চাঁদ থেকে মাত্র ৩৫ কিলোমিটার দূরে ল্যান্ডার। গ্রাফিক: সৌভিক দেবনাথ।
কক্ষপথের মায়া কাটিয়ে চাঁদের মাটিতে পা ছোঁয়ানোর আগে বুধবার ভোরে দ্বিতীয় বারের মতো ল্যান্ডার বিক্রমের কক্ষপথ বদলাল ইসরো। এদিন ভোর ৩টে ৪২ মিনিটে বিক্রমকে যে কক্ষপথে পাঠানো হল তাতে যখন সে চাঁদের সব চেয়ে কাছে থাকবে তখন তার দূরত্ব হবে ৩৫ কিলোমিটার। আর যখন সব চেয়ে দূরে থাকবে তখন চাঁদের পিঠ থেকে তার দূরত্ব হবে ১০১ কিলোমিটার। ফলে বলাই যায়, নামার আগে চাঁদের অনেক কাছে বুধবার ভোরে পৌঁছে গেল ল্যান্ডার বিক্রম। আর এই কাজটা এদিন করতে ইসরো সময় নিল মাত্র ৯ সেকেন্ড।
এই কাজটা ইসরোর ভাবনার মধ্যেই ছিল। কিন্তু এদিন আরও একটি কাজ করেছেন ইসরোর বিজ্ঞানীরা। চাঁদে নামানোর আগে শুধুই যে ল্যান্ডার বিক্রমের কক্ষপথ বদলেছেন তাই নয়, পরিবর্তন করেছেন চাঁদকে প্রদক্ষিণ করা চন্দ্রযান-২ এর অরবিটারের কক্ষপথও। যা ইসরোর পরিকল্পনার মধ্যে ছিল না। যা এর আগে ইসরো কখনও জানায়ওনি।
এদিন চন্দ্রযান-২ এর অরবিটারটিকে ইসরো নতুন যে কক্ষপথে এনেছে তাতে সে যখন সবচেয়ে কাছে থাকবে তখন চাঁদ থেকে তার দূরত্ব হবে ৯৬ কিলোমিটার। আর যখন সবচেয়ে দূরে যাবে তখন তার দূরত্ব হবে ১২৫ কিলোমিটার। ল্যান্ডারের কক্ষপথ বদলানোর সঙ্গে সঙ্গে অরবিটারের কক্ষপথও যে বদলান হবে, তা কিন্তু ইসরো আগেভাগে জানায়নি। বরং বলেছিল অরবিটার তার আগেই কক্ষপথ (১১৯কিলোমিটার x ১২৭ কিলোমিটার)-এ থাকবে। তাই বিজ্ঞানী মহলে প্রশ্ন উঠছে, ইসরো হঠাত্ অরবিটারের কক্ষপথও বদলাল কেন?
আরও পড়ুন : চাঁদের দিকে আরও ১৫ কিলোমিটার এগিয়ে গেল বিক্রম ল্যান্ডার
কলকাতায় ইন্ডিয়ান সেন্টার ফর স্পেস ফিজিক্সের অধিকর্তা, দেশের অন্যতম জ্যোতির্বিজ্ঞানী,সন্দীপ চক্রবর্তী বলছেন, “অরবিটারের কক্ষপথ বদলের কথা ইসরো আমাদের আগেভাগে জানায়নি। এর ফলে অরবিটার যখন চাঁদ থেকে থাকবে ৯৬ কিলোমিটার দূরত্বে তখন এমন অবস্থা আসতেই পারে যেখানে উপবৃত্তাকার কক্ষপথে প্রদক্ষিণ করতে করতে ল্যান্ডার বিক্রম চাঁদ থেকে চলে যাবে ১০১ কিলোমিটার দূরে। তার মানে এমন পরিস্থিতি তৈরি হতেই পারে যেখানে ল্যান্ডার বিক্রমের চেয়ে অরবিটার চাঁদের পিঠের কাছাকাছি চলে আসবে। এটা কেন করা হল এই প্রশ্নের কোনও উত্তর এখনও আমরা ইসরোর কাছ থেকে পাইনি।”
আরও পড়ুন : চাঁদে হাঁটছেন মহাকাশচারী, পাশ দিয়ে হুশ করে বেরিয়ে গেল অটোরিকশা!
চাঁদে নামার পর রোভার প্রজ্ঞান, ল্যান্ডার বিক্রমের শরীর থেকে বেরিয়ে আসার পর মুহূর্ত থেকেই রোভারে পাঠানো সিগন্যাল পৌঁছবে ল্যান্ডারে। আর সেই সিগন্যাল ল্যান্ডার পাঠিয়ে দেবে অরবিটারকে।
সন্দীপ জানাচ্ছেন, ইসরো এদিন অরবিটারের কক্ষপথ পরিবর্তনের ফলে এমন পরিস্থিতি তৈরি হতেই পারে যখন ল্যান্ডারের পাঠানো সব কটি সিগন্যাল ঠিক মতো পৌঁছচ্ছে না অরবিটারে। ল্যান্ডার চাঁদের মাটিতে নামার পর অরবিটার যদি চাঁদের পিঠ থেকে ঠিক ৯৬ কিলোমিটার উপরে থাকে তাহলে ল্যান্ডারের পাঠানো সিগন্যাল অরবিটারের থাকা ট্রান্সমিটারে জোরালো ভাবে ধরা পড়ার সম্ভাবন বেড়ে যাবে। কিন্তু অরবিটার যদি চাঁদের পিঠ থেকে ১২৫ কিলোমিটার দূরে থাকে তাহলে স্বাভাবিক ভাবেই ল্যান্ডার পাঠানো সিগন্যাল ততটা জোরালো ভাবে অরবিটারের ট্রান্সমিটারে পৌঁছবে না। তার ফলে ল্যান্ডার চাঁদের মাটিতে নেমে কোনও সমস্যায় পড়লে অরবিটারে পক্ষে সেই সিগন্যাল পাওয়ার ক্ষেত্রে কিছুটা হলেও সমস্যা দেখা দিতে পারে।
শুধু আশঙ্কার কথা নয়, আশার কথাও শুনিয়েছেন সন্দীপ। তিনি বলেছেন,“অরবিটারের কক্ষপথ ২৩ (১১৯ থেকে কমে ৯৬) কিলোমিটার কমানোটি ইসরোর গুরুত্বপূর্ণ পরিকল্পিত পদক্ষেপও হতে পারে। তিনি বলেছেন, চাঁদের মাটিতে যখন ল্যান্ডার ও রোভার থাকবে তাদের মাথার উপর দিয়ে উড়ে যাবে অরবিটার। আর সেক্ষেত্রে চাঁদ ও অরবিটারের দূরত্ব সর্বনিম্ন হবে ৯৬ কিলোমিটার। ইসরোর বিজ্ঞানীরা হয়তো নিশ্চিত করতে চাইছেন, এই নূন্যতম দূরত্ব তখনই হোক, যখন অরবিটার তার কক্ষপথে ল্যান্ডারের মাথার উপর থাকবে।
সাধারণত অরবিটার ঘুরতে ঘুরতে ল্যান্ডারের মাথার ওপর আসা ও সরে যাওয়ার মধ্যে মাত্র ৩০ মিনিট সময় পাবে তথ্য আদান প্রদানে। ফলে অরবিটার ও ল্যান্ডারের দূরত্ব যত কমানো যাবে ততই দ্রুত তথ্য আদান প্রদান সম্ভব বলে জানাচ্ছেন বিজ্ঞানীরা। ল্যান্ডারের ভিতর রয়েছে ৫টি যন্ত্র ও রোভারে রয়েছে ২টি। এই সাতটি যন্ত্রের সংগ্রহ করা তথ্য পাঠানোর ক্ষেত্রে, ল্যান্ডার ও অরবিটারেরর দূরত্ব একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
প্রশ্ন অনেক, কিন্তু উত্তর এখনও মিলছে না। পরে হয়তো ইসরো গোটা বিষয়টি পরিষ্কার করবে। তবে ইসরো তাদের ওয়েবসাইটে জানিয়েছে, পরিকল্পনা মতো ভারতীয় সময় আগামী ৭ সেপ্টেম্বর রাত ১টা ৩০ মিনিট থেকে রাত ২টো ৩০ মিনিটের মধ্যে চাঁদের মাটিতে অবতরণ করবে বিক্রম ল্যান্ডার।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy