গ্রাফিক: তিয়াসা দাস।
কোভিড-১৯ ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে ভারতীয়দের কপাল কি ততটা মন্দ নয়? ওই ভাইরাসকে জব্দ, অকেজো করে দেওয়ার ‘বীজমন্ত্র’ লুকিয়ে রয়েছে কি ভারতের মাটিতে থাকা ভারতীয়দের শরীরেই?
এই প্রশ্নগুলি এ বার তুলে দিল চার বাঙালির সাম্প্রতিক গবেষণা। যা প্রকাশিত হয়েছে আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান-জার্নাল ‘জিনোমিক্স’-এ, খুব সম্প্রতি।
গবেষণা জানাল, কোভিডের একটি ভয়ানক দুষ্টু জিন আমাদের দেহের কোষে ঢোকার পর যেন কিছুটা অথর্ব, অকেজো হয়ে পড়ছে। হয় তার ‘হাত’ বা ‘পা’ অকেজো হয়ে যাচ্ছে, না হলে অকেজো হয়ে পড়ছে ভাইরাসটির সেই জিনের অন্য কোনও অংশ।
ঘটনা হল, কোভিডের এই দুষ্টু জিনই আমাদের দেহের কোষে ঢোকার পর ভাইরাসটির দ্রুত বংশবৃদ্ধি ঘটাতে বড় ভূমিকা নেয়। বিজ্ঞানীদের অনুমান, আমাদের দেহের স্বাভাবিক প্রতিরোধী ব্যবস্থা (‘ইমিউন সিস্টেম’) জিনটিকে অকেজো, অথর্ব করে দেওয়ায় সে আর দেহের মধ্যে কোভিডের বংশবৃদ্ধি ঘটাতে পারছে না। ফলে, কোষ থেকে কোষে ছড়িয়ে পড়তে পারছে না কোভিড। হয়ে উঠতে পারছে না ততটা ভয়ঙ্কর, যা আমাদের মৃত্যু ডেকে আনতে পারে। তাই অন্য দেশের তুলনায় ভারতে কোভিডে মৃত্যুর হার বেশ কম।
গবেষকদলে রয়েছেন কলকাতার ‘ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশন ফর দ্য কাল্টিভেশন অফ সায়েন্স (আইএসিএস)’-এর স্কুল অফ বায়োলজিক্যাল সায়েন্সের অধ্যাপক সিদ্ধার্থশঙ্কর জানা, বরাহনগরের ‘ইন্ডিয়ান স্ট্যাটিস্টিক্যাল ইনস্টিটিউট (আইএসআই)’-এর কম্পিউটার সায়েন্সের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক পবিত্র পাল চৌধুরী, ‘পিংলা থানা মহাবিদ্যালয়ে’র গণিতের অধ্যাপক শেখ শরিফ হাসান এবং জোহানেসবার্গের উইটওয়াটারস্র্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে’র স্কুল অফ ফিজিক্সের অধ্যাপক পল্লব বসু।
চার গবেষক। পবিত্র পাল চৌধুরী (বাঁ দিক থেকে), শেখ শরিফ হাসান, পল্লব বসু ও সিদ্ধার্থশঙ্কর জানা
কোভিডের দুষ্টু জিন অকেজো হয়ে যাচ্ছে ভারতীয়দের শরীরে?
গবেষকরা বলছেন, কোভিডের এই দুষ্টু জিনটার নাম ‘ওআরএফ-৩এ’। যার মধ্যে রয়েছে ২৭৫টি অ্যামাইনো অ্যাসিড। এই বিশেষ জিনটি থাকে বাদুড়ের শরীরে ঢোকা কোভিডেও (যার ওআরএফ-৩এ জিনে রয়েছে ২৭৪টি অ্যামাইনো অ্যাসিড)। থাকে প্যাঙ্গোলিনেও। তাই মানুষে সংক্রমণ শুরুর পরেই কোভিডের এই জিন সক্রিয় হয়ে উঠেছে, তা নয়। বাদুড় আর প্যাঙ্গোলিনের শরীরেও কোভিডের এই জিনটাই ভাইরাসের দ্রুত বংশবৃদ্ধি ঘটানোর সহায়ক হয়েছে।
বাঙালি গবেষকরাই প্রথম দেখালেন, একমাত্র ভারতের মাটিতে থাকা ভারতীয়দের শরীরে ঢোকার পরেই এই দুষ্টু জিনটি থেকে বেরিয়ে আসা প্রোটিনে যে সব পরিবর্তন ঘটছে, তাতে জিনটি আর ততটা দুষ্টুমি করতে পারছে না। বরং অকেজো হয়ে যাচ্ছে। কিছুটা তার ‘হাত’ বা ‘পা’ অথবা ‘মাথা’ অকেজো হয়ে যাচ্ছে বলে! এটা পৃথিবীর আর কোথাও অন্য কোনও দেশের কোভিড রোগীর ক্ষেত্রে ঘটছে না।
গবেষকদের দাবি, সম্ভবত ভারতের মাটিতে থাকা ভারতীয়দের দেহের প্রতিরোধ ক্ষমতা অন্য দেশের নাগরিকদের চেয়ে বেশি বলেই এটা হচ্ছে। তবে এখনও এটা অনুমানই। কারণ, এটা জোর দিয়ে বলার জন্য আরও পরীক্ষানিরীক্ষার দরকার।
ফলে, এই প্রশ্নটা উঠে গেল, শরীরে ঢোকার পর কোভিডকে কিছুটা অথর্ব করে দেওয়ার কলাকৌশল কি জানে ভারতীয়দের দেহের স্বাভাবিক প্রতিরোধী ব্যবস্থা?
চার বাঙালির গবেষণাপত্রটি প্রকাশিত হওয়ার পর কিন্তু বিতর্কেরও সূত্রপাত হয়েছে। প্রশ্ন উঠেছে, যতটা পর্যাপ্ত তথ্যাদির ভিত্তিতে এমন ধারণায় পৌঁছনো যায়, ততটা তথ্য কি গবেষকদের হাতে পৌঁছেছিল?
এও প্রশ্ন উঠেছে, করোনা সংক্রমণ ঘটেছে, ভারতের এমন সব অঞ্চলের যাবতীয় তথ্যাদি কি গবেষণায় প্রতিফলিত হয়েছে?
কারও বক্তব্য, ভারতের যে জিনোমগুলি পরীক্ষা করা হয়েছে, তাদের বাহক রোগীরা বয়সে তরুণ। যেখানে ভারত-সহ বিশ্বের প্রায় সর্বত্রই কোভিডে মৃত্যুর হার প্রবীণদের ক্ষেত্রেই বেশি।
প্রশ্ন উঠেছে বলেই গবেষণাপত্রটি প্রকাশিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তা সংশ্লিষ্ট বিজ্ঞানীদের নজরও কেড়েছে।
আরও পড়ুন- হ্যাক করতে পারবে না কোয়ান্টাম কম্পিউটারও, মহাকাশ থেকে এমন বার্তা পাঠাল চিন
আরও পড়ুন- সুপারপাওয়ার শিশুর খোঁজ পেল নাসা, জন্ম যার পলাশির যুদ্ধেরও অনেক পরে!
গবেষকরা কাজ করেছেন ভারতের কোভিড রোগীদের শরীর থেকে পাওয়া ভয়ঙ্কর ভাইরাসটির মোট ৩২টি জিনোম-সহ বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের মোট ২ হাজার ৩৮৫টি জিনোম নিয়ে। ১৪ মে পর্যন্ত যে জিনোমগুলি জমা পড়েছিল আমেরিকার ‘ন্যাশনাল সেন্টার ফর বায়োইনফর্মেটিক্স (এনসিবিআই)’-এ।
জিনোম কেন আলাদা হয়?
‘জিনোম’ আসলে বিভিন্ন ধরনের জিনের সজ্জা। জিনগুলির সেই সজ্জা বদলে গেলে জিনোমও বদলে যায়। যেমন, স্কুলের কোনও অনুষ্ঠানে নানা রঙের জামাকাপড় পরে আসা, লম্বা, বেঁটে, মোটা, রোগা ছাত্রছাত্রীদের এক এক রকম ভাবে বসালে ক্লাস বা স্কুলের অডিটোরিয়ামের দর্শকাসনের চেহারাটা বদলে যায়, ঠিক তেমনই।
আমাদের দেহে যেমন ২৫ থেকে ৩০ হাজার জিন রয়েছে, তেমনই কোভিডের দেহেও রয়েছে ২৯টি জিন। এই জিনগুলি লম্বালম্বি, পাশাপাশি বা কোণাকুণি থেকে যে নানা ধরনের সজ্জা বানাচ্ছে, তার ফলেই তৈরি হচ্ছে আলাদা আলাদা জিনোম। আলাদা বলে জিনোমগুলির চরিত্র, চালচলনও একে অন্যের চেয়ে আলাদা হয়।
গবেষকরা আমদাবাদ, গুজরাতের বাকি অংশ ও কেরলের কোভিড রোগীদের থেকে পাওয়া এমন ৩২টি জিনোম পরীক্ষা করে দেখেছেন, আমাদের শরীরে ঢোকার পর কোভিডের দ্রুত বংশবৃদ্ধি ঘটানোর সহায়ক হয় যে দুষ্টু জিন, সেই ওআরএফ-৩এ আমাদের দেহে ঢুকে কিছুটা অকেজো, অথর্ব হয়ে যাচ্ছে।
কোভিডের দু’ধরনের জিন কি শুধু ভারতেই?
এখনও পর্যন্ত ভারতে কোভিড রোগীদের থেকে ভাইরাসের যতগুলি ওআরএফ-৩এ জিন মিলেছে, দেখা গিয়েছে, সেগুলি মোটামুটি চার ধরনের। ‘টাইপ-ওয়ান’, ‘টাইপ-টু’, ‘টাইপ-থ্রি’ এবং ‘টাইপ-ফোর’। এদের মধ্যে টাইপ-ওয়ান ধরনের ওআরএফ-৩এ জিন আগেই মিলেছে আমেরিকার কোভিড রোগীদের মধ্যে। এর আগে টাইপ-টু ধরনের ওআরএফ-৩এ জিনের হদিশ মিলেছে ইউরোপের কোভিড রোগীদের ক্ষেত্রে।
কিন্তু টাইপ-থ্রি আর টাইপ-ফোর, এই দু’ধরনের ওআরএফ-৩এ জিনের দেখা মিলেছে শুধু ভারতেই। যা বিশ্বের আর কোথাও অন্য কোভিড রোগীদের ক্ষেত্রে এখনও পর্যন্ত পাওয়া যায়নি বলে দাবি গবেষকদের।
অন্যতম গবেষক, অধ্যাপক সিদ্ধার্থশঙ্কর জানার কথায়, “আমরা ভারতীয়দের যে জিনোমগুলি নিয়ে গবেষণা করেছি, তাতে দেখেছি, শুধুই টাইপ-থ্রি আর টাইপ-ফোর, এই দু’ধরনের ওআরএফ-৩এ জিনই আমাদের শরীরে ঢোকার পর কিছুটা অকেজো হলেও হতে পারে।’’
সিদ্ধার্থ ও শরিফের দাবি, যেহেতু এই দু’ধরনের ওআরএফ-৩এ জিন পৃথিবীর আর কোথাও অন্য কোনও দেশের কোভিড রোগীদের থেকে পাওয়া যায়নি, তাই মনে হচ্ছে, ভারতীয়দের দেহের স্বাভাবিক প্রতিরোধী ব্যবস্থাই এদের অকেজো করে দিতে পারছে। আর সেটা হচ্ছে ভারতের মাটিতে থাকা ভারতীয় কোভিড রোগীদের ক্ষেত্রে। তাই মনে হচ্ছে, ভারতের জলবায়ু আমাদের প্রতিরোধী ব্যবস্থাকে হয়তো কিছুটা শক্তিশালী হয়ে উঠতে সাহায্য করেছে। বাড়াতে পারছে আমাদের প্রতিরোধ ক্ষমতাকে।
দাবি জোরালো হতে পারে পরীক্ষায়, আরও জিনোমে: পার্থপ্রতিম মজুমদার
গবেষকদের এই দাবি অবশ্য মেনে নিতে চাননি দেশের বিশিষ্ট এপিডিমিয়োলজিস্ট ও জিনতত্ত্ববিদ জাতীয় বিজ্ঞান কমিটির চেয়ারপার্সন পার্থপ্রতিম মজুমদার। তাঁর কথায়, ‘‘গবেষকরা ভারত থেকে পাওয়া যে ৩২টি জিনোম পরীক্ষা করেছেন, তাতে টাইপ-থ্রি ধরনের মাত্র দু’টি ভাইরাস মিলেছে। আর মিলেছে টাইপ-ফোর ধরনের একটি মাত্র ভাইরাস। ঘটনা হল, এই নতুন তিন ধরনের ভাইরাসই শুধু একটি শহর থেকেই পাওয়া গিয়েছে। আমদাবাদ। ভারত থেকে পাওয়া মাত্র ৩২টি জিনোম আর নতুন ধরনের মাত্র তিনটি ভাইরাস (তা-ও আবার শুধু একটি শহর থেকেই পাওয়া) পরীক্ষা করে কোনও গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তে পৌঁছনো ঠিক হচ্ছে না।’’
তিনি এও জানিয়েছেন, আমাদের শরীরে ঢোকার পর টাইপ-থ্রি আর টাইপ-ফোর ভাইরাসের কোনও কোনও অংশ কিছুটা অকেজো হয়ে যাচ্ছে, এটা জোর দিয়ে বলার জন্য আরও পরীক্ষানিরীক্ষার প্রয়োজন। আরও অনেক বেশি জিনোম নিয়ে পরীক্ষা চালানো দরকার। মাত্র দু’টি রাজ্যের (কেরল ও গুজরাত) কোভিড রোগীদের জিনোম পরীক্ষা করা হয়েছে। মহারাষ্ট্র, তামিলনাড়ু বা পশ্চিমবঙ্গের কোভিড রোগীদের জিনোম এই গবেষণার অন্তর্ভুক্ত হয়নি। গবেষকরা ১৪ মে পর্যন্ত ভারত থেকে পাওয়া মাত্র ৩২টি জিনোম পরীক্ষার সুযোগ পেয়েছেন।
এটা ঠিকই, রোগীদের বয়সের বাছবিচার না করেই গবেষকরা জিনোমগুলি নিয়ে পরীক্ষা চালিয়েছেন।
যদিও পার্থপ্রতিমের বক্তব্য, ওই সময় ভারত থেকে পাওয়া যে ৩২টি জিনোম নিয়ে পরীক্ষা চালানো হয়েছিল, পরে দেখা গিয়েছে, সেগুলি যে করোনা রোগীদের থেকে সংগৃহীত, তাঁদের গড় বয়স ২৮ বছর। ফলে, তাঁরা তরুণ প্রজন্মের। অথচ, ভারতে কোভিডের হানাদারিতে প্রবীণদেরই মৃত্যু হয়েছে বেশি।
পার্থপ্রতিমের কথায়, “তরুণদের দেহের প্রতিরোধ ক্ষমতা প্রবীণদের চেয়ে বেশি হবে, এর মধ্যে অস্বাভাবিকতা কোথায়? তাই এই গবেষণার ক্ষেত্রের আরও সম্প্রসারণ ঘটানোর প্রয়োজন। বিভিন্ন বয়সের কোভিড রোগীদের জিনোম খতিয়ে দেখতে হবে।’’
ভারতে কোভিডে মৃতদের গড় বয়স ৬৯ বছর
অন্যতম সহযোগী গবেষক, আইএসআই-এর অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক পবিত্র পাল চৌধুরী বলছেন, ‘‘এটা ঠিকই, ভারতের যে কোভিড রোগীদের থেকে পাওয়া ৩২টি জিনোম খতিয়ে দেখা হয়েছে, তাঁদের গড় বয়স ২৮ বছর। কিন্তু যাঁদের থেকে জিনোমগুলি সংগ্রহ করা হয়েছিল, সেই করোনা রোগীদের বয়সটাকে আমরা গবেষণার অন্তর্ভুক্ত করিনি।’’
পরিসংখ্যান বলছে, ইউরোপে কোভিড রোগীদের গড় বয়স ৪৩ বছর। আমেরিকায় ৩৭.৭ বছর। চিনে ৩৮.৪ বছর। অস্ট্রেলিয়ায় ৩৭ বছর। আর ভারতে যে কোভিড রোগীদের মৃত্যু হয়েছে তাঁদের গড় বয়স ৬৯ বছর।
‘‘কিন্তু এই গড় বয়সের কোভিড রোগীর জিনোম খতিয়ে দেখার সুযোগ মে মাসের মাঝামাঝি পর্যন্ত আমরা পাইনি’’, বলছেন পবিত্র।
গবেষকদের দাবি, আমাদের শরীরের কোষে ঢুকে কোভিডের ওই বিশেষ ওআরএফ-৩এ জিনটি অকেজো হয়ে পড়ছে বলেই বিশ্বের অন্যান্য প্রান্তের কোভিড রোগীদের চেয়ে ভারতে কোভিড রোগীর মৃত্যুর হার কম।
কোন জিন অকেজো হলে সংক্রমণ কমে, সেটাই বেশি গুরুত্বপূর্ণ
এই দাবি ডারউইনের বিবর্তনবাদকেই চ্যালেঞ্জ করে বলে মনে করছেন পার্থপ্রতিম।
তাঁর কথায়, “ভাইরাস যার শরীরে বাসা বাঁধে, তাঁদের সাধারণত মারতে চায় না। তা হলে তার তো আর বংশবৃদ্ধি করাটাই হবে না। এটাই বিবর্তনবাদ। মানব ইতিহাসে যে ভাইরাস যত বেশি মৃত্যুর দ্যোতক হয়েছে, সেই ভাইরাস তত তাড়াতাড়ি নিশ্চিহ্ন হয়ে গিয়েছে। মার্স ভাইরাসের হানাদারিতে মৃত্যু-হার ছিল প্রায় ৩৪ শতাংশ। মার্স ভাইরাস আর নেই। আর এক ধরনের করোনাভাইরাসের (‘সার্স-কভ-১’) হানাদারিতে মৃত্যু-হার ছিল ১১ শতাংশ। সেটাও প্রায় নিশ্চিহ্ন হওয়ার মুখে। একই অবস্থা এক সময়ের পরাক্রমী ইবোলা ভাইরাসেরও। তাই আমাদের শরীরে কোভিডের বংশবৃদ্ধি ঘটানোর সহায়ক জিনের অকেজো হয়ে পড়ার জন্য মৃত্যু-হার কম হচ্ছে কি না, সেটা তত গুরুত্বপূর্ণ নয়। বরং কোভিডের কোন জিনগুলিকে অকেজো করতে পারলে সংক্রমণের হার কমে, তার গবেষণাটাই বেশি জরুরি।’’
পরীক্ষায় প্রমাণ করতে হবে তত্ত্বকে: শান্তুনু ভট্টাচার্য
এই গবেষণা সম্পর্কে পার্থপ্রতিমের বক্তব্যের সঙ্গে অনেকটাই সহমত পোষণ করেন কলকাতার ‘ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশন ফর দ্য কাল্টিভেশন অফ সায়েন্স (আইএসিএস)’-এর অধিকর্তা বিশিষ্ট বিজ্ঞানী অধ্যাপক শান্তনু ভট্টাচার্য।
তাঁর বক্তব্য, এটা গুরুত্বপূর্ণ হলেও মূলত তাত্ত্বিক গবেষণা। আর সেটা করা হয়েছে খুবই অল্প তথ্যাদির ভিত্তিতে। তাত্ত্বিক গবেষণার জন্যেও আরও বেশি তথ্যাদির প্রয়োজন। ১৪ মে পর্যন্ত গবেষণাটা চালানো হয়েছে বলে সেই বাড়তি তথ্য পাওয়ার সুযোগ পাননি গবেষকরা। মাত্র দু’-একটি রাজ্য থেকে জিনোম পেয়েছেন গবেষকরা। এই ভাইরাসের বিশেষ দু’টি ধরন (টাইপ-থ্রি আর টাইপ-ফোর) মিলেছে মাত্র তিনটি। তা-ও শুধুই একটি শহর থেকে।
আরও পড়ুন- ছায়ার সঙ্গে কুস্তি করে এ বার মিলবে বিদ্যুৎ, খরচ সৌরবিদ্যুতের চেয়ে কম
আরও পড়ুন- ইসরোর প্রথম উদ্যোগ, দেবস্থলের নজর পড়বে মহাকাশের ধ্বংসাবশেষে!
শান্তনুর কথায়, ‘‘আরও অনেক বেশি তথ্যের পাশাপাশি পর্যাপ্ত পরীক্ষানিরীক্ষারও প্রয়োজন। তথ্যের অভাবে পরীক্ষানিরীক্ষাও করতে পারেননি গবেষকরা। তবে এই গবেষণার গুরুত্ব এটাই, একটা নতুন দিকের কথা বলল। এ বার সেটা কতটা সঠিক বা আদৌ সঠিক কি না তা পরীক্ষানিরীক্ষাই জানাবে। এই ভাবেই বিজ্ঞান এগিয়ে যায়।’’
কোভিডে মৃত্যু-হার কেন কম, ইঙ্গিত গবেষণায়: শুভেন্দ্র ভট্টাচার্য
তবে কলকাতার ‘ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ কেমিক্যাল বায়োলজি (আইআইসিবি)’-র মলিকিউলার জেনেটিক্স বিভাগের প্রধান, ‘ভাটনগর’ পুরস্কারজয়ী অধ্যাপক শুভেন্দ্র ভট্টাচার্যের মতে, বিভিন্ন তথ্য থেকে দেখা গিয়েছে, গোটা বিশ্বে করোনা সংক্রমণের ধরনের থেকে ভারতে সংক্রমণ কিছুটা আলাদা। ভারতে ততটা মৃত্যুর কারণ হয়ে উঠছে না কোভিড-১৯। সেটা কেন, বোঝা যাচ্ছিল না। সে দিকে আলো ফেলল এই গবেষণা।
শুভেন্দ্রের কথায়, ‘‘যদিও এটা একটা হাইপোথিসিস। এখন সেটা প্রমাণ করতে গেলে আরও তথ্যের প্রয়োজন, প্রয়োজন পরীক্ষানিরীক্ষারও। তখনই নিশ্চিত হওয়া যাবে আমাদের শরীরে ঢোকার পর কোভিডের ওআরএফ-৩এ জিনটির কিছু পরিবর্তন হওয়ার পিছনে সত্যি সত্যিই আমাদের দেহের প্রতিরোধী ব্যবস্থার ভূমিকা রয়েছে কি না, থাকলে কতটা।’’
তবে কোনও ভাইরাস আমাদের শরীরে ঢুকে কত বার কী ভাবে তার চরিত্র, আচার, আচরণ বদলে ফেলবে, শুধু তার উপর নির্ভর করেই তার মারণ ক্ষমতা কতটা বোঝা যায় না। যার শরীরে সেই ভাইরাস ঢুকছে, তার প্রতিরোধ ক্ষমতা কতটা, তার উপরেও নির্ভর করে সেই ভাইরাস সেই মানুষটির কতটা ক্ষতি করতে পারবে বা আদৌ পারবে কি না।
শুভেন্দ্র বলছেন, “এটা তো ঠিকই আমাদের জিনোমের সঙ্গে মেলে না ককেশাস (ইউরোপীয় জনগোষ্ঠী) ও মঙ্গোলয়েড (এশীয় জনগোষ্ঠী)-দের জিনোম। তাই ককেশাস ও মঙ্গোলয়েডদের দেহের প্রতিরোধ ক্ষমতার সঙ্গে আমাদের প্রতিরোধ ক্ষমতার ফারাক আছে। ফলে, গবেষকরা যে দিকে আঙুল তুলেছেন, তাকেও একেবারেই উড়িয়ে দেওয়া যায় কী?’’
ছবি: গবেষকদের সৌজন্যে।
লেখচিত্র: আওয়ারওয়ার্ল্ডইনডাটা.ওআরজি
গ্রাফিক: তিয়াসা দাস।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy