উৎক্ষেপণের অপেক্ষায়। ছবি সৌজন্যে: ইসরো।
সোমবার দুপুরে চাঁদ মুলুকের উদ্দেশে রওনা হচ্ছে ভারতের চন্দ্রযান-২। ২টো ৪৩ মিনিটে। ইসরোর তরফে বৃহস্পতিবার চন্দ্রযান-২ উৎক্ষেপণের এই নতুন দিন ও ক্ষণ ঘোষণা করা হয়েছে।
এর আগে ভারতের দ্বিতীয় চন্দ্রযানের রওনা হওয়ার কথা ছিল গত ১৫ জুলাই রাত ২টো ৫১ মিনিটে। কিন্তু উৎক্ষেপণের প্রায় এক ঘণ্টা আগে (আদতে ৫৬ মিনিট ২৪ সেকেন্ড) অত্যন্ত শক্তিশালী ও সর্বাধুনিক জিএসএলভি-মার্ক-৩ রকেটের লিকুইড প্রপেল্যান্ট চেম্বারে তরল জ্বালানি ভরার সময় তা ‘লিক’ করতে শুরু করে। সঙ্গে সঙ্গে অভিযান সাময়িক ভাবে স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত নেয় ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ইসরো।
সাত দিনেই তৈরি ইসরো
তার সাত দিনের মাথায় এ বার উৎক্ষেপণ হতে চলেছে চন্দ্রযান-২-এর। সোমবার দুপুরে অন্ধ্রপ্রদেশের শ্রীহরিকোটার সতীশ ধওয়ন মহাকাশ কেন্দ্রের (এসডিএসসি) দ্বিতীয় লঞ্চপ্যাড থেকে রওনা হবে চন্দ্রযান-২।
চন্দ্রযান-২: কী ভাবে যাবে চাঁদ মুলুকে, দেখুন ভিডিয়ো
ভারতের চন্দ্রাভিযান সম্পর্কে এই তথ্যগুলি জানেন?
দ্বিতীয় চন্দ্রাভিযানে ভারত চাঁদে পাঠাচ্ছে একটি অরবিটার। যা ঘুরবে চাঁদের বিভিন্ন কক্ষপথে। পাঠানো হচ্ছে একটি ল্যান্ডার। ‘বিক্রম’। আর তারই মধ্যে থাকবে একটি রোভার। ‘প্রজ্ঞান’।
Chandrayaan-2 launch, which was called off due to a technical snag on July 15, 2019, is now rescheduled at 2:43 pm IST on Monday, July 22, 2019. #Chandrayaan2 #GSLVMkIII #ISRO
— ISRO (@isro) July 18, 2019
চাঁদের দক্ষিণ মেরুর ১০০ কিমি উপর থেকে নামবে ল্যান্ডার
চাঁদের পিঠ (লুনার সারফেস) থেকে ১০০ কিলোমিটার উপরের কক্ষপথে অরিবিটার থেকে আলাদা হয়ে চাঁদের বুকে নামতে শুরু করবে ল্যান্ডার বিক্রম। সময় লাগবে প্রায় ১৫ মিনিট। রোভারটিকে সঙ্গে নিয়ে প্রায় দেড় টন ওজনের ল্যান্ডারটি খুব ধীরে পা ছোঁয়াবে (সফ্ট ল্যান্ডিং) চাঁদের দক্ষিণ মেরুর ৭০ ডিগ্রি অক্ষাংশে। তুলনায় রোভারটি খুবই হাল্কা। ওজন মাত্র ৭০ কিলোগ্রাম। রোভারটি চাঁদের দক্ষিণ মেরুর কয়েকটি এলাকায় ঘুরে বিভিন্ন মৌল ও খনিজের সন্ধান করবে। দেখবে সেগুলি রয়েছে কতটা পরিমাণে।
আরও পড়ুন- হুগলির চন্দ্রকান্তের তৈরি অ্যান্টেনার ভরসায় ফের চাঁদের কক্ষপথে ঢুকছে ইসরো
আরও পড়ুন- চার বছরের মধ্যেই চাঁদের পাড়ায় ‘বাড়ি’ বানাচ্ছে নাসা!
চন্দ্রযান-২ যাবে চাঁদের সেই দক্ষিণ মেরুতে যেখানে ভারতের আগে আর কোনও দেশই পারেনি রোভার পাঠাতে। আর রাশিয়া (সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন), আমেরিকা ও চিনের পর ভারতই হবে চতুর্থ দেশ যারা চাঁদের বরফে মোড়া দক্ষিণ মেরুতে অভিযান চালাতে যাচ্ছে।
ইসরো সূত্রের খবর, রওনা হতে সাত দিন দেরি হলেও, যে দিনে চাঁদের পিঠে নামার কথা ছিল ল্যান্ডার ও রোভারের, সেই সেপ্টেম্বরের ৬ (বা ৭) তারিখেই তারা চাঁদের দক্ষিণ মেরুর ৭০ ডিগ্রি অক্ষাংশে নামবে। তার জন্য জ্বালানি একটু বেশি খরচ করতে হবে ইসরোকে। আর কমাতে হবে জিএসএলভি-মার্ক-৩ রকেটের পৃথিবী পরিক্রমার সংখ্যা।
কেন জুলাইয়েই চন্দ্রযান-২ পাঠাতে হল ইসরোকে?
কলকাতার ‘ইন্ডিয়ান সেন্টার ফর স্পেস ফিজিক্স’ (আইসিএসপি)-এর অধিকর্তা সন্দীপ চক্রবর্তী বলছেন, ‘‘চাঁদের যে গন্তব্যে পৌঁছনোর কথা চন্দ্রযান-২-এর, সেখানে পৌঁছতে গেলে পৃথিবী, জিএসএলভি-মার্ক-৩ রকেট ও চাঁদের কক্ষপথকে (যাকে বিজ্ঞানের পরিভাষায় বলা হয়, ‘লুনার ট্রান্সফার অরবিট’ বা ‘এলটিও’) একই তলে (প্লেন) থাকতে হবে। সেটা একমাত্র সম্ভব, যদি ৩১ জুলাইয়ের মধ্যেই রওনা হতে পারে চন্দ্রযান-২। এই সময়সীমা পেরিয়ে গেলে ইসরোকে চাঁদের পাড়ায় ঢোকার জন্য কয়েক মাস অপেক্ষা করতে হত। আর সাত দিন পর রওনা হয়েও যদি ইসরো আগের মতোই জ্বালানি খরচ করতে চাইত, তা হলে চন্দ্রযান-২-এর পক্ষে চাঁদে পদার্পণের সবচেয়ে ভাল দিনটি হত দুর্গা অষ্টমী বা ৫ অক্টোবর। কারণ, ওই সময় থেকেই ফের চাঁদে ১৪ দিনের দিন (যখন চাঁদের কোনও নির্দিষ্ট এলাকায় সূর্যের আলো পড়তে শুরু করবে ও আলো থাকবে) শুরু হবে। ৬ সেপ্টেম্বর থেকে চাঁদে ১৪ দিনের দিন শুরু হওয়ার পর।’’
জিএসএলভি-মার্ক-৩ যেন ১৫ তলা বাড়ি!
ইসরো সূত্রের খবর, দু’টি লিকুইড প্রপেল্যান্ট চেম্বারের মধ্যে থাকা ‘ও’ রিং-এ কিছু ত্রুটি দেখা দেওয়ার ফলেই গত ১৫ জুলাই স্থগিত রাখা হয় উৎক্ষেপণ। ইসরোর এক কর্তার কথায়, ‘‘সমস্যাটি খুবই জটিল ছিল। তবে তা মিটতে বেশি সময়ও লাগেনি।’’
যে জিএসএলভি-মার্ক-৩ রকেটের পিঠে চাপিয়ে ইসরো চাঁদের পাড়ায় পাঠাচ্ছে চন্দ্রযান-২-কে, সেই রকেটের ওজন ৬৪০ টন। রকেটের উচ্চতা ৪৪ মিটার। যা আদতে ১৫ তলা বাড়ির সমান। অত্যন্ত শক্তিশালী বলে এই রকেটের একটি ডাক নামও দিয়েছে ইসরো। ‘বাহুবলী’।
আরও পড়ুন- স্বপ্ন ছিল কালামের, খনিজ খুঁজতে চলল চন্দ্রযান-২
আরও পড়ুন- ‘পড়ে পাওয়া চোদ্দ আনা’ চাঁদ না থাকলে প্রাণই আসত না পৃথিবীতে!
খরচ মাত্র ১ হাজার কোটি টাকা
ইসরো জানিয়েছে, ভারতের এই দ্বিতীয় চন্দ্রাভিযানের খরচ পড়েছে মাত্র এক হাজার কোটি টাকা। যা নাসার চন্দ্রাভিযানগুলির তুলনায় অনেকটাই কম।
এর আগে ২০০৮ সালে ভারত চাঁদ মুলুকে পাঠিয়েছিল ‘চন্দ্রযান-১’। সেই মহাকাশযানটি অবশ্য চাঁদের কক্ষপথেই ঘুরেছে, ঘুরে চলেছে। তাতে কোনও ল্যান্ডার ও রোভার ছিল না। ‘চন্দ্রযান-১’-ই প্রথম চাঁদে জলের তরল অবস্থায় থাকার প্রমাণ হিসাবে হাইড্রক্সিল অণুর হদিশ পেয়েছিল।
ছবি ও ভিডিয়ো সৌজন্যে: ইসরো
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy