—ফাইল চিত্র।
বিজেপি সরকার উল্টে দেওয়ার চেষ্টা করছে বলে সাংবাদিক বৈঠক করে শনিবার অভিযোগ করেছিলেন অশোক গহলৌত। কিন্তু তার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে নিজেরই উপমুখ্যমন্ত্রীর গুরুতর অভিযোগের মুখে পড়লেন রাজস্থানের মুখ্যমন্ত্রী। গহলৌত তাঁকে ক্রমাগত কোণঠাসা করে চলেছেন বলে দলের হাইকমান্ডের কাছে বিস্ফোরক অভিযোগ আনলেন রাজস্থান প্রদেশ কংগ্রেসের সভাপতি তথা রাজ্যের উপমুখ্যমন্ত্রী সচিন পায়লট। নিজের ক্ষোভের কথা জানাতে ইতিমধ্যেই দিল্লি পৌঁছে গিয়েছেন সচিন। সেখানে সনিয়া গাঁধী-সহ দলের অন্যান্য শীর্ষ নেতৃত্বের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে কথা হতে পারে তাঁর। দু’পক্ষের মধ্যে মীমাংসা করিয়ে দিতে গহলৌতকেও দিল্লিতে ডেকে পাঠানো হতে পারে বলে দলীয় সূত্রে জানা গিয়েছে।
মাস তিনেক আগে মধ্যপ্রদেশে কমল নাথের সঙ্গে সঙ্ঘাতে দল ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দেন আর এর তরুণ নেতা জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়া। এতে রাজ্যের শাসনভারই হারাতে হয়েছে কংগ্রেসকে। সচিন অবশ্য দলের প্রতি আস্থা রেখে হাইকমান্ডে দরবারের রাস্তা নিয়েছেন। কিন্তু সিঁদুরে মেঘ দেখা কংগ্রেস যে শঙ্কা এবং অস্বস্তিতে, তা প্রকাশ হয়ে পড়েছে দলের প্রবীণ নেতা কপিল সিব্বলের বক্তব্যে। এ দিন টুইটারে সিব্বল লেখেন, ‘‘দলের জন্য চিন্তা হচ্ছে। ঘোড়া আস্তাবল ছেড়ে পালিয়ে গেলে তবেই কি ঘুম ভাঙবে আমাদের?’’
কমপক্ষে ২৩ জন বিধায়কের সমর্থন তাঁর সঙ্গে রয়েছ বলে শীর্ষ নেতৃত্বকে ইতিমধ্যেই জানিয়েছেন সচিন পায়লট। তাঁদের মধ্যে থেকে ১০-১২ জন শনিবারই দিল্লি এসে পৌঁছন। কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের সঙ্গে দেখা করে তাঁরাও নিজেদের সমস্যার কথা জানাতে চান বলে সূত্রের খবর। তবে এখনও পর্যন্ত এক সঙ্গে এক জায়গায় দেখা যায়নি তাঁদের। তাঁর সঙ্গে কোনও অবিচার হবে না বলে সচিন পায়লটকে ইতিমধ্যেই দলের শীর্ষ নেতৃত্ব আশ্বস্ত করেছেন বলে জানা গিয়েছে। অধৈর্য হয়ে যাতে নিজের ভবিষ্যৎ নষ্ট করে না ফেলেন, সচিনকে সেই পরামর্শও দিয়েছেন তাঁরা।
Worried for our party
— Kapil Sibal (@KapilSibal) July 12, 2020
Will we wake up only after the horses have bolted from our stables ?
সিব্বলের টুইট।
আরও পড়ুন: স্থিতিশীল অমিতাভ, রয়েছে মৃদু উপসর্গ, জানাল নানাবতী হাসপাতাল
২০১৮ সালে সচিন পায়লটকে সামনে রেখেই বিধানসভা নির্বাচনে জয়ী হয় কংগ্রেস। কিন্তু সরকার গঠনের সময় অশোক গহলৌতকেই মুখ্যমন্ত্রীর আসনে বসানো হয়। সচিনকে উপমুখ্যমন্ত্রী নিযুক্ত করে তাঁর হাতে পাঁচটি দফতর তুলে দেওয়া হয়। এর পাশাপাশি প্রদেশ কংগ্রেসের সভাপতি পদেও থেকে যান তিনি। সেই থেকে একাধিক বার দু’জনের মধ্যে মতবিরোধের খবর সামনে এসেছে। যা চরমে ওঠে জুন মাসে রাজ্যসভা নির্বাচনের ঠিক আগে। অভিযোগ ওঠে, রাজ্যে ঘোড়া কেনাবেচায় নেমেছে বিজেপি। তার জন্য কংগ্রেসের তিন বিধায়ককে ২৫ কোটি টাকা করে দেওয়ার টোপও দিয়েছে তারা। সেই বাবদ অগ্রিম ১০ কোটি টাকা জমাও পড়েছে তাঁদের অ্যাকাউন্টে।
অভিযুক্ত ওই তিন বিধায়কই সচিন ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত। বিজেপির কাছ থেকে টাকা নেওয়ার কথা অস্বীকার করেন তাঁরা। কিন্তু সরকার উল্টে দেওয়ার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত থাকার অভিযোগে তাঁদের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু হয়। সেই তদন্ত চলাকালীন সম্প্রতি সচিন পায়লটকেও নোটিস ধরায় স্পেশ্যাল অপারেশন গ্রুপ (এসওজি)। গোটা ঘটনায় তাঁকেও বয়ান রেকর্ড করতে ডেকে পাঠানো হয়। তা নিয়েই সচিন পায়লট এবং অশোক গহলৌতের সঙ্গে সঙ্ঘাত চরমে পৌঁছয়। তাঁকে কোণঠাসা করতে ইচ্ছাকৃত ভাবে এ সব করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন সচিন। সেই কারণে শনিবার যখন বিজেপির বিরুদ্ধে ঘোড়া কেনাবেচার অভিযোগ নিয়ে সাংবাদিক বৈঠক করেন গহলৌত, সেখানে তাঁকে দেখা যায়নি।
Special Operations Group (SOG) of Police also wrote to Rajasthan Chief Minister Ashok Gehlot on 10th July seeking his availability for recording his statement in connection with the case. https://t.co/peUgrBz2Ol pic.twitter.com/QDc8Q6g2Yf
— ANI (@ANI) July 12, 2020
সচিনকে পাঠানো নোটিস।
আরও পড়ুন: সংক্রমিত বেড়ে প্রায় সাড়ে ৮ লক্ষ, দেশে ২৪ ঘণ্টায় নতুন আক্রান্ত ২৮৬৩৭
কংগ্রেসের একটি অংশের দাবি, সচিন পায়লটকে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতির পদ থেকে সরানোই গহলৌত শিবিরের আসল লক্ষ্য। তবে সেই অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন রাজ্যের মন্ত্রী প্রতাপ সিংহ খাচরিয়াওয়াস। বরং কংগ্রেস সরকারকে উল্টে দিতে বিজেপি ষড়যন্ত্র কষছে বলে দাবি করেন তিনি। প্রতাপ বলেন, ‘‘অশোক গহলৌত সরকার বাঁচানোর সবরকম চেষ্টা করছেন। বিজেপির উদ্দেশ্য সফল হবে না। মধ্যপ্রদেশে যা করেছে, তা রাজস্থানে করতে পারবে না।’’
২০০ আসনের রাজস্থান বিধানসভায় এই মুহূর্তে ১০৭টি রয়েছে কংগ্রেসের দখলে। ১২ জন নির্দল বিধায়কও রয়েছেন তাদের সঙ্গে। এ ছাড়াও রাষ্ট্রীয় লোক দল, সিপিআই (এম) এবং ভারতীয় ট্রাইবাল পার্টির পাঁচ বিধায়ক গহলৌত সরকারের সঙ্গে রয়েছেন। কিন্তু সচিন পায়লট তাঁর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করলে, ২০-৩০ জন বিধায়কের সমর্থন হারাতে হতে পারে গহলৌতকে। বিজেপি যদি তাঁদের দলে টানতে সক্ষম হয়, সে ক্ষেত্রে ক্ষমতাও হাতছাড়া হতে পারে। এমন পরিস্থিতিতে কী করা যায়, তা পর্যালোচনা করে দেখতে গতকাল রাতেই নিজের বাসভবনে মন্ত্রিসভার সদস্যদের সঙ্গে বৈঠক করেন গহলৌত। সেখানে হাজির ছিলেন রাজ্যের নগরোন্নয়ন ও আবাসন মন্ত্রী শান্তি ধারিওয়াল, স্বাস্থ্যমন্ত্রী রঘু শর্মা, পরিবহণ মন্ত্রী প্রতাপ সিংহ কাছারিয়াওয়াস, শ্রমমন্ত্রী টিকারাম জুল্লি এবং আরও অনেকে। কংগ্রেস বিধায়কদের পাশাপাশি বেশ কয়েক জন নির্দল বিধায়কও ওই বৈঠকে যোগ দেন বলে জানা গিয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy