প্রতীকী ছবি।
দেশ জুড়ে বহু প্রতীক্ষিত টিকাকরণ কর্মসূচি শুরুর পরে দেড় দিনও কাটেনি। তার মধ্যেই করোনা প্রতিষেধকের বণ্টন পদ্ধতি থেকে শুরু করে দাম পর্যন্ত বিভিন্ন বিষয়ে এক গুচ্ছ প্রশ্নচিহ্ন ঝুলিয়ে দিলেন বিরোধীরা।
কংগ্রেসের প্রশ্ন, প্রতিষেধক বণ্টনে দেশের দারিদ্রসীমার নীচে থাকা মানুষের কথা সরকারের মাথায় আছে তো? অভিযোগ, অন্য দেশের তুলনায় তা বেশি দরে কিনছে কেন্দ্র। এসপি-র শীর্ষ নেতা অখিলেশ যাদবের প্রশ্ন, কবেকার মধ্যে নিখরচায় টিকা পাবেন সমস্ত গরিব মানুষ? মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অবশ্য আগেই প্রশ্ন তুলেছেন, ডাক্তার-নার্স-স্বাস্থ্যকর্মী-ফ্রন্টলাইন ওয়ার্কার মিলিয়ে প্রথম তিন কোটি জনের টিকাকরণের দায় না হয় কেন্দ্র নিয়েছে। কিন্তু দেশের বাকি ১২৭ কোটি জনের কী হবে?
রবিবার বিবৃতিতে কংগ্রেস মুখপাত্র রণদীপ সিংহ সুরজেওয়ালা প্রথমেই তুলেছেন বিনামূল্যে প্রতিষেধক দেওয়ার প্রসঙ্গ। তাঁর জিজ্ঞাসা, “কাদের, কী ভাবে এবং কোন কোন ক্ষেত্রে বিনামূল্যে প্রতিষেধক দেওয়া হবে? সরকারি হিসেব অনুযায়ী, দু’রকম টিকা (কোভ্যাক্সিন ও কোভিশিল্ড) মিলিয়ে এখনও ১ কোটি ৬৫ লক্ষ ডোজ় বরাত দিয়েছে কেন্দ্র। প্রতি জনের দু’টি করে ধরলে, তাতে প্রতিষেধক পাবেন ৮২.৫০ লক্ষ জন। অথচ কেন্দ্রের দাবি, প্রথম দফায় ৩ কোটি জনকে তা দেওয়া হবে!’’ অর্থাৎ প্রশ্ন, বাকিদের টিকার বরাত কবে দেবে মোদী সরকার? মমতার তোলা প্রশ্ন এ দিন শোনা গিয়েছে কংগ্রেস মুখপাত্রের মুখেও। তাঁর কথায়, “(তিন কোটি বাদে) বাকি লোকের কী হবে, তা কেন্দ্র জানাতে নারাজ! তাঁদেরও কি বিনামূল্যে প্রতিষেধক দেওয়া হবে? সরকারের কি হিসেবে আছে যে, দেশে ২৮% মানুষ দরিদ্র। ৩১ কোটি তফসিলি জাতি-উপজাতিভুক্ত অথবা সামাজিক ভাবে পিছনের সারিতে। তাঁদের বিনামূল্যে প্রতিষেধক দেওয়ার জন্য কী ব্যবস্থা করা হচ্ছে?”
আরও পড়ুন: বহু গুণ আয় বাড়াবে কৃষি আইন: অমিত
প্রশ্ন তোলা হয়েছে প্রতিষেধকের দাম নিয়েও। কংগ্রেসের অভিযোগ, অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজ়েনেকার কোভিশিল্ড (যা এ দেশে তৈরি করছে সিরাম) অন্য দেশের তুলনায় বেশি দরে কিনছে কেন্দ্র। তুলে ধরা হয়েছে বেলজিয়ামের উদাহরণ। আবার ভারত বায়োটেক-আইসিএমআরের কোভ্যাক্সিন-ও বেশি দামে কেনার অভিযোগ তুলেছে তারা।
সিরাম ইনস্টিটিউটের কর্ণধার আদার পুনাওয়ালা ১১ জানুয়ারি জানিয়েছেন, আগামী দিনে সরকার অনুমতি দেওয়ার পরে খোলা বাজারে কোভিশিল্ডের প্রতি ডোজ় বিক্রি হবে ১,০০০ টাকা দরে। কংগ্রেসের প্রশ্ন, যেখানে কেন্দ্র ২০০ টাকায় কিনছে, সেখানে সাধারণ মানুষকে বেচে এমন বিপুল মুনাফার বন্দোবস্ত কেন?
আরও পড়ুন: জঙ্গি-আত্মসমর্পণ নিয়ে তৈরি হচ্ছে নয়া নীতি: সেনা
প্রশ্ন প্রতিষেধকের রফতানি নীতি ঘিরেও। সম্প্রতি ব্রাজিল দাবি করেছে, ২০ লক্ষ ডোজ় প্রতিষেধক পাওয়ার বিষয়ে দিল্লির সঙ্গে কথা হয়ে গিয়েছে তাদের। পাঠিয়েছে বিমানও। অথচ কেন্দ্র ঘরোয়া ভাবে জানিয়েছে, বিভিন্ন দেশের সঙ্গে কথা হলেও, ভারতে পর্যাপ্ত টিকার জোগান নিশ্চিত না-হওয়া পর্যন্ত তা বিদেশে পাঠানোর প্রশ্ন নেই। তবে বিভিন্ন দেশের সঙ্গে সমান্তরাল টিকা-কূটনীতি চলছে। বিরোধীদের প্রশ্ন, দেশের ২% মানুষের প্রতিষেধক পাওয়াই যেখানে এখনও নিশ্চিত নয়, সেখানে বাকি পৃথিবীকে তা জোগানোর কথা বলা অর্থহীন।
অখিলেশের অভিযোগ, “কেন্দ্র প্রতিষেধক নিয়ে ঢাক পেটাচ্ছে। কিন্তু তাদের পরিকল্পনা অন্তঃসারশূন্য।... আমাদের প্রশ্ন, গরিবরা কবে টিকা পাবেন? তা কি তাঁদের সকলকে বিনামূল্যেই দেওয়া হবে?”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy