী হওয়া মৌলগুলিকে। যেগুলিকে বলে ‘হেভি এলিমেন্টস’। সোনা, প্ল্যাটিনাম সবই হেভি এলিমেন্টস। থাকে পর্যায় সারণীর নীচের দিকে।

কোনও মৌলের পরমাণুর কেন্দ্র বা নিউক্লিয়াসে থাকা ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র কণা প্রোটনের সংখ্যা যত বাড়ে, ততই পর্যায় সারণীর বাঁ থেকে ডান দিক ও উপর থেকে নীচের দিকে একের পর এক আসতে থাকে উত্তরোত্তর ভারী হয়ে ওঠা মৌলগুলি। সাধারণ ভাবে কোনও পরমাণুর নিউক্লিয়াসে ধনাত্মক আধানের প্রোটন থাকে যতগুলি, ‘শ্রীনিরপেক্ষ’ নিউট্রনও থাকে ততগুলিই। সেই নিউট্রন সংখ্যার বাড়া-কমা হলেই কোনও পরমাণুর নিউক্লিয়াস হয় ভারী হয় না হলে হাল্কা। আর তাতেই তৈরি হয় আইসোটোপ। একই মৌল, তবে তার রং, ঢং আলাদা।

সুপারনোভার সময় কী কী ঘটনা ঘটে? দেখুন ভিডিয়ো

গবেষণাগারে কৃত্রিম ভাবেও আমরা কোনও পরমাণুর নিউক্লিয়াসে নিউট্রন ঢুকিয়ে দিতে পারি প্রচুর পরিমাণে। প্রক্রিয়াটা খুব দ্রুত বলে তার নাম ‘র‌্যাপিড নিউট্রন ক্যাপচার প্রসেস’ বা ‘আর-প্রসেস’। পরমাণুর পেটে খুব বেশি করে নিউট্রন পুরে দিলে নতুন নতুন আইসোটোপ তৈরি হয় ঠিকই, কিন্তু সেই আইসোটোপগুলি খুব অস্থায়ী হয়। সেগুলি তুলনায় হাল্কা নতুন কোনও মৌলের পরমাণুতে বদলে যায়।

আরও পড়ুন- মহাকাশে ভয়ঙ্কর বিস্ফোরণ, ৩ দিন ধরে দেখা গেল আলোর ছটা!​

আরও পড়ুন- ব্ল্যাক হোলের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে কলকাতার নামও!​

এর মানেটা হল, সোনা ও প্ল্যাটিনামের জন্য দরকার হয় পরমাণুর নিউক্লিয়াসে প্রচুর নিউট্রন।

এই গবেষণার অভিনবত্ব কোথায়?

অন্যতম মূল গবেষক, কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান ও কলম্বিয়া অ্যাস্ট্রোফিজিক্স ল্যাবরেটরির অধ্যাপক ড্যানিয়েল এম সিগেল ‘আনন্দবাজার ডিজিটালে’র পাঠানো প্রশ্নের জবাবে ই-মেলে লিখেছেন, ‘‘এত দিন জানা ছিল, প্রায় পুরোটাই নিউট্রনে ভরা বলে নিউট্রন নক্ষত্রদের মধ্যে সংঘর্ষ হলেই (নিউট্রন স্টার মার্জার) ব্রহ্মাণ্ডে সোনা, প্ল্যাটিনামের মতো বহু মূল্যবান মৌলের জন্ম হওয়া সম্ভব। নি‌উট্রন নক্ষত্রদের একেবারে উপরের স্তরে ১০ থেকে ১৫ মিটার পুরু লোহার একটি আবরণী থাকে। বাকি অংশটি ভরা থাকে প্রচুর নিউট্রনে। আমরাই প্রথম দেখালাম, আরও একটি উপায়ে সোনা, প্ল্যাটিনামের মতো মূল্যবান মৌলগুলির জন্ম হচ্ছে ব্রহ্মাণ্ডে। আর তা হচ্ছে অনেক অনেক বেশি পরিমাণে।’’

সন্দীপ জানাচ্ছেন, দু’টি নিউট্রন নক্ষত্রের মধ্যে ধাক্কাধাক্কি হলে যে সোনা ও প্ল্যাটিনামের মতো মূল্যবান ভারী মৌলের জন্ম হয়, এটা অবশ্য তাত্ত্বিক ধারণা ছিল। ২০১৭ সালে যখন দু’টি নিউট্রন নক্ষত্রের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনার জেরে অভিকর্ষীয় তরঙ্গ বা গ্র্যাভিটেশনাল ওয়েভের হদিশ পেলেন জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা, তখন তাঁরা দেখলেন সেই সংঘর্ষের ফলে খুব স্বল্প সময়ের জন্য (যেগুলি ২ বা ৩ সেকেন্ডের বেশি স্থায়ী হয় না) যে গামা রশ্মি বেরিয়ে আসে (শর্ট গামা রে বার্স্ট) সেগুলিতে সোনা, প্ল্যাটিনামের মতো মূল্যবান ভারী মৌলগুলির অস্তিত্বের প্রমাণ মিলছে।

দুই মূল গবেষক ড্যানিয়েল এম সিগেল, ব্রায়ান মেৎঝার (বাঁদিক থেকে) ও বিশেষজ্ঞ সন্দীপ চক্রবর্তী

এই শর্ট গামা রে বার্স্ট আকছারই ঘটে ব্রহ্মাণ্ডে। তুলনায় লং গামা রে বার্স্ট সংখ্যায় অনেক কম হয়। কিন্তু সোনা ও প্ল্যাটিনামের মতো ভারী বহুমূল্যবান মৌলগুলির পরিমাণে অনেক বেশি জন্মায় লং গামা রে বার্স্টের দৌলতে। আর সেটাই প্রথম দেখাল এই গবেষণা।

কোল্যাপসার্সের হাতেই রয়েছে সেই জাদু!

সন্দীপের কথায়, ‘‘এই গবেষণাই প্রথম দেখাল, সোনা ও প্ল্যাটিনামের মতো মূল্যবান ভারী মৌলগুলির জন্ম হচ্ছে মৃত্যুপথযাত্রী কোনও একটি নক্ষত্রের একটি বিশেষ পর্যায়ে। যখন সেই নক্ষত্রটিকে বলা হচ্ছে, ‘কোল্যাপসার্স’। ওই কোল্যাপসার্স নক্ষত্ররা তাদের মৃত্যুর সময়ে পৌঁছে জন্ম দেয় লং গামা রে বার্স্টের। যে গামা রশ্মিগুলির স্থায়ীত্ব ৫০ সেকেন্ড থেকে শুরু করে দুই বা আড়াই মিনিট পর্যন্ত হয়। হিসেব কষে দেখা গিয়েছে, ব্রহ্মাণ্ডের যে অংশটুকুকে আমরা দেখতে পাই, শুধু সেইটুকু অংশেই লং গামা রে বার্স্টের ঘটনা ঘটে বছরে অন্তত একটি করে। লং গামা রে বার্স্টের ঘটনা সংখ্যায় কম হলেও, তার ফলে সোনা ও প্ল্যাটিনামের মতো মূল্যবান ভারী মৌলগুলির কিন্তু জন্ম হয় প্রচুর পরিমাণে। সেই সোনা ও প্ল্যাটিনামের এক-একটা মহা তালের ওজন হয় সূর্যের ভরের তিন থেকে চার গুণ।’’

এই সোনা, প্ল্যাটিনাম আর কোথায় রয়েছে?

জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা জানাচ্ছেন, মঙ্গল, শুক্র, বুধের মতো সূর্যের কাছাকাছি থাকা পাথুরে গ্রহগুলির অন্তর, অন্দরে এই মূল্যবান মৌলগুলির থাকার সম্ভাবনা যথেষ্টই। ‘‘যদি থাকেও বা সামান্য পরিমাণে, তবে চাঁদের বালিতে ভরা পিঠে (লুনার সারফেস) বালিকণার সঙ্গে মিশে থাকার সম্ভাবনা রয়েছে এই ধরনের ভারী মৌলগুলির’’, বলছেন সন্দীপ। মঙ্গল, শুক্র বা বুধ থেকে আমরা তুলে আনতে পারি সেই মূল্যবান মৌলগুলি, প্রয়োজন হলে।

তবে ব্রহ্মাণ্ডে এত যে বিপুল পরিমাণে সোনা ও প্ল্যাটিনামের মতো মূল্যবান মৌলগুলি তৈরি হচ্ছে প্রতিনিয়ত, সেগুলিকে নিয়ে আসাটা একটু কষ্টসাধ্যই। কারণ, আমাদের সবচেয়ে কাছে থাকা নক্ষত্রমণ্ডল ‘আলফা সেনটাওরি’ রয়েছে ৪ আলোকবর্ষ দূরে। মানে, এখনকার মহাকাশযানে চেপে সেই মুলুকে যেতে লাগবে ৪০ হাজার বছর। তবে কোনও মহকাশযানকে যদি ভবিষ্যতে ছোটানো যায় আলোর গতিতে তা হলে ৪ বছরেই পা দেওয়া যাবে আলফা সেনটাওরিতে।

যদিও সন্দীপের কথায়, ‘‘ব্রহ্মাণ্ডের সোনা, প্ল্যাটিনাম কিন্তু কোনও একটি জায়গায় তাল বেঁধে তৈরি হচ্ছে না। তা মিশে থাকছে গ্যাসের জমাট বাঁধা মেঘে। যা সংগ্রহ করাটা খুব সহজ কথা নয়। বরং পৃথিবীতে যতটা সোনা যে ভাবে রয়েছে, তাতে আমরা ভাগ্যবানই বলতে হবে!’’

অন্য বিষয়গুলি:

Gold Platinum Neutron Star Collapsers কোল্যাপসার্স সোনা
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy