লকডাউনের জেরে স্তব্ধ দোকানপাট। ছবি: পিটিআই।
দেশ জুড়ে লকডাউনের তৃতীয় দফা শুরু হয়েছে গিয়েছে আজ, সোমবার থেকে। চলবে আগামী দুই সপ্তাহ। কোথায় করোনা সংক্রমণের সংখ্যা বেশি, কোথায় কম এর ভিত্তিতে রাজ্যগুলোকে ইতিমধ্যেই তিনটি জোনে ভাগ করে দেওয়া হয়েছে— রেড, অরেঞ্জ এবং গ্রিন জোন। জোনভিত্তিক ছাড়ের ব্যাপারে কেন্দ্র সরকার বেশ কিছু গাইডলাইন জারি করেছে। কিন্তু তার পরেও দেশ জুড়ে বিভ্রান্তি তৈরি হচ্ছে। উঠে আসছে প্রচুর প্রশ্ন। কেউ জানতে চাইছেন, এসি বা ফ্রিজ খারাপ হয়ে গেলে কি সার্ভিস প্রোভাইডার ডাকতে পারব? কারও আবার প্রশ্ন ই-কমার্সে অনলাইন ডেলিভারি পাব? তেমনই বেশ কিছু প্রশ্ন এক জায়গায় করে উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করলাম আমরা।
• রেড, অরেঞ্জ এবং গ্রিন জোনের অর্থ কী?
যেখানে কোভিড-১৯ পজিটিভের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি, সেই অঞ্চল রেড জোনের মধ্যে পড়ছে। তুলনামূলক একটু কম আক্রান্ত অঞ্চল বা এলাকা অরেঞ্জ জোন। আর যে অঞ্চল সংক্রমণ মুক্ত সেগুলো গ্রিন জোনের মধ্যে পড়ছে।
• যদি কেউ রেড জোনের মধ্যে পড়েন, তা হলে তিনি কতটা সমস্যার মুখোমুখি হতে পারেন?
রেড জোনে থাকলেও আজ থেকে বেশ কিছু ক্ষেত্রে ছাড় পাওয়া যাবে। তবে অরেঞ্জ বা গ্রিন জোনের ক্ষেত্রে যে সব ছাড়ের কথা ঘোষণা করা হয়েছে, ওই সব এলাকার মতো অতটা ছাড়ের সুবিধা ভোগ করতে পারবেন না রেড জোনের বাসিন্দারা।
• রেড জোনে কি প্রাইভেট গাড়ি চলাচল করতে দেওয়া হবে?
প্রাইভেট গাড়ি চলবে। তবে সে ক্ষেত্রে চালক বাদে এক জনের বেশি গাড়িতে থাকতে পারবেন না। বাইক বা স্কুটারে চালক ছাড়া অন্য কোনও আরোহী থাকবেন না।
• এ তো না হয় গেল গাড়ির বিষয়। রেড জোনের মধ্যে যদি কোনও অফিস থাকে, তা হলে সে ক্ষেত্রে কী নিয়ম প্রযোজ্য? সে সব অফিসে কি কাজ চালু করা যাবে?
সব ক্ষেত্রে নয়। এ ব্যাপারে বিশেষ কিছু ক্ষেত্রে ছাড় দেওয়া হয়েছে। তার মধ্যে রয়েছে, বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল, শিল্পতালুক এবং যে সব সংস্থা শুধুমাত্র রফতানি করে। তবে এ ক্ষেত্রে মানতে হবে বেশ কিছু নিয়ম।
এ ছাড়া অত্যাবশ্যকীয় জিনিস তৈরির কারখানা, প্যাকেজিং ক্ষেত্র, তথ্যপ্রযুক্তির সরঞ্জাম তৈরির কারখানার ক্ষেত্রে ছাড় দেওয়া হয়েছে। ছাড় দেওয়া হয়েছে চটকলগুলোর ক্ষেত্রেও। তবে এ ক্ষেত্রে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে কাজ করতে হবে।
• লকডাউনের জেরে থমকে থাকা রেড জোনের নির্মাণ এবং আবাসন প্রকল্পগুলো ক্ষেত্রে কী পদক্ষেপ করা হয়েছে?
মফস্সল এলাকায় নির্মাণ কাজে কিছুটা সীমাবদ্ধতা রাখা হয়েছে। সে ক্ষেত্রে নির্মাণ স্থলের কাছাকাছি থাকা শ্রমিকদেরই কাজে লাগানো যাবে। বাইরে থেকে কাউকে আনা যাবে না। এ ছাড়া পুনর্ব্যবহারযোগ্য শক্তি ক্ষেত্রেও নির্মাণকাজে ছাড় দেওয়া হয়েছে।
গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
• আজ থেকেই কি রেড জোনের সব দোকান খুলে যাচ্ছে?
মফস্সল এলাকার শপিং মল, বাজার, বাজার কমপ্লেক্সে অত্যাবশ্যকীয় নয় এমন জিনিসের দোকান খোলা যাবে না। তবে ফাঁকা জায়গায় থাকা দোকানগুলির ক্ষেত্রে ছাড় দেওয়া হয়েছে।
• রেড জোনগুলোতে ই-কমার্সে অত্যাবশ্যকীয় নয় এমন জিনিসের কি হোম ডেলিভারি পাওয়া যাবে?
কোনও ভাবেই নয়।
• বাড়িতে যদি হঠাত্ এসি বা ফ্রিজের মতো জিনিস খারাপ হয়ে যায়, তা হলে রেড জোনে থাকা বাসিন্দারা কী করবেন। সার্ভিস প্রোভাইডারকে কি এই জোনে আসার অনুমতি দেওয়া হবে?
রেড জোনের ক্ষেত্রে খুব একটা অসুবিধা হবে না। তবে কেউ যদি রেড জোনের ‘কনটেনমেন্ট’ জোনে থাকেন, সে ক্ষেত্রে ব্যক্তিগত নিরাপত্তা পরিষেবা, ইলেকট্রিশিয়ান, আইটি রিপেয়ার্স, কলের মিস্ত্রি, গাড়ির মিস্ত্রি, ছুতোর ইত্যাদির সুবিধা পাবেন না। অর্থাত্ এঁদের কনটেনমেন্ট জোনে ঢোকার অনুমতি দেওয়া হবে না।
• লকডাউন পরিস্থিতিতে সেলুনগুলোও বন্ধ। এ ক্ষেত্রে কী করণীয়?
এ ক্ষেত্রে আরও একটু ধৈর্য ধরতে হবে। কারণ সেলুন, স্পা এগুলো খোলার কোনও অনুমতি দেওয়া হয়নি।
• রেড জোনে থাকলে বাইরে বেরনোর জন্য কি অ্যাপ ক্যাব পরিষেবা পাওয়া যাবে?
না, সেটা হবে না।
• রেড জোনে থাকা অফিসগুলোর ক্ষেত্রে কী হবে?
বেসরকারি সংস্থাগুলো প্রয়োজন মতো ৩৩ শতাংশ কর্মীদের নিয়ে কাজ করতে পারবে। বাকি কর্মীরা বাড়ি থেকে কাজ করবেন। সমস্ত সরকারি অফিসগুলোতে ডেপুটি সেক্রেটারি পদমর্যাদার বা তার উর্ধ্বতন পদমর্যাদার আধিকারিকরা আসবেন। বাকি কর্মীদের মধ্যে ৩৩ শতাংশই অফিসে এসে কাজ করতে পারবেন।
রেড জোনে থাকা সমস্ত বাণিজ্যিক এবং বেসরকারি সংস্থাগুলোকে ছাড় দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে, প্রিন্ট এবং ইলেকট্রনিক মিডিয়া, তথ্যপ্রযুক্তি এবং এই সংক্রান্ত পরিষেবা, ডেটা ও কল সেন্টার, কোল্ড স্টোরেজ, ওয়্যারহাউজিং সার্ভিসেস, অত্যাবশ্যকীয় নয় এমন পণ্য তৈরির কারখানা।
• রেড জোনে থাকা কারও বাড়িতে কি পরিচারিকাকে আসার অনুমতি দেওয়া হবে?
কনটেনমেন্ট জোন ছাড়া সব জোনেই পরিচারিকা কাজে যেতে পারবেন। কনটেনমেন্ট জোন হল, যেখানে কোভিড আক্রান্তের সংখ্যা অনেক বেশি। সেখানে কড়া নিয়ম জারি করা হয়েছে। তবে যেহেতু লকডাউন চলছে, যানবাহন বন্ধ। ফলে নিজেকেই কোনও ভাবে ব্যবস্থা করে কাজ করতে যেতে হবে।
• রেড জোনের আর্থিক সংস্থা যেমন ব্যাঙ্ক এবং ব্যাঙ্ক নয় এমন আর্থিক সংস্থাগুলোকে কি ছাড় দেওয়া হয়েছে?
অধিকাংশ আর্থিক সংস্থাগুলো খোলা থাকবে। তার মধ্যে রয়েছে, ব্যাঙ্ক নয় এমন আর্থিক সংস্থা, ইনসিওরেন্স, ক্যাপিটাল মার্কেট সংক্রান্ত পরিষেবা এবং ক্রেডিট কো-অপারেটিভ সোসাইটি।
• অরেঞ্জ জোনের ক্ষেত্রে নিশ্চয় নিয়ম অনেকটাই শিথিল করা হয়েছে?
অবশ্যই। জেলার মধ্যেই যাতায়াত করা যাবে তা সে কোনও ব্যক্তি বা গাড়ি হোক। তবে কেবলমাত্র অনুমোদিত কাজের জন্য। গাড়িতে চালক ছাড়া আরও দু’জন যাত্রী চাপতে পারবেন। বাইক বা স্কুটারে চালক ছাড়াও এক জন আরোহী থাকতে পারবেন।
• আর গ্রিন জোনের ক্ষেত্রে?
গ্রিন জোনে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ছাড় দেওয়া হয়েছে। তবে কিছু ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধতা রয়েছে। যা সারা দেশের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। এই জোনে বাস চলবে। তবে আসন ধারণ ক্ষমতা হবে ৫০ শতাংশ। বাস ডিপোতেও ৫০ শতাংশ ধারণ ক্ষমতা হতে হবে।
সমস্ত মালবাহী গাড়ি চলাচলে অনুমতি দেওয়া হয়েছে। রাজ্য হোক বা কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল কেউই এই গাড়িগুলোকে আটকাতে পারবে না। সীমান্ত বাণিজ্যের ক্ষেত্রেও কোনও সীমাবদ্ধতা রাখা হয়নি।
ছবি: পিটিআই।
(অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন, feedback@abpdigital.in ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেন। আপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy